somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে সঙ্কট চলছে লোকাল, ভাড়া নিচ্ছে সিটিং সার্ভিসের

১২ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নগরজুড়ে গরিব মানুষের যানবাহনের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেই সাথে চলছে ভাড়াসন্ত্রাস। কোনো কোনো রুট থেকে বাস উঠে গেছে, নতুন করে সেসব রুটে বাস নামাচ্ছে না অপারেটররা কিংবা সরকার। ফলে দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নগরীর মানুষজন।
গত বছর কয়েক দফা কমপ্যাক্ট ন্যাচারাল গ্যাস-সিএনজি ও তেলের দাম বাড়ানোর পর ভাড়া নিয়ে নগরজুড়ে চলছে বাড়াবাড়ি, নৈরাজ্য। সরকার এ বাড়াবাড়ি রোধ করতে পারেনি। পাইকপেয়াদা বরকন্দাজ নানা কিসিমের লোক নেমেছিল রাস্তায় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভাড়ার নামে নৈরাজ্য থেকেই গেছে।
বাস মালিকদের রোখে, এমন সাধ্য কার! ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলছেন, এবার বাসভাড়া নিয়ে সঙ্ঘাত হয়নি। সঙ্ঘাত হয়নি মানে সবাই এটা মেনে নিয়েছেন।
এনায়েত উল্যাহর মালিকানাধীন ‘এনা’ পরিবহন ছাড়ে মতিঝিল থেকে। যায় মিরপুর। ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২৩ টাকা। ফার্মগেট থেকে শাহবাগ এলে নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, সে মতে তাদের সর্বনিম্ন ভাড়া হওয়ার কথা সাত টাকা। তাহলে এত অল্প দূরত্বে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে কোন যুক্তিতে!
এনায়েত উল্যাহ বলছেন, পত্রিকায় সত্য লেখা হয় না। অথচ কাল বিকেলে এনা পরিবহনে চেপে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ এসে বাড়তি এ ভাড়া গুনতে হয়েছে। কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘মালিককে বলেন; আমাদের যা বলা হয়েছে, আমরা সে হিসাবে ভাড়া নিচ্ছি।’
ভাড়া নিয়ে সঙ্কট
সর্বনিম্ন ভাড়ার বিধান মানছেন না কোনো বাসের মালিক। মোহাম্মদপুর থেকে সিএনজিচালিত বেশ কিছু বাস মতিঝিল আসে। সরকারি হিসাবে মোহাম্মদপুর থেকে এই দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। এক টাকা ৫৫ পয়সা কিলোমিটার হিসাবে এর ভাড়া হতে পারে ১৩ টাকা ৯৫ পয়সা। আগে এসব পরিবহনে ভাড়া নেয়া হতো মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৫ টাকা। তখনো তারা ভাড়া নিত নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি। এখন তা বাড়িয়ে তারা ২০ টাকা করেছেন। এ বিষয়ে একটি ব্যানার ঝুলছে মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল আসা বাসগুলোর কাউন্টারে, এতে যাত্রীদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সিএনজির মূল্যবৃদ্ধি, মবিল, চাকা ও খুচরা যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা ভাড়া বাড়িয়েছেন। তাদের নির্ধারণ করা হিসাবে মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিলের ভাড়া ২০ টাকা। প্রেস কাব ও শাহবাগের ভাড়া ১৫ টাকা। আর বাসে উঠলেই গুনতে হবে ১০ টাকা। অথচ সরকার বলছে, ভাড়া হবে সর্বনিম্ন ৭ টাকা। কিন্তু এটি তারা মানছেন তো না-ই, তার ওপর সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি ভাড়া আদায় করছে। এ অবস্থা মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল আসা এটিসিএল, মেগা সিটি, রাজধানী, মৈত্রী, সিটি বাস, মালঞ্চ, রঙধনুসহ সব পরিবহনেই। একই অবস্থা মিরপুর থেকে মতিঝিল ও আবদুল্লাহপুর থেকে মতিঝিল এবং মতিঝিল থেকে নারায়ণগঞ্জ, ধূপখোলা, চিটাগাং রোড, নারায়ণগঞ্জ রুটের সব বাসে।
লোকাল বাসের সঙ্কট
গাবতলী, মিরপুর, চিড়িয়াখানা, আবদুল্লাহপুর, মোহাম্মদপুর থেকে একাধিক লোকাল বাস চলাচল করত রাজধানীর বিভিন্ন রুটে। কিন্তু এখন এসব বাস হঠাৎ করে লোকাল সিটিংয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাসভেদে ভাড়া নেয়া হচ্ছে সর্বনিম্ন পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। মোহাম্মদপুর থেকে নিউমার্কেট হয়ে ধূপখোলা যাওয়া ১৩ নম্বর বাসটি ছাড়া এখন আর কোনো লোকাল বাসের দেখা মেলে না মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝল রুটে। তাতেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়া দাবি করা হচ্ছে পাঁচ টা। এ নিয়ে গতরাতে যাত্রীদের সাথে বাসের কন্ডাক্টরের বিতণ্ডা বাধে। কিন্তু ভাড়া পাঁচ টাকা আদায় করে ছেড়েছেন কন্ডাক্টর। তার মতে, ভাড়া কম দিলে যাত্রীরা ট্রাকের নিচে পড়ে মরবে। ভাড়া বেশি নিলে কী হবে জানতে চাইলে কন্ডাক্টর বলেন, ভাড়া বেশি দেবে যা ভাড়া তাই দেয় না!
মোহাম্মদপুর থেকে ভুলতা-গাউছিয়া যাওয়া সাবেক ১২ নম্বর বাসগুলো আগে ওই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বেশ কাজে দিয়েছিল। প্রায় বছর হতে যাচ্ছে এটা সিটিং সার্ভিসে রূপান্তর হয়েছে। এতে ফার্মগেট হয়ে যারা মতিঝিল বা যাত্রাবাড়ী যেতে চান তাদের ভোগান্তি অন্তহীন। দিনভর অনেক যাত্রীকে লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া মাস তিনেক ধরে তারা সিটিং ভাড়া নিলেও বাসে গণহারে যাত্রী তুলছে। এ বাসেও সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা। এ বাসে প্রথম দিকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া ছিল এতে কোনো যাত্রী দাঁড় করিয়ে নেয়া যাবে না। পরে তা তুলে নিয়ে লাগানো হলো তিনজনের বেশি যাত্রী দাঁড় করিয়ে নেয়া যাবে না। বিজ্ঞপ্তি বিজ্ঞপ্তির জায়গায় আছে, আর বাসটির কর্মচারীরা এটাকে লোকাল পরিবহনের মতো করে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া আদায় করে যাচ্ছে।
উত্তরা ও গাজীপুর থেকে আসা-যাওয়া করা বেশির ভাগ বাসই লোকাল সিটিং, তিন নম্বর বাসের দু-একটি লোকাল হিসেবে চলে, বাকি সব লোকাল সিটিং হিসেবে রূপান্তর হয়েছে। তিন নম্বর বাসে বড় করে লেখা সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা Ñনির্দেশক্রমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। কবে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে তা অবশ্য কেউ জানাতে পারেনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে। গাবতলী থেকে চলা সাবেক ৮ নম্বর বাসগুলো সবই এখন সিটিং সার্ভিস। মিরপুর থেকে চলাচল করা ১, ২ ও ১৫ নম্বর বাসগুলোর সবই এখন সিটিং সার্ভিস। এসব বাসের হঠাৎ করে সিটিং সার্ভিসে রূপান্তর কিভাবে হলো এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি মালিক বা সরকারপ থেকে। পরিবহন শ্রমিকেরা বলছেন, মালিক করেছেন।
গুলশান রুটের মধুমতি উঠে গেছে
মতিঝিল থেকে নাবিস্কো হয়ে গুলশান রুটে চলাচল করা মধুমতি পরিবহন উঠে গেছে মাস ছয়েকেরও আগে। এ রুটে নতুন করে ব্যক্তি বা সরকারি মালিকানাধীন কোনো গণপরিবহন চালু হয়নি। শোনা গিয়েছিল ফেব্র“য়ারি মাসে বিআরটিসি চালু হবে। কিন্তু তাও হয়নি। প্রতিদিন অফিস শেষ করে ঘরমুখো যাত্রীরা রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা কোনো কোম্পানির সার্ভিস দেয়া মাইক্রোবাসের জন্য। ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকায় মাইক্রোবাসে কিংবা ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দিয়ে অটোরিকশায় তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।
সাধারণ মানুষ যা বলছেন
মোহাম্মদপুরের মোস্তফা বলেন, ‘মতিঝিলে আমি ফলের ব্যবসায় করি। এখান থেকে মাসখানেক আগে যেতাম সাত টাকা দিয়ে ১২ নম্বর বাসে। ক’দিন পর এটা ১২ টাকা করা হলো। এখন যাচ্ছি ১৫ টাকা করে।’ এটা কি কোনো ইনসাফ হলো? জিজ্ঞাসা করলেন তিনি। মিরপুরের বাসিন্দা রিমা জানান, তিনি প্রতিদিন ইডেন কলেজে আসতে খরচ করতেন মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ১৫ টাকা। এখন খরচ করতে হচ্ছে ২০ টাকা। এতে করে তার পরিবারের ওপর একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। একই এলাকায় বসবাস করা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমিনুল বলেন, আগে মতিঝিল যেতাম ১৮ টাকা দিয়ে। এখন ২৩ টাকা। কেবল কি বাসে যাতায়াতের ভাড়া? এ ভাড়া বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজারে যে নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অসহায় হয়ে পড়েছি। কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না।
সরকারের কোনো পদপে নেই
ভাড়া নিয়ন্ত্রণে প্রথম দিকে সরকারিভাবে কিছু পদপে নেয়া হলেও তা স্থায়ী হয়নি। কিছু দিন হম্বিতম্বির পর এখন সরকার নির্বিকার হয়ে পড়েছে। রাস্তায় আছে কেবল পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা, তারা তাদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×