somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাকিব খানের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তি এবং কিছু প্রশ্ন

০১ লা এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২১শে মার্চ ২০১২ তারিখে সরকার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১০ ঘোষনা করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে ২০১০ সালের সেরা অভিনেতা শাকিব খান। ‘ভালোবাসলেই ঘর বাধা যায় না’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শাকিব খান এই পুরস্কার পেয়েছেন। ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় শাকিব খানের বিপরীতে অপু বিশ্বাস এবং রোমানা অভিনয় করেছেন। ১৯৯৯ সালের ২৮ মে সোহানুর রহমান সোহানের পরিচালিত সিনেমা ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমার মাধ্যমে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করার এক যুগ পরে তিনি রাষ্ট্রীয় ও সর্ব্বোচ্চ খেতাব জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। শাকিব খানকে অভিনন্দন।

শাকিব খানের এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে প্রশংসার পাশাপাশি নিন্দা ও ব্যঙ্গাত্মক বিভিন্ন মন্তব্য আলোচনা পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। শাকিব খানের নামের সাথে অপরিহার্য অংশ হিসেবে ‘হিজড়া’ যোগ করে বিভিন্ন মন্তব্যগুলোর মধ্যে একটি বিষয়ই বেশ ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে, তা হল – শাকিব খান এই পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন না, এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্রে দুর্দশার চিত্র আরেকটু স্পষ্টভাবে ফুটে উঠল ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধরনের মন্তব্যগুলোর বিপরীতে চিন্তা ভাবনা করতে গিয়ে কিছু প্রশ্ন মাথায় আসল। তাদের মধ্যে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ হল -

১. শাকিব খানকে কেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয়া যাবে না?
২. শাকিব খানকে বাদ দিয়ে কাকে পুরস্কার দেয়া যেত?
৩. শাকিব খানকে বাদ দিয়ে যদি অন্য কাউকে চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয়া যেত তবে কেন দেয়া হল না?
৪. শাকিব খানের কোন ভূমিকা কি বর্তমান ইন্ডাস্ট্রিতে আদৌ আছে?
৫. শাকিব খান কি ভালো সিনেমার অন্তরায়?
৬. শাকিব খান যদি ভালো সিনেমার অন্তরায় হয় তবে সমাধানের উপায় কি?

এই প্রশ্নগুলোর কিছু উত্তর আমি নিজেই খুজে নিয়েছি, কিন্তু আমি এতে সন্তুষ্ট নই। তারপরও আমার প্রশ্নগুলোর ব্যাখ্যা করতে আগ্রহ বোধ করছি।

শুরুতেই বলে রাখা ভালো, যে সকল মানুষ শাকিব খানের নামের সাথে ‘হিজড়া’ অপরিহার্য অংশ হিসেবে যুক্ত করেন আমি তাদের মধ্যে নই। শাকিব খানকে আমি সিনেমার একজন কুশলী হিসেবে দেখি – তিনি হয়তো অভিনেতা নন, কিন্তু তিনি নায়ক। শাকিব খানকে হিজড়া হিসেবে ট্যাগ করার ফলে একটা জিনিস ফুটে উঠে। সেটা হল- আমরা মানবতা, মানবিক অধিকার ইত্যাদির কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও হিজড়াদেরকে এখনো ক্ষুদ্র এবং নিকৃষ্ট জ্ঞান করি এবং কাউকে গালি দেয়ার সময় সমাজেরই আরেকটি অংশের দিকে আঙ্গুল তুলে দিই।

শাকিব খানকে কেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয়া যাবে না – তার উত্তর হতে পারে শাকিব খান চলচ্চিত্র পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন না। অধিকতর যোগ্য কেউ এই পুরস্কার পেতে পারতেন। শাকিব খান অভিনয় ভালো করেন না, শাকিব খানের সিনেমার গল্প ভালো না, শাকিব খান আগে অনেক নোংরা সিনেমায় অভিনয় করেছেন, শাকিব খান এখন এক প্রকার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি কন্ট্রোল করছেন ইত্যাদি ইত্যাদি কারণগুলো আমার মনে এসেছে। এর মধ্যে একমাত্র – শাকিব খান ভালো অভিনয় করেন না এই যুক্তিটিকে গোনার মধ্যে আনা যায়। যদি তাই হয়, তবে সেক্ষেত্রে শাকিব খানের দোষ কোথায়? দোষ হবে এর নির্বাচক গোষ্ঠীর। যারা আরও ভালো অভিনেতাদেরকে মূল্যায়ন করেন নি। অন্য কারণগুলোও অনেকটা এই যুক্তিতে বাদ পড়ে। শাকিব খান একসময় নোংরা সিনেমায় অভিনয় করেছেন বলে ২০১০ সালের সিনেমাগুলো বিচারের সময় বাদ দেয়ার মানে হল ইনজাস্ট করা। ২০১০ এর সিনেমার বিচার করার সময় কেন ২০০২ এর সিনেমার প্রসঙ্গ আসবে?

শাকিব খানকে বাদ দিয়ে কাকে পুরস্কার দেয়া যেত সে বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রায় সব সিনেমা দেখেছেন এমন দর্শকরা হয়তো ভালো মন্তব্য করতে পারবেন।

শাকিব খানকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পুরস্কার দেয়ার সুযোগ থাকার পরেও না দেয়ার একটি কারণ হতে পারে এই পুরস্কার প্রদানে প্রচন্ড দুর্নীতি হয়েছে। চাষী নজরুল ইসলাম এই পুরস্কার ঘোষনার পরে মন্তব্য করেছেন এখানে ‘শুধু দলীয়করণ নয়, চূড়ান্ত দলীয়করণ করা হয়েছে’। শাকিব খান লবিইং করে তার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন এমন অভিযোগও আছে। সেক্ষেত্রে, তার পুরস্কার প্রাপ্তির বিরোধিতা এই বলে করা উচিত যে এখানে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় নি। এ জন্য শুধু শাকিব খান নয়, পুরো জুরী কতৃপক্ষের বিচারের সম্মুখীন হওয়া উচিত।

শাকিব খান বর্তমান ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ ভালো ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। কিভাবে? ইন্ডাস্ট্রির চাকা সচল রেখে। শাকিব খানকে কেন্দ্র করে হলেও সিনেমা নির্মান হচ্ছে। একটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে তার অস্তিত্ব পুরোটাই হুমকীর মুখে ঠেলে দেয়া। বসে পড়া একটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে দাড়া করানো মোটেও সোজা কাজ নয়। বোধহয়, ৪০ বছর ধরে এই ইন্ডাস্ট্রির কার্যক্রম বিবেচনা করলে এটা বোঝা যাবে। আরও যুক্তির জন্য আমার “ভারতীয় সিনেমা আমদানী কি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ঘটাবে? ” শীর্ষক লেখাটি পড়া যেতে পারে।

শাকিব খান অবশ্যই ভালো সিনেমা অন্তরায় নয়। হলে, ‘গহীনে শব্দ’ পুরস্কার পেত না। ভালো সিনেমা হচ্ছে না কারণ এখানে ভালো পরিচালকরা আসছেন না, এখানে ভালো চিত্রনাট্যকাররা আসছেন না, এখানে ভালো সিনেমার জন্য লগ্নিকারক পাওয়া যাচ্ছে না (যদি ভালো সিনেমা বলতে বিকল্প ধারা-কে বোঝানো হয়, তবেই এই পয়েন্ট)।

তারপরও ধরা যাক শাকিব খান ভালো সিনেমার অন্তরায়, সেক্ষেত্রে সমাধানের উপায় কি? শাকিব খানকে জোর করে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। শাকিব খান ইন্ডাস্ট্রিতে আছে তার কারণ তার বিশাল এক ভক্তগোষ্ঠি আছে যারা শাকিব খানকে মন দিয়ে ভালোবাসে, যারা শাকিব খানকে অনুসরন করে, যারা শাকিব খানের সিনেমা দেখে। এই ভক্তগোষ্ঠির আকাঙ্খা পূরনের জন্য আছেন লগ্নিকারক, যারা শাকিব খানের সিনেমায় লগ্নি করলে তা ফেরত পাওয়ার আশা করেন। সুতরাং, আমাদের-ই ‘বেটার অলটারনেটিভ’ তৈরী করতে হবে। এই বেটার অলটারনেটিভ তৈরী করার জন্য শুধু নতুনদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে না, শাকিব খানকে দিয়েও ভূমিকা রাখানো যেতে পারে। শাকিব খানকে দিয়ে যদি আরও ভালো সিনেমা তৈরীর উদ্যোগ কেউ নিতেই চায়, তবে সেক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়াবে কে? শাকিব খান? প্রশ্নই আসে না। আমি জানি না, তবে বিশ্বাস করি, শাকিব খান আরও ভালো সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আপত্তি করবে না কিন্তু আরো ভালো সিনেমা নির্মানে যারা দক্ষ এবং আগ্রহী তারাই হয়তো তাদের সিনেমায় শাকিব খানকে কাষ্ট করার ব্যাপারে আগ্রহী হবেন না। যদি সত্যিই তাই হয়, তবে সমস্যা কিন্তু আমাতেই। শাকিব খানকে দোষারোপ কেন? এই পর্যায়ে পাঠক আপনি পড়া বন্ধ করুন, বুক ভরে শ্বাস নিন, তারপর বলুন – আপনি পরিচালক হলে শাকিব খানকে নায়ক হিসেবে আপনার সিনেমায় নেবেন? – উত্তর আমাকে দেয়ার দরকার নেই। হ্যা হোক – না হোক, আপনি যেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করতে পারেন সেই শুভকামনা জানিয়ে রাখলাম।

আগোছালো ভাবে কিছু কথা বললাম। আমার প্রশ্নগুলোই চূড়ান্ত নয়। আরও প্রশ্ন আছে, হয়তো আমার ভোঁতা মাথায় এর বেশী কিছু তৈরী সম্ভব ছিল না। সুতরাং এই মাথা থেকে আরও সূক্ষ যুক্তি আসবে তেমন আশা করাও বোকামী হবে। আমার প্রশ্ন এবং উত্তরে আপনার আপত্তি থাকলে আপনার যুক্তিসমূহ তুলে ধরুন। আর হ্যা, ভুল করেও ভাববেন না আমি শাকিব খানের পক্ষে বলছি - আমি শুধু জানতে চাইছি শাকিব খানের পুরস্কার পাওয়ায় সমস্যা ছিল কিনা। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের লড়াকু সৈনিকরা আমার পাঠকদের মধ্যেই আছে- এই বিশ্বাসে তাদের জন্য শুভকামনা।

============================================
সিনেমা নিয়ে আমার যত পোস্ট

আপডেট থাকতে ফেসবুকে দারাশিকো'র ব্লগের সাথেই থাকুন

২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×