৯ই এপ্রিল কী ঘটেছিল!তা আজ কারো অজানা নয়।তবে এ ঘটনার মুল কাহিনী তথা এ ঘটনার উৎস, এর সাথে জড়িত সামনে পেছনের ব্যক্তিদের পরিচয় এখনো সবার কাছে স্পষ্ট নয়।তদন্তের শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা আমাদের অজানাই থেকে যাবে।যদিও ঘটনার প্রথম প্রহরেই আমরা আমাদের স্বভাবসুলভ দৃষ্টিতে ঘটনার মুল নায়কের দিকে দৃষ্টি তীর ছুড়েছি বা ধরে নিয়েছি।সমগ্র দেশ জুড়ে ছিল এই নায়কের সমালোচনা,চায়ের কাপ থেকে শুরু করে চলতি বাসে,বেতার টিভিতে গোল বৈঠকে…,আর ৯ তারিখ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই নতুন ইস্যুকে পুজি করে বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ মাধ্যমে বেশ দৃঢ় এবং অনেকটা আনন্দের সাথেই নিজেদের স্বভাবসুলভ বুলি চালিয়ে যাচ্ছেন।এবং এ ঘটনার মুল দোষী হিসেবে সন্দেহের তীর যার দিকে বেশি সেই সুরঞ্জিত দাদার পদত্যাগও তারা দাবি করেছেন।সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত আমাদের রাজনীতিতে অতিপরিচিত একটি নাম।তার রাজনৈতিক জীবন পাঁচ বছর কিংবা দশ বছর নয়,রাজনীতির মাঠে তিনি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছেন।আমাদের দেশের কলুষিত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেও যে কয়জন নেতা নিজেদের আলাদাভাবে সর্বমহলে পরিচিত করেছেন কিংবা ব্যতিক্রমী হিসেবে পরিচিত রয়েছেন সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন।সাম্প্রতিক ঘটনার জন্যে তিনি আজ সর্বমহলে আলোচিত এক নাম।সর্বমহলে আজ দাদার সেই ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।এমন প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিকই বটে।সত্যিকার অর্থেই এ ঘটনা সর্বমহলকে অবাক করে দিয়েছে।কেননা কেহই এমনটা প্রত্যাশা করেননি,দুর্নীতির সাথে দাদার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।৯ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত মিডিয়াপাড়ায় শিরোনাম হয়ে থাকা সেই সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত আজ আবার নতুন করে শিরোনাম হলেন।পদত্যাগ করলেন মন্ত্রীত্ব থেকে।দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় যতটাই নিচে নেমে গেলেন আজ পদত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ততটাই উপরে উঠে গেলেন।সত্যিকার অর্থে এ ঘটনার সাথে তিনি সম্পৃক্ত আছেন কি নাই? তা আজ বিবেচ্য বিষয় নয়।তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।অর্থাৎ তিনি অনুতপ্ত।যদি পরিশেষে তার অভিযুক্ততা প্রমানিতও হয় আমি বলব এতে জনমনে এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া একটু হলেও কম পড়বে।আর যদি তিনি নির্দোষ প্রমানিত হন তবে শেষ জয়টাও শুধু যে তারই হবে তা নয় আমাদের কলুষিত রাজনীতির মাঝে এক চিলতে সুস্থত রাজনীতির জয় হবে।এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে আমাদের ভবিষ্যত এবং বর্তমান রাজনীতিবিদদের জন্যে।এতদিন আমাদের বিরোধীদলের দাবি ছিল মন্ত্রীর পদত্যাগের আর এখন পদত্যাগের পর আবার তাদের স্বভাবসুলভ বুলিতে নতুন করে জায়গা নেবে নতুন দাবি,তাদের বুলিতে ধ্বনিত হবে নতুন কোন কটুক্তি সরকারকে উদ্দেশ্য করে।এ নিয়ে আমাদের ভাবনা নয়,কোন কালেই কোন ভালো কাজে আমাদের বিরোধীরা সরকারের প্রশংসা করেনি,ধন্যবাদ দিয়ে ধন্যবাদ ফিরিয়ে নেয়ার কাজও যে আমাদের দেশেই হয়।আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতির ছোবল থেকে কেউ মুক্ত নয়।সকল রাজনীতিবিদ দুর্নীতির সাথে বসবাস করে।কারো দুর্নীতির কোন চিত্র নানা ঘটনার মাধ্যমে মানুষের চোখে ভেসে উঠে কোন সময়ে,আর কারো টা থেকে যায় দৃষ্টির অগোচরে।হঠাৎ যেমন করে অতিথি সরকারের কল্যানে মানুষের চোখে ভেসে এসেছিল অনেক রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির চিত্র,ঠিক তেমনি ভাবেই ভেসে এসেছে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের এবং রেলমন্ত্রনালয়ের দুর্নীতির খবর।এমনি করে আবার কোন এক সময় ভেসে উঠতে পারে অন্য কোন মন্ত্রী বা সরকারি আমলার দুর্নীতির চিত্র।কেহই শংকার বাহিরে নয়। যোগাযোগ মন্ত্রী এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ঘটনা আমাদের রাজনীতিবিদদের জন্য হুশিয়ারি সংকেত।এর থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনা করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
দাদার এই ত্যাগ আমাদের রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।সুস্থ রাজনীতির জয় হোক।দাদা আপনি সত্যিকার অর্থেই আমাদের রাজনীতিতে একটি নজির স্থাপন করে গেলেন।আপনি পদে থাকলে তদন্তে যদি আপনি দোষীও হতেন তবুও তদন্ত নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হত,জনমনে না হলেও বিরোধীদের মনে এটা নিশ্চিত।সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে আপনার সরে যাওয়া সত্যি যুগপুযোগী স্বিদ্ধান্ত।সত্যি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য যেমন করে অকপটে বলে গেলেন-‘রেলের সফলতা যেমন আমার তেমনি এর ব্যার্থতার দায়ভারও আমার উপরই বর্তায়’।আমাদের রাজনীতিতে আপনি একটি নতুন দিক উম্মোচন করে গেলেন,রাজনীতিকে শ্রদ্ধা করার এর চেয়ে বিকল্প উপায় আছে বলে মনে হয় না। আমরা কখনই প্রত্যাশা করিনা আপনার দীর্ঘ ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবন দুর্নীতির ছোয়ায় ম্লান হয়ে যাক।নির্দোষ হয়ে আপনি আবার রাজনীতিতে ফিরে আসবেন এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা। সকল রাজনীতিবিদদের মনে সুস্থ রাজনীতি ও দেশপ্রেমের বোধদয় ঘটুক এমনটাই প্রার্থনা আমার মত অন্য সবার।