somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুল সিদ্ধান্ত

০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে বছর ডিসেম্বরে আমার সঙ্গে সজীবের বিয়ে হয়েছিল সে বছরই জানুয়ারীতে আমার কি জ্বর! জ্বর থেকে ধরা পড়লো বড় অসুখ। আমি প্রায় মরো মরো অবস্থা। আমার টেবিল ভর্তি ওষুধ জমা হলো। কখনো ব্যথায় চেচামেচি শুরু করে দিলে পাশের ওয়ার্ডের রোগীরাও ঘুমাতে পারতো না। আমি শুকিয়ে যাচ্ছিলাম। বন্ধুরা বলতো আমার মত মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে কি করে এমন হয়ে গেল। আমি মা হবার পর নিজের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। একদিন রাতে আমার মনে হল আমি বাঁচবো না। আমি নাকি ঘুমের ঘোরে আম্মুকে ডাকছিলাম আর বলছিলাম ট্যাংরা মাছ দিয়ে ঝোল করে দেয়। রাতের বেলাম পুতুলের কথা মনে হতো। আমি চোখ বন্ধ করলে পুতুলকে দেখতাম। ও ছিল এত লক্ষী আর সুন্দর যে আমি তাকে দেখলেই মনে হয় গাল টিপে আদর করে দেই। ওর গালগুলো আপেলের মত টুসটুসে। আমি এত পাতলা গড়নের মা ছিলাম যে ওকে বেশিক্ষণ কোলে নিতে পারতাম না।

আমাকে একটি বারও দেখতে আসেনি নিরু। নিরু আমাকে ফেলে লণ্ডন চলে গিয়েছিল। আমার বাসা থেকে যখন বিয়ে ঠিক হল দুর সম্পর্কের খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে, আমি পালিয়ে কুমিদের বাসায় উঠেছিলাম। কুমির আম্মা আমাকে পছন্দ করতেন। কুমি আমাকে বলেছিল নিরুকে বিয়ে করতে। কেননা নিরু তখন আমার জন্য পাগল। সে আমাকে নিয়মিত প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছিল। আমি পরিবারের পছন্দ মফস্বলী মেধা কাজিনটিকে ছাড়া যে কোন ছেলেকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলাম। সে আমার চোখে ছিল একটা কুৎসিত ছেলে। চোখগুলো ছিল কুতকুতে, শরীর বেঢপ রকম মোটা, মাথায় চুল কম আর হাতে পায়ে লোম। কলপারে যখন তাকে দেখেছি জামা খুলে গোসল করতে ঘাড়ের পশম দেখে আমার বমি এসে যেত। তবু কেন যেন তাকে আব্বার খুব পছন্দ । আব্বা বলতেন জাতের ছেলে কালোও ভালো। আর ছেলেটা নাকি খুব দায়িত্বশীল। নিরু ছাড়াও কতজন আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। অবশেষে নিরুকেই আমার যোগ্য মনে হল। নিরু ছিল স্মার্ট। ছয় ফুটের মত উঁচু। জিন্সে তাকে খুব ভাল লাগতো। নিরুকে খবর দিলে পরদিনই আমাদের বন্ধুমহলের সহযোগিতায় বিয়ে হয়ে যায়।

আমার আব্বা মা আমাকে ত্যাজ্য করে দিয়েছিল। যদিও ধর্মীয় রীতিতে ত্যাজ্য শব্দটি নেই কিন্তু আব্বা আমার মুখ দেখলে মারা যাবেন বলেছিলেন। আমি তখন একটা একটা টিনশেড বাসায় উঠেছিলাম। আমার পেটে দু মাস পরেই পুতুল আসে, আর কিছুদিন পর নিরু চলে যায় বিদেশে। তার হাতে নগদ টাকা ছিল না। কিন্তু হঠাৎ শুনতে পেলাম অফিসের বড় সাহেবের মেয়ে জেরিনকেও নিরু ভালবাসতো। সে জেরিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো। নিরু বিয়ের খবরটা তার পরিবারকে বলে নি। আমাদের সংসার ছিল গোপনে। ও চাইতো সব ঠিক ঠাক হলে পরিবারের কাছে তার বউকে পরিচয় করিয়ে দেবে। আমি নিরুকে এত ভালবাসতাম! আমি কোনদিন ভাবিনি সে আমাকে ছেড়ে দূরে যেতে পারে। নিরু আমাকে ভালবাসি বলেছে। ভালবাসা পেলে যে কোন মেয়েই মনে হয় সব বাধা মেনে নিতে পারে। কিন্তু নিরু একদিন যখন জানালো সে বিদেশ যাবে, আমি ভাবলাম মিথ্যে বলছে। তারপর আমি তার গলার কলার ধরে ঝুলে পড়ার মত করে বলেছিলাম, যাও দেখি কি করে পারো। বউকে একা রেখে কি করে যাবে? আমার তো কেউ নেই তুমি ছাড়া।
নিরু হেসে বলেছিল পকেটে পয়সা না থাকলে আমি কি করে এমন সুন্দরী বাউ পালি বলো? সে বলেছিল তিন মাস লণ্ডনে একটা কনট্রাক্টে কাজ করলে লাখ খানেক টাকা পাবে। এসব ছিল নিরুর ভাওতাবাজী। আমি কত বোকা মেয়ে ছিলাম এখন বুঝি। আমার শরীর দখল করার পর আমার দিকে নিরুর আগ্রহ কমে গিয়েছিল। নিরুর জন্য আমি সব হারিয়েছি।

পুতুল জন্মের পর মাইল্ড মেনিনজাইটিসে ভুগেছিল। আমি সেটা জানতে পারি যখন তখন বড় দেরি হয়ে গেছে। আমি নিরুর জন্য কয়টা মাস কষ্ট করতে রাজি হয়েছিলাম। যখন ও এলো না বাড়ি থেকে নিয়ে আসা গয়নাগুলো বিক্রি করি। পুতুল হবার সময় কুমি পাশে ছিল। কিন্তু কুমির বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় তাকে হারিয়ে ফেলি। স্বামীর অবর্তমানে যখন আমার টাকা পয়সার টান পরে, নিরু কয়েক মাস পর আমাকে কিছু টাকা পাঠায় আর জানায় তার পক্ষে এই সংসার সম্ভব না। বিয়েটা দিয়েছিল বন্ধুরা। বিয়ের যে কাগজপত্র জানতে পারলাম সেটাও ঠিক মত ছিল না। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখনই চিঠিতে নিরু লণ্ডন থেকে জানালো যে আমার দায়িত্ব নিতে অপারগ। আমি চিঠি পেয়ে আত্মহত্যা করতে চাই সে তার সন্তানের দায়িত্ব নিতে রাজী না কেননা সে প্রবাসী এক সিলেটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে।

মন্দ ঘটনা যখন আসে তখন পর পর আসতে থাকে। পুতুলের চিকিৎসায় অনেক টাকা দরকার ছিল। কারো কাছে টাকা ধার চাইতে হবে আমি কল্পনাও করি নি। আমার বাবা মা সব জেনেও অপেক্ষা করছিলেন আমি যেন তাদের পায়ে ধরে ক্ষমা চাই। কিন্তু আমি আব্বার রক্তচক্ষু চিনতাম। তাই খুব ভয়ে ছিলাম।

হঠাৎ একদিন আমি দরজা খুলে হাজার দশেক টাকার খাম পাই। তাতে লেখা নাম বললে ভাললাগবে না। তোমার বাচ্চাটাকে বাঁচাও। পরে এটা শোধ করে দিয়ো, ইতি তোমার শুভাকাঙ্খী। এরপর আবারও দু সপ্তাহ পরে টাকার খাম পাই। আমার জন্য যদিও এমন অনৈতিক ছিল আমি টাকাটা খরচ করেছিলাম উৎস না জেনে। ছোট পুতুল অসুস্থতা থেকে ফিরে এসেছে। ওকে দেখলে বিশ্বাসই হবে না। আর ও ভারী সুন্দর গান গায় এখন। সেই টাকা দিয়েছিল যে এখন আমি জানি। একজন কুৎসিত দর্শন মানুষ, আমার সেই দু:সম্পর্কের কাজিন সজীব। আমি আজ অনেক ভাল আছি সজীবের সঙ্গে। আমার অসুস্থতার সময় সে ক্রমাগত ছুটোছুটি করে গেছে। আমি বুঝিনি সে এভাবে ভালবাসে। আম্মা বলেছিল আমি যখন মরণাপন্ন সজীব শরীরের রক্ত দিয়ে সে আমাকে মৃত্যু থেকে ফিরেয়ে এনেছিল। আমি বুঝতে পারিনি সজীব এত ভালবাসা সে গোপনে লালন করেছে। আর বিপদের সময় একটা স্বামী পরিত্যক্ত মেয়েকে বুকে নিয়ে সে এত ভাল থাকবে। আজকে বড় বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। সজীব অফিসে যায় নি। পুতুল ছাদে গিয়ে ভিজছিল। জানলা খুলতেই ক্যালেন্ডারটা ঝড়ে খসে পড়ল। পলকে মনে পড়লো আজকের দিনটিতেই নিরু বিদেশে গিয়েছিল। সেই বৃষ্টির দিনে আমি কেঁদেছিলাম নিরুর জন্য। নিরু বলেছে আমাকে ভালবাসবে সারাজীবন কিন্তু মুখে বললেও সবাই মন থেকে ভালবাসে না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×