খাপড়াওয়ার্ড
উপমহাদেশের প্রথম জেল হত্যাকাণ্ড, ২৪ এপ্রিল ১৯৫০
এটি সেই জেল হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিস্তম্ভ
ঐতিহাসিক খাপড়াওয়ার্ড
ব্রিটিশের সর্বশেষ ষড়যন্তঃ ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট দ্বিজাতিতত্ত্বের মাধ্যমে ভারতকে বিভক্ত করা। যে ভিত্তিতে ভারত থেকে পাকিস্তানকে আলাদা করা হয়েছিল, পূর্ব-পাকিস্তানে তার সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি বরং জন্ম থেকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বিমাতাসুলভ আচারণ শুরু করে। জাতিগত ও ভাষাগত নিপীড়নের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে অবাধ শোষণের ক্ষেত্র রূপে গড়ে তোলার জন্য যে কোন ধরনের দমননীতির আশ্রয় নেয়। যে কারণে পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হতে থাকে।
জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ ও ভূমি সংস্কার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, তেভাগা-হাজং-টঙ্ক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্ট কর্মীরা ছিলেন নেতৃস্থানীয় ভূমিকায়। ফলে তাঁদের ওপর নির্যাতন বেদমভাবে বাড়তে থাকে। ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’সহ নানাধরনের অভিযোগ এনে কমিউনিস্টদের জেলে ভরা হয় এবং জেলের মধ্যে আমানবিক নির্যাতনসহ তাঁদেরকে দিয়ে ঘানি টানানো হতো। ওই সময় বিভিন্ন জেলের রাজবন্দীরা জেল নির্যাতন ও নিম্নমানের খাবার দেওয়ার প্রতিবাদে এবং কারা আইনের আমূল সংস্কারের দাবিতে জেলের মধ্যে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে।
১৯৪৯ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ও রাজশাহী জেলের কমিউনিস্ট বন্দীরা চার দফায় মোট ১৫০ দিন অনশন করেন। এসময় নাদেরা বেগমের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা জেলে অনশন শুরু হয়। ঢাকা জেলে অনশনকারীদের জোর করে ফিডিং করাতে গেলে ৮ ডিসেম্বর শিবেন রায়ের মৃত্যু হয়। ওই সময় খুলনা জেলে পিটিয়ে হত্যা করা হয় কমিউনিস্ট কর্মী বিষ্ণু বৈরাগীকে। এই খবর পেয়ে রাজশাহী জেলেও রাজনৈতিক বন্দীরা অনশন শুরু করেন।
১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল, পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার জন্য রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে ৩৯ জন বন্দী কমিউনিস্টদের উপর অবিরাম গুলিবর্ষণ করে সুধীন ধর, বিজন সেন, হানিফ শেখ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, দেলোয়ার হোসেন, কম্পরাম সিং ও আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করে। খাপড়া ওয়ার্ডের জীবিত প্রত্যেক বন্দীই সেদিন গুলি ও লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। নুরন্নবী চৌধুরীর পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। পঙ্গু হয়ে যান অনন্ত দেব। খাপড়া ওয়ার্ডের স্মৃতি হিসেবে অনেকেই শরীরের ভেতরে গুলি বহন করে বেঁচেছিলেন আমৃত্যু। এদের মধ্যে কমরেড প্রসাদ রায় শরীরের ভেতর ৯ টি গুলি এবং আমিনুল ইসলাম বাদশা পায়ে গুলি বহন করে বেঁচেছিলেন। ‘বিপ্লবীদের কথা’ খাপড়া ওয়ার্ডের বিপ্লবীদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উপমহাদেশের প্রথম জেল হত্যাকাণ্ড, ২৪ এপ্রিল ১৯৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়
১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷
চলুন গল্পটা শুনে আসি৷
বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই
রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।
ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!
~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো
রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন