somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ কি আর আল্লাহ কোথায় ?

০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহ কি আর আল্লাহ কোথায় ?
আমারা কেন আমরা আল্লাহ তালা কে দেখতে পাই না?

ইসলাম ধর্মে মহান সৃষ্টি কর্তার ৯৯ টা নাম থাকলেও, ‘আল্লাহ’ নামটা সব চেয়ে বেশী প্রচলিত। এটা একটা আরবি শব্দ, যার ইংরেজি প্রতি শব্দ বলা যায় গড(God)। আরব ক্রিশ্চিয়ান আল্লাহ শব্দটা ব্যাবহার করলেও, পৃথিবীর জুড়ে মুসলমানরা কাছে আল্লাহ শব্দটা সব সময়ে ব্যাবহার করছে। ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসের প্রথম কথা, “লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ,( la ilah illa' Allah).........আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ (God) নাই।

আল্লাহ সৃষ্টি কর্তা। কিন্তু আল্লাহ তার নিজের সম্পর্কে কি বলেছেন। সুরা বাকারায় (২:১১৫) আছে, “পূর্ব-পশ্চিম আল্লাহ’র মালিকানায়, যে দিকে মুখ ফেরানো হউক না কেন, সেই দিকেই আল্লাহ’র মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ সব কিছুর গ্রহণ কর্তা আর তিনি সব জানেন।“ একই সুরায় (১১৬: ১১৭) বলা হচ্ছে। “তিনি বেহেশত আর পৃথিবী বানিয়েছেন। তিনি যখন কোন কিছু নির্দেশ দেন, তখন তার জন্যে শুধু বলতে হয় ‘হও’ এবং তখন তা সৃষ্টি হয়”। সুরা আল আনাম (৬: ৫৯) লিপিবদ্ধ আছে, “তিনিই একমাত্র অদেখা জিনিস সম্পর্কে জানেন। স্থল আর জলের প্রতিটা জিনিস তার জানা; একটা পাতা পর্যন্ত তার অনুমতি ছাড়া পরে না”। সুরা হুদ (১১: ১৬)এ স্পষ্ট করে বলা আছে, “পৃথিবীর প্রতিটা জীবের জীবিকার ব্যাবস্থা তিনি করেন”। সুরা আল ইমরান অনুযায়ী, (৩:১৪৪), কোন মৃত্যু তার অনুমতি ছাড়া হয় না”। আল্লাহ আরও বলেছেন (৫৭:৩), “তিনিই প্রথম ও তিনিই শেষ, এবং তিনি বাহির ও তিনি ভিতর, এবং তিনিই সব কিছু জানেন”।

উপরের কথাগুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায়, সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড আল্লাহ তালা’র সৃষ্টি। শুধু তাই না, প্রতিটা জীবের জন্ম, জীবিকা আর মৃত্যু তার হাতে। কিন্তু, প্রশ্ন আসে তিনি আমাদের সাথে এতো প্রচণ্ড ভাবে জড়িত থাকার পরেও, আমারা তাকে দেখতে পাই না কেন? তিনি যদি প্রতিটা জায়গায় প্রতিটা সময় বর্তমান থাকেন, তা হলে আমাদের চোখে দেখা দেন না কেন? তিনি আমাদের সাথে সরাসরি কথাই বা বলেন না কেন। এর উত্তর আমরা পাই, সুরা বাকারায় (২: ১১৮-১১৯)। আল্লাহ বলছেন, তিনি তার আস্তিত্বের চিহ্ন (sign) আমাদের জন্যে রেখেছেন। আসলে, তিনি তো আর এই পৃথিবীর রাজা, বাদশা, কিংবা প্রেসিডেন্ট নন। তাকে জানতে, বুঝতে হলে; আমাদের অনুভুতির উপলব্ধি ব্যাবহার করতে হয়। তিনি একই সুরায় (২:১৮৬) জানাচ্ছেন, তিনি তার বান্দার খুব কাছাকাছি এবং তিনি তার বান্দার প্রতিটা প্রার্থনার জবাব দেন। আল্লাহ সুরা আল আরাদ (১৩:১৩) জানিয়েছেন, তিনি আকাশে বিদ্যুৎ সৃষ্টি করেন, যার থেকে ভয় আর আশার জন্ম হয়, এবং যার থেকে বৃষ্টিপাত হয়। আকাশের বজ্রপাত আল্লাহ’র মহাত্ম ঘোষনা করে। অন্যান্য সুরাতেও বলা হয়েছে, আল্লাহ যে বৃষ্টি দিয়ে খরা যুক্ত জমিকে জীবন্ত করে তুলেন, তাও একমাত্র তার ইচ্ছায় হয়। সুরা আন নামল-এ আল্লাহ বলেছেন, (২৭:৬০) বাগানের গাছকে বড় করার ক্ষমতা মানুষের নাই (অর্থাৎ তাও আল্লাহ’র ইচ্ছায় হয়)। এই ভাবে কোরান শরীফের বিভিন্ন জায়গায়, আল্লাহ আস্তিত্বের চিহ্ন সম্পর্কে অনেক বার বলা হয়েছে।

উপরের বিষয়গুলোকে যদি আমরা আমাদের জ্ঞানের আলোকে চিন্তা করি, তা হলে হয়তো আমরা এভাবে বলতে পারিঃ

আমাদের চোখে দেখার আর কানে শোনার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। আমাদের দৃষ্টি কিছু দূর যেয়ে থেমে যায়। আবার একেবারে ক্ষুদ্র জিনিস আমারা চোখে দেখি না; যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন। তার পরে অন্ধকারে আমরা দেখতে পাই না। বিজ্ঞান প্রমান করেছে, মানুষ কেবল মাত্র শুনতে পায়, যদি কম্পনসংখ্যা সেকেন্ডে ২০ থেকে ২০,০০০ সাইকেলের (20 Hz, cycles per second, to 20 kHz, 20,000 Hz) মধ্যে থাকে। অনেক পশুর শ্রবণ ক্ষমতা আমাদের থেকে বেশী। তা হলে আমরা শুনতে,দেখতে পাই না, এমন অনেক কিছুই-ই আছে। আমরা বাতাস থেকে যে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকি, আমরা তাই দেখতে পাই না। ইদানিং আমাদের মোবাইল ফোন ছাড়া তো মনে হয় চলেই না। সেখানকার শব্দ যে কোথা থেকে যাওয়া-আসা করে; তাও আমাদের খালি চোখে দেখার আর কানের শোনার, ক্ষমতার বাইরে। এখানে যে যুক্তিটা পরিস্কার হচ্ছে, পৃথিবীতে এমন অনেক বিষয়ই আছে, যা দেখতে, শুনতে, এবং বুঝতে হলে আমাদের বাড়তি কিছু উদ্যোগের প্রয়োজন হয়।

যেহেতু আমাদের দেখার আর শোনার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ, মহান সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ তালাকে জানতে এবং বুঝতে হলে আমাদের মানস লোকের দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে হয়। তার সৃষ্টি আর কর্মের মধ্যেই তিনি। পৃথিবী আর মহাশূন্য এবং সেখানকার প্রতিটা সৃষ্টির কথা চিন্তা করলেই, আমরা রাব্বুল আল আমীনকে খুঁজে পাই। আমাদের নিজেদের শরীর সেও একই কথার প্রমান। মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়া থেকে আরম্ভ করে, খাদ্য গ্রহন, বেড়ে উঠা, চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি, জীবিকা---সবই আল্লাহ’র দান।

মহান আল্লাহ তা আলাকে জানতে বুঝতে মানুষের একটা জীবন হয়তো খুবই সামান্য। তবে আজকে বলতে চেষ্টা করে হয়েছে, যদি আমরা কেও এই জানার, বুঝার কাজটা আরম্ভ করে না থাকি, তবে সেই কাজটা হয়তো নিজেকে এখনই নিয়োগ করা যেতে পারে। শেষে কোরান শরীফের ১১২ নম্বর সুরা আল ইখলাস দিয়ে আজকের আলোচনা শেষ করি। আল্লাহ তার নিজের সম্পর্কে বলছেন, “ হে মোহাম্মদ (দঃ) আপনি বলুন, আল্লাহ এক। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী না। তিনি কারো মাধ্যমে জন্ম নেন নি এবং তিনি কাওকে জন্ম দেন নি। এবং যে কোন ব্যাপারে তার সমকক্ষ কেও নাই”।

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১১
http://www.lekhalekhi.net
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×