চিঠিটির এক জায়গায় ভারতীয় সেনাপ্রধান লিখেছেন, "যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র যেমন মেকানাইজড ফোর্সেস, আর্টিলারি, এয়ার ডিফেন্স, ইনফ্যান্ট্রি এবং স্পেশাল ফোর্সের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ার ও সিগন্যালের অবস্থাও শোচনীয়"। অন্য আরেক জায়গায় তিনি উল্লেখ করেছেন, "শত্রুর ট্যাংককে পরাজিত করার জন্য সেনাবাহিনীর পুরো ট্যাংক বহরেরই জটিল গোলাবারুদ নেই। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ৯৭ শতাংশই মান্ধাতা আমলের। পদাতিক বাহিনীর রাতে যুদ্ধ করার সামর্থ্য নেই। এলিট স্পেশাল ফোর্সের অতিপ্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্রের অভাব ভয়াবহ। জটিল সার্ভেইল্যান্স বা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব বড়ই প্রকট।"
মোটামুটি ভাবে চিঠিটির যে সারাংশ করা যায় তা হলো,
প্রথমত, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গোলা বারুদের ভয়ঙ্কর রকমের সঙ্কট রয়েছে
দ্বিতীয়ত, ভারতের এই বিশাল সামরিক বাহিণী (শুধুমাত্র সেনাবাহিনীতেই ১১ লাখ ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে) চলে মান্দাতা আমলের প্রযু্ক্তিতে।অনেক আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম যে, ভারতীয় বিমান বাহিণী রাশিয়ান তৈরী মান্দাতা আমলের মিগ ২১ এর এক বিশাল ডিপো।
এখানে উল্লেখ্য যে, যখন ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে রয়েছেন ঠিক তখনই ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থার তথ্য প্রকাশিত হলো। ভারতীয়রা যে চাপাবাজিতে ওস্তাদ এটাতো আমাদের সবারই কমবেশী জানা। ভারতের মনে রাখা উচিত যে, খালি চাপাবাজি করে পরাশক্তি হওয়া যায় না। একটি দেশকে পরাশক্তি হতে হলে, তাকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও আদর্শিক দিয়ে শক্তিশালী হতে হবে। আর সেই সাথে থাকতে হবে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ভারতের এর কোনটিই নেই।
এ ঘটনা আমাদের মত ছোট দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। সামরিক বাহিণী আয়তনে বড় হলেই শক্তিশালী হয়ে যায় না। আমাদের দেশের সামরিক বাহিণীকে জনসংখ্যা অনুপাতে যেমন বাড়াতে হবে ঠিক তেমনি একে যুগোপযোগী করতে হবে। একে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে হবে, দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তিতে মনোযোগী হতে হবে। বিমান বাহিণীকে শক্তিশালী করতে হবে। এখনকার যুগে শক্তিশালী বিমান বাহিণী ছাড়া শক্তিশালী সামরিক বাহিণী কল্পনাই করা যায় না। বিশাল সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত করার জন্য ত্রিমাত্রিক নৌবাহিণী গঠণ করতে হবে। পত্র পত্রিকয়া মারফত তো আমরা জানি যে, চীনা সামরিক বাহিণী সরকারীভাবেই হ্যাকারদের পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাদের রয়েছে বিশাল সাইবার আর্মি। আমাদের সেনাবাহিণী সাইবার যুদ্ধের জন্য কতটা প্রস্ত্তত? www.globalfirepower.com ব্রাউজ করে দেখলাম সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী পৃথিবীর প্রথম ৫০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই। অত্যন্ত দুঃখজনক।
আমি সরকারকে অনুরোধ করবো, সবার জন্য সামরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক। কারণ আমাদের মত দেশের পক্ষে বিশাল আয়তনের সামরিক বাহিণী লালন পালন করা হয়তো বা সম্ভবপর হবে না। আমার জানা মতে, ইরান, ইসরাঈল সহ বেশ কিছু দেশে এই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমাদের নীতি হওয়া উচিত, আমরা কখনোই আক্রমণাত্মক হব না, কিন্ত্ত কেউ যদি আমাদের আক্রমণ করে তাহলে আমরা তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতেও ভুলবোনা। যেভাবে দিয়েছিলাম ৭১ এ, যেভাবে দিয়েছিলাম ২০০১ সালের ১৮ই এপ্রিলে ।
তথ্যসূত্রঃ
ভারতীয় সেনাপ্রধানের চিঠি ফাঁস নিয়ে বিতর্ক
মনমোহনকে সেনাপ্রধানের গোপন চিঠি নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি : ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, ৯৭ ভাগ এয়ার ডিফেন্স সেকেলে
ভারতের নিরাপত্তাব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে
পুরনো অস্ত্র ভারতকে দুর্বল করে তুলেছে
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৫০