somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈশাখী রাত

১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্যরাত। আনজুরহাট বাজারের মেইন রোডের ঠিক মাঝখানে বটগাছটা একটা ঝোপের মত দাড়িয়ে আছে। মামুনের হাতে হাত ঘড়ি নেই। রাত ক’টা বাজে বোঝা সম্ভব হচ্ছেনা। হঠাৎ করে বটগাছের ঝোপের মত অংশটা কেমন অদ্ভূত রকমের কালো হয়ে গেল। ভয়ে আতংকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো মামুন। কিন্তু ততনে অঘটনটা ঘটে গেল। ঝোপের মধ্য থেকে আতংকময় কালো অংশটা এগিয়ে এলো মামুনের দিকে। মামুনের মাথায় ব্যাথা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে অসম্ভব যন্ত্রনায় পরিনত হলো। মামুন আর দাড়িয়ে থাকতে পারলোনা। সমস্ত শরীর ঘেমে একাকার। চৈত্রের এই দিনে যথেষ্ট গরম হলেও এই রাতে যেভাবে মৃদু বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে তাতে কারোরই ঘেমে ভিজে ওঠার কোন কারণ নেই। মামুন ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল।



রিপন, শফিক আর বাবু সেই সকাল থেকেই আনজুরহাট বাজারের মধ্যখানে অবস্থিত মেইনরোডে বটগাছটার নিছে মঞ্চ তৈরি করে রঙ বেরঙের কাগজ দিয়ে বৈশাখী মেলার জন্য সাজ তৈরি করছে। আজ চৈত্রমাসের শেষ দিন। সারাদিন চৈত্র সংক্রান্তির নানা আয়োজন শেষে এখন পহেলা বৈশাখ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বটমূল সাজানোর জন্য এখনও অনেক কিছূ বাকী। সাজানো শেষ হলে কাবঘর থেকে মাইক এনে ফিটিং করতে পারলেই রাতের কাজ শেষ হবে। এইসব নানা ব্যস্ততার মাঝে মাঝরাতে মামুনকে বটমূলে আসতে দেখে ওরা তিন জনই বট গাছ থেকে নেমে মামুনের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু মামুনের কাছে যেতে না যেতেই মামুন মাটিতে ঢলে পড়লো।
মামুনের কাছে যেতেই বিষয়টা পরিষ্কার হলো। সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে, সমস্ত শরীর ঘেমে একাকার। ওরা তিনজন মিলে মামুনকে বটমূলের মঞ্চে এনে শুইয়ে দিল।
চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই মামুন চোখ খুলে তাকালো। আমতা আমতা করে বলল,‘তোরা ? কি হইছে আমার ?
‘কি জানি ?’ রিপন বলল,‘কই গেছিলি ?’
‘ফুফুগো বাড়ী’ মামুন জবাব দেয়।
‘আইলি ক্যান ?’ বাবু জানতে চায়।
‘রাগ কইরা।’ মামুন বলে,‘তোরা কি করোছ ?’
‘বটগাছটা সাজাই।’ শফিক বলে,‘কাইল বৈশাখী মেলা করুম।’ মামুন আস্তে আস্তে উঠে বসতে বসতে বলে, ‘এক্কে বারে ঘাইমা গেছি। দেখিকি একটা ভুত বটগাছটার মাথার উপর। পুরো বটগাছটা কালো হয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। ভয়ে আমি শেষ।’
‘ও এই খবর ?’ বাবু বলে, ‘তুই একটা মদন। পৃথিবীতে ভুত বলে কিছু আছে নাকি ? আমরাইতো গাছের উপর বইসা বৈশাখী মেলার জন্য সাজাচ্ছি।’
‘আমি ভাবলাম এতো রাত।’ মামুন বলে, ‘গাছের মধ্যে কি যেন নড়াচড়া করে। হঠাৎ কেমন কালো হয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। আমি দৌড়াতে গিয়েও আর দৌড়াতে পারিনি। এক্কেবারে কাইত। ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলাম।’
‘এখন কেমন লাগে ?’ রিপন জিজ্ঞেস করে।
‘এখনও কেমন বুকটা ধুকধুক করতেছে।’ মামুন বলে।
‘এখনও ভয় লাগে ?’ বাবু জানতে চায়।
‘তোদেরকে দেখে ভয়টা কেটে গেছে।’ মামুন বলে।
‘চল সব কিছু তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে।’ শফিক তাড়া দেয়,‘ রাত প্রায় শেষ হয়ে গেল।’
ওদের সব গুছাতে গুছাতে রাত শেষ হয়ে আসে। সবশেষে মঞ্চের সাথে মাইক বেধে ওদের কাজ শেষ হয়। রিপন মাইকটাকে পরীা করে, ‘হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং হ্যালো, হ্যালো, ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভ সিক্স সেভেন এইট নাইন জিরো হ্যালো, হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো। এর পর ক্যাসেট প্লেয়ার অন করে মাইকে বাজানো হয়, ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো। তাপস নিঃশ্বাস বায়ে, মুমুর্ষরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক এসো এসো ... ’



‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো ...’ গানের সুরে ঘুম ভাঙ্গে মামুনের।
গতকাল রাত দেড়টার সময় নাটকের রিহার্চাল শেষ করে ফুফুর বাসায় আসে মামুন। এত রাতে বাসায় ফেরায় ফুফু রাগে ফেটে পড়লেন। টেবিলে ভাত দিতে দিতে এবং মামুনের জন্য বিছানা গুছাতে গুছাতে একটানা আধা ঘন্টা বকাবকি করেই গেলেন। আরও সাসালেন আগামী কাল মামুনের বাবার কাছেও এ ব্যাপারে একটা নালিশ জারি করা হবে। মামুন রাগে দুঃখে প্রথমে না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সারাদিন না খেয়ে বৈশাখী মেলার কাজ করে রাতের বেলা নাটকের রিহার্চাল দিয়ে একদম কান্ত হয়ে পড়লো। টেবিলে খাবার দেখে ুধাটা আরো বেড়ে গেছে তার। তাই কোন মতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ফুফুদের বাড়ীতেই।
সকালে মামুনের ঘুম ভাঙ্গতেই এক দৌড়ে চলে আসে আনজুরহাট বাজারের মেইন রোডে। এদিক সেদিক তাকিয়ে খুজতে থাকে বটগাছটাকে। কৈ এখানের বট গাছ কোথায় ? এ কি স্বপ্ন দেখলো মামুন। আনজুরহাট বাজারের মেইন রোডে তো কোন বটগাছ নেই আর তাই এইখানের বটমূলে বৈশাখী মেলা করার কোন প্রশ্নও ওঠেনা। আনজুরহাটের বৈশাখী মেলা হচ্ছে আনজুরহাট স্কুল মাঠে।

[বি:দ্র: আনজুরহাট বাজারের মেইন রোডে কয়েক বছর আগে একটি বটগাছ ছিল।]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×