somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বি

১৩ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলুন অসাধারন মেধাবী ও দেশপ্রেমিক এক চিকিৎসকের কথা জানি। চলুন শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বির
কথা জানি।
ছোটবেলা থেকেই সবার মতন দুরন্ত চঞ্চল ছিলেন ডাঃ ফজলে রাব্বি। আবার সবার থেকে একটু আলাদাও । তার গভীর চোখজোড়ায় মাঝে মাঝেই তাই ভেসে উঠত দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন । মা মনিটার চোখ এড়িয়ে, রোদের সাথে বুক মিলিয়ে, গলির মলের পুল পেরিয়ে তাই মাঝে মাঝেই ফজলে রাব্বি হারিয়ে যেতেন কোন অজানায় ! একটু পরেই আবার ফিরতেন, হয়ত একটা সবুজ ছোট্ট ফড়িং বা লাল বনফুল হাতে নিয়ে। ভাবটা এমন, যেন মায়ের জন্যে নিয়ে এলেন অমুল্য কোন উপহার !

১৯৩২ সালে পাবনায় জন্ম নেয়া অসাধারন মেধাবী এই মানুষটি ১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস
করেছিলেন সারা পাকিস্তানে সবার চেয়ে বেশি নাম্বার পেয়ে, জয় করেছিলেন স্বর্ণপদকও । ভাবলেও অবাক লাগে, ১৯৬২ সালে মাত্র ত্রিশ
বছর বয়সে এমআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন ডাঃ ফজলে রাব্বি, তাও একটি নয়, ইন্টারনাল মেডিসিন এবং কারডিওলজি- এই দুই বিষয়ে
দুটি, যা লন্ডনের রয়াল কলেজের ইতিহাসেও রেকর্ড । অসাধারন মেধার পরিচয় দিয়ে ১৯৬৮ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজে
মেডিসিনের অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত তার প্রবন্ধগুলো সেই সময়ে অসাধারন আলোড়ন তুলতো, যার ভেতর অন্যতম ছিল- Spirometry in Tropical Pulmonary Eosinophilia and A Case of Congenital Hyperbilirubinaemia (Dubin-Johnson Syndrome).

তরুন বয়স থেকেই শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেন তিনি। ৫২'র ভাষা আন্দোলন তার চিন্তা-চেতনায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
স্বনির্ভর গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পক্ষে লড়াই করে যাওয়া ডাঃ ফজলে রাব্বি তাই স্বাধীনতাকামী তরুন চিকিৎসক সমাজের কাছে হয়ে
উঠেছিলেন এক অনুকরণীয় আদর্শ । ১৯৭০ সালে অধ্যাপক ডাঃ ফজলে রাব্বি "Pakistan best professor award" এর জন্যে
নির্বাচিত হন। কিন্তু পশ্চিমাদের শোষণের প্রতিবাদে তিনি সেই অ্যাওয়ার্ড গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানান। আর সেদিন থেকেই তিনি
পরিনত হন শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূলে ।

২৭ মার্চ,১৯৭১। কিছু সময়ের জন্যে কার্ফু স্থগিত হলে ডাঃ রাব্বি তার স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাসা থেকে। চলে আসেন তার প্রিয়
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই এলাকায় ঘটে যাওয়া কালরাত্রির নৃশংসতা নিজের চোখে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন তার মেধা দিয়ে দেশের সঙ্কটে কিছু করার । পরবর্তী ৯ মাস অবস্থান করেন ঢাকায়। দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ থাকা
সত্তেও একটিবারের জন্যেও সে কথা না ভেবে কাজ করে যান দেশের জন্যে। কি চিকিৎসায়, কি টাকা-পয়সার প্রয়োজনে, গেরিলা যোদ্ধারা
তাকে চেয়ে পায়নি, এমন দিন বিরল ! ছোটবেলার সবুজ ফড়িং- লাল বনফুলের মত চিকিৎসা-আশ্রয়-সহায়, যা যা সম্ভব তাই নিয়ে সেদিন দেশমাতৃকার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অধ্যাপক ডাঃ ফজলে রাব্বি । স্বাধীনতার নেশায় মগ্ন হয়েছিলেন যেন তিনি !

দেশসেবায় তন্ময় ডাঃ রাব্বি এভাবেই কাটিয়ে দিলেন স্বাধীনতার ৯টা মাস। দেখতে দেখতে চলে এলো ডিসেম্বর, বিজয় তখন শুধুই যেন
সময়ের অপেক্ষা।

১৫ই ডিসেম্বর, ১৯৭১। ২ ঘণ্টার জন্যে কার্ফু স্থগিত হল। সেই সুযোগে স্ত্রীর নিষেধ না মেনে ডাঃ রাব্বি পুরান ঢাকায় এলেন অবাঙ্গালী এক রোগীকে দেখতে । ফেরারসময় দিনের বাজারটা সারতে ভুল করলেন না। তারপর, দুপুরের খাওয়া শেষে দখিন খোলা জানালার পাশে ইজি চেয়ারে শরীরটা এলিয়ে দিলেন, স্ত্রী ডাঃ জাহান আরার শত অনুনয়েও রাজী হলেন না কয়েকদিনের জন্যে বাড়িটা ছেড়ে অন্য কথাও যেতে। শুধু বারবার একটা কথাই বলছিলেন সেদিন- "ছেলেরা এসে যদি আমাকে না পায় ?? আর মাত্র কটা দিন হয়ত জাহানারা, তার পরেই আমরা বিশ্বের বুকে নাম লেখাব, দেখো। সকালের ঘুম ভেঙ্গে হাতে হাত রেখে দেখব স্বাধীনতার লাল সূর্য"।

কথা শেষ না হতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। না, ফজলে রাব্বির যোদ্ধা ছেলেরা নয়, এবার বাড়ি ঘিরে ধরেছে রাজাকার-আল বদরের দল,
সাথে পাক সেনারা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা ফজলে রাব্বিকে নিয়ে চলে গেল রাজারবাগের দিকে । ৩ সন্তানকে বুকে আঁকড়ে হতবাক
দাড়িয়ে রইলেন জাহান আরা। কি হতে যাচ্ছে তা বুঝেও যেন অবুঝ হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন তিনি। আর একটা রাত
পেরুলেই স্বাধীনতা , কিন্তু সেই সূর্যোদয় আর দেখা হলনা ডাঃ রাব্বির।

১৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭১। রায়েরবাজার বধ্যভুমিতে পাওয়া গেল ডাঃ ফজলে রাব্বির লাশ। চোখ উপরানো , হাত মুচরে পেছনে বাঁধা, সারা শরীরে
বেয়োনেটের চিহ্ন । হয়ত স্বাধীনতার স্বপ্ন ভরা সেই চোখদুটির সামনে দাঁড়ানোর সাহস হয়নি ঘাতকের, হয়ত মায়ের জন্যে ছোট্ট হাতে করে সবুজ ফড়িং,লাল বুনোফুল উপহার আনার সৌভাগ্য হয়নি সেই জারজ দালালের- হয়ত তাই, এই অদ্ভুত নির্মমতার স্বীকার হয়ে প্রান দিলেন তিনি।
অথচ শোনা যায়, ঘাতক দলের কোন একজনের মায়ের চিকিৎসা দিতেই ওইদিন পুরাতন ঢাকায় এসেছিলেন দেশসেরা ডাঃ ফজলে রাব্বি
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×