somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত ...

৩০ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাল রাতে বৃষ্টি হল!
কাজে অকাজে এ ঘর থেকে ও ঘরে ঘুরছিলাম। হঠাৎ বাইরে কেমন উন্মাতাল একটা শব্দ। আমি ছুটে বেরিয়ে এলাম বারান্দায়।
আমাদের ছোট্ট এক চিলতে একটা বারান্দা আছে। নীল রঙের গ্রীল আটকে রেখেছে আমাদের। পাখি আর পাপ সব সবকিছু থেকে !
মাটির ভাপের সাথে একটা সবুজ ধূসর গন্ধ বেরিয়ে এল।কেউ কি জানে রঙের কেমন অদ্ভুত একটা গন্ধ থাকে। নাকি উল্টোটা বলতে চাইলাম! গন্ধের এক রকমের রঙ থাকে।
কেমন শীত করে আমার সারা শরীর কাঁপিয়ে গেল।
কিছুক্ষন বারান্দায় দাঁড়াতেই বৃষ্টির ছাঁটে আমার শরীর ভিজে যেতে লাগলো। অসময়ের বৃষ্টি। মার্চ মাসের এ সময়টাতে বৃষ্টি হবার কথা নেই তবু কি করে হল? আমার কেমন অদ্ভুত লাগে। মেঘ যবনিকা শব্দটা মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকে।
বাড়িটাতে আমি থাকি আর আমার স্বামী থাকেন। এ রাতে হঠাৎ মনে হল আটা নেই। সকালে বুয়া বলেছিল উনি ফেরার পথে আনতে ভুলে গেছেন। রাস্তার ওপাশে দোকান । বৃষ্টিতে আটকা পড়লেন নাতো?

উনি আমাকে খুব বোঝেন। ভাল বাসেন। কিন্তু আমার সারাক্ষন মনে হয় আগে যে একবার বিয়ে হয়েছিল আমার তা মাঝে মাঝে মনে করে কষ্ট পান। আমি জানিনা কেন! তার হালকা কথাতেও আমার খুব অভিমান হয়। আমার মনে হয় উনি বুঝি ওসব কারনে আমাকে মানতে পারছেন না। নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাই। আমার মন ভাল লাগেনা। উনি সারাদিন অফিসের কাজে বাইরে থাকেন। রুটিন করে দুপুর বেলায় ফোন করেন।
বুয়া খাবার রান্না করে রেখে যায়। আমার খেতে মনে থাকেনা। আমি গল্পের বই তে ডুবে থাকি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল যায় যেদিন তাঁর ফোন দিতে মনে থাকেনা সেদিন আমার সব এলোমেলো লাগে। আমি খুব জানি তিনি হয়ত মিটিং এ জরুরী কাজে, অথবা বস এমন কাজ দিয়েছে যা তাকে সময়ের ভেতরেই করতে হবে। অথচ আমার মনে হতে থাকে উনি হয়ত আমার অতীতের দিনগুলোকে ভাবছেন। আমাকে কম ভালবাসছেন ইদানীং! আমি ঠিক বোঝাতে পারবোনা আমার কেমন লাগে। বমি বমি লাগে। আমার চোখ ভরে যায় অল্পতেই। বুকের ভেতর কেমন অবশ আর থম ধরে যায়!
আমি বাসায় সারাদিন একা থাকি বলেই হয়ত এমন হতে থাকে। দিন দিন এক রকম অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছি বলে গত একমাস ধরে আমার স্বামী প্ল্যান করছেন আমারা দূরে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসবো। আমার সমুদ্রে যেতে ভাল লাগেনা। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেই এক ঘেয়েমি মনে হয়। সেই একই রকম ঢেউ। বারবার ফিরে আসছে আর আসছে। মানুষের জীবন ও একই রকম এক ঘেয়েমির নয়? প্রতিদিন যে সময় কালের গর্ভে চলে যায় ঠিক সে রকম সময় তো আবার পরের দিন ফিরে আসে। আবার পরের দিন। আবার পরের দিন!

আমার স্বামীর সমুদ্র ভাল লাগে। কিন্তু আমার ভাল লাগার কথা ভেবেই হয়ত তিনি বললেন আমরা পাহাড়ে যাব। তোমার মন ভাল হয়ে যাবে। তিনি বললেন চল এবার দার্জিলিঙ ঘুরে আসি। বিয়ের পর পর একবার আমারা পাহাড়ে গিয়েছিলাম। সেবার নেপালে আমরা শান্ত পোখরা আর একটা পাহাড়ের পাশে কাটিয়েছিলাম এক সপ্তাহ । এবার ঠিক হল দার্জিলিঙ যাওয়া যায়। এসবে আমার কোন উৎসাহ কোনদিন ই ছিল না। সে নিজেই নেট ঘেটে সমস্ত তথ্য আর হোটেলের নাম ধাম খুঁজে বের করে বুকিং দিল।

প্রচন্ড ক্লান্ত ছিলাম। আর বেশ কদিনে টের পাচ্ছিলাম আবার শরীরের মাপে বানানো ব্লাউজগুলোর হাতা কেমন ঢিলে মনে হচ্ছে। আর চোখের নিচের স্পষ্ট কালিটার কথা আমার স্বামীই বারবার করে মনে করিয়ে দেন।
হোটেল টা আমার খুব পছন্দ হল। শান্ত পাহাড়ের উপর দারুন একটা বাঙলো টাইপের বাড়ি। পশ্চিমের ঘর পেলাম আমরা। পুরো ঘরটা হালকা বেগুনি রঙ দিয়ে রাঙানো। ঘরে ঢুকেই পর্দা সরিয়ে আকাশ দেখলাম। ছোট ছোট মেঘের টুকরো। হাত বাড়ালেই বেড়ালের মত আদর খেতে ঢুকে যাবে শরীরে। কি অদ্ভুত একটা গন্ধ মেঘের!
একটা খোলা বারান্দা। আমার মন মুহূর্তে ভীষণ ভাল হয়ে গেল। ইচ্ছে করলো আমার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলি তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। এই মেঘ পাহাড়ে আমাকে নিয়ে এসেছো বলে। আমার ভেতরের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারিনা একদম। বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই হিমালয় থেকে হাওয়া এসে আমার চুল উড়িয়ে দিয়ে গেল। সামনে অতল খাদ। আমি ঝুঁকে দেখতেই আমার পিঠে হাত রাখলেন আমার স্বামী।

তোমার ভাল লাগছে জয়ী? আমি আলতো করে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিতে চাই। উনি হয়ত সে সময় চাচ্ছিলেন কোন অন্তরঙ্গ মুহূর্ত। আমি ঠিক জানিনা আমার ভেতর টা কেমন শক্ত হয়ে গেল।
পরের দিন সারাদিন আমরা ম্যালে বসে থাকলাম। ওখানেই একটা রাস্তার ধারের হোটেলে অসংখ্য বার চা খেলাম। আর একটা রেস্টুরেন্টে বসে দুপুরের খাবার খেলাম। সারাদিন কুয়াশায় ঢেকে থাকলো সারা দার্জিলিঙ!
মিঠে একটা বাতাস! আমরা মন ভাল করে হোটেলে ফিরে এলাম।

আমার স্বামী ফেরার পথে একটা স্যুভেনির দোকান থেকে কি একটা হাতে করে আনলেন। রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে গরম চাদর আর নানা জিনিস নিয়ে বসে থাকা নেপালী মেয়ে গুলো আজিয়ে লিজিয়ে বলে অনেক ডাকলো। আমার স্বামী আমাকে বললেন একটা গরম চাদর নেবে? একটা হলুদ ছোট ফুল তোলা চাদর হাতে নিলেন উনি। আমি বললাম মায়ের জন্য নিতে পারো। উনি কিনলেন। তোমার জন্য কিছু নাও। আমার মন থেকে আসছেনা। আমি এড়িয়ে যাবার জন্য বললাম আরো তো কদিন আছি। পরে নেয়া যাবে ক্ষণ!

হোটেলে ফিরে তিনি কাগজে মোড়া প‌্যাকেট টা টেবিলে রাখলেন। আমরা খেয়েই ফিরেছিলাম। উনি টেলিভিশন নিয়ে কিছুক্ষন খোঁচালেন। আমি জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইলাম। আগামী কালের প্ল্যান বললেন আমাকে। ভোর রাতে উঠে টাইগার হিল না কোথায় যেন যাবেন বললেন। ওখানে সূর্য ওঠে আর উল্টোদিকের কাঞ্চনজঙ্ঘায় মনে হয় সোনা লেপে দিয়েছে কেউ। আমার মন টানছিল না। আমি ঘুমুতে গেলাম। এরপর ঠিক কি হয়েছিল আমার একটুও মনে নেই। যখন টের পেলাম আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।
আমি আয়নার সামনে আর আমার হাতে ধরা আছে কাগজের প‌্যাকেট টা। ওতে একটা গাঢ় কমলা রঙের মুখোশ। যেন মুখ বের করে আমাকে দেখছে। পাথরের লাল চোখ জ্বল জ্বল করছিল ঘরে জ্বলানো স্বল্প আলোতে।

আমি এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি বারান্দাতে। বোধহয় দরজা খোলার শব্দেই আমার স্বামীর ঘুম ভেঙে থাকবে। আমাকে ছুটে যেতে দেখে অবাক হলেন হয়ত। আর খুব দ্রুতই উঠে এলেন। আমি তখন রেলিঙ এ মুখ ঝুঁকে আছি। এত দ্রুত শ্বাসের শব্দ মনে হচ্ছিল পাশে কোথাও ঢোলের শব্দ হচ্ছে। আকাশে চাঁদ প্রায় পূর্ণ। দু একদিন পরেই বোধ হয় পূর্ণিমা। সমস্ত চরাচর ভেসে যাচ্ছে জোছনার আলোতে।
পাহাড়ের অতল খাদের দিকে তাকিয়ে আমি হাঁফাতে থাকি।

আমার স্বামী আমার পিঠের উপর হাত রাখলেন। আমি আঙ্গুল তুলে নিচের দিকে দেখালাম। উনি দেখতে চাইলেন। হয়ত ঠিক বুঝতে পারলেন না। কিন্তু আমি দিব্যি দেখতে পাচ্ছি আমার যে শরীরটাতে হাত রেখেছেন উনি। সেখানে আসলে আমি নেই। আমি তখন খাদের অতলে। একটা শক্ত পাথরে আমার মাথা ঠুকে গেছে। আর মগজটা ছড়িয়ে পড়েছে টুকরো টুকরো হয়ে। চাঁদের আলোতে ছড়িয়ে পড়া মগজ গুলো কে হলুদ করবি মনে হচ্ছে।
আমি স্পষ্ট এসব দেখছি। কিন্তু কিছুতেই বোঝাতে পারছিনা আমার স্বামী কে।
আমি হয়ত গোঙাতে থাকি। আমার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চায়। আমার স্বামীকে এত অসহায় দেখে আমার খুব কান্না আসে। আবার রাগ ও হয় একসাথে।
সেদিন রাতে আমার শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এলো। জ্বরের ঘোরেও আমি বারবার দেখতে লাগলাম আমার শরীর ঝাঁপ দিয়ে পড়ছে। কিছুতেই তাকে ধরে রাখতে পারছিনা। শক্ত পাথরে মাথা ঠুঁকে যাচ্ছে। মগজ ছড়িয়ে পড়ছে পাথরে পাথরে। আমার শরীরটা হালকা পালকের মত উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে নিচের দিকে নামছে! দুএকবার উল্টো বাতাসের ঝাপটায় বুঝতে পারছি আমি আকাশের দিকে উড়ে যায়। আবার পরক্ষনেই পাথর আমাকে টানছে শক্ত হাতে। যতক্ষন চোখ বন্ধ রাখি আমার মনে হতে থাকে এত দীর্ঘ সময় এভাবে ভেসে আছি! আর চোখ খুলতেই মুখ ঠুঁকে যায়। মাথা থেতলে যাচ্ছে! স্পষ্ট ওসব খুব স্পষ্ট বুঝতে পারি।
অথচ কোথাও কোন রক্তের ছিটেফোটা নেই। এমন কেন হবে?

আমি জানিনা। ওসব কিচ্ছু জানিনা। দিন দিন আমার অসুখটা বেড়েই চলেছে। পাহাড় থেকে ফিরে আমি আমার প্রিয় বেলকুনিটাকেও ভয় পেতে শুরু করি।
এখানে এলেই আমার মনে হয় আমার শরীরটা আসলে আমার নেই। কোথায় যেন কিছু একটা হয়ে গেছে। আমার স্বামী আমার যত্ন নেয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইদানীং অফিস শেষ হতেই বাসায় ফেরেন। আগে বন্ধু বান্ধবদের আড্ডায় যেতেন। এখন তাও বাদ দিয়েছেন।
অনেকেই বলছে এই একার সংসারে একটা বাচ্চা কাচ্চা হলে নাকি আমার আর একা থাকতে হবেনা সারাদিন। আমি ব্যস্ত থাকবো। অসুখটা সেরে যেতেও পারে।

মাঝরাতে আমার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে বুঝতে পারি সম্ভব না। কিছুতেই সম্ভব না। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যেতে থাকে। আর আমার শরীরটা শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। একটা তল খোঁজে। সে এক প্রচন্ড টান। আমি কিছুতেই পারিনা ধরে থাকতে। একসময় হাল ছেড়ে দি আর টের পাই শরীরটা চল যাচ্ছে সামনের সব বাধা উপেক্ষা করে। সেদিন রাতে টের পেলাম সবেগে ছুটে গেল শরীরটা আর ঘরের দেয়ালে ধাক্কা খেল। প্রচন্ড ঝাঁকুনি খেয়ে থেমে গেল ঠিক, কিন্তু ব্যাথা ছড়িয়ে গেল তরল সুগন্ধির মত।

গতকাল ছুটির দিন ছিল। আমার স্বামী আমাকে নিয়ে মায়ের বাসায় যেতে চাইলেন। রিকশায় করে আমরা যাচ্ছিলাম। আমাকে একটা বাচ্চা মেয়ের মত উনি আঁকড়ে ধরে ছিলেন। আমার আঁচল টা পিঠ ছেড়ে পড়ে গেছে। আমার ভীষণ লজ্জা করতে লাগলো।

ভালবাসা কে ধরে রাখতে হয়। এতটুকু গ্যাপও রাখতে নেই কোথাও। একবার যে ভালবাসা ভুলে দূরে যায় , ফিরে এসেছে আবার এমন নজির কোথাও নেই। কি যত্ন করে তোমাকে ভালবাসি জয়ী! তুমি টের পাও না?
আমার চোখ ফেটে ভীষণ কান্না আসে। আমি এমন কেন! আমাদের বোধ হয় সত্যিই একটা সন্তান প্রয়োজন। আমি ভাবতে থাকি! নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি অনাগত একটা বীজের জন্য। শরীরের ভেতর কেমন করতে থাকে আমার। ঠিক এরকম সময় টের পাই আমার শরীরটা ছুটে বেরিয়ে যেতে চাইছে। আমার চোখ বেরিয়ে আসতে চায় কোটর ছেড়ে। ঝট করে আমার স্বামীর হাঁটুতে হাত রাখি। খামচে দিতে চাই। আমার শরীরটা লাফ দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। ভারি একটা লরী আসছিল। সামনা সামনি যখন মুখ থুবড়ে পড়ছি আমাকে পিষে দিয়ে চলে গেল। সে কি সীমাহীন যন্ত্রনা। আমার মুখ দিয়ে ফেনা বেরুতে থাকে।
আমার স্বামী ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। আমি টের পাই। অথচ কি করতে পারি আমি? রোজ রাতে একটা সোনার ঘোড়া স্বপ্নে আসে আমার। তার চোখ দুটো উজ্জ্বল লাল পাথরের। ঠিক দাজির্লিং এ কেনা মুখোশটার মত ধ্বকধ্বক করে জ্বলে। মাঝে মাঝে তীব্র আতরের গন্ধে ঘর ভরে যায়।
সেবার কে যেন হ্বজে গেল আমার স্বামীর জন্য আতরের কৌটো আনলো। মনে হয় রজনীগন্ধা হাতের তালুতে নিয়ে কচলে দিলে এমন মিষ্টি সবুজ একটা গন্ধ বেরোবে। সেরকম সবুজ একটা গন্ধ রারাঘরে ছড়িয়ে থাকে আর আমাকে অস্থির করে দিয়ে যায়।
কতরকম ছোটাছুটি করতে হয় ভাল থাকতে গেলে। আমাকে ভাল রাখতে চান আমার স্বামী। কদিন সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে গেলাম । উনি অনেক প্রশ্ন করেন। আমি টের পাই উনি এসব বিশ্বাস করার ভান করছেন। কিন্তু মনে মনে হাসেন কি? আমাকে পাগল ভাবেন? আমার একদম ভাল লাগেনা। তবে আমার স্বামীকে আর কষ্ট দিতে চাইনা বলেই হয়ত তার সাথে যাই। আর ধৈর্য্য নিয়ে একই গল্প প্রতিবার করি। এমনিতেই তাকে যে পেইন দিচ্ছি, আমার নিজের ই মাঝে মাঝে নিজেকে অসুস্থ্য লাগে। তা না হলে সেরকম কষ্ট পাবোই বা কেন! স্বাভাবিক কেউ কি এরকম টের পায়?
একদিন হঠাৎ আমার স্বামী আমার এক্সহাজবেন্ড কে ফোন দিল। আমি এসবের কিছুই জানিনা। টের পেলাম বিকেলে যখন প্রিতম এল বাসায়। আমি বোধহয় সেদিন কুরুশ কাঁটায় নতুন একটা গিট তুলতে চেষ্টা করছিলাম। অনেকদিন ওসবে হাত দেয়া হয়নি। আজ হঠাৎ পুরোনো একটা আইসক্রিমের বক্স খুলেতেই মোটা সাদা সুতোর পুটলি আর তাতে গাঁথা কুরুশ কাঁটা পেলাম। ইচ্ছে করলো কিছু একটা করি। এ সময় বাসায় কেউ থাকেনা। আমার স্বামী ফিরবেন ছটা নাগাদ।
কলিংবেল বেজে উঠলে আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। তবে একদম ই যা ভাবিনি। প্রিতম কে দরজায় দেখে আমি এতটা অবাক হলাম। আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলনা। কেমন একটা অদ্ভুত ভয় অথবা অসস্তি আমি ঠিক জানিনা, আমার শরীরে খেলে যাচ্ছে টের পেলাম। এর উৎস পৃথিবীর কোথাও হতেই পারে না। প্রিতম কেমন যেন মুখ বাঁকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো। একসময় এই প্রিতম ই আমার স্বামী ছিল। শুধু স্বামী কেন তারও আগে সে আমার বন্ধু ছিল। আমরা ক্লাসমেট।

ছিটকে সরে আসবো কিনা ভাবছি। মাত্র এক মুহূর্ত! হয়ত প্রিতম সহজ করতেই বলল ভাল আছো? আমরা একসময় তুই করে বলতাম। বিয়ের পর অনেক কষ্ট হয়েছিল তুমি বলার অভ্যাস করতে। এ নিয়ে দুজনে অনেক মজা করতাম।
আমি সরে এলাম দরজা ছেড়ে। হাতে কুরুচ কাটা রয়ে গেছে তখনো স্থির। উল্টো দিকের নীল রং এর সোফায় সে বেশ আরাম করে হাত ছড়িয়ে বসলো। একসময় হয়ত আমার অস্বস্তি উপভোগ করতে শুরু করলো। আমি তাকিয়ে ছিলাম বাম পাশের আধ খোলা জানালাটার দিকে। কদিন ধরে ওপাশের বাড়িটার দেয়ালে চুনকাম চলছিল। জানালা খোলা যেতনা। বাঁশের ভারা আর লোকজনের কর্মব্যস্ততা দেখার মত কিছু নেই। অন্তত আমি এতে তেমন কিছু খুঁজে পাইনা।
আবার ও কুরুচের কাজ শুরু করবো নাকি ভাবছি। আমার দ্রুত নাক ঘামছে। টের পাচ্ছি অসস্তিটা ঠিক একটা শরীরের মত আমার সারা দেহে তার কোমল আংগুল খেলিয়ে যাচ্ছে।

প্রিতম ই কথা শুরু করলো। রাশেদ সাহেব কখন ফিরবে জয়ী?
আমার রাগে ফেটে পড়তে ইচ্ছে হল। মুখ ঝামটা দিয়ে বলে ফেলতে চাইলাম। কেন খোঁজ নিয়ে আসোনি? নাকি এমনি চলে এসেছো ভুল করে? এখনি নিশ্চয় গল্প পেতে বসবে এই পথে যাচ্ছিলে। হুট করে আমার কথা মনে পড়লো। আর চলে এলে।
অবাক হয়ে দেখলাম কিছুক্ষন উসখুস করে প্রিতম বলল এই পথেই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম দেখা করে যায়। রাশেদ সাহেব ফোন দিয়েছিলেন দিন চারেক আগে। বাসায় আসতে বললেন। কি নাকি সমস্যা হচ্ছে! ঠিকানাও উনিই দিলেন। আমার নং কি তোমার ফোনে এখনো আছে? সমস্যা কি আমাকে নিয়ে?

গড! নিশ্চয় ফোন ঘাটাঘাটি করে নং বের করেছে। আবার আমাকে না জানিয়ে ফোন দিয়ে প্রবলেমের কথা বলা! কত বড় অপমান ভাবা যায়! লজ্জায় কান ঝাঁঝাঁ করছে আমার। শান্ত স্বরে বললাম কই আমার তো কোনো প্রবলেম নেই। উনার আছে কিনা উনিই বলতে পারবেন। অপেক্ষা করতে পারো। উনি কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরবেন।
চা টা খাবে?
উঠে রান্নাঘরে গিয়ে চা বানানোর মত ইচ্ছে আমার একটুও ছিলনা। তবু ভদ্রতা করতে গিয়ে ফেঁসে গেলাম। প্রিতম বলল, হ্যাঁ চা খাওয়া যায়।

চা বানানোর জন্য উঠতেই বাসার কলিং বেলটা অন্যদিনের চেয়ে দ্রুত ই বেজে উঠলো। আমার খুব রাগ হচ্ছে। আমার স্বামী এরকম করবে ভাবতেই পারছিনা। অথচ তার মত উন্নত আর আধুনিক মনা মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। নাকি শুধু মুখেই উনার এত উদারতা। আমার সমস্যার পেছনে কি প্রিতমের কথা ভাবছেন তিনি? আজব! তাহলে তো আমার সাথেই তার আগে কথা বলা উচিত ছিল। তা না করে সরাসরি প্রিতমকে বাসায় ডাকা কি উনার উচিত হয়েছে!


হয়ত চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৩
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×