somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বানর এবং ডারউইন

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চার্লস ডারউইনের সাথে পরিচয় হয়েছিল ছোটবেলায় এক চিড়িয়াখানায়। টিচার আমাদের বানর দেখাচ্ছিলেন।
- ডারউইন নামের এক বোকা বিজ্ঞানীর নাম জান তোমরা?
- না, টিচার। (কয়েকজন অতিআঁতেল হাত তুলেছিল অবশ্য:|)
- উনি বলেছিলেন, বানর থেকে মানুষ এসেছে।

আমিতো অবাক। :D মানুষ এতো বোকা হয়? বানর গুলা কত ছোটো। কাপড় পড়ে না। কথা বলে না। খালি কিচ্‌কিচ্‌ করে আর বাদাম খায়।
:)
আমরা খুব মজা করে বাদাম ঢিল দিচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে বানররাও তুমুল উৎসাহে আমাদের ঢিল দিতে শুরু করল। বিষ্ঠার আঘাতের হাত থেকে বাঁচতে আমরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটাছুটি শুরু করলাম। X(
"বাঁদরের দল, মজা দেখাচ্ছি"- টিচারের লাঠি সেদিন কেন যে বানরজাতির পরিবর্তে মানবজাতির পৃষ্ঠদেশের ওপর চড়াও হল তা বুঝতে পারলাম না। X((

পরবর্তিতে আঁতেল এক বন্ধুও এ ব্যাপারে জ্ঞান জাহিরে স্বপ্রণোদিত হল, "বানর থেকে যদি মানুষ আসত, তাহলে এখন বানর থেকে মানুষ হয় না কেন?"
নিতান্ত বিরক্তিকর ছেলে হলেও ওর কথা শুনে ভাল লাগল। পরবর্তিতে এই যুক্তি বিভিন্ন তর্ক ও আড্ডায় ব্যবহার করে বাহবা পেয়েছি। ;) এ সম্পর্কে জানার আগ্রহ খুব একটা ছিলনা, দরকারও ছিল না। শুধু মাঝে মাঝে "Survival of the fittest" কোটেশনটি ব্যবহার করেছি এই মতবাদের সারাংস হিসেবে (বলাবাহুল্য কিছু না বুঝেই)।
সমস্যায় পড়লাম আমার এক মামাত ভাইকে পড়াতে গিয়ে।

ইংলিশ মিডিয়ামের "ও" লেভেলের সিলেবাসে ডারউইনের থিওরি আছে। মানসম্মান বাঁচানোর তাগিদে, লুকিয়ে ও লেভেলের বই কিনলাম এবং আমাদের বাংলা মিডিয়ামের এইচ এস সি তেও কেন এটি সম্বন্ধে লেখা নেই তা ভেবে মেজাজ খারাপ হল।X((


থিওরিটা অস্পষ্টভাবে জানতাম। নতুন ভাবে পড়ে মজা লাগল -

প্রকৃতি সেই সব ভাল "জিন" কেই বেছে নেয় এবং পরবর্তি বংশধারায় প্রবাহিত করে যা প্রতিকূল পরিবেশে সেই নির্দিষ্ট জীবের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। একইভাবে প্র‌য়োজনের তাগিদে জিন সমূহে ক্ষুদ্র পরিবর্তন হয় (মিউটেশন), যা আরো ভালো জিন তৈরি করে এবং পরবর্তি বংশধারায় সেই ভালো জিন প্রবাহিত হয় এই প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার কারণে। এভাবেই বংশপরম্পরায় জীবের ডিএনএ তে মিউটেশন হতে হতে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে নতুন প্রজাতি আসতে কখনও কখনও লক্ষাধিক বছরও সময় লাগতে পারে।

ডারউইন অল্প সময়ে লক্ষাধিক বছরের পরিবর্তন কিভাবে প্রমাণ করলেন তাও বেশ অদ্ভুত। সেসময় ইংল্যাণ্ডে এক প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যেত। এগুলো ছিল কাল ও সাদা এই দুই রং এর।
এরা সাদাটে রং-এর বাকল বিশিষ্ট এক ধরণের গাছে থাকত। বলাবাহুল্য, এ কারণে কাল রং এর প্রজাপতি সহজেই ধরা পরে যেত এবং অন্য প্রাণীর খাদ্যে পরিণত হত। ডারউইন লক্ষ্য করলেন কাল রং এর প্রজাপতির সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। এমনকি কাল ও সাদা প্রজাপতির প্রজননে সাদা প্রজাপতির জন্ম হচ্ছে বেশীর ভাগ সময়। এরপর ইংল্যাণ্ডে শিল্পবিপ্লব হল। কলকারখানার কাল ধোঁয়ায় সেই গাছগুলোর রং কাল হয়ে গেল। ফলে এবার উল্টা ঘটনার সূত্রপাত হল। সাদা প্রজাপতিরা সহজেই ধরা পড়তে লাগল এবং মারা যেতে লাগল। এবার দেখা গেল, কাল ও সাদা প্রজাপতির প্রজননে কাল প্রজাপতির জন্ম বেড়ে গেছে। সাদা প্রজাপতি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলে গেল।

বানর ও মানুষের ব্যাপারটায় ডারউইন এর ব্যাখ্যা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি। তবে যেটুকু বুঝলাম, তার ধারণা ছিল বানর ও মানুষের পূর্বপুরুষ একই ছিল। পরবর্তিতে (আজ থেকে প্রায় আড়াই কোটি বছর আগে) হ্যাপ্লড়িনি উপবর্গে এসে বংশধারাটি ভাগ হয়ে যায়। Parvorder Platyrrhini থেকেই মূলত বিভিন্ন প্রজাতির বানরের উৎপত্তি। আরেক Parvorder Catarrhini থেকে পরে পর্যায়ক্রমে Hominoidea> Hominidae> Homininae subfamily হয়ে homo গণ এর উৎপত্তি, যা থেকে Homo sapiens প্রজাতি (মানব জাতি) এসেছে।

তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার না।

যেমন, আমরা জানি প্রজাতি হল a group of organisms capable of interbreeding and producing fertile offspring. অর্থাৎ এক প্রজাতির সাথে অন্য প্রজাতির প্রজননের ফল শূন্য, বাচ্চা হবে না। তাহলে বিবর্তনের ধারায় যে মুহূর্তে নূতন প্রজাতির জন্ম হল সে বংশবৃদ্ধি করার জন্য তারই সমপ্রজাতির আর কাউকে পাওয়ার কথা না। তাহলে সে তার প্রজাতির বংশবৃদ্ধি করবে কিভাবে?

ডারউইন এর মতবাদ এবং এর ব্যাখ্যা রিলেটেড লিংক বা ব্লগ বা বই এর সন্ধান দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। তবে তা সহজ পাঠ্য হলে ভাল হয়।

আমার বোঝার ক্ষেত্রে কোন ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ র‌ইল।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×