somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুভূতির গদ্য

০৩ রা এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই লেখাটি কোনও ভাবেই নিরপেক্ষ হবে না। এটিতে যেহেতু অনুভূতি নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হবে, এবং যেহেতু আমার নিজের অনুভূতি থেকেই সেই দৃষ্টিকোণের বর্ণনা থাকবে (যে বিষয়ক শব্দচয়ন আমার দৃষ্টিকোণ প্ররোচিতই হবে) তাই আমার উদ্দিষ্ট বক্তব্য পাঠকের অনুভব গ্রহন করার পর (অথবা গ্রহন করার সময়) কী অনুভূতি উদ্রেক করবে তা আমার অনুভবের অতীত!

তাছাড়া, আমাদের অনুভূতিগৃহীত উপাত্ত যা সময়ের সাথে অন্যান্য জ্ঞানের আগমনের সাথে নতুন ধারণা উৎপাদন করে আমাদের কাছে, অনুভূতিকে বা অনুভূতির অনুভবকে সেইরকম উপাত্ত বিবেচনা করলে, এই রচনার কালবিস্তৃত নিরপেক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তারপরেও, এই ঘটনার উল্টো সম্ভাবনা যে অবাস্তব তা আমরা কখোনওই মেনে নিতে পারি না। হয়তো অনুভূতির বিভিন্ন দৃষ্টিকৌণিক আলোচনা অনভূতি সম্পর্কিত আমাদের ধারণায় সাধারণের চেয়ে একাধিক স্তরের জটিলতা উন্মোচন করবে এবং আমরা সাধারণের চেয়ে আরও জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি হবো। যখন আমরা আগে থেকেই জানি যে, আমরা যা জানি তা ভুলও হতে পারে আবার ঠিকও হতে পারে (এবং ভুল বা ঠিক যা-ই হোক সাযুজ্য বিবেচনায় আমরা নিশ্চিত হবো, যে আমাদের পূর্বার্জিত জ্ঞান কতটুকু নির্ভরযোগ্য, অর্থাৎ কিনা সঠিক বা কম সঠিক) তখন আমাদের অর্জিত জ্ঞানে নিরপেক্ষতাহীনতাপ্রসুত ভুল এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।

এটাই আমার এই আলোচনার পেছনের প্রধান আত্মবিশ্বাস যে, যাঁরাই পড়বেন তারা যেন কিভাবে আমি আলোচনা করেছি সেই দিকে বেশি খেয়াল রাখেন, কেননা যদি আমার অনুভূতি বিষয়ক অনুভবসমূহ বিচারপ‌ূর্বক নির্ভরযোগ্য বিবেচিত হয় তাহলে বুঝতে হবে আমার পূর্বার্জিত অনুভূতি আপনার পূর্বার্জিত অনুভূতির সমতুল্য অথবা যে কাল বা স্থানে এবং মানসিক অবস্থায় ঐ সমতূল্য অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তারাও পরস্পর সমতুল্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমি নিজেই নিজেকে পুরোপুরি সঠিক বলে দাবি করছিনা- তাই, এই লেখায় যদি কিছু মূল্যবান থাকে তাহলে আমি নি:শঙ্কোচে বলতে পারি যে সেটা হলো করণ কারক। কর্তৃ বা কর্ম নয়!

আমাদের অনুভূতি আমাদের শরীরের সব জীবিত অংশ দিয়েই গৃহীত হয়, মৃত অংশ বা সংলগ্ন অংশও অনুভূতি আহরণ করে যদি তার সংশ্লিষ্ট জীবিত অংশ অনুভূতি গ্রহন করার মতো সজ্ঞান অবস্থায় থাকে। এবং এই ধারণাকে প্রাথমিক এবং নিরপেক্ষ ধারণা বলে গ্রহন করা সম্ভব। অনুভূতি কেমন করে অর্জিত হলো তা এই কারণে গুরুত্ব বহন করে যে, অনুভূতি গৃহীত হবার সময় গ্রাহক অঙ্গের অনুভূতি গ্রহনক্ষমতা সব সময় সমান হয় না এবং ঐ সময়ে গ্রাহক অঙ্গের পারিপার্শ্বিক অবস্থাও গ্রাহীক্ষমতার উপর অবধারণযোগ্য প্রভাব ফেলে। এখন এই কথার অন্য একটা দিক আছে, আমরা ধরে নিয়েছি যে, যে অনুভূতি গ্রহন করছি তার যে তীব্রতা বা প্রভাব, এর একটা স্থির পরিমান আছে যা কিনা গ্রাহী অঙ্গভেদে অপরিবর্তিত। এখন অধিকাংশ অনুভূতি বা তার উৎপাদকের তীব্রতা আমরা পরিমাপ করতে পারি না, সেক্ষেত্রে আমাদের অনুভূতির সাপেক্ষে গ্রাহী অঙ্গের বিচার করলে চলে না। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আমরা অনুভূতি উৎপাদকের পরিমান নির্ণয় করতে পারি, যেমন, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প বা সেলসিয়াস স্কেল তাপমাত্রা - এই সব ক্ষেত্রে আমরা গ্রাহী অঙ্গের তুলনা করতে পারি। আবার অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেখানে উৎপাদক পরিমাপযোগ্য নয়, সেখানেও গ্রাহী অঙ্গের উপর নির্ভর করে অনুভূতির বিবেচনা পরিপূর্ণভাবে কখনওই নির্ভরযোগ্য নয়। তারপরেও এই ধরনের উপায়ে অর্জিত অনুভূতির ব্যবহারিক গুরুত্ব আছে, কারণ বাস্তবে অধিকাংশ অনুভূতিই গৃহীত হয় গ্রাহী অঙ্গের মাধ্যমে, তাতে অনুভূতি প্রভাব ফেলে যায় গ্রাহী অঙ্গ সুগ্রাহী থাকুক বা না-ই থাকুক।

এখন আলোচনায় আসি গৃহীত অনুভূতির উপর পূর্ব ধারণার প্রভাব বিষয়ে। বলা বাহুল্য, যে এটি অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ, কেননা সজাগ সুগ্রাহী অঙ্গও বিভ্রান্তিকর অনুভূতি গ্রহন করতে পারে একই উৎস থেকে যেখানে পূর্ব ধারণা ভিন্ন রকম হলে একে বারেই উল্টো অনুভূতি হয়তো পাওয়া যেত।

একথা বলা যেতে পারে যে পূর্বার্জিত ধারণা অনুভূতির অর্জনের জন্যে এক ধরনের নির্ধারক। কী কী ভাবে পূর্বধারণা অনুভূতি গ্রহনকে নিয়ন্ত্রন বা নির্ধারণ করতে পারে? প্রথমত: আমরা অনুভূতির উৎস (শব্দ, ছবি, কম্পন, উষ্ণতা, গতি, স্থিতি) থেকে সাড়া (Impulse) গ্রহনের পর সেটাকে বোধগম্য অনুভবে রূপান্তরিত করার সময় সাধারণত পূর্বার্জিত ধারণার সাথে তুলনা (Analogy) করেই সেটাকে আমরা বোধগ্রাহী অনুভূতিতে অনুবাদ করার চেষ্টা করি। এই প্রক্রিয়াটি প্রায় সর্বব্যাপি(ubiquitous) এবং প্রায় অবচেতনভাবে (Involuntary) ঘটে। কবির কবিতায় রূপকের বা চিত্রকল্পের ব্যবহার এই প্রক্রিয়ায়ই হয়। দ্বিতীয়ত: গ্রহন বর্জন বা এড়িয়ে যাওয়ার ক্রিয়া পুরোপুরি পূর্বধারণার উপর নির্ভরশীল; কোনটি গ্রহনযোগ্য এবং কোনটি তা নয় এবং কোনটির প্রতি মনোযোগ প্রদান অপ্রয়োজনীয় এটা সর্বাংশে পূর্বধারণা প্রসূত। তবে এই প্রক্রিয়ায় একটি সাধারণ পর্যবেক্ষণ সম্ভব সেটি হলো, অনুভূতি বর্জন বা এড়িয়ে যাওয়ার আগে গ্রাহী অঙ্গকে একটি নির্দিষ্ট আংশিক অনুভূতি গ্রহন করতেই হয়। তৃতীয়ত: আমাদের চেনা অনুভূতি গুলো (এই লিংকে গেলে অনেকগুলোর নাম পাওয়া যাবে) পূর্বধারণার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, কেননা যেহেতু 'চেনা' তার অর্থই হলো ঐ অনুভূতিগুলো সম্পর্কে আমাদের স্থির ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নতুন করে পাওয়া চেনা ধারণাকে প্রতিনিয়ত অনুভব এবং প্রকাশ করি। সব সময় যে আমরা সঠিক বা পুরোপুরি সফল হই তা বলা যাবে না। পঞ্চমত: জটিল বা আকশ্মিক অনুভূতি গ্রহনে এবং অনুভব করায় আমরা পূর্বধারণার উপর নির্ভর না করে পারি না।

এবং তাহলে পূর্বধারণা ব্যতিত গ্রাহ্য অনুভূতির উদাহরণ কী হবে? আদৌ কী আমরা প‌ূর্বধারণার সাহায্য ছাড়া কোনও অনুভূতি গ্রহন এবং প্রকাশ করতে পারি ? আলোচনা করা হবে আসছে লেখায়।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৫৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×