somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারি চাকরির অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বৃদ্ধিতে যে প্রভাব পড়তে পারে...

১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছরের(২০১১) ১৯ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বিষয়টিকে সরকারের একটা ‘রাজৈতিক চাল’ হিসেবে অনেকেই মনে করছেন। তাদের ধারণা, আগামী নির্বাচনে প্রশাসনকে সরকারের পক্ষে কাজ করানোর উদ্দেশ্যে এটাকে একটা পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। তাদের মতে, ১৯৯৬ সালে বিপথগামী কিছু সরকারি কর্মকর্তা জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকারকে উত্খাত করতে যেভাবে জনতার মঞ্চ গঠন করেছিল, সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তার ‘প্রো-একটিভ মেজার’ হিসবেই বর্তমান সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে তাদের সাথে অনেকটাই একমত হলেও বিষয়টিকে আমি দেখতে চাই সামান্য অর্থনৈতিক, বেকারত্ব দূরীকরণ এবং রাষ্ট্রে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তাই বিষয়টিকে আমি একটু ভিন্নভাবে দেখছি। এই বিষয়ে আমার অভিমত, ইতোমধ্যে যারা সরকারি চাকরি করছেন তারা কমপক্ষে ২৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। সুতরাং ৫৭ বছর বয়সে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিলেও তারা পাবেন প্রভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চয়কৃত, গ্রেচুইটি ও অন্যান্য সুবুদাদিসহ বড় একটা পরিমাণ; তাছাড়া অবসর ভাতা তো রয়েছেই। সুতরাং সব মিলিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার (যদি শেষ হয়ে না থাকে)খরচ এবং মোটামুটিভাবে সংসার চালানোর একটা অবলম্বন তাদের কোনভাবে হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রছাত্রী তাদের পড়াশুনা শেষ করছে পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে যাদের বড় একটা অংশ প্রতিবছরই বেকার হচ্ছে। ফলে বেকারদের কাতার দিন দিন লম্বা হচ্ছে।

বর্তমানে সরকারি চাকরিরতদের বয়স যদি দুই বছর বাড়ানো যায় তবে, অবসরের বয়সসীমা এই দুই বছর বাড়ানোর কারনে যে কোঠা এখন শূন্য হওয়ার কথা ছিল তা শূন্য হবে দুই বছর পর। তাই পড়াশুনা শেষ করা যেসব মেধাবীর বয়স এখন ২৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি, উক্ত চাকরির কোঠা শূন্য হওয়ার আগেই তাদের অনেকেরই সরকারির বয়স পার হয়ে যাবে। ফলে রাষ্ট্র সামান্য হলেও মেধা থেকে বঞ্চিত হবে। এভাবে প্রতিবছরই কিছু না কিছু মেধাবীরা সরকারি চাকরির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে প্রশাসন এক সময় অনেকটাই মেধাশূন্যতায় পড়বে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রশাসনে অপেক্ষাকৃত অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী এবং মেধাহীনদের সারিতো দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হচ্ছেই। বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।
সবার বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের নিজস্ব সম্পত্তি যতটুকু আছে তার সুষম বণ্টনের মাধ্যমে রাষ্ট্রেকেই সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয়। আর সেই রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা নিয়োজিত থাকে দায়িত্বটা তাদের উপরেই বর্তায়। তাই সময় থাকতে এই বিষয়টি নিয়ে সরকার আরও একটু ভাবতে পারে।

তাছাড়া সমালোচকদের কথাটা যদি পুরোপুরি সত্য হয়,(সত্য হলেও বাংলাদেশের কোন সরকার কখনোই স্বীকার করেনা) আগামী নির্বাচনে প্রশাসনকে সরকারের পক্ষে কাজ করানোর উদ্দেশ্যে এটা একটা পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়; তবে এর ফল যে খুব একটা ভালো হবেনা তা অতীতের ইতিহাস থেকেই কিছুটা অনুমান করা যায়। তাই ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বল্পকালীন কোন সুবিধা লাভের আশায় এই উদ্যোগের সরকারের জন্য যদি ভালো কোন ফল আনতে সামর্থ হয়; তবে প্রতিবছরই একদিকে বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে ধীরে ধীরে মেধাশূন্যতায় পড়া প্রশাসন রাষ্ট্রের জন্য বয়ে আনবে ভয়াবহ পরিণতি।
পুরোপুরি মেধাশূন্যতায় পড়ার আগেই প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে ইতোমধ্যেই এর যেসব আলামতে কথা আমাদের নাগরিক সমাজ তাঁদের বিভিন্ন লেখনিতে উল্লেখ করছেন; প্রশাসন পুরোপুরি মেধাশূন্য হলে এই পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে তার কিছুটা হলেও এখনই অনুমেয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×