somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমৃদ্ধির পখে বাংলাদেশ

০৬ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা অনেকেই জানি, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ এবং অনেক আগেই দেশটি বিশ্বের অন্যতম 'সমৃদ্ধ দেশ' হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারত। কী নেই আমাদের দেশে? আমাদের সবুজ মাঠে সোনা ফলে। মাটির নিচে মূল্যবান গ্যাস ও বেতল সম্পদে ভরপুর। সাগরে নানান জাতের মাছের প্রাচুর্য। আমাদের সোনার ছেলেরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশে পাঠায়। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বুদ্ধি চর্চায় বিশ্বের নানান স্থান থেকে স্বীকৃতি ছিনিয়ে আনতেও আমাদের তরুণ-তরুণীরা পিছিয়ে নেই। বুড়োরাও কিন্তু সে হিসেবে বাড়ন্ত। আমাদের দেশের সোনার ছেলেরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। এমন নজির বিশ্বে আর কোথায়ও নেই। এ দেশের মানুষ অস্ত্র ধরে দেশ স্বাধীন করেছে। গত ৪১ বছরে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে আসন করে নিয়েছে। মাথাপিছু স্বল্প আয়ের বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ হয়েও কীভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যায় সেটা প্রমাণ করেছে। মানব উন্নয়ন সূচকেও অধিকাংশ দক্ষিণ এশীয় দেশকে পেছনে ফেলে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সেটা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। ৪১ বছর সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৩ বছর অতিক্রম করছে সংসদীয় গণতন্ত্রের অধীনে। বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা জলজাহাজ তৈরি করে বিদেশে রপ্তানির মতো দুঃসাহসিক কাজও করতে পেরেছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ভারতের অমর্ত্য সেনও গত ২০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বেশি সম্পদশালী হয়েছে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় অর্ধেকের কম হওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ সামাজিক সূচকে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ...। বাংলাদেশ বর্তমানে মাতৃ মৃত্যুর হার কমার ক্ষেত্রেও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আমাদের জনগোষ্ঠী এখন আগের চেয়ে গড়ে বেশিদিন বাঁচে। আর সে কারণে সরকারি চাকরিতে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৯ বছর করা হয়েছে। ইউএনডিপির 'মানব উন্নয়ন সূচক' অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল এখন ৬৮ বছর ৯ মাস, যা ১৯৯০ সালে ছিল ৫৫ বছর ২ মাস। বাংলাদেশ সত্তরের দশকে পুরোপুরি সাহায্যনির্ভর দেশ ছিল। এটা আশির দশকে আরো বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক সাহায্য জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। অথচ রপ্তানি আয় বেড়ে হয়েছে ১৮ এবং রেমিটেন্স প্রায় ৯ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ এগোচ্ছে। মাত্র ৪ মাস আগে গত ১ ডিসেম্বর দুর্নীতি বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা ও জরিপে নিয়োজিত সংস্থা 'ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল' ২০১১ সালের যে দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ করেছে তাতে ০ থেকে ১০-এর স্কেলে ২ দশমিক ৭ পেয়ে বাংলাদেশ ১৮৩টি দেশের মধ্যে ১২০তম স্থান পেয়েছে। তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী এটি ত্রয়োদশ স্থান। পূর্ববর্তী বছরে এই অবস্থান ছিল স্বাদশ।
বর্তমানে বাংলাদেশের স্কোর ৩-এর চেয়ে কম। অনেকে বিশ্বাস করেন, খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের পক্ষে ৫-এর ঊর্ধ্বে স্কোর অর্জন করতে পারাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
১৯৭৯-৮০ সময়ে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল গড়ে মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের ১০ বছর জিডিপি বেড়েছে ৫ শতাংশ হারে। পরবর্তীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছাড়িয়ে গেছে ৬ শতাংশ। সর্বশেষ প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। স্বাধীনতার পরের বছর (১৯৭২) দেশের অর্থনীতি ছিল ৯৮৫ কোটি টাকার। এখন সেটা উন্নীত হয়েছে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায়। স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থবছরে (১৯৭২-৭৩) বাংলাদেশে রাজস্ব আয় হয়েছিল মাত্র ২৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, আর রাজস্ব ব্যয় ছিল ২১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর এখন তা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৮ হাজার ৩৮৫ টাকা এবং ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। আরেকটু গভীরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেই আমাদের সম্ভাবনাময় দেশের অগ্রগতির অবস্থা আঁচ করা যায়। ১৯৭২ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬৭১ টাকাথ এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ২৩৬ টাকা। আর ডলারের হিসেবে ৫ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জাতীয় আয় যেখানে ছিল ৪৭৬ ডলার এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫৫ ডলারে। অর্থাৎ সব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াতে পারে 'উদীয়মান অর্থনীতির দেশ' হিসেবে। ঘোচাতে পারে 'স্বল্পোন্নত দেশ' বা 'এলডিসি' নামের কলঙ্ক। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাবিস্নউটিও) মহাপরিচালক প্যাসকেল লামিও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কাক্সিক্ষত সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য এখন শুধু সামান্য দু'একটি পদক্ষেপ গ্রহণই বাকি আছে আমাদের। সম্প্রতি মায়ানমারের সাথে আমাদের সমুদ্র জয়ের ব্যাপারটি বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট অর্জন। আমরা অপেক্ষা করছি ভারতের সাথে রায়ের ব্যাপারেও। সেই সাথে সমুদ্রের নীচে থাকা অপার সম্পদও বাংলাদেশকে এনে দিবে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ, এই আশাবাদ রাখি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×