somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন্ত্রী বনাম এমপি

০১ লা এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দিন কয়েক আগের কথা বিশেষ এক প্রয়োজনে বাংলাদেশের এক ক্ষমতাধর মন্ত্রীর বাসায় গিয়েছিলাম। না সাংবাদিক পরিচয়ে নয় বরং সাধারনের পোশাক ও পরিচয়ে। যদিও পরিচয় দেবার মত এত বড় সাংবাদিক এখনও হইনি। তারপরেও এ পেশাটিকে সন্মান করি বলেই পরিচয় দিয়ে সুযোগ নেয়াটা বরাবরই আমার পছন্দ নয়। যাই হোক ,মন্ত্রীর বাসায় গেলেও কোন ফেলনা রেফারেন্স নিয়ে যে যাইনি এটা সত্যি। তার ঘরের আত্মীয়ের সঙ্গেই আমার যাওয়া। আত্মীয় বললেন মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে বাসায় কথা বলতে হলে দর্শনার্থীকে নিয়ে অন্তত সকাল ৮টার মধ্যে পৌঁছতে হবে। যেভাবে বলা ; কাকডাকা ভোরে উঠে সিএনজি নিয়ে হাজির হলাম মন্ত্রীর বাসায়। এই উঠবেন উঠবেন করে আমাদের ৪ ঘন্টা বসিয়ে রেখে তিনি বেলা বারোটায় ঘুম থেকে উঠলেন যদিও সেদিন শুক্রবার ছিলনা। সারাদিন কাজের অনেক ধকল যায় কিনা তাই সবাইকে বসিয়ে রেখে তার এই কুম্ভকর্ণের ঘুম। অবশ্য এটাও সত্যি আমাদের দেশের অধিকাংশ মন্ত্রীই মনে করেন তাদের কাছে যারা যান তাদের আর কোন কাজকর্ম নেই যেন যতক্ষন ইচ্ছা বসিয়ে রাখা যায় । যাই হোক দেখলাম আমাদের মত অনেকেই এসেছেন তাদের প্রয়োজনে । হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকানোর মত দেখলাম মন্ত্রী বের হয়েছেন তার সুসজ্জিত কক্ষ থেকে সঙ্গে মুঠোফোনে অবিরাম কথা বলে যাচ্ছেন। যার সঙ্গে গেলাম সে আমাকে টেনে নিয়ে গেল এবং সমস্যা বলতে শুরু করল আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি কাকে আমি সমস্যার কথা বলব তিনি তো সেই থেকে ফোনটা কানের কাছে ধরে আছেন। মন্ত্রীপতœী বললেন এভাবেই মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে হবে,তুমি তোমার সমস্যার কথাটা বলে ফেল। যদিও তিনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় এবং অপরিচিত। আমি এর মধ্যেই আমার সমস্যা বলছি আর মন্ত্রী সাহেব নাস্তা করছেন কখনো ফোনে কথা বলছেন আবার কখনোবা মন্ত্রীর স্ত্রী তাকে অন্য একজনের সমস্যার কথা বলছেন। বলা যায় হযবরল অবস্থা আর কি। উন্নত বিশ্বের কোন নাগরিক যদি এই দৃশ্যটা দেখে ফেলেন তবে ভাববেন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদরা কত মহান সাধারন জনগনের আর্জি শুনতে গিয়ে খাবারটা পর্যন্ত তারা খেতে পারেন না। মিনিট খানেক আমার কথা শুনে জানতে চাইলেন আমি এখন আপনার জন্য কী করতে পারি? আমি তো ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ; ৪ ঘন্টাব্যাপী যার জন্য নাস্তা না করে অপেক্ষা করছি তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন তার করনীয় কী। তার এ কথাটা শুনেই আমি বুঝে গেলাম যার এত সমস্যা তিনি কী করে আামার সমস্যার সমাধান করবেন ! ভগ্ন হৃদয়ে ফিরে এলাম আর ভাবলাম একেই বোধ হয় বলে ক্ষমতা। মানে বাংলাদেশের ক্ষমতা আর কী। হয়ত: পেশাগত পরিচয়টি পেলে তিনি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলতেন না। ফিরে এসে ভাবলাম আর যাই হোক কোন ধরনের সাহায্য পেতে তার কাছে আর নয়। তবে বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্রও যে নেই তা নয়। আমাদের দেশের এমন একজন এমপি আছেন যিনি প্রতিদিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখেন তার নির্বাচনী এলাকার মানুষদের জন্য। বিদেশ ফেরত এই এমপি এবারই প্রথমবারের মত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলেন। তবে এখানে একটা শর্ত আছে প্রমানের জন্য ওই এমপির কাছে আপনার ভোটার আইডি কার্ডটি নিয়ে যেতে হবে যে সত্যিই আপনি তার নির্বাচনী এলাকার ভোটার কিনা। এটা অবশ্য মন্দ নয় কারন, আমাদের দেশের সকল এমপি যদি বিদেশ ফেরত এই এমপির মত নিজ নিজ এলাকার লোকদের সমস্যা শুনে সমাধান করেন তবেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। কিন্তু আমরা যে ভালোর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করি না সেটাই বড় বিষয়। তবে শুধু শুনে নয় বরং নিজ চোখে দেখার জন্য সেদিন গেলাম ঐ এমপির ব্যক্তিগত অফিসে যে সত্যিই তিনি তার এলাকার কথা ভাবেন কিনা আর সুপ্ত ইচ্ছা তো রযেছেই যে সুযোগ পেলে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগটাও হাতছাড়া করব না। এক সহকর্মীকে নিয়ে কথামত পৌঁছে গেলাম ঐ এমপির অফিসে যদিও তিনি তখনও আসেননি। কিন্তু অফিসে পা দিয়েই বুঝলাম না যা শুনেছি তার সঙ্গে বাস্তবের মিল তো রয়েছে এবং একটু বেশিই বলতে হবে কারণ, ঐ অফিসের প্রতিটি কক্ষে লোকে গিজগিজ করছে। সবাই অধীর নয়নে অপেক্ষা করছে তাদের সেই জনপ্রতিনিধির জন্য যাকে প্রত্যক্ষ ভোটে তারা নির্বাচিত করেছেন। ভাবতে ভালই লাগছিল তবে শংকাও হচ্ছিল এই ভেবে যে তিনি সদ্য বিদেশ থেকে এসেছেন বলে সেখানকার কালচারটা কিছুটা হলেও আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে এসেছেন কিন্তু কয়েকদিন পরে তিনিও আমাদের অন্য নেতাদের মত গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাবেন না তো !!

আফরিন জাহান
গণমাধ্যমকর্মী
শব্দ : ৬৩৮
ফোন : ০১৭১১-৯৩২৮৭২
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:০৬
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×