মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদী হাইজিং এর ভেতর কোন এক বাড়িতে আমি যাই, পড়াইতে। সেদিন ঠিক এইভাবেই আমার বাসা থেকে রওনা হয়েছিলাম। টেম্পো, বাস, আর মাঝে মাঝে রিক্সায় করে আমি যেয়ে থাকি। সেদিন আচমকা কোন টেম্পু পেলাম না। তাই বাসে উঠে বসলাম।
বাস মোটামুটি খালি ছিল, তাই সামনের একটি সিটেই বসে পরলাম। জানতাম এটা মহিলা সিট। বাসে একটাও মহিলা না থাকায় আমি সে সিটে বসে পিঠটা এলিয়ে দিলাম। কিন্তু সুখ বেশিক্ষণ সহ্য হয় না। কলেজের একগাদা মেয়ে হুরমুর করে বাসে উঠে পড়ল।
একটা মেয়ে আমার সামনে এসে বলল, ভাইজান, এটা মহিলা সিট। আমি সিট থেকে উঠলাম না। পাশে সরে বললাম, আপু ভিতরে যান। মেয়েটি গট গট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, পেছনে অনেক সিট খালি আছে, আপনি মেয়েদের সিটে কেন বসছেন।
আমি বললাম, ছেলে মেয়ে দিয়ে বাসের সিট ভাগ করা অনর্থক। যেহেতু সিট খালি আছে, আপনারা সেখানে গিয়ে বসুন, ঐ সিটগুলা অলিখিত ভাবে ছেলেদের হতে যাবে কেন?
মেয়েটা এত কিছু বুঝল না। শুধু বলল, "ধুর ছাই"। বলেই আমার ঠিক পেছনের সিটে বসে পড়ল। কিন্তু আমার পাশ গলে কেউ আমার সিটের ভেতরের দিকে গেল না।
"চড়িয়ে দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছা করে..." কথাটা শুনতে পেলাম। কিছু বললাম না, শুধু হাসলাম মনে মনে। নির্বিকারভাবে বসে আছি। পেছন থেকে আবার কি কিছু বলে, "অসহ্য...দেখলেই বোঝা যায় বেটা মাস্তান"। আবারও হাসলাম মনে মনে, কিছু বললাম না।
"সুস! আস্তে বল, শুনে ফেলবে"। কেউ যেন পাশের থেকে বলল। বাসের কন্ডাক্টর তখন ভাড়া কাটতে আসছে। আমাকে দেখে বলল, ভাইজান, এখানে বসছেন কেন? বললাম, ইচ্ছা হইছে, কেন?
-এটা তো আপনার সিট না।
-তো?
-তো কি ভাইয়া, মেয়েদের সিটে বসলে মেয়েরা কই বসবে?
-মেয়েরা নরমাল সিটে বসবে, দরকার হলে ছেলেদের পাশে বসবে, সিম্পল! মেয়েদের বলে আলাদা সিট থাকবে কেন?
কন্ডাক্টর ভাড়া নিয়ে চলে গেল, ভাবখানা এমন করল, যেন এইমাত্র আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে!
"ভাব দেখছোস!" বলে হা হা হা করে হাসি! আমিও মনে মনে হাসলাম। এবার আর সময় নাই। নেমে পড়ার পালা, নামার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরলাম, বললাম, "ফিস ফিস করার দরকার নেই, সব শুনে ফেলছি, চড় দিতে ইচ্ছা করে, মাস্তান..." একটা হাসি দিলাম!
গেটের দিকে চলে এলাম। তখনও মেয়েগুলো সম্বিত ফিরে পাইনি, না ভয় পেল কে জানে! আমি বাস থেকে টপ করে নেমে পড়লাম!