somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাড়ের ক্ষয়রোগ

৩১ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাড়ের অসুখ ‘অস্টিওপোরেসিস’। এই অসুখে আক্রান্তদের হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, স্পঞ্জের মতো এর মধ্যে অসংখ্য ছিদ্র দেখা দেয় এবং অনেকটাই দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে আক্রান্তদের উরু, মেরুদণ্ড বা কব্জির হাড় সহজেই ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এই ভঙ্গুরতা একজনকে এতটাই পঙ্গু করে তুলতে পারে যে, অন্যের সাহায্য ছাড়া নড়াচড়াও অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
৫০ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলাদের মধ্যে প্রতি দু’জনের একজন এবং পুরুষদের মধ্যে প্রতি আটজনের মধ্যে একজনকে এই অসুখে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তাই এটিকে অনেক সময় মহিলাদের রোগ বলে আখ্যায়িত করা হয়। ৪০ ভাগ মহিলা জীবনের কোন না কোন সময়ে এই রোগের কারণে হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হন। এই দলের মধ্যে আবার প্রতি পাঁচজনের একজনকে এক বছরের মধ্যেই পুণরায় হাড় ভাঙাজনিত সমস্যায় পড়তে দেখা যায় এবং কারও কারও ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটতেও দেখা যায়।
অস্টিওপোরেসিসের প্রধান কারণগুলো হচ্ছেÑ া বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হওয়া া ৪৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই রজঃনিবৃত্তি ঘটা া রজঃনিবৃত্তির আগে কোন কারণে দু’টো ডিম্বাশয়ই অপসারণ করা া প্রয়োজনের তুলনায় কম কায়িক পরিশ্রম া ধূমপান, অতিরিক্ত মাত্রায় মদ বা যে কোন ধরনের মাদক সেবন া অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস া খাদ্যে ক্যালশিয়ামের পরিমাণ কম থাকা া থাইরয়েড গ্রন্থি অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠা া শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং এন্ড্রোজেন হরমোনের অভাব া বংশগত কোন ত্র“টি া কোন বিশেষ ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া া এছাড়া রিউমেটয়েড আথ্রাইটিসে আক্রান্তদের এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মেই মানুষের শরীরের হাড়ের ঘনত্ব (একক আয়তনে কোন বস্তুর ভর) ক্রমশ কমে আসতে দেখা যায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এই কমে আসার হার অনেক বেশি থাকে। অর্থাৎ এদের শরীরে যত তাড়াতাড়ি হাড়ের পুরনো কোষকলা ভেঙে যায় সেই হারে নতুন কোষকলার জš§ হয় না। ফলে শরীর প্রয়োজনীয় অনুপাতে হাড় উৎপাদনে ব্যর্থ হয়। এই অবস্থাকে অস্টিওপেনিয়া বলা হয়। সময়মতো প্রতিরোধ করা না গেলে তা আস্তে আস্তে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
শক্ত হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি উপাদান হচ্ছে ক্যালশিয়াম এবং ফসফেট যা ব্যবহার করে শরীর নতুন হাড় উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। হƒদযন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং অন্য কোন অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও ক্যালশিয়ামের প্রয়োজন হয়। রক্তে ক্যালশিয়ামের সঠিক মাত্রা ধরে রাখার জন্য হাড় যে পরিমাণ ক্যালশিয়াম সঞ্চিত করে রাখে এসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের স্বাভাবিক চাহিদা পূরণের জন্য শরীর তা থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যালশিয়াম শোষণ করে নেয়। তাই প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালশিয়ামসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে অথবা কোন কারণে হাড়ের ক্যালশিয়াম শোষণ ক্ষমতা কমে গেলে হাড়ের কোষকলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাড়ের বৃদ্ধি বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
রোগটির প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে হাঁড়ে বা মাংসপেশীতে অল্প অল্প ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে কোমড়ের নিচে এবং গলার হাঁড়ে। পরে রোগটির প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হতে পারে। ব্যক্তিবিশেষে লক্ষণগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রেও কিছুটা তারতম্য দেখা যায়। ব্যথা একই স্থানে কেন্দ্রীভূত থাকতে পারে এবং নড়াচড়া করা বা কোন কাজ করতে গেলে যখন ওই স্থানটিতে চাপ পড়ে তখন ব্যথা বৃদ্ধি পায় বা অসাড়তা অনুভূত হয়। সপ্তাহখানেক পর ব্যথা কমে আসতে পারে বা কোন কোন ক্ষেত্রে তা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। অসহ্য ব্যথার কারণে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাও লোপ পেতে পারে। সাধারণভাবে হাড়ের ক্ষয় ধীরগতির একটি প্রক্রিয়া, যা বেশ কয়েক বছর ধরে ঘটতে থাকে। প্রায়ই দেখা যায় হাড় ভেঙে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একজন মানুষ জানতেই পারে না, সে এই রোগে আক্রান্ত। ফলে ততদিনে অসুখ বিস্তৃতি লাভ করে হাড়গুলোকে এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে যে আরোগ্য লাভ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
রোগটি নির্ণয়ের জন্য রক্তে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ডি এবং হরমোনের মাত্রা সঠিক আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। থাইরয়েড ও কিডনির কর্মক্ষমতাও পরীক্ষা করে দেখা হয়। নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য ‘হাঁড়ে মিনারেলের ঘনত্ব (বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট)’ নামের একটি বিশেষ পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষাটি হাড়ের ক্ষয়প্রাপ্তির হার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে খুবই ফলপ্রসূ।
এই রোগের চিকিৎসায় হাড়ের কোষকলার ক্ষয় রোধ বা ক্ষয় রোধের প্রক্রিয়াকে মন্থর করে দেয়া, হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করা, ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করা এবং এ সম্পর্কিত ব্যথা প্রশমিত করে তোলার ব্যাপারগুলোতে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাড়ের ভেঙে যাওয়া রোধ করতেই বিশেষ চিকিৎসা প্রদান জরুরি হয়ে ওঠে।
এই রোগটিকে প্রাতরোধ করতে হলে অল্প বয়স থেকেই সুগঠিত ও সুস্থ হাড় গঠনে সচেতন হতে হবে। যেহেতু ২৫ বছর বয়স নাগাদ হাড়ের ঘনত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় তাই এই সময়ের আগেই হাড়ের বৃদ্ধির ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে যাতে বৃদ্ধ বয়সেও তা যথেষ্ট শক্ত অবস্থায় থাকে। হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য অল্প বয়স থেকেই প্রতিদিন শরীর যেন অন্তত ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম পায় সে লক্ষ্যে ক্যালশিয়ামসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণে সচেষ্ট হতে হবে। এজন্য দুগ্ধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য, বিভিন্ন প্রকার গাঢ় সবুজ রঙের শাক-সবজি, সয়াবিন, সালমন, সারডিন ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছ গ্রহণ করা যেতে পারে। আজকাল বাজারে কৃত্রিম উপায়ে বিভিন্ন প্রকার সেরিয়াল, ফলের রস ইত্যাদি খাদ্যকে ক্যালশিয়ামসমৃদ্ধ করে তোলা হয়; প্রয়োজনে এসব খাদ্যও গ্রহণ করা যেতে পারে। যেহেতু ভিটামিন ডি হাঁড়ে ক্যালশিয়াম শোষণে সাহায্য করে তাই একই সঙ্গে ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাদ্যও গ্রহণ করা উচিত।
এছাড়া শরীরের ওজন বৃদ্ধি রোধ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা খুব জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ব্যায়াম হাড় ও উপরস্থ মাংসপেশীর ওপর টান টান অবস্থার সৃষ্টি করে সেগুলো হাড় অটুট রাখতে এবং এর ঘনত্ব বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই ওজন ধারণকারক ব্যায়াম (ওয়েট বিয়ারিং এক্সারসাইজ) এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক। ওয়েট বিয়ারিং এক্সারসাইজ এমন ধরনের ব্যায়াম যেগুলো পায়ের ওপর ভর দিয়ে করা হয় এবং শরীরের মাংসপেশী এবং হাড় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করে। হাঁটা, জগিং, সিঁড়ি বেয়ে বা পায়ে হেঁটে পাহাড়ে বা উঁচু স্থানে ওঠা, নাচা, টেনিস, বেইস বল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের আউটডোর গেমস এই ধরনের ব্যায়ামের অন্তর্র্ভুক্ত। তবে মনে রাখতে হবে সাতার কাটা এবং সাইকেল চালান খুব ভালো ব্যায়াম হলেও ওয়েট বিয়ারিং না হওয়ায় এগুলো অস্টিওপোরেসিসের ক্ষেত্রে তেমন কার্যকর হয় নয়।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনএসআই কর্মকর্তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবেই শতকোটি টাকা লেনদেন, আলহামদুলিল্লাহ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩

প্রথমেই বলে রাখি:
১: আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ'কে সাপোর্ট করি কিন্তু আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত নই। একটা দলকে সাপোর্ট করলেই উক্ত দল ক্ষমতায় থাকাকালীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সহেলিয়া তার নাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪১

সহেলিয়া তার নাম
ধাপারিয়া ছিল তার গ্রাম
আমার বাড়ির সামনে দিয়ে
আসতো যেতো প্রতিদিনই সে
জানালাটা খুলে আমি
তার দিকে চেয়ে তার
হেঁটে যাওয়া দেখতাম



মাথায় দুটি বেণি ছিল
দু পাশে দুটি লাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্যতার কলঙ্ক ইজরাইল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম তোরাহ। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদি এবং সকল একেশ্বরবাদীরা বিশ্বাস করে তোরাহ হচ্ছে প্রফেট Moses ( মুসা নবী ) এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×