somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিসি ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য বটে !

০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাধারণত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা(সিসি ক্যামেরা) বসানো হয় কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা বিধান এর একটি বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে। অর্থাৎ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হল তখন ধরে নেয়া স্বাভাবিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিরাপত্তার ব্যাপক ঘাটতি আছে । এবং যারা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা তথা এখানকার জান-মালের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তাদেরকে সনাক্ত করতে এবং জান-মালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রশাসন এই মহতী(!) উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । প্রশাসনের এমন সাহসী এবং কার্যকরী (!) ভূমিকার জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর সকল শিক্ষার্থীর ধন্যবাদ ও প্রশংসার দাবীদার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এর আগে তাদের সিদ্ধান্তটির তাৎপর্য সবার সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে আমার এই লেখা।



মনে করেন একটা রেল স্টেশনে বোমা হামলার ঘটনা ঘটল এবং উক্ত স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো ছিল । তদন্তের সময় বোমা হামলার আগে পরের ভিডিওগুলো পর্যালোচনা করে দোষী সনাক্ত করা যেতে পারে কিংবা কোন ক্লু পাওয়া যেতে পারে । এখন দেখার বিষয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কি অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে যেখানে দোষীদের খুঁজে বের করতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার প্রয়োজন পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর দাবি , “চুরি ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে এটা করা হয়েছে।” (সূত্র:প্রথম আলো,০৬ এপ্রিল,২০১২) । শুরুতে চুরির প্রসঙ্গে আসি। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিক এর সংবাদ এর মাধ্যমে জানা যায় যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার সেন্টারের ৩০টি কম্পিউটার এর প্রসেসর,হার্ড ডিস্ক এবং র‍্যাম চুরি হয়েছে। এবং যথারীতি ঘটনায় দায়ীদের সনাক্ত করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু দোষীদের কোনভাবেই সনাক্ত করা যায় নি। এখানে উল্লেখ্য, জবির সাইবার সেন্টারটি নতুন একাডেমিক ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় অবস্থিত। সাইবার সেন্টারে পৌঁছানোর আগে নূন্যতম ৪টি কলপসিপল গেট অতিক্রম করা আবশ্যক। অর্থাৎ উক্ত গেটগুলোর তালা অক্ষত রেখে সাইবার সেন্টারে পৌঁছানো বাস্তব সম্মত নয়। কিংবা নূন্যতম একটি গেট এর তালা ভেঙেও চুরি কা যেতে পারে । কিন্তু সেক্ষেত্রে ৬ষ্ঠ তলার কোন নাকোনো জানালার গ্রিল এর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন জরুরী। কিন্তু চুরির ঘটনায় এরকম কোন আলামত পাওয়া যায় নি। এছাড়াও পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী উক্ত ভবনের নিরাপত্তার জন্য রাতে ৪ জন প্রহরী দায়িত্ব-রত ছিলেন।(সকালের খবর) । চোর যখন এত দক্ষ তখন চুরির রহস্য উদ্‌ঘাটনে ব্যর্থ হওয়া কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর পক্ষে আর চুপ করে থাকার কোন সুযোগ নেই । ভবিষ্যতে আর কোন চুরির ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না অর্থাৎ কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন।



এবার আসা যাক দ্বিতীয় কারণ অর্থাৎ “বিশৃঙ্খলা” প্রসঙ্গে। “বিশৃঙ্খলা” শব্দটি জবির শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন কিছু নয়। বরং ন্যায্য দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে কোন আন্দোলন চলাকালীন এই শব্দটি পত্র-পত্রিকায় বেশ গুরুত্বের সাথে উদ্ধৃত হয়। যেমন গত কিছুদিন আগে উন্নয়ন ফি বিরোধী আন্দোলন চলা অবস্থায় মাননীয় উপাচার্যের উদ্ধৃতি, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার জন্য তারা এ ধরনের আন্দোলন করছে।”(দৈনিক জনকণ্ঠ.৫ জানুয়ারি,২০১২) । কিন্তু মাননীয় উপাচার্যের অভিদান আর অধিকার বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিধান এক নয় । আর তাই উপাচার্যের কাছে যা “বিশৃঙ্খলা”, তা শিক্ষার্থীদের কাছে ন্যায্য দাবি আদায়ের সংগ্রাম।



এই পর্যন্ত লিখেই শেষ করবো ভেবেছিলাম। কিন্তু এতক্ষণ যা বললাম তাতে জবির “সাধারণ” শিক্ষার্থীদের কোন বক্তব্য তুলে আনা হয় নি । সাধারণত নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের “সাধারণ” শিক্ষার্থী বলে আখ্যা দেয়া হয় ।এই “সাধারণ” শিক্ষার্থীরা কোন রাজনীতি বুজতে চায় না ,কোন দলের লেজুড় হয়ে থকতে চায় না, কিংবা চাঁদাবাজি-টেন্ডার-বাজি-খুন-ধর্ষণ এই রকম অসাধারণ কীর্তি-কলাপেও এদের আগ্রহ নাই। হয়। কিন্তু এত সাধারণ চরিত্রের অধিকারী হবার পরও আমি এদেরকে “সাধারণ শিক্ষার্থী” হিসেবে আখ্যা দিব না। কারণ এরা যখন বঞ্চিত হয় তখন এরা রুখে দাড়ায়, যখন অন্যয় দেখে তখন প্রতিবাদ করে। এই প্রতিবাদী মনসিকতা যাদের মধ্যে আছে, যার লড়াই করতে জানে তারা অসাধারণ কিনা তা জানি না তবে অবশ্যই “সাধারণ” নন। তারা যখন আন্দোলন করেন তখন তারা “আন্দোলনরত শিক্ষার্থী” । এর বাহিরে অন্য সময় আমি এদেরকে সম্বোধন করতে চাই “সচেতন শিক্ষার্থী” হিসেবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সচেতন শিক্ষার্থীর সংখ্যাটা একটু বেশি হওয়ায় সমস্যাগুলো(!) তৈরি হয়। অর্থাৎ কর্তৃপক্ষকে বেকায়দায় পড়তে হয়। যাইহোক এবার মূল আলোচনায় আসা যাক । জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর সচেতন শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হচ্ছে তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এর পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার জন্য । কারণ উপাচার্য অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনকারীদেরকে “বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী” বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন আর এই সিসি ক্যামেরা বসানোর অন্যতম কারণ “বিশৃঙ্খলা” দমন ।



একটু “অপ্রাসঙ্গিক” কথা বলে শেষ করব। গত ২০ ডিসেম্বর তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় “পছন্দের প্রার্থীর চাকরি না হওয়ায়,জগন্নাথের উপাচার্যকে ছাত্রলীগ নেতাদের হুমকি” এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয় । ” প্রকাশিত সংবাদটির কয়েকটি লাইন উদ্ধৃতি করছি,



“.....বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আকন্দের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন ছাত্রলীগের কর্মী ডেপুটি রেজিস্টার শেখ রেজাউল করিমের অফিসে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এতে রেজাউল করিম, উপাচার্যের পিএস জাহিদ আলম, পিএ আবদুল গাফফার, অফিস কাম সেক্রেটারি জামাল হোসেন আহত হন।” বলা বাহুল্য এই ঘটনা তদন্তেও একটি “উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন” কমিটি গঠন করা হয়েছিল কিন্তু সিসি ক্যামেরা না থাকায় দোষীদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি!!



এছাড়াও গত ২৪ জানুয়ারি তারিখের কিছু ছবি যুক্ত করা হল। ছবির মনুষগুলোকে সনাক্ত করা যায়নি। কারণ ছবিগুলো সিসি ক্যামেরায় তোলা নয় । অতএব বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য !










জাহিদুল ইসলাম সজীব

প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন , জবি সংসদ

[email protected]
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×