somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্পনায় মগ্ন, বাস্তবের মুখমুখি না হতে চাওয়া বন্ধুহীন মেয়েটা

০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ওহ" আমি বললাম।
"তুমি কি কাদছ?" তমা জিজ্ঞেসা করল আমাকে। ওর কথাটা একপ্রকার তাচ্ছিল্য করেই ফিরে গিয়েছিলাম আমার বেঞ্চে। আবার হয়ে উঠেছিলাম নীরব, ফিরে পেলাম নিজেকে।

খনকার দিন গুলোতে এ যেন এক নতুন রকম শুরু। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম। সেদিন ছিল বছরের শুরুর দিকের দিন। আমার মাঝারি সাইজের চুলে বেণী হতনা, তাই ছোট দুইদিকে দুই ঝুটি বেধে যেতাম স্কুলে, কেননা এক ঝুটির না করার নিয়ম উপেক্ষা আমি করতাম না। সেদিন অনেক দুঃখের শেষ করতে, তমার বন্ধু হতে চেয়েছিলাম। যদিও জানতামনা ওর সাথে কথা বলাই আমার কাল হয়ে দাড়াবে! যাইহোক, ও আমাকে যা বলল তা সংক্ষেপে এমন দাড়ায়,
"না, আমি তোমার বন্ধু হবনা।" ও বলল।
"আচ্ছা" আমি হতবাক মুখে বললাম।
"আমার কথা শুনো মন দিয়ে," তমা বলল এরপর।
"বলো!" একটা শব্দ বলতে আমার কন্ঠনালী ছিড়ে যাবার উপক্রম হচ্ছিল।
"ফারিয়া, তুমি অনেক ছোট। বয়সে নয়, মনের দিক থেকে। তুমি আমার বন্ধু হলে আমার বন্ধুদের সাথে তুমি মিশবে, সেটা আমি চাইনা। আমরা অনেক কিছু নিয়ে কথা বলি, যা তুমি মানতে পারবে না, বুঝতেও পারবে না। আমরা অনেক বড় তোমার চেয়ে, ভাবনায়, চিন্তায়। আমি আমার বন্ধুরা খারাপ হলেও আমরা নিজেদের সঙ্গ ছাড়তে পারবনা, তাই তোমাকে বন্ধু বানাতে পারছি না। তাছাড়া তুমি অসুস্থ, তোমার কোন সমস্যা হতে পারে, মানসিকভাবে, তাই আমাদের সাথে বন্ধু হতে চেয়না।" ও বলে শেষ করল, আর আমি 'এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের' করতে চাইলাম, যদিও পারিনি! তারপর ওহ বলে, চোখের পানি, জল, অশ্রু, যে যাই বলুক, গোপন কিংবা আড়াল করে ক্লাসের অন্যদিকে চলে গেলাম।

মাদের বাড়ির টুকটাক কিছু কাজ করে দেন যিনি, তার নাম কমলা বুয়া। কমলা বুয়া বলত আল্লাহ আমাকে ছেলে বানাতে গিয়ে মেয়ে বানিয়ে ফেলেছিল। সেদিন মনে হচ্ছিল বুয়ার কথা কিছুটা হলেও সত্যি! আমি হয়ত ছেলেদের মতই। নাহলে সেদিন নিজের চোখের জল কেন লুকালাম? ক্লাসে কালে কালে কত ঘটনায় কত মেয়ে কেদেছে, কই ওরাতো চোখের জল লুকায়নি! কিন্তু আমি লুকিয়েছি, কেননা আমিতো ছেলেদের মত। মাঝে মাঝে রাগ হয়, কার উপর তা জানিনা, তবে এই ভেবে রাগ হয়, আমার স্বভাব কেন ছেলেদের মত, আর আমি কেন মেয়ে? ওরা বলে, ছেলেদের চোখ ফাকি দেয়া চলে, কিন্তু মেয়েদের? সেটা কোন দেবতাও পারেনা। আর এখানেই বিপত্তি!আমার চোখে ছোটখাট বিষয়গুলো তেমন মুল্য পায়না, ঠিক মুল্য পায়না বললে চলেনা। ছোটখাট বিষয়গুলো আমি চোখেই দেখিনা, তবে তার মানে এই নয় যে আমার চোখের অবস্থা খারাপ। আর তাই সবার ধারনা আমি নাকি ছেলেদের মত। আমার গলার স্বর মেয়েদের মত, কিন্তু কথার ভাব নাকি ছেলেদের আদলে তৈরী! আমি যখন কোন বিষয়ে মন্তব্য করি, তাও ছেলেদের মত করে বলি!আমি কোন স্বিধান্ত নিলেও ছেলেদের মত, আমার সবকিছুই ছেলেদের মত। আমার কিন্তু ঠিক তা মনে হয়না। আমার মনে ওরা আমার সাথে ছেলেদের সাদৃশ্য একটু বেশিই দেখে। অনেকটা অতিরঞ্জিত করার মত। সব কিছুর আগে ও পরে, আমি একটা মেয়েই! সেটাকে অস্বীকার করা যাচ্ছেনা, সুতরাং এ নিয়ে আর তর্ক নয়।

বে আমি একটা মেয়েকে আমার বন্ধু হতে বলব, এটা একটা অভাবনীয় বস্তু ছিল তখন! দীর্ঘ তিন বছর একা একা স্কুল জীবন কাটানোর পর ক্লাস ফোরে আমার সাথে কথা হয়েছিল ঝিনুকের। ঝিনুক প্রথমে আমার ঠিক বন্ধুর মত ছিলনা। কিন্তু খুব দ্রুত ও আমার বন্ধু হয়ে উঠল, যেহেতু আমার কোন বন্ধুই ছিলনা! আমি ওর সাথে সব কিছু করতাম, স্কুলে কাটানো পাঁচ ঘন্টায় যা করা যেত আরকি। দুষ্টামি আর বান্দরামীর হাতেখড়ি আমি ওর কাছেই পেয়েছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পেয়েছিলাম একজন মানুষের সঙ্গ, এবং এমন কেউ যার কাছে সব বলা যায়! পেয়েছিলাম একজন বন্ধু, যার সাথে বসে ঐ পাঁচ ঘন্টায় আমি ভুলে থাকতে পারতাম, আমি অসুস্থ। আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ, দুর্বল। অধিক চিন্তা আমার শারীরিক অসুস্থতার কারন হতে পারে। আমি ভুলে থাকতে পেরেছিলাম, আমি ভিন্ন। আমি সবার মত ভাবতে পারিনা। আমাকে নিয়ে সবার দুশ্চিন্তা আমাকে আর অসহ্য করে তুলত না। ও আমাকে শিখিয়েছিল, মানুষের অনেক কিছু থাকে, আবার অনেক কিছু থাকেনা। কেউ ভাবে এভাবে, কেউ ওভাবে! আর সবাই যাই ভাবুক, আমি নিজের কাছে ঠিক থাকলেই চলে। অনেকটা 'আপনি ভালো থাকলে দুনিয়া ভালো' এর মত!

রপর আমি কিছুটা অন্যরকম হয়েগিয়েছিলাম। আমি ভাবতাম আমার সামনে একটা সুন্দর পৃথিবী আছে। কিন্তু যেদিন থেকে ওকে দেখলাম না, মনে হচ্ছিল পৃথিবীটা বদলে গেছে। কিন্তু এভাবে জীবন চলে না, আমার পাশে কেউ চাই। যাকে সব না হলেও অনেক কিছু বলা যায়। কিন্তু তা করতে গিয়েই এত কিছু হয়ে গেল!
(চলবে)
ভালো থাকুন!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৩
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×