somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ধর্ম মতে যাদু-বিদ্যার ইতিহাস এবং এর ক্ষতিকর দিক । এ থেকে বাচার উপায় ।

১২ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাদু বিদ্যার বাস্তবতা অনস্বীকার্য । মানুষের মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তির বহির্ভূত এই বিদ্যার দ্বারা অনেক অসাধ্য সাধন করা যায় । মানুষের স্বাভাবিক বিচার-বুদ্ধির বিলুপ্তি ঘটিয়ে তাদেরকে নানা অপকর্মে লিপ্ত করা, স্বাস্হ্য ও স্বাভাবিক জীবন-যাত্রার বিঘ্ন সৃষ্টি করা ও ধর্মীয় চেতনা বিলুপ্ত করে দেওয়ার ক্ষেত্রে যাদুর অসাধারন প্রভাব রয়েছে । কুরআন-হাদিসে প্রাপ্ত বিবরণ অনুযায়ী দুনিয়ার মানুষ প্রথম যাদু-বিদ্যার সাথে পরিচিত লাভ করেছে হারুত-মারূত নামক দু'জন ফেরেশ্তার মাধ্যমে । বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হযরত ইদ্রিস (আঃ) এর জামানায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের পাপ-পংকিলতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে ফেরেশ্তাগণ এই মর্মে আল্লাহর নিকট অভিযোগ উত্থাপন করল যে, মাওলা ! তুমি দুনিয়া এ কেমন মাখলূক দ্বারা আবাদ করলে, যারা তোমার অবাধ্যতা এবং নানা অপকর্মের দ্বারা দুনিয়ার পরিবেশ একেবারে বিনষ্ট করে দিয়েছে ? আল্লাহ বললেন, মানুষের মধ্যে কাম ক্রোধ হিংসা বিদ্বেষ প্রভৃতি নানা অন্যায় প্রবণতাও দেওয়া হয়েছে । সেসব অনাচার থেকে আত্নরক্ষা করেই তো মানুষ মহাপুরস্কারের অধিকারী হবে । অপরপক্ষে, ফেরেশ্তাগণের মধ্যে আমি কোন মন্দ প্রবণতা দেইনি , তাই তারা কোন মন্দ কাজে লিপ্ত হয় না । অতপরঃ বাস্তবে তা দেখিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই হারুত ও মারুত নামক দু'জন ফেরেশ্তাকে বাবেল নগরে প্রেরণ করা হয় । এই দুই ফেরেশ্তা নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবহিত থাকার পরও অন্যায় প্রবণ মানব সমাজে বসবাস করে নানা মন্দকাজে জড়িয়ে পড়েন । তাদের কাছ থেকেই স্ত্রী লোকদের বশীভুত করা, স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া লাগানো প্রভৃতি অপকর্মে ব্যবহৃত নানা তুকতাক মানূষ শিক্ষা লাভ করে ।

পবিত্র কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত মূসা (আঃ) এর জমানাতেও যাদু-বিদ্যার ব্যাপক প্রচলন ছিল । যাদুকররা তখন শাসক শ্রেণীর মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলো । হযরত মূসা (আঃ) যখন ফেরআউনের দরবারে হাজির হয়ে আল্লাহ প্রদ্ত্ত বিশেষ মুজিজা প্রদর্শন করেন, তখন ফেরআউন তার দেশের বড় বড় সব যাদুকরদের ডেকে হযরত মূসা (আঃ) কে মোকাবেলা করার নির্দেশ দিয়েছিলো । কিন্তু আল্লাহর নবীর মুজিজার সামনে যাদুকরদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় ।

যাদুর ব্যাপক প্রসার ঘটেছিলো হযরত সুলায়মান আ. এর শাসনামলে । এ সময় জ্বিন ও মানুষের মধ্যে ব্যাপক মেলামেশা হত । হযরত সুলায়মান (আঃ) জ্বিনদের দ্বারও কাজ নিতেন । এই সুযোগে মানুষেরা দুষ্ট জ্বিনদের (কুরআনের ভাষায় শয়তান ) কাছ থেকে যাদুবিদ্যা আয়ত্ত করেছিলো । তখন থেকেই ইহুদীরা যাদুবিদ্যাকে তাদের ধর্মীয় উত্তরাধিকার রুপে গ্রহণ করে । ওদের রাব্বি বা ধর্মযাজকেরা সেনেগগ বা ধর্মমন্দিরগুলিকে যাদুবিদ্যার এক একটি অনুশীলন কেন্দ্রে পরিণত করেছিলো । ওরা এ মর্মে প্রচারণা চালাতো যে, হযরত সুলায়মান (আঃ) মানব-দানব নির্বিশেষে সকলকে যাদুর সাহয্যেই বশীভূত করে রেখেছিলেন । পবিত্র কুরআন ওদের দাবী প্রত্যাখান করে বলেছে যে, যাদু একটি কুফরি বিদ্যা । আল্লাহর নবী সুলায়মান (আঃ) এই কুফরিতে জড়িত হন নি । শয়তানরাই অর্থাৎ দুষ্ট জ্বিনরাই এই বিদ্যা চর্চ্চায় লিপ্ত ছিলো । সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ইহুদীরাই জ্বিন সাধন করে যাদুবিদ্যা আয়ত্ব করে এবং দুষ্ট জ্বিনদের সাহায্যে নিয়েই যাদু প্রয়োগ করে থাকে ।

পবিত্র কুরআনের শেষ দুটি সূরায় যাদুর প্রসঙ্গ এসেছে । সূরা ফালাকে গিরো লাগানোর ক্ষতি থেকে আল্লাহর পানাহ চাওয়ার কথা বলা হয়েছে যা সরাসরি যাদু । হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, লবীদ ইবনুল আসাম নামীয় এক ইহুদী যাদুকর এবং তার দু্ই কন্যায় মিলে যাদু করলে হযরত নবী করিম (সাঃ) অসুস্হ হয়ে পড়েন । দীর্ঘ ছয়মাস তার এই অসুস্হতা অব্যাহত থাকে । অতঃপর হযরত জীবরাঈল (আঃ) এর আগমন হলো । তিনি বলে দিলেন যে, অমুক কূপের মধ্যে আপনার মাথার কয়েকগাছি কেশ দ্বারা ভাঙ্গা চিরূণীর মধ্যে গিরো লাগিয়ে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে । কাউকে পাঠিয়ে সেটি উঠিয়ে আনুন । হযরত নবী করীম (সাঃ) লোক পাঠিয়ে গিরো লাগানো চিরুণীটি উদ্ধার করে আনলেন । গিরোগুলি খুলে দেওয়া হলো এবং যাদুর সকল ক্রিয়া বিনষ্ট হয়ে গেলো ।

কুরআনের শেষ সূরা নাসে খান্নাসের কু-মন্ত্রণা থেকে আল্লাহ পানাহ চাইতে বলা হয়েছে । সেই খান্নাস কারা ? যারা মানুষের মনের মধ্যে নানা কু-মন্ত্রণা প্রবেশ করিয়ে দেয় । আর এরা জ্বিন এবং মানুষ উভয় প্রকারের মধ্যেই রয়েছে । উল্লেখ্য যে, শয়তান জ্বিন প্রজাতির মধ্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে । সূরা তওবার ৫০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, সেছিল জ্বিন প্রজাতির । অতঃপর আল্লাহতায়ালার নাফরমানি করেছে ।

মোটকথা, যাদু একটি শয়তানি বিদ্যা । এর প্রয়োগ দ্বারা নানা প্রকার অসাধ্য সাধন করা হয় । যুগ পরষ্পর ইহুদীর নিকট থেকে যাদুর চর্চ্চা বিশ্বময় বিস্তার লাভ করেছে । বৈজ্ঞানিক উন্নতির এই যুগেও যাদুর প্রয়োগ এবং অনিষ্টকরিতা থেমে নেই । এই ক্ষতিকর বিদ্যাটি আয়ত্ব এবং অন্যের উপর প্রয়োগ করতে গিয়ে এমনসব জঘণ্য ধরনের নোংরা কিছু অপকর্ম করতে হয় যা বর্ণনা করার মত নয় । তারপরও নিতান্ত শয়তান প্রকৃতির কিছু লোক যাদুবিদ্যা আয়ত্ব করে ও প্রয়োগ করে থাকে । যাদুর অনিষ্টকারিতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুরআনের কিছু সংখ্যক আয়াত এবং হাদিস শরীফে দোয়া রয়েছে । মুমিন-মুসলমানগণ পক্ষে সেগুলি আয়ত্ব করে আত্নরক্ষা করার পথ খোলা রয়েছে ।
সূরা নেসার একখানা আয়াতে জ্বিবত ও তাগুতের উপর আস্হা বা বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে । হযরত ওমর (রাঃ) এই আয়াতের তফসীরে জ্বিবত অর্থ যাদু এবং তাগুত অর্থ শয়তান বলেছেন ।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) এর বর্ণনা , রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মানুষের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয় সাতটি অপকর্ম, তন্মেধ্যে একটি হচ্ছে যাদু করা ।
বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছে যে, বাজালা ইবনে আবদুহু বর্ণনা করেন যে, আমার নিকট প্রেরীত এক ফরমানে হযরত ওমর (রাঃ) লিখেছিলেন- যারা মানুষকে যাদু করে ওদেরকে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত কর । হযরত ওমর (রাঃ) এর এ ফরমান পেয়ে আমি নিজ হাতে দু্ই যাদুকরকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেছি ।

সুত্র- Monthly Madina.
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×