চুপচাপ জিইসির ফুটপাথে বসিয়া আছি। একটু দূরের লোকটার কার্যকলাপ লক্ষ্য করিতেছি। সে নাকের ময়লাগুলো বাহির করিয়া দু আংগুলে ঘুরাইয়া বলের মত বানাইতেছে আর খুব মন দিয়া উহার সাইজ না কি যেন লক্ষ্য করিতেছে। বলের সাইজ উনার মনমত না হইলে বিরক্তভাবে ওগুলো জামায় মুছিয়া ফেলিতেছে। স্বীকার করি ইহা দেখিবার মত এমন কিছু বিষয় নহে। এমনকি একপলক দেখিলেও কিছু ব্যক্তির(বিশেষত মহিলাদের) গা গুলাইয়া উঠিবে ইহাতে সন্দেহ নাই।
পুঙ্গি মানে আমার নারীবন্ধু আসিবে বলিয়াছে।তাহাকে নিয়া নাকি শপিং করিতে যাইতে হইবে।তাই বসিয়া আছি কখন সে আসিবে তার আশায়।বিকাল ৪টায় আসার কথা ছিলো। আমি ৪টা ৩৬ মিনিটে জিইসি মোড়ে আসিয়া তাহাকে কল দিয়া শুনি সে এখনো ফ্রেশ হইতাছে। অথচ তাহার ক্লাস শেষ হইয়াছে ১২টায়। এর পর বাসায় গিয়া গোসল সারিতে বেশি হইলে ২টা বাজিবার কথা। ২টা বাজে গোসল করিবার পরেও আবার কিভাবে ৪টা ৩৬ মিনিটে ফ্রেশ হইতে হয় উহা আমার মাথায় ঢুকে না। এই যে আমি কোন সকালে হাত মুখ ধুইয়াছি কি ধুইনাই, এখনো পর্যন্ত গায়ে এক ফোটা পানি পড়ে নাই। আমার তো এত ফ্রেশ হইতে হয় না। মাঝে মাঝে যে গোসল না করিয়া শুধু মাত্র মুখধুইয়াই হপ্তাখানেক চালাইয়া দি, কই আমার তো ইহাতে বিন্দুমাত্র, আরো জোরদিয়া বলিতে গেলে পরমাণুমাত্র অসুবিধা হয়না।
এখন প্রায় সাড়ে ৫টা বাজে। ফুটপাথে বসিয়া অপেক্ষা করিতে খুব খারাপ অবশ্য লাগে না। কত বৈচিত্র আশে পাশে,উপরে নিচে। খানিকক্ষণ আগে এক বন্ধু রিকশা করিয়া যাইতেছিলো।
আমাকে দেখিয়া চেচাইয়া জিজ্ঞেস করিলো,
-কিরে জিঙ্গালালা, তুই ওইখানে কি করস?
আমিও বর্তমান যুগের পোলাপাইনের(!) মত বলিলাম
-আরে মামা হুদাই বইসা ডানে বামে তাকাইতাসি,কাম কাজ নাই
-ওওও বুজচ্ছি।
কি বুঝলো সে ই জানে!
-খাড়া আমিও আসি। দুইটা বেন্সন আনগা।
আমি চুপচাপ উঠিয়া একটা বেন্সন আর একটা গোল্ডলিফ আনিয়া,বেন্সনটা বন্ধুকে দিলাম। পকেটের অবস্থা বিশেষ সুবিধার নহে।আর সিগারেটের দাম যে হারে বাড়িতেছে তাতে কিছুদিন পরে, ধুম্পান করিতেছে এমন লোকের পাশে দাড়াইয়া গন্ধ শোকা ছাড়া উপায় থাকিবে না। আমার মত লোকেরা ,যারা ‘শাকসব্জির মধ্যে তামাকটাই যা একটু খায়’ তাহাদের কি যে হইবে উহা ভাবিয়া শিউরে উঠিতেছি। এমনকি এর প্রতিবাদে দু’একবার মৌন মিছিল করিবার চিন্তাও করিয়া ছিলাম। তবে মিছিল আবার মৌন কেমন করিয়া হইতে পারে উহা ভাবিতে ভাবিতেই দিশা হারাইয়া ফেলাতে এখনো মৌন মিছিল করা হইয়া উঠে নাই।
-শালা শুধু সিগারেট আনসস কি বুইঝা! ওই পিচ্চি চাঅলারে ডাক।
-ছোট মামা,দুইটা চা দাও তো।
-ছোট মামা মানে !!
বন্ধু বিস্মিত হইলো।
-সবাইতো এখন সবার মামা লাগে তাই না। এখন মামাদের যুগ। তাই আমিও পিচ্চিরে ছোট মামা ডাকলাম আর কি ।
-ও আইচ্চা, বুজচ্ছি।
-কি বুজচ্ছস?
সে কি বুঝিয়াছে তাহা না বুঝাইয়া তাহার আর তাহার বিগত নারীবন্ধুর মধ্যকার কলহের কথা আমাকে বুঝাইতে লাগিলো, আর চা তে ফুরুত ফুরুত শব্দ করিতে লাগিলো।
বন্ধুটি রিকশা দাড় করাইয়া রাখিয়াছিলো। চা শেষ হওয়া মাত্রই “দোস্ত যাইগা,কাল ভার্সিটি আসিস” বলিয়া একলাফে রিকশায় চড়িয়া গায়েব হইয়া গেল।এমনকি একবার ভদ্রতা করিয়াও চা’র বিল দিতে চাইলো না। শালা।
নাসিরাবাদ বয়েজ স্কুলের সম্মুখের ফুটপাথটা অতিশয় আরামদায়ক। এখানে বসিয়া সানমার ওশান সিটির সামনেরটা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ কয়া যায়। বহু ছলনাময়ী ললনাদের আনাগোনা দেখিতে বেশ আরাম অনুভব হয়। আমিও উদাস একটা ভাব লইয়া চোখ পিটপিট করিয়া দেখিতেছিলাম। কোথা থেকে কি হইলো বুঝিতে পারিলাম না। ‘থপাক’ করিয়া একটা কাক আমার গায়ে ‘হাগু’ করিয়া দিলো।
যদিও পুরোটা গায়ে পড়েনাই তথাপি যে ছিটোফোটা পড়িয়াছিলো তাহাতেই আমার মেজাজ পুরো হাগু গায়ে পড়ার মতই বিগড়াইয়া গেলো। অপেক্ষা ছাড়া আর কোন কাজ নাই বিধায় বসিয়া বসিয়া খানিকটা উচ্চস্বরে সমগ্র কাক প্রজাতির পিতা-মাতা উদ্ধার করিতে লাগিলাম। অচিরেই আমার সামনে কিছুটা ভিড়ের মত জমিয়া গেলো। কাক প্রজাতির প্রতি আমার পরিশীলিত বাক্যবাণ শুনিয়া তাহারা হা হো হা হো শব্দে হাসিতে লাগিলো। আমিও উৎসাহ পাইয়া চালাইয়া গেলাম। এক সময় নিজেকে একটু উচু স্থানে ভাষণ রত অবস্থায় আবিষ্কার করিলাম।
“ভাইসব, এই কাক প্রাণীটা যতটা উপকারী ঠিক ততটাই ক্ষতিকর। এমন অকৃতজ্ঞ প্রানী আর হয় না। আমরা যে আশেপাশে ময়লা টয়লা ফেলে তাদের খাদ্যের যোগান দি এটা হারামজাদারা মনে রাখে না। আর তারা দেখতে বিস্রি। তাই মানুষ সুন্দর জামা-কাপড় পড়লে তাদের হিংসা হয়। আপনি যদি একটা হাফপ্যান্ট পড়ে সারাদিন একটা আমগাছ বা ইলেকট্রিকের তারের নিচে ঘুরঘুর করেন আপনার কিছুই হবে না। যখনই একটু ফিটফাট হয়ে বের হবেন শুধুমাত্র তখনই তাদের হিংসার সম্মখীন হবেন। লক্ষ্যভেদে কাউয়া প্রজাতি ব্যাপক পারদর্শী। এমনকি হাগার পর তারা নিচে তাকিয়ে দেখে টার্গেটে জিনিস পৌছাইসে কি না , নাকি আবার করার দরকার আছে। আসেন আমরা সবাই মিলে এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই। সরকারের কাছে আমাদের একদফা দাবী, শহর থেকে কাক উচ্ছেদ করতে হবে। নয়ত আমরা রাজপথে নামবো ।আমরণ অনশন করব। ৪৮ ঘন্টা হরতাল করবো।”
এমন ভাষণের পর সরজোড়ে করতালি আমি আশা করিতেই পারি। এটা আমার মৌলিক নাকি যৌগিক কি জানি একটা অধিকারও বটে। শালার পাবলিক একটা তালিও দিলো না। উলটা ফেক ফেক করে হাসতে হাসতে চলে গেলো।
আমি সেই তখন থেকেই সামনের ‘নাকের ময়লা হইতে বল প্রস্তুতকারীর’ কার্যকলাপ লক্ষ্য করিতেছি। ৬টা বাজে। পুঙ্গির ফ্রেশ হওয়া এখনো শেষ হয়নাই বোধহয়। আমি তাহাকে মনভরিয়া ফ্রেশ হইবার সময় দিব ঠিক করিয়াছি। একটা ২ নাম্বার মিনিবাসে ঝুলিয়া পড়িলাম। বাসায় গিয়া আমারও ফ্রেশ হইতে হইবে।
⎝⓿⏝⓿⎠⎝⓿⏝⓿⎠⎝⓿⏝⓿⎠⎝⓿⏝⓿⎠⎝⓿⏝⓿⎠
⎝⓿⏝⓿⎠⎝⓿⏝⓿⎠⎝⓿⏝⓿⎠ (জিঙ্গালালা) কল্পনার ফুটপাথে ⎝⓿⏝⓿⎠⎝⓿⏝⓿⎠⎝⓿⏝⓿⎠
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমানের দেয়াল
অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১
তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন