somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘আবুল খায়ের, তুমি কি যেতে পারবে?’ আবুল খায়ের বললেন, ‘পারব স্যার। কিন্তু ফিরে আসতে পারব, সে আশা নাই। আমি মারা গেলে স্যার লাশটা বাড়িতে পাঠায় দিয়েন!’...

০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পvoid(1);রিচালক নুরুল হক বললেন, ‘আবুল খায়ের, তুমি কি যেতে পারবে?’
আবুল খায়ের বললেন, ‘পারব স্যার। কিন্তু ফিরে আসতে পারব, সে আশা নাই। আমি মারা গেলে স্যার লাশটা বাড়িতে পাঠায় দিয়েন!’

void(1);


সময়টা ২০০৫ সালের মে মাস। দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে গেছে লvoid(1);ঞ্চ নদী তখন উত্তাল, স্রোতের বেগ প্রায় ১৭ নটিক্যাল মাইল। তখনো লঞ্চের ধারেকাছে যাওয়া যাচ্ছে না।


ঊর্ধ্বতনদের অনুমতি নিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি আবুল খায়ের।
প্রচণ্ড স্রোতের বিপরীতে খায়ের প্রাণপণ সাঁতরে চলেন।

একসময় তাঁর হাত-পা অসার হয়ে আসে। ইতিমধ্যে ১৩ বার থেমে থেমে বিশ্রাম নিয়েছেন, এবার আর বিশ্রামে শরীর মানে না। অক্সিজেন সিলিন্ডারের কৃপণ সরবরাহে তখন ফুসফুসটা শান্ত হচ্ছে না, চাই মুক্ত বাতাস।

ঘুটঘুটে অন্ধকারে অন্ধের মতো হাত বাড়ান খায়ের, কি যেন হাতে ঠেকে।
লম্বা একটা দম নিয়ে, ঢুকে পড়েন লঞ্চের ভেতর।
টর্চের আবছা আলোয় দেখতে পান, শতাধিক ফুলে-ফেঁপে ওঠা লাশ!

খায়েরের তখন সময় খুব কম।

সিলিন্ডারের অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে, নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে হিসাব করে।

হিসাবে গরমিল হলেই লঞ্চের ভেতর লাশের সংখ্যা বাড়বে আরও একটা!

বহু কষ্টে একটা লাশ সঙ্গে নিয়ে লঞ্চের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন খায়ের। সঙ্গে সঙ্গে লাশটা প্রচণ্ড বেগে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। খায়ের তখনো লাশটাকে শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। এরপর তাঁর আর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফিরলে খায়ের নিজেকে আবিষ্কার করেন উদ্ধারকর্মীদের জাহাজে।

ফায়ার সার্ভিসের দুর্ধর্ষ ডুবুরি আবুল খায়ের, বহুবার নিজের জীবন বিপন্ন করে অংশ নিয়েছেন উদ্ধারকাজে।

ইতিমধ্যেই দুঃসাহসী কাজের জন্য বেশ কিছু স্বীকৃতি মিলেছে তাঁর, দেশে-বিদেশে বহু পত্রিকায় ছাপা হয়েছে তাঁর জীবনের সত্যিকারের গল্প। পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, জাতিসংঘের কাছ থেকেও মিলেছে স্বীকৃতি।

আবুল খায়ের বললেন, ‘৭০টা দেশে ২১টা ভাষায় আমার জীবনকাহিনি ছাপা হইছে। এই খবর আমি পত্রিকায় পইড়া জানছি।’

গত ২২ বছরে অসংখ্য উদ্ধারকাজে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশে-বিদেশে পরিচিতি পাওয়া ডুবুরি আবুল খায়ের এখন ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের গর্ব।


প্রায় ২২ বছর। এত বছরে কত অজস্র উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন, সবগুলো মনেও করতে পারেন না আবুল খায়ের। আবছা আবছাভাবে বললেন নারায়ণগঞ্জের মুন্সিখোলায় লঞ্চডুবি, বুড়িগঙ্গায় টহল পুলিশের নৌকাডুবি, আমিনবাজারের বাস দুর্ঘটনা, চট্টগ্রামে দুর্ঘটনাকবলিত প্রশিক্ষণ বিমান, মিরপুরে গার্মেন্টস আর কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনের অগ্নিকাণ্ড, মহাখালী ফিনিক্স ভবন ধসে পড়াসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা। সম্প্রতি মেঘনায় ঘটে যাওয়া লঞ্চডুবির উদ্ধারকাজেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

এত বছরের চাকরিজীবনে অসংখ্য লাশ দেখেছেন তিনি। এমন কোনো মৃত ব্যক্তির মুখ আছে, যা এখনো মনে পড়ে?

‘আমিনবাজারে বাস নদীতে পইড়া গেছিল। সেইখানে উদ্ধার করছিলাম একটা দু-তিন বছরের বাচ্চা, কী সুন্দর দেখতে! আমার চোখে পানি আইসা পড়ছিল। বাচ্চাটারে পাইছিলাম বাসের বাইরে, আর বাচ্চার মায়েরে পাইছিলাম বাসের ভিতর। আমার ধারণা, বাসটা পড়ার সময় মা শেষ চেষ্টা হিসাবে বাচ্চাটারে বাইরে ফালায় দিছিল, বাঁচাইতে পারে নাই!’—

বলতে বলতে ওপর দিয়ে দেখতে প্রচণ্ড শক্তপোক্ত মানুষটার ভেতরের নরম মনটা প্রকাশ পেয়ে যায়। এ ছাড়া আবুল খায়ের এএফপির সাংবাদিকের কাছে বলেছিলেন আরও একটি অভিজ্ঞতার কথা,

‘ডুবে যাওয়া একটা ফেরি থেকে বর-কনের বিয়ের সাজে সজ্জিত লাশ ছিল আমার জীবনে বয়ে নেয়া সবচেয়ে ভারী লাশ!’


দেশের বাইরে বাংলাদেশের এই ডুবুরিকে নিয়ে প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দুবাইয়ের খালিজ টাইমস।
এরপর রিডার্স ডাইজেস্ট, ব্যাংকক পোস্টসহ বেশ কিছু পত্রিকায় ছাপা হয়েছে আবুল খায়েরের দুঃসাহসিকতার গল্প। ব্যাংকক পোস্ট-এ আবুল খায়েরকে নিয়ে লেখা প্রবন্ধের নাম ছিল, ‘আ ট্রু সুপারস্টার’!
বিএসইসি ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে পা ভেঙেছিলেন আবুল খায়ের। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ বেশ কজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। খায়ের বলেন, ‘নৌবাহিনীর লে. কর্নেল মাহাবুব, বিদেশ থেকে ট্রেনিং কইরা আসছেন। তিনিও আমার খুব সুনাম করেন।

ফায়ার সার্ভিসের কারও সাথে দেখা হইলে রসিকতা কইরা বলেন, “খায়ের কি এখনো বেঁচে আছে?” আমার সহকর্মীরাও বলে, আমি যেরকম ঝুঁকি নিয়া কাজ করি, আমার অনেক আগেই মইরা যাওয়ার কথা। কিন্তু আমার উপর আল্লাহর রহমত আছে, তাই এখনো বাঁইচা আছি।’
খায়ের বললেন, ব্যক্তিগত অর্জনের কথা তিনি ভাবেন না। ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের মুখ উজ্জ্বল করাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড়। ‘প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড যখন নিতে গেছিলাম, ফায়ার সার্ভিসের ডিজি স্যার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমারে পরিচয় করায় দিতে গিয়া বলেছিলেন, “ম্যাডাম, এই আমার খায়ের!”’

বলতে বলতে খায়েরের মুখে ফুটে ওঠে সন্তুষ্টির হাসি।
খায়েরের কাছে জানা হলো, একবার দক্ষিণ কোরিয়া ডুবুরিদের জন্য একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল।

শুকনা লিকলিকে শরীর, কথার মাঝখানে বারবারই খকখক করে কাশছেন। বয়সও তো কম হয়নি। নাহ, সন্দেহটা লুকিয়ে রাখা গেল না, প্রশ্ন করে বসলাম, ‘সত্যিই পারেন’? খায়ের যেন রীতিমতো খেপে উঠলেন, ‘আপনার মতো চাইর জনরে পাঁচতলার উপর থেইকা মই বাইয়া নামায় আনতে পারুম এখনো, সবার আগে। আমারে দেখলে মনে হয় গায়ে জোর নাই, কিন্তু আমার মনের জোর খুব’!


ব্যক্তিজীবনে আবুল খায়েরের যমজ ছেলেমেয়ে। ইসমাত আরা, আর জিহাদুল ইসলাম। মেয়েটা ইংরেজিতে অনার্স পড়ছে, ছেলেটা লেগুনা চালায়। আর আপনার স্ত্রী?

চোখ বড় বড় করে এতক্ষণ নিজের দুঃসাহসিকতার গল্প বলে যাওয়া আবুল খায়েরের চোখ দুটো এই প্রথম কিছুটা নিষ্প্রভ দেখায়। জানা হলো, আবুল খায়েরের স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত। খায়ের বললেন,
‘মেঘনায় যেদিন লঞ্চ ডুবল, তার দুই দিন আগেই আমার স্ত্রীর অপারেশন হইছে। তবু, আমি কাজে গেছি। খুব দুশ্চিন্তা নিয়া কাজ করছি। মেয়েটা তিন মাস ধইরা কলেজে যাইতে পারতেছে না, ছেলেটা দিনরাত কষ্ট করে। বলে, “আব্বু, আম্মুর চিকিৎসার জন্য তো অনেক টাকা দরকার!”’ নাম কি আপনার স্ত্রীর?—জানতে চাই। আবুল খায়ের বলেন, ‘নুরজাহান’। বলি, ‘বাহ্, বিখ্যাত নাম।’ শুনে এবার খায়েরের মুখে লাজুক হাসি, ‘জি ভাই।

নুর মানে আলো, আর জাহান মানে পৃথিবী। পৃথিবীর আলো।’

প্রায় ২৫ বছর আগে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন খায়ের। প্রিয়তমা স্ত্রী নুরজাহানকে ‘পৃথিবীর আলো’ দেখাতে চান আরও অনেক দিন। দুঃসাহসী এই যোদ্ধা জীবনযুদ্ধে এত সহজে হার মানার লোক নন, বোঝা যায় তার কথায়,

‘ভাই, যত টাকাই লাগুক, আমি আমার স্ত্রীরে ভালো কইরা তুলমু।

সব ক্রেডিট প্রথম আলোর , আমি কিছু যোগ বিয়োগ করসি

এত ভাল লাগল শেয়ার না করে পারলাম না।

আসলে দেশে ভাল মানুষ আছে কিন্তু লোকগুলা উপরে উঠতে পারে না

এই লোকটা আজকে যদি নৌ পরিবহন মন্ত্রী হইত না জানি কি হইত

ধুর উল্টা পাল্টা বলতেসি , যা করসে তাই তো অনির্ণেয়

সালাম বাংলাদেশ


“পরের কারণে স্বার্থ দিয়ে বলি, এই মন জীবন সকলি দাও।

তাহার মত সুখ কোথাও কি আছে? আপনার কথা ভুলিয়া যাও”
২৩টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×