somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমাকে নিয়ে, তোমাকে ছাড়াই!!

১৩ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেমন উল্টো অনুভূতি হলো আজকে, বলো তো?? এরকম বর্ষণমূখর দিনগুলোতে তোমার কথা তো মনেই পড়বে, সেটা নিয়ে ভাবিনা। প্রতিবছর চৈত্র-সংক্রান্তিতে প্রচন্ড গরম থাকে, বের হয়ে উদ্‌যাপন করার আনন্দটা কিছুটা তো মাটি করে দেয় এই অসহ্য গরম!!

গতবছর তো পহেলা বৈশাখে ঘরেই বসে ছিলাম। এই বছরটা কী হলো বলো তো? আমি থাকতে পারলামনা ঘরে। স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে সেই বিকেল থেকে এই রাত পর্যন্ত সময় কাটালাম ডি সি হিলে। আমার সেই ছোটবেলার ডি সি হিল। স্বপ্নিলে আজ কোনও ফুচকা বানায়নি, তাই স্যুপ-চওমিন খেলাম। দুর্দান্ত আড্ডা, হাসাহাসি কলরবে কেটে গেলো সময়। আমার সেই সুন্দরী ডি সি হিল যেন আমার স্মৃতির চেয়েও এখন অনেক সুন্দর। ঢাকায় ক্যাম্পাসে যতবার বৈশাখের আগমন উদ্‌যাপন করেছিলাম, ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়তো আমার ডি সি হিলের কথা, মনে হতো কি যেন নেই, কি যেন ফেলে এসেছি!! আজ যেন প্রাণভরে মনের ক্ষিদে মিটিয়ে গত ১৫ বছরের অদেখা পুষিয়ে নিলাম। মঞ্চের গান-কবিতা থেকে শুরু করে লোকের ভীড় কাটিয়ে বাদামওয়ালার কাছথেকে কড়ইভাজা কেনা পর্যন্ত সবই মনে হচ্ছিলো অসামান্য চমৎকার একেকটা মুহূর্ত!!

ডি সি হিল শেষ করে বান্ধবীর বাসায় সেই রুমে, সেই বিছানায় গাদাগাদি করে বসে ঘন্টাভরে আড্ডা। সেই একইভাবে, যেভাবে স্কুলপড়ুয়া কিছু তরুণী সাতকাহনের দীপাবলি কিংবা উত্তরাধিকারের মাধুরী হয়ে যেত!! কতশত তর্ক করেছি বুদ্ধদেবের বাবলি-কে নিয়ে, আশাপূর্ণার প্রথম প্রতিশ্রুতির শেষটা নিয়ে। ছোট ছোট স্বপ্ন নিয়ে বড় বড় লেখকদের কঠোর সমালোচনা করতে ছাড়িনি একদম!! আজ সেই বিছানায়, একইরকম গাদাগাদি করে বসে চায়ের কাপে উড়িয়ে দিলাম টানা দুইঘন্টা। বাড়ি ফিরে এলাম খানিকক্ষণ আগে।

এখন বসে ভাবছি, সময়টা এত ভালো কাটলো সারাদিন, তবু কেন চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো বারবার ফুলার রোড?? শাহবাগ থেকে বেলীফুল নিয়ে এসে প্যাকেটে ভরে আমার হাতে দিয়ে বলেছিলে “এখন খুলিসনা, পরে দেখে নিস।” রোকেয়া হলের সামনে কোনওদিন স্লিপ দিয়ে ডাকোনি তুমি। আমি আগেভাগে দাঁড়িয়ে ছিলাম গেইটে। সেদিন আমার অনুরোধে চারটায় এসে খুব গম্ভীর ভাব নিয়ে বলেছিলে “কি ব্যাপার, শাড়ী পরেছিস যে?” আমি লাল-নীল বেগুনী হয়ে তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারিনি। খুব রাগ হচ্ছিলো যখন হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তোমার পরিচিতরা তোমাকে বারবার ডাকাডাকি করছিলো। চুলের খোঁপায় তোমার দেওয়া সেই বেলীফুল লাগিয়ে আমি চাইছিলাম তুমি তাকিয়ে থাকো অপলক আমার দিকে, শুধুই আমার দিকে। আমি চেয়েছিলাম তোমার হাত ধরতে, তুমি বলেছিলে “কক্ষণো না, এখানে তো নয়ই, যখন সময় হবে তখন দেখা যাবে। তুই পড়া শেষ করে আগে বড়ো হয়ে নে।” আমি শাড়ি পরে, কাজল লাগিয়ে তোমার কাছে বড়ো হতে চেয়েছিলাম, ভীষণ চেয়েছিলাম তুমি বোঝো আমাকে! আমাকে নিয়ে তুমি ফুলার রোডের দিকে হেঁটে গেলে। বেশ বিব্রত ছিলে, আমাকে সাথে নিয়ে এভাবে তো কখনও হাঁটোনি আগে!

আমার ভীষণ গর্ব হচ্ছিলো জানো, মনে হচ্ছিলো তোমার সব মেয়েবন্ধুদের চিৎকার করে বলি “দেখো দেখো, তোমাদের এতকাছের বন্ধুটা আসলে আমার।” খুব ছেলেমানুষি চিন্তা, কিন্তু সত্যি তোমার সবকয়টা মেয়েবন্ধুকে আমার হিংসে হতো তখন। ওদের সাথে তুমি এত আড্ডা দিতে, আর আমাকে তো দেখতেইই না একদম। যদিও আমি টের পেতাম টিএসসি থেকে রোকেয়া হলে পর্যন্ত তোমার একজোড়া চোখ আমাকে ঠিকই ঘিরে থাকতো। তবুও আমার কাছে তুমি আসতে না, আমাকে তুমি কাছে ডাকতেও না, আমি ঘেঁষতে চাইলে তুমি বারবার বলতে, “এখন না, পরে। এখনও সময় হয়নি।”

ফুলার রোডে বসেছিলাম দুজনে। “বাহ তোর চুড়িগুলো তো বেশ লাগছে!” আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম তোমার হাতে। আমার চুড়ি ধরে দেখলে তুমি, এরপর দূরে, রাস্তার ওপাশে কি যেন দেখতে দেখতে চুড়ির ভেতর থেকে তুমি আমার হাতটা বের করে নিলে। তোমার হাতে আমার হাত। সেইই প্রথমবার। “তুই বড়ো হয়ে গিয়েছিস রে!!” আমার দুইচোখে ঝরঝর করে পানি। আমি অবাক হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ভাবছিলাম “এই লোকটা এমন কেনো? এত ভালোবাসে আমাকে, তবু বলেনা কেনো? কী আছে আমার ওকে দেওয়ার মতো?” আমার হাতটা ধরেই রেখেছিলে সেই বিকেল থেকে সন্ধ্যা, মাঝে আনমনে মুঠো করে তোমার ঠোঁট ছুঁয়েছিলে আমার হাতের পিঠে। একঝলকের সেই পাওয়ায় মনে হয়েছিল তোমার কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই, আর কিছু জানার বাকি নেই।

আজ সারাটাদিন, ডি সি হিলে কাটিয়ে ফিরে পেলাম আমার শৈশব, কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যে ভুলতে পারলামনা সেই ফুলার রোডের স্মৃতি। সেইদিনের স্মৃতি, যেদিন মনে হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এই আমি। আজ কেন যেন চোখের পাতায় স্মৃতির আনাচে কানাচে ভর করেছিলে তুমি। বারবার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তোমার সাথে দেখা হবে আর খুব ধমক দিয়ে তুমি বলবে “এখনও তুই বাইরে বাইরে ঘুরছিস? চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি।” মুখ কাঁচুমাচু করে মনভরা চাপা আনন্দ নিয়ে আমি তোমার সাথে রিক্সায় উঠে বলবো “সবাইকে তো দেখি রিক্সায় চড়লে ভালোবাসার মানুষটাকে পেছন থেকে একহাতে জড়িয়ে ধরে।” আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তুমি তখন বলবে “খুব ভালোবাসা শিখেছিস, না? এইসব পাকামি করার এখনও সময় হয়নি তোর, মন দিয়ে পড়াশুনা কর নাহয় বাসায় আমি মুখ দেখাতে পারবোনা।”

নাহ্‌, দেখা হলোনা তোমার সাথে। হবে কিভাবে, আমার মনের ভেতরেই তো বসে আছ নিরন্তর চিরকাল। আরও একটা বছর পার হয়ে গেলো এভাবে, তাই না?

শুভ নববর্ষ, তোমাকেও!!

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১২ সকাল ১০:৫৪
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×