somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢা.বি.'র ৪৬-তম সমাবর্তনে অব্যবস্থাপনা,বিশৃঙ্খলা- ছাত্রদের নৈতিকতা এবং প্রশাসনের দায়বদ্ধতা

০২ রা এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(যারা গিফট সামগ্রী লুট করেছে তারা ছাত্র নামের কলঙ্ক, আমাদের লজ্জা। কিন্তু ৪৫টি সমাবর্তনের পর আজ বাকি সব ক্ষেত্রে আরেফিন প্রশাসন যে অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিয়েছে তার দায়ভার নিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।ক্ষমা চাইতে হবে আমাদের কাছে যারা শুধুমাত্র গিফট সামগ্রী, টাই জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু একটা হেট এর জন্য হাহাকার করেছি, কিন্তু পাইনি ।)


ব্যক্তিগত কারণে বি.বি.এ.'র (৪৪তম) সমাবর্তনে অংশ গ্রহণ করতে পারিনি।তাই এম.বি.এ.'র টা (৪৬তম) হাতছাড়া করতে চাইনি। তাই অনেক ঝামেলার মধ্যেও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সারাদিন রেজিস্টার ভবন-সূর্যসেন হল-টি.এস.সি দৌড়াদৌড়ি করে, জনতা ব্যাংক-এ ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম একটা বিশেষ উপলক্ষের স্মৃতি ধারণ করার জন্য। নইলে পরে রেজিস্টার ভবন থেকে সার্টিফিকেট, মার্কস শিট নিতে এত ঝামেলা করতে হতোনা। কিন্তু যখন ২৮ মার্চ টি.এস.সি তে ছাত্র-ছাত্রীদের উপহার সামগ্রী লুটপাটের খবর জানলাম, মনে টেনশন কাজ করতে শুরু করলো কপালে কি শেষ সমাবর্তনের সুযোগ আছে??

এতগুলো বছর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করে গ্র্যাজুয়েট হয়ে যারা তাদের জন্যই রাখা উপহার সামগ্রী লুট করলো তাদের কথা ভেবে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গেল।এ কেমন শিক্ষা তাদের??এ কেমন নৈতিকতা?
৩০ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০টায় টি.এস.সি. গিয়েই ধাক্কা খেলাম। ৭২টি কাউন্টারের একটিতেও কস্টিউম, গিফট কিছুই নেই!!আমরা ৪/৫ জন বন্ধু এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম।একজন বললো আগের দিন ও নাকি এই অবস্থা ছিলো। গাউন আছেতো হুড (হেট) নাই, হুড আছেতো টাই নাই।অন্যান্য গিফটের কথা বাদ ই দিলাম। আজকে অনেকে এসেছে শুধু টাই নেবার জন্য।
১১টার সময় মাইকে ঘোষণা এলো আবার সবাইকে যার যার কাউন্টারের সামনে দাঁড়াতে। গিয়ে দেখি গিফট এর ব্যাগ এসেছে ৫টি, আর লাইনে আছে ৫০জন,ডিস্ট্রিবিউটর মাত্র ১ জন। তার মধ্যে বাবা-কাকার বয়সী ইভিনিং এম.বি.এ.'র ছাত্রদের ধাক্কায় দাঁড়াতেই পারছিলাম না। অনেক অনুরোধ করে বললাম 'ভাই আমরা শুধু আমাদের চিঠি(রশিদ সহ আমন্ত্রণ পত্র)নিবো, আপনারা আপনাদের গিফট নিয়েন ২টা মিনিট পরে।কে শোনে কার কথা??প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রদের মত তারা হুরমুর করে টেবিল-চেয়ার টপকে কাউন্টারের ভিতরে ঢুকে গিফট এর প্যাকেট ছিনিয়ে নিতে গেলেন। অবস্থা খারাপ দেখে আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় ঘন্টাখানেক পর চিঠি নিতে পারলাম। এবার ফর্ম পূরণ করে আবার ৩০ মিনিটের মত অপেক্ষা। অবশেষে একটা গাউন পেলাম। গিফট দূরের কথা, টাই কিংবা হেট কিছুই পেলাম না।সব কাউন্টারে সারা দিন একই অবস্থা।

বিকেল ৩টা ভি.সি. আরেফিন সাহেব ঘোষণা দিলেন বিকেল ৫টা পর্যন্ত গাউন দেয়া হবে, আর টাই, হেট কিংবা অন্য গিফট নেই। সে ব্যাপারে পরে জানানো হবে।হতবাক হয়ে গেলাম!!! গিফট সামগ্রীর গোষ্ঠী ...টাই না হয় নিজের একটা ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু হেট ছাড়া শুধু গাউন পরে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাবো? সহ্য হলোনা শত শত ছাত্র-ছাত্রীর। তারা প্রতিবাদ করলো।কিন্তু প্রতিবাদ কার কাছে করবে?কে আছে? সারা টি.এস.সি তে কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া গেলনা!! কিছু ছাত্র-ছাত্রী মাইকে ঘোষণা দিলেন সমাবর্তন পিছিয়ে দিতে।কেউ সমাবর্তনের পুরো কস্টিউম পরে সমাবর্তনে যাবে, আর কেউ শুধু গাউন পরে যাবে এটা কেউ মেনে নেবেনা। প্রশাসনের এই চরম অব্যবস্থাপনা কারো কাম্য নয়।

লুটপাট দোহাই নিছক বাহানা:
৪৬তম সমাবর্তন আয়োজনে আরেফিন প্রশাসন চরম অব্যবস্থাপনা, ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।কারণ-
১. যেখানে কস্টিউম, গিফট সংগ্রহের ফর্মসহ নিমন্ত্রণ পত্র ডাকযোগে পাঠিয়ে দেবার কথা সেখানে সে চিঠি টি.এস.সি থেকে সংগ্রহ করতে হয়েছে এবার।বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি সেখান থেকেই।
২. যারা ২৮ তারিখ টি.এস.সি.তে ছিলেন তারাই বলেছেন গিফট সামগ্রী লুট হয়েছে বড়জোর ৫০ প্যাকেট। তাহলে বাকি সবার প্যাকেট কই? আর গিফট প্যাকেট লুট হলেও গাউনের সাথের হেট তো কেউ লুট করেনি! প্রায় ৫০% ছাত্র হেট পায়নি।
৩. বার বার মাইকে বলা হচ্ছিলো কাউন্টারের সামনে দাঁড়াতে, কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানো রেখে ৫টা, ১০টা করে প্যাকেট কিংবা কস্টিউম আনা হচ্ছিলো ৩০ মিনিট পর পর।
৪. যারা সৌভাগ্যবশত: গিফটের প্যাকেট পেয়েছেন তার মধ্যে অনেক ছেলে পেয়েছে পার্স, আর মেয়েরা পেয়েছে টাই।
৫. ভি.সি. সাহেব যখন ঘোষণা দিলেন আর কোন হেট, টাই, গিফট সামগ্রী নেই তার পরও গেমস রুমে এবং দায়িত্ব-রত হলের মামা/কর্মচারীদের কাছে রাখা বক্স এ তখনো সব-ই ছিলো।
৬. আগের সব সমাবর্তনে সবাই গাউন পরিবর্তনের সুযোগ থাকতো সেখানে এবার লোকজন পাচ্ছিলোই-না!!

যারা গিফট সামগ্রী লুট করেছে তারা ছাত্র নামের কলঙ্ক, আমাদের লজ্জা। কিন্তু ৪৫টি সমাবর্তনের পর আজ বাকি সব ক্ষেত্রে আরেফিন প্রশাসন যে অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিয়েছে তার দায়ভার নিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।ক্ষমা চাইতে হবে আমাদের কাছে যারা শুধুমাত্র গিফট সামগ্রী, টাই জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু একটা হেট এর জন্য হাহাকার করেছি, কিন্তু পাইনি ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×