somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরীক্ষার দুশ্চিন্তা? চাই, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

৩০ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরীক্ষা মানেই ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা, বাড়তি স্ট্রেস। ভালো রেজাল্ট করার জন্য কিছুটা স্ট্রেস সবার জন্যই দরকার। তবে বাড়াবাড়ি হলেই বিপদ।
'স্ট্রেস' অর্থ মানসিক চাপ। স্ট্রেস হচ্ছে হরমোনাল রেসপন্স। অর্থাৎ আমাদের মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হরমোন থেকে শরীর ও মনের মধ্যে স্ট্রেস তৈরি হয়। এই মানসিক চাপ তখনই তৈরি হয়, যখন আমাদের যা ক্ষমতা তার বাইরে গিয়ে কোন চাহিদা পূরণ করার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীরা যা ক্ষমতা, তার চেয়ে বেশি ভালো ফল আশা করলে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক সবারই স্ট্রেস-এর সমস্যা হবে। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ স্ট্রেস, পারফরমেন্সের জন্য ভালো কিছুটা মানসিক চাপ পরীক্ষার ফলাফল ভালো করতে সাহায্য করে। কিন্তু তা যখন সীমা অতিক্রম করে যায়, তখনই তা প্রতিফলন হয় পারফরমেন্সে। অর্থাৎ স্ট্রেস বাড়তে থাকলে কিছুক্ষণ পর্যন্ত পারফরমেন্সও বাড়তে থাকে। তারপর মানসিক চাপ বাড়তে থাকলে পারফরমেন্স কমতে শুরু করে। পরীক্ষার আগে যে কারও ক্ষেত্রেই স্ট্রেসটা খুব স্বাভাবিক। যাদের টাইপ-১ পারসোনালিটি থাকে, তাদের সাধারণত স্ট্রেস বেশি হয়। যদি কোন ছাত্র একদিন ধরে ঠিকমতো পড়াশোনা না করে পরীক্ষায় খুব ভালো ফল আশা করে, তাহলে তার তো স্ট্রেস হবেই! একই ভাবে স্ট্রেস বাড়বে পরিবারের অন্যদেরও। পাশাপাশি যে ছাত্রটি সারা বছর নিয়মমতো পড়াশোনা করতে অভ্যস্ত, ভালো রেজাল্ট করে আসছে তার কাছে এক্সপেকটেশনের যেহেতু সামঞ্জস্য আছে তাই তার তত বেশি স্ট্রেস হবে না। কতগুলো লক্ষণ আছে যা থেকে বোঝা যায় কারও স্ট্রেস হচ্ছে। যেমন ঘুম কমে যাওয়া, শারীরিক ক্লান্তি বোধ করা, মনঃসংযোগ কমে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া, কারণে-অকারণে রেগে যাওয়া, অবসাদ ইত্যাদি। কিছু কিছু ছাত্র, এমনকি অভিভাবকও এসব উপসর্গ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ধূমপান-অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই দরকার সঠিক সময়ে সঠিক স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের। অর্থাৎ 'স্ট্রেস'কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো, যাতে খারাপ উপসর্গ ডেকে আনবে না।
তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিককে। প্রথমত, মানসিক পরিবর্তন, ব্যবহারিক পরিবর্তন এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা।
মানসিক বা চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আনা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সবাইকে বুঝতে হবে জীবনটা শুধু সাদা-কালো নয়, এর মধ্যে ধূসর এরিয়া প্রচুর আছে। অর্থাৎ পরীক্ষায় প্রথম হলেই জীবনে সবকিছু হবে, আর তা না হলেই জীবন বৃথা_ এ ধারণা ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবক উভয়ের মন থেকেই দূর করতে হবে। অনেকে এভাবে মানতে পারে না বলেই অনেক সময় বেছে নেয় ভুল পথ, যা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
চাওয়-পাওয়ার উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে আধা গ্লাস পানি দেখে কেউ বলবে, গ্লাসটার অর্ধেক খালি, কেউ বলবে অর্ধেক ভর্তি, অর্থাৎ কেউ সব জিনিসকে পজিটিভলি দেখে, কেউ নেগেটিভলি। কাজেই ছাত্র-অভিভাবক সবাইকে জীবনটা পজিটিভলি দেখার চেষ্টা করতে হবে। তা হলেই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ব্যবহারিকভাবেও ছাত্রছাত্রীদের অরগানাইজড হতে হবে। অর্থাৎ রুটিন মাফিক পড়তে বসতে হবে। নিজের মনের মধ্যে যা কিছু নেগেটিভ চিন্তাভাবনা আসবে, দুঃখকষ্ট হবে অন্যের সঙ্গে কথা বলে মন থেকে বের করে দিতে হবে। একভাবে পড়ার টেবিলে বইয়ে মুখ গুঁজে না থেকে ঘণ্টাখানেক পড়ার পর ১৫ মিনিটের পাওয়ার ব্রেক নিলে তা পড়াশোনার ক্ষেত্রে খুব সাহায্য করে।
স্ট্রেস থেকে দূরে থাকার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্টের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমে একটা লিস্ট বানাতে হবে, তাতে থাকবে যে, আমাকে যে পড়া করতেই হবে, যে পড়া করলে ভালো হয় এবং এই পড়া আমি করতে পছন্দ করি_ যে পড়া আমাকে করতেই হবে, যত রাতই হোক তা শেষ করে ওঠা। রুটিনমাফিক পড়াশোনা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবক উভয়কেই এই রুটিনমাফিক চলতে হবে। তবে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে মাঝেমধ্যে সিনেমা বা টিভি দেখাটা সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস কমাতে এসব বিনোদনমূলক ব্যবস্থা ভালো কাজে দেয়। জীবনযাপনেও কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। অতিরিক্ত চা, কফি খাওয়া ঠিক নয়। পরিমিত ঘুম প্রয়োজন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে তারা মুখস্থ বিষয়ও পরীক্ষার হলে ভুলে যাবে। পর্যাপ্ত ঘুম মেমরি স্টোরেজে সাহায্য করে। দীর্ঘদিন ঠিকমতো ঘুম না হলে কোন ছাত্রের পক্ষে পরীক্ষার হলে গুছিয়ে উত্তর লেখা সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত ঘুম দরকার অভিভাবকদেরও। নয়তো তারা বেশি স্ট্রেসফুল হলে, ছেলেমেয়েদের ওপরেও তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। স্ট্রেস কাটানোর জন্য ঘুম ছাড়াও নিয়মিত কিছু এক্সারসাইজ করা উচিত। যোগ, মেডিটেশন, ম্যাসেজ স্ট্রেস কমায়, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে যারা খুব বেশি স্ট্রেস বা অ্যাজাইটিতে ভোগে, তাদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য সাময়িক কিছু ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×