somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“শিক্ষিত জ্ঞানী” আলাপ!

০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলো ব্লগের সহ-ব্লগার “কামাল ভাই” কে মন্তব্য লিখেছিলাম “আপনার ‘বউ বাজারের’ ঘটনা ব্লগে লেখেন, সেটা হবে ‘জ্ঞানী আলাপ নমুনা-৩’; আপনার কাছে থেকে নমুনা-৩ এর জন্য বসে রইলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি, “কামাল ভাই আজকে সকালে আমার একজন শিক্ষিত ছেলের জ্ঞানী আলাপের কথা মনে পরে গেলো, তাই আপনার জন্য অপেক্ষা করতে পারলাম না, আশা করি আমার এই অধৈর্য্য আচরন আপনি নিজ গুনে ক্ষমা করে দিবেন”।

জ্ঞানী আলাপ নমুনা-৩
একটু ভূমিকার প্রয়োজন আছে। ঘটনাটি আমাদের মেরীন একাডেমী প্রশিক্ষনের প্রথম বর্ষের। একাডেমী প্রশিক্ষনের প্রথম বর্ষ যায় কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, প্রচন্ড পরিশ্রম, অগ্রজ ক্যাডেটদের এবং প্রশিক্ষকদের যে কনো আদেশ পালনে শতভাগ আনুগত্যতা অনুশীলোনের মধ্যমে। এই আনুগত্য পরীক্ষার প্রথম ধাপ হয় “Go & cut your hair like ……… juniors”. বলা বাহূল্ল্য এই জুনিয়র দের মতো চুল কাটলে তা একটি দর্শনিয় বস্তুর আকার ধারন করে। বস্তুত মজা করে এই কাটের নাম দিয়েছিলাম আমরা “চান্দি ছিলা”; আরোও মজার ব্যাপার ছিলো এই চান্দিছিলা অবস্থায় ছুটিতে বাসায় গেলে কেনো যেন কাক মহাশয় তার অতি প্রয়োজনীয় কর্মটি করার জন্য এই “ছিলা চান্দি” জায়গাটিকেই সর্বাধিক উত্তম হিসাবে বিবেচনা করতো! একেতো এই চান্দি ছিলা, তারপর ১ বছরের কঠোর পরিশ্রম, নিয়মানুবর্তিতা, আজ্ঞাবাহী পশুর মতো জীবন ধারন ইত্যাদি পালোনে তখন মনের মধ্যে কেমন যেন একটা হীনমন্যতার ভাব এসেছিলো। কিন্তু পরবর্তি কর্মজীবনে বুঝেছি এই প্রশিক্ষনের কি অমূল্ল্য প্রয়োজন। আমাদের একাডেমী বা যে কোন ডিফেন্স একাডেমী বা ক্যাডেট কলেজ গুলোতে এমন আচরন করার প্রধান কারন এটা একটা প্রশিক্ষন, আমাদের মানষিকতাকে গড়ে দেয়ার প্রশিক্ষন। আমাদের সাথে জুনিয়র লাইফে এমন আচরন করা হয় যে, আমি একটি তুচ্ছাতিতুচ্ছ পোকা, বা কীড়ার চেয়েও ছোট। এটা করে আমাদের মন কে এমন ভাবে গড়ে তোলা হয় যেন যে কনো সময় প্রয়োজনে আমি যে কনো ছোট/মানহীন কাজ, যেটা দলের জন্য ঐ মূহুর্তে দরকার সেটা করতে মর্মপীড়ায় না ভূগী। পাশাপাশি সিনিয়র লাইফে আমাদের সাথে এমন আচরন করা হয় যেন আমি একজন ছোটখাট জমিদার। এটাও আমাদের এই মানষিকতা গড়তে সাহায্য করে, “Yes! I can do any work, any time, any place. No matter what is the place or situation”!

যা হোক প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মনে হয় এটা অগাষ্ট/সেপ্টেম্বরের ঘটনা। আমরা আমাদের টপের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বেড়াতে(আমাদের ভাষায় ‘সোর লিভে’) গিয়েছিলাম। ফিরে আশার পথে আমাদের সাথে জনৈক সিনিয়র ও অনেকজন ভর্তিইচ্ছুক ছেলেও ছিলো বোটে (তারা ভর্তি ফর্ম তোলার জন্য যাচ্ছিল একাডেমীতে)। আমাদের চান্দি ছিলা, একাডেমীর ‘সোর লীভ’ পোষাক – যা জুনিয়রদের ছুটিতে বা বেড়াতে গেলে অবশ্য পরিধেয়, এগুলো নিয়ে বাহিরের মানুষের কাছে হীনমন্যতায় ভুগলেও, ভর্তিইচ্ছুক ছেলেগুলো আমাদেরকে দেখছিলো স্বপ্নালু চোখে, আর ছেলেগুলোর চোখের ভাষা পড়ে, তখন প্রথম বারের মতো জুনিয়র লাইফে একাডেমী ক্যাডেট হওয়ার জন্য গর্ববোধ করছিলাম। আমাদের সাথে যে সিনিয়র ছিলেন ঊনি খুব মজা করতে পারতেন এবং ঐ সময় সাদা পোষাকে ছিলেন। ঊনি বোটে উঠার সময় আমারা সম্ভাষন জানানোর আগেই ইশারায় তা করতে মানা করলেন। আমারা মজার গন্ধ পেয়ে নড়েচড়ে শক্ত হয়ে বসলাম। আমাদের সিনিয়র ধীরে ফর্ম তোলার দলের কাছে গেলেন। ঐ দলের মধ্যে একজন তো বেশ জানাশুনা মনে হচ্ছিলো একাডেমী সম্পর্কে। হাত নেড়ে নেড়ে নীঁচু গলায় কি যেনো লেকচার দিয়ে বুঝাচ্ছিলেন সহযাত্রীদের। স্যার ওদের কাছে যেয়ে উচুঁ গলায়(আমরা যেন শুনতে পাই) বললেন, “আচ্ছা ভাই একাডেমীর ফর্ম কি তোলা যাবে, ভর্তি হবার যোগ্যতা কি কি, ইত্যাদি”। স্যারের উচুঁ গলা শুনে জানাশুনা ছেলেটির ভয়(আমাদের জন্যই হাবে, না হলে নীচুঁ গলায় বলবে কেনো?) কেটে গেলো। সে বললো, “আরে ভাই এই সামান্য তথ্য জানেন না, আপনি হ্যান করবেন, আপনি ত্যান করবেন, ইত্যাদি, ইত্যাদি”। তার বক্তব্য শুনে আমরাই অভিভূত হচ্ছিলাম, আহা কি জ্ঞান ছেলেটির!
স্যার এক সময় জিজ্ঞাসা করলেন, “ আচ্ছা ভাই চান্স পাইতে হলে কি খুব পড়াশুনা করতে হয়”।
“কি যে বলেন, বাজারে যেয়ে ………(গাইড বই এর নাম) কিনবেন, পরবেন আপনার চান্স আটকায় কে”?(আমি ভাবলাম আহ কি সুন্দর বুদ্ধি, আমি শুধু শুধু এত পড়াশুনা করে, এত পরিশ্রম করেছি চান্স পাওয়ার জন্য। আমার যদি ভর্তি পরিক্ষার আগে এই ছেলের সাথে দেখা হতো!)
আলাপ জমে গেছে, সব ভর্তিইচ্ছুক ছেলেরা কথিত ছেলেটাকে ঘিরে বসেছে।অবস্থা এমন হয়েছে যে আমাদের মনেই সন্দেহের উর্দেক হয়েছে আমরা না ঐ ছেলেটি একাডেমীতে পরে। ঠিক এমন সময় স্যার মোক্ষোম একটা প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা ভাই আমি একটা জিনিষ বুঝতে পারি না, এই যে এত বড় একটা জাহাজ, এত লোহা দিয়ে তৈরী, লোহা পানিতে দিলে ডুবে যায়, কিন্তু এত বড় জাহাজটা পানিতে কিভাবে ভাষে, আমি বিজ্ঞানে একটু কাচাঁ তো, একটু বলবেন কি”?
জ্ঞানী - “আহা ভাই আপনি এইটা জানেন না তাহলে তো আপনার চান্স হইবো না”
স্যার – চান্স না পাওয়ার দুঃখে হয়তো একটু মুষড়ে গিয়ে বললেন, “ বলেন না ভাই, আপনি তো অনেক জানেন। আপনার তো চান্স শিয়র, আপনার কাছে শিখে যদি চান্স পাই”!
জ্ঞানী একটু ভাব নিয়ে যথারীতি গলা খাকরী দিয়ে বললেন, “ভাই টাঙ্কি চিনেন টাঙ্কি। লোহার বড় বড় টাঙ্কি। জাহাজের মধ্যে ক্যাপ্টেন লোহার বড় বড় টাঙ্কি রাখে বাতাস ভইরা। এর জন্য জাহাজ পানিতে ডোবে না। বাতাস কি ভাই কখনো পানিতে ডোবে বলেন ভাই”? সবাই বিরাট রহস্যাবৃত একটা কারন জানার জন্য খুশী, হু হা করছে। একাডেমী ঘাট এসে যাচ্ছে। ফর্ম উত্তোলনেচ্ছু ছেলের দল নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমারা মানষ চোখে দেখতে পাচ্ছি সিনিয়ররা আছেন একাডেমীর মধ্যে, মনে মনে পাঙ্গা খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এত কিছুর পরও আমি মনে মনে বলেছিলাম, “ আয় বাবা টাঙ্কি, একবার একাডেমী তে ঢোক, টাঙ্কি কতো প্রকার কি কি সংগা ও উদাহরন সহ তোকে বুঝিয়ে দেব। তখন তোর মনে হবে আর্কিমিডিস বাবাজিকে কবর থেকে টেনে তুলে এনে জাহাজ ভাষে কেনো এটা শিখে নেই!”
আমার অনেক দুঃখ, আমার সাথে সাথে আমার অনেক ব্যাচমেটের মনে প্রবল দুঃখ “টাঙ্কিকে আমরা পাই নি, মনে হয় চান্স পায় নি, আমরা দুঃখিত অনেক নিত্য-নতুন থিওরী শিক্ষনের হাত হতে আমরা বঞ্চিত হোলাম”। আমি ব্যক্তিগত ভাবেও অনেক চেষ্টা করেছি এই “শিক্ষিত জ্ঞানীকে” খুঁজে বের করতে হবে। বের করতে পারিনি। কিন্তু আমি প্রবলভাবে বিষ্মাস করছি তাকে অদুর ভবিষ্যতে দেখবো টিভিতে বা মঞ্চে জালাময়ী বক্তব্য দিতে। বিষয় না জেনে বিষ্মাসযোগ্য ভাবে বলার যে প্রখর গুন(!) আমি তার মধ্যে দেখেছি, বড় মাপের রজনৈতিক নেতা বা মন্ত্রী না হয়ে সে যায়ই না!
:P:P
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×