somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

না পারি সইতে, না পারি কইতে

২৭ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Bismillahir Rahmanir Rahim

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

ঘটনা-১

তিথির আর শাহিনের সংসার। চার বছরের একটি ফুটফুটে সন্তান তাদের। শাহিন সংসারের দায়িত্ব সুন্দর ভাবে পালন করে।তিথির কখন কি লাগবে, বাচ্চার প্রতি খেয়াল, মা-বাবা, ভাই বোনের প্রতি কর্তব্য, কোনটাতেই তার অবহেলা নেই। এমনকি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সে পড়ে। দু’বার হজ্জও করে এসেছে। যে মানুষটা এমন, তার তো কোন অপরাধ থাকতে পারে না। দোষের মধ্যে একটাই দোষ, মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে বেড়ায়। আর এটা তার আনন্দ। সে এটাকে দোষ হিসাবে মানতে নারাজ। কারণ সে তো তার দায়িত্বে কোন অবহেলা করে না। প্রথম প্রথম তিথির বিশ্বাস হতে চাইতো না। আস্তে আস্তে দেখলো যে তার প্রতি শাহিনের যে দায়িত্ববোধ আর ভালোবাসা সেটা পুরোটাই লোক দেখানো। তিথি নানাভাবে শাহিনকে ফিরানোর চেষ্টা করে। শাশুড়ি আর ননদকে বলে। বলার পর নিজেই আরো ছোট হয়ে যায়। কারণ তারা বিশ্বাসই করতে চায় না। দিন দিন তিথির সাথে শাহিনের দূরত্ব বাড়ছে। তিথি কোন চাকরীও খুজে পাচ্ছে না যে আলাদা হয়ে যাবে। বাচ্চাটার দিকে তাকালে তার মায়া লাগে। বাবার আদর পাবে না ভাবতেই কষ্ট হয়। তাছাড়া সমাজের ছিঃ ছিঃ শোনার মত মানসিক শক্তি তার নেই। মানসিক যন্ত্রণায় সে অস্থির। না পারে সইতে, না পারে কইতে।

ঘটনা-২

আনিতা ও মাহিনের বিয়ের ২০ বছর পূর্ন হয়েছে। দু’টো ছেলে মেয়ে তাদের। দুজনই স্কুলের গন্ডি পার হয়েছে মাত্র। খুব কম বয়সে আনিতার বিয়ে হয়। মাহিনের সাথে তার বয়সের পার্থক্য একটু বেশী। নানা ঝড় ঝাপটায় সে মাহিনকে সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছে। কোনদিন কিছু চায়নি সে মাহিনের কাছে। নিজের সমস্ত শখ আহ্লাদ দূরে ঠেলে দিয়েছে প্রয়োজনের তাগিদে। বছরের পর বছর মাহিন তাকে শারীরিক সুখ, অর্থনৈতিক মুক্তি আর মানসিক সাপোর্ট দিতে পারে না। তারপরেও মাহিনের সাথে আছে। কারণ সে মাহিনকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। আশায় আশায় থাকে যদি পরিবর্তন আসে মাহিনের মাঝে। আনিতা ধার্মিক। শারীরিক চাহিদা আর অর্থনৈতিক সুবিধা মেটানোর জন্য তার সামনে অনেক সুযোগ এসেছিল। কিন্তু আল্লাহ্‌র ভয় তাকে খারাপ কিছু করতে বিরত রাখে। আনিতা স্বাবলম্বী। ইচ্ছা করলে সে নিজে একা থাকতে পারে। কিন্তু সন্তানের এখন ভবিষ্যৎ গড়ার সময়। তাদের ভবিষ্যৎ সে নষ্ট করে দিতে চায় না। আজ ২০ বছর পর নানা ঘাত প্রতিঘাতে জর্জরিত আনিতা নিজের উপরই রাগ করতে থাকে। তার ২০ বছর লাগলো বুঝতে যে, মাহিন তাকে ভালোবাসে না। বরং অবহেলা করে। সমাজে থাকতে হলে বিয়ে করতে হবে বলে মাহিনের বিয়ে করা। তাই স্ত্রীর প্রতি মাহিনের কোন দায়িত্ববোধ নেই। মাহিন যা করে, সেটা শুধু সন্তানের জন্যই করে। আর্থিক কষ্টে থেকেও আনিতা মাহিনকে বলেছে, তার বেশী কিছু চাওয়ার নেই। শুধু পাশে থাক, হাতটা ধরো, প্রতিদিন কপালে একটা চুমু খাও। ছোট ছোট চাওয়া। যে চাওয়ায় কোন আর্থিক লেনদেন নেই। কিন্তু মাহিন ভাবলেশহীন। সে নানারকম উসিলা দেয়। নিজের বোকামির জন্য নিজের উপর রাগ বাড়তে থাকে আনিতার। মনের অবস্থা শরীরের উপর পরে। সবাই জিজ্ঞেস করে, এই অবস্থা কেনো আনিতা ? চেহারা খারাপ হয়ে যাচ্ছে কেনো ? আনিতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। না পারে সইতে, না পারে কইতে।

ঘটনা-৩

অহনা আর দ্বীপের বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় ১২ বছর। তারা ভালবেসে বিয়ে করেছিল। একটি দশ বছরের ছেলে আছে তাদের। প্রথম প্রথম ভালোই কাটছিল তাদের। অহনা ঘর সংসার সামাল দেয়। দ্বীপ ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে। ব্যস্ততা বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা যে অহনা আর বাচ্চাটার সাথে ঠিকমত কথা বলাও হয় না দ্বীপের। টাকার নেশায় বুদ হয়ে আছে দ্বীপ। অহনার মনের দিকে তাকানোর সময় নেই তার। অহনা কাউকে কিছু বলতে পারে না। তার তো কোন অভাব নেই। প্রথম প্রথম কাছের মানুষদের কাছে সে অভিযোগ করলে তারা বলতো, সুখে থাকলে ভুতে কিলায়। খুব ভুতের কিল খাচ্ছো, তাই না। দিন দিন অহনা আর দ্বীপের দূরত্ব বেড়েই চলছে। চলতে হবে দেখে চলা। ছেলের দিকে তাকিয়ে অহনা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

ঘটনা-৪

একটু বেশী বয়সেই বিয়ে হয় সুমনা আর তারেকের। ৬ বছরের একটি সন্তান তাদের। ভালোই কাটছিল জীবন। হঠাত ছন্দপতন। তারেক রাত করে ফিরছিল কয়েকদিন। এরপর একদিন রাতে বাসায় আসলো না। পরদিন এসে কাজের অজুহাত দিল। এরপর কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবারো তারেক উধাও। এবারে সপ্তাহখানেক পর ফিরল। আবারো নানা অজুহাত। এরপর একমাস আসে না। সুমনা পাগলের মত। টাকা পয়সা নেই সংসার চালানোর মত। ভাই বোনেরা সাহায্য করছে কোনমতে। তারেকের খোজ চলছে। খোজ পাওয়া গেলো। তারেক আরেকটা বয়স্ক মহিলাকে বিয়ে করেছে। সুমনা কি করবে বুঝতে পারে না। সবাই তাকে তারেককে ছেড়ে চলে আসতে বলে। কিন্তু সুমনা কোথায় যাবে ? সে পাগলের মত কাজ খুজে। বাচ্চাটাকে মানুষ করতে হবে। একদিন তারেক আসে। সুমনা ফিরিয়ে দিতে পারে না। কাছের মানুষেরা রাগ হয়। তারা বুঝে না সুমনার মনের অবস্থা। তারেককে সে ভালোবাসে। তারেককে দেখলে সে তার রাগ ভুলে যায়। ক্ষমা করে দেয়। তারেক চলে গেলে আবার ফুসে উঠে সুমনার রাগ। এভাবেই চলছে।

ঘটনা-৫

আনিস ও শাহেদার বিয়ের বয়স ৪০ বছর। ছেলে মেয়ে নাতি নাতনি নিয়ে সংসার। সারাদিন ব্যস্ত সংসার নিয়েই। দিন শেষে দু’জনেই ঘরে যান ঘুমাতে। কিন্তু দুজনের ঘর আলাদা। শাহেদাই আলাদা ঘরে থাকা শুরু করেন। কাছের মানুষেরা চেষ্টা করেছিল জানার জন্য, সমাধানের জন্য। কিন্তু শাহেদা খালি চোখের পানি ফেলেন। কিছুই বলেন না। আর আনিস ভাবলেশহীন।

উপরের ঘটনাগুলো মোটেও কাল্পনিক নয়। সব সত্যি ঘটনা। শুধু নামগুলো কাল্পনিক। লেখার কলেবর বৃদ্ধি হওয়ার ভয়ে এমন অনেক ঘটনা লিখলাম না। মিডিয়াতে আমরা অনেক নারী নির্যাতনের খবর পড়ি, দেখি। বেশীর ভাগই হচ্ছে শারীরিক নির্যাতনের খবর। অথচ ঘরে ঘরে যে মেয়েদের মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে সে খবর কে রাখে।

একটা মেয়ে তার মানসিক নির্যাতনের কথা সহজে কোন ছেলে কে বলতে পারে না। আসলে সে কাউকেই বলতে পারে না। মুখ ফুটেও বা যদি কখনো বলে, সেটা একটা মেয়েকেই আগে বলে। আর মেয়েরাই উল্টো ভিকটিমকে সাপোর্ট না দিয়ে ভিকটিমকে দোষী করে ফেলে। দুঃখজনক।

ইদানীং ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে। আর পুরুষের চেয়ে নারীর পক্ষ থেকেই নাকি ডিভোর্স দেওয়া হচ্ছে। আমি মেয়ে। আমি জোর গলায় বলতে পারি যে, ৯৯% ভাগ মেয়ে সহজে সংসার ভাঙ্গতে চায় না। সে চেষ্টা করে যেমন করেই হোক সংসারটা টিকিয়ে রাখতে।

বেশীর ভাগ মেয়েদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। নালিশের কোন জায়গা নেই। ছেলেরা এটা বুঝে আর মেয়েদের এই অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়। অতি ধর্মপরায়ণ ছেলেও ভুলে যায় নবী (সাঃ) এর কথা। তিনি (সাঃ) বলেছিলেন, সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।

একটি ভালো মা নাকি সমাজকে বদলে দিতে পারে। যে মেয়ে সারাক্ষণ মানসিক যন্ত্রণায় জর্জরিত অবস্থায় থাকে, সে কিভাবে ভালো মায়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবে ? অবাক লাগে। অথচ বেলা শেষে সন্তান মানুষ না হলে দোষ পরে সব মায়ের উপর। অথচ সংসারের সব দায় ও দায়িত্ব কিন্তু আল্লাহ্‌ দিয়ে দিয়েছেন স্বামীর উপর। স্ত্রী সাথে সহযোগিতা করবে মাত্র।

আমরা সবসময় বলি, সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে। কিন্তু এর পরের লাইনটি কি? সেটা কেউ বলতে চাইনা,বলবো কিভাবে, আসলে জানিই না। পরের লাইনটি হলো, সুযোগ্য পতি যদি থাকে তার সনে। আসলে এই দুটো লাইনও আমি মানি না। বলা উচিৎ, সংসার সুখের হয় পুরুষের গুনে, সুযোগ্য পত্নী যদি থাকে তার সনে।

নারী আন্দোলনকারীরা শুধু ‘সম অধিকার’ ‘সম অধিকার’ বলে চিৎকার করে। তাদেরকে বলতে ইচ্ছা হয়, ভাইরে, এভাবে সম অধিকার বলে আর চিৎকার করবেন না প্লিজ। নারী পুরুষ কখনো সমান হতে পারবে না। যার যার মর্যাদা আলাদা। এটা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকেই আলাদা করা হয়েছে। আপনারা নারীর আসল অধিকারগুলো আদায়ের জন্য চিৎকার করুন, লড়াই করুন। সেটাতেই নারীর লাভ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×