somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র

১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*****
যেকোনো ব্যক্তি চাইলেই যেকোনোভাবে ক্ষমতা দেখিয়ে মালিকের আসনটি নিজে দখল করে নিতে পারে। এমনকী, মিথ্যাশ্রয়ী হয়েও ধরা পড়ার আগে পর্যন্ত মালিক সেজে থাকা যায়। যেকেউ চাইলেই নিজে মালিক হতে পারে কিম্বা অন্যকে মালিক বানাতে পারে। মালিক হওয়ার জন্য কোনো দক্ষতাই বিবেচ্য নয়। মালিক যাকে তার সাময়িক প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেয়, তারও কোনো কর্ম-দক্ষতার লিখিত বা অলিখিত সনদ থাকা জরুরি নয়, মালিকের হয়ে মালিকের চাওয়াটুকু চাইতে পারার যোগ্যতাই যেকোনো প্রতিনিধির যোগ্যতা হিসেবে গণ্য। দক্ষতা বিচার্য কেবল কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে।

মালিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বিনিময়জীবী কর্মী হতে চাইলে কিম্বা কর্মী হিসেবে আত্মমর্যাদা এবং আত্মসম্মান ধরে রাখতে চাইলে দক্ষতা আবশ্যক।

কর্মীর মর্যাদাকে মালিক এজন্যেই শ্রদ্ধা করে যেতে বাধ্য যে, যুক্তি এবং অজুহাত খাটিয়ে যেকোনো উপেক্ষিত কর্মী তার দায়িত্বে ফাঁকি দিয়ে দিয়ে মালিককে অচল করে দিতে পারে। যথাযথ মূল্যমানে কর্মীকে সন্তুষ্ট রাখতে মালিক এ-জন্যেও বাধ্য যে, মালিকের বিপক্ষে কাজ করার দক্ষতাও কর্মীর আছে, এবং, যেকোনো অবহেলিত কর্মী তার ঐ দক্ষতাকে কখনো কাজে লাগাবে, কোনো দক্ষ মালিকও তা’ চায় না।

কোনো যোগ্য মালিক তার কোনো উচ্ছৃঙ্খল কর্মীকে নিজে প্রত্যক্ষভাবে শাসন করে না; যেকোনো প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেকটি স্তরের শাসনের দায়িত্বভার একধাপ উপরের কর্মীটির উপর চাপিয়ে দিয়ে দিয়ে মালিক তার প্রতিষ্ঠানকে এবং প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাকে টিকিয়ে রাখে। একধাপ নিচের কর্মীটির পদোন্নতির জন্যে, কর্মক্ষেত্রটির মালিকের সন্তুষ্টির চে’ বরং তার নিকটতম উপরের ধাপের কর্মীটির সন্তুষ্টি এবং সুপারিশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কর্মীর সর্বোচ্চ আসনটির ততটাই উপরে মালিকের অবস্থান, যেখানে কোনো কর্মীর পক্ষে উঠে বসা সম্ভব নয়। এমনকী রাজ্যের রাজার করুণাপ্রার্থী সন্তানতুল্য সাধারণ প্রজারাও কেবল রাজার দৃষ্টিসীমা থেকে রাজার পদধুলি পর্যন্ত যেতে পারে মাত্র, তার বেশি নয়।

কোনো প্রজা তার রাজার রাজ্যের কোনো প্রজাপরিবারের সন্তানকে কখনোই রাজার সম্মান দিতে পারে না। শক্তিতে, বীরত্বে, বিচক্ষণতায়, অভিভাবকত্বে পারদর্শী কোনো বাহিনীপ্রধান, ভিন্ন কোনো রাজতন্ত্রের প্রজাদের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে, অত্যাচারী রাজাকে হটিয়ে সেখানে নিজে রাজা হতে পারে। রাজতন্ত্রে রাজ্যের মালিকানা একজন রাজার। রাজ্যের সবকিছুরই দায়ভার রাজাই বহন করে। রাজকার্য পরিচালনের জন্যে রাজা তার পছন্দমতো যেমন রাজসভা সাজিয়ে নেয়, তেমনি যেকোনো সময়ে যেকোনো ধরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে নিতে পারে রাজা তার দক্ষ প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনীর মাধ্যমে।

রাজা সবজান্তা সর্বজ্ঞ নয়। রাজাকেও পরামর্শ নিতে হয়। গণতন্ত্রে যেমন জনগণ রাষ্ট্রের ভেতর থেকেই কিছু মানবসন্তানকে যোগ্য ভেবে বেছে নেয়, রাজতন্ত্রেও ঠিক তেমনি, --রাজাকেও তার রাজ্যের মানবসন্তানদের মধ্য থেকেই কিছু মন্ত্রণাদাতা বেছে নিতে হয়। রাজার অধীনস্থ মন্ত্রীরাই রাজার পরামর্শদাতা। রাজা তার প্রয়োজনে মন্ত্রীর পরামর্শ নিজেই চেয়ে নেয়।

নিজের স্বর্থেই রাজা তার সন্তানতুল্য প্রজাদের সুখ, শান্তি, আশ্রয়, নিরাপত্তা প্রদান করতে স্বেচ্ছায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে। রাজা তার সুশিক্ষিত দক্ষ কর্মীবাহিনীর মাধ্যমে, দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন নীতিতে, নিজেকে এবং প্রজাদেরকে রাজ্যের ভিতরের এবং বাইরের শত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ।

রাজার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, রাজ্যের সকলেই রাজার করুণাশ্রিত। রাজতন্ত্রে, রাজা এবং রাজার আদেশ সর্বজনমান্য। রাজার রাজত্বে রাজপরিবারটিও রাজার মতোই মর্যাদাসম্পন্ন। রাজার আদেশ অমান্যকারীরা রাজদ্রোহী। রাজতন্ত্রে, রাজদ্রোহিতা, সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রাজতন্ত্রে রাজ্যের বিশাল মালিকানা রাজা এককভাবে উপভোগ করে।

রাজতন্ত্রে, প্রজারা, শিশুতুল্য আবেগতাড়িত মানবসন্তান। রাজা খুশিমনে যা’ দেয়, প্রজারা তা’ তৃপ্তমনে গ্রহণ করে এবং নিজেদের মধ্যে রাজার গুণগান গেয়ে গেয়ে প্রজাজীবনের ঋণ পরিশোধ করে। প্রজাদের স্বাধীন বিবেকের বিবেচনা কিম্বা পরামর্শ রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্য নয়।

গণতন্ত্রে রাজ্যের রাজাটি নেই, আছে রাষ্ট্রের মালিকসমষ্টি, জনগণ।

গণতন্ত্রে কেউ-ই প্রজা নয়, কেউ এককভাবে রাজা নয়। যেকোনো রাষ্ট্রে জন্মসূত্রে প্রত্যেক মানবসন্তান সম-অধিকারেই সেই রাষ্ট্রের খণ্ডিত মালিক, প্রত্যেকে সেখানে খণ্ডিত রাজা সমতুল্য। গণতন্ত্রে, রাষ্ট্রের সকল মানবসন্তানের সমষ্টি, তথা জনগণ, রাষ্ট্রের সামগ্রিক মালিক হিসেবে গণ্য, যেখানে প্রত্যেকেই সম-মর্যাদায় সম্মানিত।

কোথাও রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটলে, সেখানে প্রজাগণ বিলুপ্ত হয়, জনগণ জেগে ওঠে মালিকরূপে। রাজতন্ত্রের একক রাজমালিকানার রাজ্যের মন্ত্রীর মতো, গণতন্ত্রেও, গণমালিকানার ভূখণ্ডের জনগণকে নিজের পছন্দমতো প্রতিনিধি বানাতে হয়। রাজ্যের বেতনজীবী কর্মীরা রাষ্ট্রের বেতনজীবী কর্মীতে রূপান্তরিত হয়। রাজশক্তি জনশক্তিতে এবং রাজার স্বার্থ জনস্বার্থে পরিবর্তিত হয়। রাজতন্ত্রে, রাজ্যের কর্মীবাহিনীর কিম্বা কোনো মন্ত্রীর যেমন কোনো ক্ষমতা নেই, মালিকানাসূত্রে চূড়ান্ত ক্ষমতাবানের মর্যাদা একক-মালিক হিসেবে রাজ্যের রাজার, তেমনি গণতন্ত্রেও সমষ্টি-মালিক হিসেবে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত মর্যাদা কেবল জনগণের।

রাজতন্ত্রে রাজা যেমন মালিক, গণতন্ত্রে তেমনি মালিক সাধারণ জনগণ। রাজ্যের কিম্বা রাষ্ট্রের, মালিকের মালিকানায় টান পড়লে, কোনো ধরণের মালিক-ই তা’ সহ্য করতে পারে না।

মালিকের নিকটতম কোনো প্রতিনিধি কিম্বা কর্মী, নিজেকে মালিক ভেবে, ঐ ভাবাচরণ প্রদর্শন করলে, কোনো তন্ত্রেই সে বেশিক্ষণ টেকে না, ঐ উন্মাদকে হটিয়ে মালিক তার ভূখণ্ডের কোনো সুস্থ মানবসন্তানকে যোগ্যের আসনটি দেয়।


রঙ্গপুর : ১৬/০৪/১২
করণিক : আখতার ২৩৯
হরতালের বৈধতা প্রসঙ্গে
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ বিকাল ৩:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×