somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রহর

১১ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারেক ঘরে ঢুকেই থমকে দাড়াল। গাদাঁ ফুলের তীব্র গন্ধ নাকে এসে লাগছে। গন্ধ এত তীব্র যে তার মাথা ধরিয়ে দিয়েছে। অন্য কারও কাছে হয়ত আজকের দিনে গন্ধটা ভালো লাগতে পারে কিন্তু তারেকের কাছে এটা ক্রমশ মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়াচ্ছে। গন্ধটা মন থেকে তাড়াবার জন্য নানা বিষয় চিন্তা করতে লাগল। সে কোন্ একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে আশপাশের সব কিছু ভূলে থাকতে পারে।
আসলে আজকে তারেকের দিনটাই শুরু হয়েছে অদ্ভুত ভাবে। শুক্রবার ছুটির দিন বলে বৃহস্পতিবারের রাত সবার কাছে চাদঁ রাতের মত। তারেক তাই আনেক বেলা পযর্ন্ত ঘুমুতে চেয়েছিল। কিন্তু বাবা ছোটবেলার মত বিছানা হতে ডেকে তুললেন। বললেন, এক জায়গায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। সে বাবার বাধ্য ছেলের মত বিছানা ছেড়ে তৈরি হওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকল। বিপত্তির শুরু হল তখন থেকেই। সে বাথরুমে গিয়ে দেখে ট্যাপে পানি নেই। এমনকি টিউবওয়েলেও পানি নেই। গত কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল বলে রক্ষা, সেই পানি বালতিতে জামানো ছিল। তারেক সেই পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে তৈরি হয়।
তারেক বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে ছোট মামা এসেছে। তারেক বলল, আরে মামা হঠাৎ তুমি যে। বড় মামা কেমন আছে?
-তোর বড় মামাও এসেছে।
-কি বল? হুজুর সাহেব তাহলে আসার সময় পেলেন।
তারেকের বাবা ঘর থেকে বের হয়ে এসে বলল, তা হলে রওনা দেওয়া যাক। আকাশের অবস্থা ভাল না।
ছোট মামা বলল, জি দুলাভাই যখন তখন পানি এসে যেতে পারে। শহরের রাস্তার যা অবস্থা অল্প পানি হলেই সুনামি হয়ে যায়।
তারেক বলল, মামা তুমিও যাচ্ছ নাকি?
-যাচ্ছি মানে। আমি না গেলে কী আর হয়।
তারেক আর কথা বাড়াল না। তবে তার কিছুটা সন্দেহ হল। বাবা মনে হয় আবার নতুন কোন ফন্দি আটছেন।
রিক্সায় উঠতে উঠতে তারেক ছোট মামাকে বলল, মামা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-কেন তুই জানিস না।
-জানলে তোমাকে প্রশ্ন করি নাকি?
-তোকে জানান হয়নি! একেই বলে যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া পরশির ঘুম নেই।
-ভনিতা না করে বল।
-তোর জন্য মেয়ে দেখতে।
-আমি না বলেছি মেয়ে দেখার মধ্যে আমাকে টানবে না।
-কার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে দেখবি না?
-না দেখব না।
-রাগ করছিস কেন? মেয়ে না হয় না দেখবি বিয়ে তো করবি?
-মামা কি বলতে চাচ্ছ সব খুলে বলত।
-আজ তোর বিয়ে। গতবারের মত যাতে না হয় সে জন্য সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।
তারেক আর কিছু বলল না। শরৎ এর মেঘ মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। কিছুক্ষন আগেই আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল আর এখন কি পরিস্কার আকাশ। বড় বড় মেহেগুনি গাছের শাখার মধ্য দিয়ে খন্ড খন্ড আকাশ দেখতে বড় ভাল লাগছে।
রিক্সা দুটি বিশাল এক জমিদার বাড়ির সামনে এসে দাড়াল। বাড়িটিতে মনে হয় কিছুদিন আগে রং করা হয়েছে। রঙ এখনো কাচাঁ আছে। দুজন মধ্য বয়স্ক লোক এসে তাদেরকে ভিতের নিয়ে গেল।
তাদের কে যে ঘরে নিয়ে গেল ঘরটা অনেক বড়। ঘরে তেমন কোন আসবাব পত্র নেই। তবে বেশ কয়েকটি তেল রং এর পেইন্টিং আছে। এক দল ছেলেমেয়ে এ ঘর থেকে ও ঘর যাওয়া আসা করেছে আর আড়ঁ চোখে তারেকের তাকিয়ে হাসাহাসি করছে।
ছোট মামা কিছুক্ষন আগে বাড়ির ভিতরে গিয়েছিল। মামা বাড়ির অন্দর থেকে এসে তারেককে বাড়ির ছাদে নিয়ে গেল।
ছোটমামা বলল, খোকা আজ তো মনে হয় তোর বিয়ে হবে।
-কি বল এসব। তুমি না বললে আমরা শুধু মেয়ে দেখতে এসেছি। তার উপর মেয়েই তো দেখলাম না। বিয়ের কথা আসে কোথা হতে।
-মেয়ে না দেখলেও ক্ষতি নেই। মেয়ে দেখতে সুন্দর যেন হুরপরী।
-মামা আমি মানুষ, মানুষ হুরপরী বিয়ে করে না, আমিও হুরপরী বিয়ে করতে পারব না।
-তুই রাগ করছিস কেন? মেয়ে তোর পছন্দ হবে।
কিছুক্ষন ভেবে তারেক বলল, আচ্ছা মেয়ের নাম কি? বিয়েতে মেয়ের মত আছে তো?
-মেয়ের নাম সামিহা। মেয়ের বাবা-মায়ই তো ধরেছে আজ বিয়েটা পরিয়ে দিতে।
- আমি তো মেয়ের বাবা মাকে বিয়ে করব না। মেয়ে রাজি কিনা বল?
-বনেদী ঘরের মেয়ে বাবা মায়ের কথাই সব। আর শোন মেয়ে ভাল পর্দাশীল।
তারেক আর কিছু বলল না। মামা ভাগ্নে নীচে নেমে এল। এ্ররপরের ঘটনা গুলো অতি দ্রুত ঘটে গেল। সাধারন বিয়েতে কাবিন নিয়ে যে সমস্যা হয় তাও হল না। কিন্তু কাজী আসেত দেরী করল। এই ফাকে ছোট মামা এসে তারেককে আবার ছাদে নিয়ে গেলেন। এবার ছাদে এসে তারেক ছাদের বিশালতায় মুগ্ধ হয়ে গেল। ছাদে কোন রেলিং নেই এতে যেন ছাদের বিশালতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারেক মনে মনে ভাবল একদিন সামিহাকে নিয়ে এই ছাদে এক সাথে জ্যোসনা দেখবে। অল্প কিছুক্ষন হল মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছে, ঠিকমত কথাও হয়নি। আসলে মুরুব্বিদের সামনে কি আর ঠিক মত কথা বলা যায়। কিস্তু এরই মধ্যে মেয়েটা তারেককে ভাবিয়ে তুলেছে।
মামার কথায় তারেকের ধ্যান ভাঙ্গে, খোকা মেয়েটাতো কান্নাকাটি করেছে। মনে হয় মেয়েটার বিয়েতে মত নাই। হাজী বাড়ীর মেয়ে এরকম তো হওয়ার কথা না..
কথা শেষ না হতেই নীচ থেকে তাদে ডাক পড়ল। কাজী সাহেব এসেছেন।
ঠিক ১০ টা ৫০ মিনিটে তারেকের বিয়ে পড়ানো হল। তারপর সেই তরুন তরুনীর দল এসে তারেককে জোর করে এক ঘরে ঢুকিয়ে দিল আর বলল, দুলাভাই তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকেন তা না হলে রাত ছোট হয়ে যাবে পরে আফসোস করবেন।
তারেক ঘরে ঢুকে আস্তে আস্তে দরজা লাগিয়ে দিল। গন্ধে তার পেটের নাড়িভূড়ি বের হয়ে আসতে চাচ্ছে তার উপর পেটে জামাই খাবার বর্তমান। সারা রাত গন্ধের মাঝে কাটাবে কিভাবে তারেক সেই কথাই চিন্তা করছে।
খাটের উপর নীল শাড়ি পড়ে বসে আছে সামিহা। তারেক ধীরে ধীরে খাটের এক কোনায় গিয়ে বসল। ঘোমটা দিয়ে বসে আছে । মনে হয় কাদছে। বিয়েতে শুধু মেয়েরা কাদে কেন ছেলদের ও কাদা উচিত। তারা তো দীর্ঘ ব্যাচেলর লাইফের সমাপ্তি টানে এই বিয়েতেই। আর কিছু না হোক এই ব্যাচেলর লাইফের জন্য ও তো কাঁদা উচিত।
ঘরে দুজনই চুপচাপ। কতক্ষন সময় যে পেরিয়ে গেছৈ কেউ বলতে পারে না। তারেক নিজে থেকে কথা বলা শুরু করল, তোমার নাম কি?
মেয়ে কোন কথা বলে না।
-আমি জানি তোমার নাম কি তবুও তোমার মুখ হতে শুনতে চাই।
এবারও কোন উত্তর নাই।
-তোমার মন খারাপ, আমাকে পছন্দ হয়নি। অবশ্যি না হওয়ার ই কথা।
আচ্ছা তুমি বোবা নাকি ?
কোন উত্তর না পেয়ে তারেক বলে, ঠিক আছে তোমাকে কিছু বলতে হবে না। আমি বলব তুমি শুধু শুনবে।
তারেক একাই কথা বলা শুরু করল। সে যে এত কথা বলতে পারে তার নিজেরই জানা ছিল না। সে এক নি:শ্বাসে কথা বলেই যাচ্ছে । তার জীবনের কথা, তার বন্ধুদের কথা, তার ছোটবেলার কথা।
- একবার কী হয়েছে শোন আমি আর সাবেত গিয়েছি ওর বান্ধবীর বাসা। ওর বান্ধবী বললে ভুল হবে মানে ওর ইয়ের বাসা। বাসার ভিতরে গিয়ে দেখি ইয়া বড় এক কুকুর খাচার ভিতর বসে আছে। আমাদের দেখে কুকুরটা জোরে ঘেউ ঘেউ করে উঠল। সাবেত আবার কুকুর চরম ভয় পায়। সে খাচায় বন্দী কুকুরের ডাক শুনে দিল ভোদৌড়। চিন্তা কর সে খাচায় বন্দী কুকুরকে দেখে ভয়ে পালাল.....
হাসলে নাতো। আসলে তুমি ওখানে থাকলে হাসিতে তোমার পেট ফেটে যেত।
শীতের দীর্ঘ রাত্রিতে তারেক একাই কথা বলছে। গন্ধের কথা এ বেমালুম ভুলে গেছে।
-আচ্ছা তোমার কি কোন বয়ফ্রেন্ড আছে।
বলতে না চাইলে বলতে হবে না। তবে আমার কথা বলি আমার কোন গালফ্রেন্ড নাই। থাকবে কী করে আমি তো মেয়েদের সাথে কথাই বলতে পারি না। তুমিতো জানি অবিবাহিত ছেলদের আড্ডায় মেয়দের নিয়ে গল্প একটা কমন বিষয়। তো আমরা চার বন্ধু মিলে রাত জেগে আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডার মধ্যে যথারীতি মেয়ে চলে এসেছে। সাবেত নিশানকে বলল,“তোর একমন মেয়ে পছন্দ বলত?” নিশান বলল, “ আমি যে মেয়েকে পছন্দ করব তার কতগুলো গুন থাকতে হবে। যেমন- দেখতে সুন্দর হতে হবে, খাটো হলে চলবে না লম্বা হতে হবে, ব্যবহার ভাল হতে হবে, পর্দাশীল হবে, আর বনলতার মত চুল থাকতে হবে। এই পাচটা গুন হলেই চলবে” তখন সাবেত বলে কি জানো “ বেত গুলা মেয়েকে তুই পাবি কই? এত সব গুন ওয়ালী মেয়ে এই যুগে পাবি না। তোর জন্য আলাদা আলাদা পাচটা মেয়ে খুজতে হবে।”
তারেক এবার তার নিবার্ক বউ এর দিকে এগিয়ে গেল। ঘোমটা উচিয়ে দেখল তার গাল দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তারেক যখন সামিহার হাতের দিকে তাকাল তখন তারও চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করল। সামিহার হাতে যে ছোট একটি বোতল।







০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×