somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেলিম স্যার

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস ওয়ান এর প্রথম ক্লাস। স্যার সবাইকে একটা বই দেখিয়ে জিজ্ঞাস করলেন “এই বইয়ের নাম কি?” ক্লাস এর সবাই বলল “বাংলা বই”। একমাত্র আমিই বলেছিলাম “আমার বই”। সেই দিনই সেলিম স্যারের সাথে পরিচয়। স্যার সেই দিন আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে অনেক আদর করেছিল। তারপর থেকে ক্লাসে আমিই যেন স্যারের একমাত্র ছাত্র।
স্যারের আদর ও পশ্রয় দুটোই যেন আমার পড়ালেখার উৎসাহ। ভাল করতে লাগলাম সব পরীক্ষায়। ক্লাসে প্রথম না হলেও তিন চার জনের মধ্যেই থাকত রেজাল্ট। ছোট থাকতে চোখে সমস্যা ছিল বলে মোটা গ্লাসের চশমা পরতাম (আমিই মনে হয় ক্লাসের একমাত্র চশমাধারী)। আড়ালে অনেকেই আমাকে কানা বলে ডাকত। যদিও কেউ সামনে ডাকত না। একদিন টিফিন পিরিয়ডে আমাদের ক্লাসের সব চেয়ে গাধা ছাত্র মতি এসে সবার সামনে কানা কানা বলে ক্ষেপাতে লাগলো। সেই বয়সে মান অপমানবোধ বেশি না থাকলেও, ক্লাসে সবার সাথে মেয়েদের হাসির শব্দে যেন মাথায় খুন চেপে বসেছিল। দৌড়ে ধরতে গেলাম মতিকে। মতি একলাফে ক্লাসের বাইরে, তারপর মাঠে দৌড়াতে লাগলো। আমিও নাছোড়বান্দা, হঠাৎ হোচট খেয়ে মতি পরল ভাঙ্গা ইটের স্তূপের উপর,কপাল থেকে গলগল করে বেরুতে লাগলো রক্ত। অন্য ছেলেরা স্যার কে খবর দিল, এক স্যার মতিকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেল। একটুপরেই আমার বিচারপর্ব, সেলিম স্যার তিন নম্বরি সন্ধিবেত নিয়ে ক্লাসে আসলেন। তারপর এক দৃষ্টিতে আমার দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকলেন। তারপর মারতে লাগলেন ইচ্ছামত।
সেদিন রাতে প্রচণ্ড জ্বর এলো আমার, বিছানার পাশে আম্মা আব্বা বসে রইলেন সারা রাত। একটু পরে মাথায় কার যেন হাতের স্পর্শে তাকিয়ে দেখি সেলিম স্যার। স্যার আমার পাশে বসে কাঁদছেন। তারপর কোনদিন স্যার আমাকে মারেননি। স্কুলের শেষদিন স্যারকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম অনেক্ষন। স্যার মাথায় হাত রেখে বলেছিল বেটা বড়-হ।

দীর্ঘ দশ বছর পর কোন এক ছুটিতে আবার দেখা হল সেলিম স্যারের সাথে। জীবন যুদ্ধে আহত এক অন্ধ সৈনিকের মত স্যার বিছানায় শুয়ে আছেন। দীর্ঘদিনের ডায়বেটিকস কেড়ে নিয়েছে তার চোখের আলো। তবুও আমার গলার শব্দে স্যার আমাকে চিনতে পারলে, নাম ধরে ডাক দিয়ে কাছে বসালেন, আমি স্যারের হাত ধরে বসে থাকলাম।
স্যারের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে আমরা বন্ধুরা চাঁদা ওঠালাম, কিন্তু স্যার আমাদের একটি টাকাও নেয়নি। এক ঝড়োবৃষ্টির দিনে স্যার আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, সেই সময়টাতে আমরা স্যারের কাছেই ছিলাম। আমার দুই চোখ ছাপিয়ে কান্না আসতে শুরু করল, নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি,সেদিন দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বৃষ্টির জলে আড়াল করেছিলাম নিজেদের ব্যর্থতা আর কান্নার জল।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×