somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোধূলীর ছায়াপথে গভীর সংকটে আমি - মুস্তাফা জামান আব্বাসী

১৫ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোধূলীর ছায়াপথে
গভীর সংকটে আমি
মুস্তাফা জামান আব্বাসী

অনেকদিন আগে এই কলামেই লিখেছি কালো বিড়াল প্রসঙ্গে। সবার সঙ্গেই বাস কালো বিড়ালের, কখনো কখনো সে থলে থেকে বেরিয়ে পড়ে। বলেছিলাম, সেটি যদি আমি নিজে হই, তাহলেও তা বিচিত্র সংবাদ নয়। সম্প্রতি বন্ধু সুরঞ্জিত কালো বিড়াল হিসেবে সনাক্ত হয়েছেন ভেবে তার দিকে তাকালাম। এমন একটি ভাল মানুষ সংসারে বিরল।
আমাকে তিনি তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সেদিন নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম যে এ রকম লোক যদি কোনদিন ক্ষমতায় আসেন, দেশের কোন একটি দিক আলোকিত হবে।

তা তো হয়নি, বরং যে তীর তিনি সবার দিকে নিৰেপ করতেন, সেটি এখন তার দিকেই নিৰিপ্ত। আমি তার সাফাই গাইছি না, বরং এটুকু বলতে চাচ্ছি সংবাদপত্রে প্রথমেই যেভাবে তীর ছোঁড়া হয়, এরপর সেই দুর্গম অপবাদের বোঝা থেকে কেউ নিষ্কৃতি পান না। এটি তাদের প্রতি একটি চরম অবিচার। অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় এমনি প্রায় পঞ্চাশজন ব্যক্তিকে আক্রমণ করা হয় নানা সংবাদপত্র ও টেলিভিশন প্রচার মাধ্যমে। সেগুলো সত্যি কি মিথ্যা তা যাচাইয়ের আগেই ঐ ব্যক্তি সমাজে হন নিগৃহীত। এটা কি ন্যাচারাল জাষ্টিস? এটা কি কোন ধর্মে সমর্থিত, বিশেষ করে ইসলামে? কোনক্রমেই নয়। আমি যদি চোর হয়েও থাকি প্র মে আমার বিচার হবে, তারপর আমাকে চোর বলা হবে। কিন্তু আগেই চোর, ডাকাত ও সমস্ত অপঘাতের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সংবাদপত্রে ছেপে দেয়া কি ন্যায় সংগত? বিচার সবাই করবে তা কি করে সম্ভব? বিচার করবেন শুধু বিচারক। সবাই মিলে বিচার করলে তার মধ্যে ভুল থেকে যাবে।

অন্যায়ের আলামত সংগ্রহ দুরূহ, বিশেষ এদেশে, যেখানে কেউই প্রশেড়বর অতীত নন। সহজেই এদেশে 'বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে'। জোষ্ঠ্য ভ্রাতা বিচারক, পরে পধ্র ান বিচারপতি, বড় ভায়রা বিচারক এবং এখন অনেক বন্ধু এই আসনে সমাসীন। কাজটা যে খুব দুরূহ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। উপরওয়ালা কারও ইংগিত বিচারকে যাতে প্রভাবিত করতে না পারে, তার জন্যে বিচারককে থাকতে হয় সদা প্রস্তুত। ভাইকে দেখেছি যখন কোন বড় জাজমেন্ট হত বিচলিত থাকতেন, তার সামনে যেতে ভয় পেতাম। সকালে কোরান পড়তেন, নামাজ পড়তেন এবং প্রতি বিচার আল্লাহতা'য়ালাকে সামনে রেখে সমাধান করতেন। এই ধরণের বিচারকদের সম্বন্ধে আল্লাহতা'য়ালার ওয়াদা যে তাঁরা ক্ষমাপ্রাপ্তদের দলে। আমার তিন বন্ধু বিচারকদের সামনে সারাদিন দাঁড়িয়েছিলেন, অথচ এঁদেরকে বাংলাদেশের তিনজন শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে মর্যাদা দি'। কেন এরা অপমাণিত হলেন, তা ভেবে এখনো কষ্ট পাই, কারণ বিচারকদের সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দি'। তাদেরকে দেখলে দাঁড়িয়ে উঠি। তাদের সামনে আসন গ্রহণ করি না। তাদের প্রতিটি পয়সা হালালের পয়সা। এখানে একটি পয়সাও হারাম তা ভাবতে কুণ্ঠিত।

ন্যাচারাল জাষ্টিস যতদিন ফিরে না আসবে, স্বাধীনতার সুফল উপভোগ করা থেকে হব বঞ্চিত। প্রতিটি মানুষ আইনের চোখে যাতে সমাণ হয়, তার জন্যে নতুন প্রজন্মের প্রতিটি মানুষকে সুশিক্ষায় করতে হবে সমুন্নত। কেউ কারও বড় ছোট নই, হাকিমের কাছে গেলে পাব পিতার মত দৃষ্টি, মানবের মত আচরণ, তার দিকে তাকাব ঈশ্বরের মত। পৃথিবীতে তিনিই ঈশ্বর, তার কোন কর্মকান্ডে থাকবে না এতটুকু বক্রতা। তিনি মানুষ, মানুষের মধ্যে মানব শ্রেষ্ঠ।

ক্রিস্টিন এম কোগেলের লেখা বইটি অনেকের পড়া আছে। লেখক 'মরাল ইসু্যজ ইন গেস্নাবাল পারস্পেকটিভ' গ্রন্থে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়েছেন বিচারের মূল ইস্যুটা কি, চোর চুরি করেছে তাকে গারদে দাও এটা ইস্যু নয়, ইস্যু হল চুরি কিভাবে ঠেকাব, চোরের কি হবে, চোরের ক্ষমা হবে কি না। বইটি পড়লে কারও দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যেতে পারে। বইটি
দু'বার পড়লাম, পড়ে আমি নতুন মানুষ। ঈশ্বর নই, ঈশ্বরের প্রতিনিধি। বিচার করতে আসিনি, এসেছি ক্ষমা করতে।

দাড়িপাল্লার সামনে লেখা আছে বিচার নয়, ক্ষমা, যেমনটি গেয়েছেন জাতীয় কবি : 'বিচার চাহি না আমি, দয়া চাহে এই গুণাহ্গার'। সঞ্জয় গান্ধীর হত্যাকারীকে ক্ষমার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে তা কারও চোখেই স্থায়ীভাবে রেখাপাত করছে না। কেন তা আমার জানা নেই। কোগেল বলছেন অন্য কথা :
‘We should understand the challenge that crime poses for justice as that of restoration of social equality, of equality in relationship, we can begin to grasp the way in which restorative justice theory and retributive theory begin to diverge from their common goal of addressing injustice’. Page No. 282

সমাজের নানা অসংগতি নির্মূল করার জন্যে প্রয়োজন যার যার মনের কালো বিড়ালের সন্ধান। আসলে কি খুঁজছেন?

RRReconciliation, Justice and Coexistence বইতে অপর লেখক বলছেন : 'দুর্যোগের পর যা প্রয়োজন, তাহল : পুনর্গঠন, বোঝাপড়া ও নতুন পথে চলার প্রতিশ্রুতি। যেখানে বোঝাপড়া নেই, চলবে সংঘাত কেয়ামত পর্যন্ত । বইটি লিখেছেন পাঁচজনে মিলে, সম্পাদনা করেছেন Muhammed Abu-Nimer.

কালো বিড়াল কোথায় নেই? পৃথিবীর সর্বত্র ঘাপটি মেরে বসে আছে কালো বিড়াল। শুধু অন্যের মধ্যেই ঐ বিশেষ রঙের বিড়ালটি নেই, নিজের মধ্যেও লুকিয়ে থাকতে পারে। একটি কবিতায় নিজকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জালিম হিসেবে চিহ্নিত করেছি। কোরানেও আছে : 'লাইলাহা ইল্লা আন্না' ...'আমিই সবচেয়ে বড় জালিম'। গভীর সংকটে আছি।


মুস্তাফা জামান আব্বাসী
লেখক-গবেষক, সংগীত ব্যক্তিত্ব
[email protected]

১৪ই এপ্রিল, ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×