ঢাকার মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় থাকতো আমার এক ছোট ভাই এবং তার বন্ধুবান্ধবেরা। ওরা থাকতো বাড়িটার ছয় তলায়। বাড়িটার নীচতলায়ও কিছু ব্যাচেলর ছেলেরা থাকতো। বাড়ির মালিক মহিলা তার ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতো তিন তলায়।
বাড়িওয়ালা মহিলা খুবই বদরাগী। তার স্বামী কয়েক বছর আগে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মারা যান। তবে এলাকায় গুঞ্জন আছে যে মহিলা তার স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরেছেন। পশ্চিম শেওড়াপাড়া বাস স্ট্যান্ড এলাকায় যারা থাকেন তারা নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন, কোন বাড়িটার কথা বলছি।
যা হোক আসল কথায় আসি। আগেই বলেছি, বাড়িটার নীচতলায় ব্যাচেলর ছেলেরা থাকতো। হঠাৎ একদিন সকালে দেখা গেল, নীচতলা পুরো খালি। কাউকে কিছু না জানিয়ে সব মালপত্র নিয়ে ছেলেগুলো চলে গেছে। ওদের এক মাসের ভাড়া বাকি ছিল, তাই বাড়িওয়ালা মনে করলো হয়তো ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে সদলবলে পালিয়েছে।
এরপর বাড়িওয়ালা আমার যে ছোট ভাইদের কথা বলেছি ছয় তলায় থাকতো ওদের বলল, নীচতলায় চলে যেতে, কারণ তিনি ছয়তলায় ফ্যামিলি ভাড়া দেবেন। ওরা সকল জিনিসপত্র নিয়ে নীচতলায় চলে গেল। কিন্তু নীচতলায় যাবার পরে ওরা কিছু অদ্ভুদ জিনিস খেয়াল করলো। বাসাটার ভেতর সবসময় মনে হয় ভীষণ বেগে বাতাস বয়ে যায়। বাইরে কোথাও বাতাস না থাকলেও ঘরে সবসময় ঝড়ের মতো বাতাস থাকে। ঘরের দরজা-জানালা হঠাৎ হঠাৎ প্রচন্ড জোরে বাড়ি খায়। ব্যাপারটিকে ওরা স্বাভাবিকভাবে নেবার চেষ্টা করে। কিন্তু ওরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারতো না, রাত-বিরাতে মিহি কণ্ঠে কান্নার শব্দ শুনতে পেত।
সবকিছু হয়তো স্বাভাবিক মনে হতো যদি না ওরা তারও কয়েকদিন পরে ঘরে কটু গন্ধ পেত। ওরা বাড়িওয়ালাকে ডাকলো। সবাই মিলে চেষ্টা করে গন্ধের উৎস বের করা হলো। বাথরুমের ফলস সিলিং-এর উপর থেকে গন্ধ আসছে। ওখানে একটা বস্তা পাওয়া গেল। বস্তা খুলে দেখা গেল একটা যুবতী মেয়ের লাশ। সবার কাছে ঘটনা পরিষ্কার হয়ে গেল আগের ছেলেগুলো কেন পালিয়েছে। তারা মেয়েটাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করেছে। তারা অবশ্য কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রেফতার হয়। ওই বাড়িতে আমার যে ছোট ভাইয়েরা থাকতো, ওরা আর না থাকার সিদ্ধান্ত নিল। তবে ওদের বেশ হয়রানি হয়েছিল; বেশ কয়েকবার থানায় যাওয়া আসা করে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে ঘটনার সাথে ওরা জড়িত নয়।