somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

আধিপত্যবাদের আগ্রাসন যখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের অন্তরায়

১৩ ই এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আধিপত্যবাদের আগ্রাসন যখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের অন্তরায়
ফকির ইলিয়াস
=========================================
বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার। বলা হচ্ছে তিনি ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। গন্তব্য পাকিস্তান। বাংলাদেশ ত্যাগের পর বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ আমরা পত্রপত্রিকায় খবর দেখে আসছিলাম, এই বাচ্চু রাজাকার গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারিতে রয়েছেন। গোয়েন্দা নজর এড়িয়ে তিনি কীভাবে পালাতে পারলেন, তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা সর্বত্র।
বাংলাদেশের বর্তমান আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বক্তব্য মাঝে মধ্যেই আলোচিত-সমালোচিত হয়। তিনি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বিভিন্ন সমাবেশে বলেছিলেন, সব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় আদালত গঠিত হওয়ার পর দেশের মানুষ বেশ আশান্বিত হয়েছিলেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজটি দ্রুততা পাবে। কিন্তু বাস্তবে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং বাচ্চু রাজাকারের দেশ ত্যাগের মাধ্যমে প্রশ্ন জেগেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে সরকারের ভেতরে কোন মহল তৎপর রয়েছে কি না!
এটা সবারই জানা, সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের অপরাধীদের জন্য কঠিন কোন কাজ নয়। তারপরও একটি স্থায়ী পরিকল্পনা ভেদ করে কোন চিহ্নিত অপরাধী যখন পালিয়ে যায় তখন দেশের মানুষের তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। হ্যাঁ, গোটা সীমান্ত নিশ্ছিদ্র করে পাহারা দেয়া সম্ভব নয়_ তা দেশের মানুষ জানেন। কিন্তু ঢাকার নিজ ঠিকানা থেকে একজন বহুল আলোচিত রাজাকার পালাবার সুযোগ কেন পেল, কীভাবে পেল তা প্রশ্নবিদ্ধ থেকেই যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য একটি মহল জোরেশোরেই তৎপর রয়েছে। তা দেশের শীর্ষ ক্ষমতাসীনরাও জানেন। বিশেষ করে ২৪ মে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হওয়ার পর বিভিন্ন 'ওয়ার্ড' এর সন্ত্রাসীরা তাদের পায়চারি জোরদার করবে, সেটাও সরকারের অজানা নয়। টাকা, অস্ত্র, পেশির দাপট রাজধানীকে যদি শঙ্কিত করে তোলে তবে এর আঁচ গোটা দেশেই লাগবে। কারণ ডিসিসি নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীরা তাদের দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা শক্তি এবং সামর্থ্যের পরীক্ষা ঢাকায়ই ঘটাবেন তা নিশ্চিত করে বলা যায়। নির্বাচন মানেই শুধু টাকার খেলাই নয়, পেশিশক্তি প্রদর্শনের মহড়াও বটে। যা বিশ্বের গণতান্ত্রিক উন্নত কোন রাষ্ট্রে নেই।
রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা আটকের ঘটনা দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। টিভি সংবাদে দেখলাম, রেলমন্ত্রী তার এপিএসের পক্ষ নিয়েই কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন এ টাকাগুলো এপিএসের ব্যক্তিগত টাকা। এর তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মন্ত্রীর এপিএস যদি এভাবে প্রকাশ্যে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন তবে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের কাছে কত টাকা আছে, তা কে জানে! তিনি মন্ত্রীদের সম্পত্তির হিসাবও জনগণকে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
একটা কথা দেশের সাধারণ মানুষ ভালো করেই জানেন, বিরোধীদল চাইলেই সরকারি দল তাদের সব দাবি মেনে নেয় না। সব কথা তারা গুরুত্বও দেয় না। এমন দাবি আওয়ামী লীগও বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতাসীন সময়ে করেছিল। চারদলীয় জোট সে সবের পাত্তা দেয়নি। তাই সঙ্গত কারণেই বর্তমান মহাজোট সরকারও বিএনপির এসব দাবি শুনবে, তা ভাবার কোন কারণ নেই।
কিন্তু কথা হচ্ছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের অতীতের ওয়াদাগুলো কী বলে? আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা বলেছিলেন তারা তাদের সম্পদের হিসেব দেবেন। বিএনপিও তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারে সম্পদের স্বচ্ছতার কথা বলেছিল। কথা কেউই রাখেনি, রাখছে না। ২০০৮-এর নির্বাচনের সময় বড় বড় জনসভায় বেগম জিয়া ও তার দল বড় বড় ওয়াদা করলেও ২০০১-২০০৬ সালে তারা যে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, লুটপাট করেছিলেন তা ভুলে যায়নি দেশের মানুষ। ফলে নির্বাচনী ফলাফলে সে রায় তারা দিতে কোন রকম কসুর করেনি।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয় এককভাবে। বিশ্বের সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বিরোধীদলের অংশগ্রহণ অবশ্যই সক্রিয় থাকে। বাংলাদেশে কোণঠাসা করে রাখার মানসিকতা এত বেশি প্রবল যে, কাদা ছোড়াছুড়ির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষতিকে বরণ করে নিলেও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের বিষয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নজির কমই তৈরি হয়েছে। মেরুকরণের রাজনীতি, একাত্তরের পরাজিত হায়েনা শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে প্রকারান্তরে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে নানাভাবে।
সর্বত্র দখলের যে তৎপরতা তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না নিরঙ্কুশ মহাজোট সরকার। আওয়ামী লীগ, সংখ্যালঘুদের অন্যতম নিরাপত্তা প্রদানকারী দল, এমন একটি কথা চালু থাকলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের সাম্প্রতিক নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা শঙ্কার ঢেউ তুলেছে দেশে-বিদেশে। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, দেশে কীভাবে হিন্দু নির্যাতন চলছে তা নিজ চক্ষে দেখে আসুন।
এটা অবশ্যই ভালো লক্ষণ নয়। সাগর-রুনি, সৌদি কূটনীতিক খুনের সুরাহা এখনো হয়নি। সাংবাদিকদের আন্দোলন থামাবার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু কি হচ্ছে? না তা তো আমরা দেখছি না।
বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে মানুষ সহজে অনেক কিছু ভুলে যায়। তারা কিন্তু যখন অতীত মনে করে ঘুরে দাঁড়ায় তখন, সেই বেগ ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়ে। যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের মনে করার কোন কারণ নেই, জনগণ তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে না। তাই হিসাব করেই সামনে এগোনো দরকার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল। কিন্তু তাদের বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হয়নি। কথাটি ভুলে গেলে চলবে না।
দখলের আগ্রাসন যদি কোন রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক উত্তরণের অন্তরায় হয়, তবে সে দেশে নানা রকম কালো শক্তির উদ্ভব হয়। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে দেশটি সবার। সে দেশে মানুষ নিগৃহীত কেন হবে আধিপত্যবাদীদের হাতে? কোন শক্তি বলে খুনি হায়েনারা পালিয়ে যেতে পারে দেশ ছেড়ে? অনেক প্রশ্ন। উত্তরগুলো দিতে হবে ক্ষমতায় যারা আছেন তাদেরই। সময় কিন্তু মাত্র দেড় বছর। এর মাঝে 'এক দফা' আন্দোলনের জোয়ার কোথায় গিয়ে ঠেকে, তাও ভাবার বিষয়। দেশের মানুষ শান্তি চান। বিরোধীদলকে সুযোগ দেয়ার আগে মনে রাখতে হবে, বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে যাওয়ায় মির্জা ফখরুলরা কিন্তু অখুশি হননি!

নিউইয়র্ক , ১১ এপ্রিল ২০১২
---------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ / ঢাকা / ১৩ এপ্রিল ২০১২ শুক্রবার প্রকাশিত
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×