somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিস্তা -একটি নদীর নাম

২৯ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিস্তার মূল প্রবাহের মতো এর শাখা নদীগুলোর বুকেও জমেছে বিস্তীর্ণ বালুচর। এঁকেবেঁকে বয়ে চলা চিকলি, ঘাঘট, যমুনেশ্বরীসহ তিস্তার শাখা নদীগুলোর বুকে এখন পানির বদলে বালুর দেখাই বেশি মেলে। অনেক স্থানে শুকিয়ে যাওয়া নদীতে তামাক, ধান ও ভুট্টার চাষ হতে দেখা গেছে।
উজান থেকে আসা বালু, পাথর ও কাঁকর তিস্তা সেচ প্রকল্পের মূল ও শাখা গেটগুলো ভরাট করে দিচ্ছে। এতে তিস্তা প্রকল্পের পানি নিয়ন্ত্রণ দরজাগুলো ঠিকমতো খোলা ও বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিবছরই বালু-পাথর আসার পরিমাণ বেড়ে প্রকল্পের অবকাঠামোগুলো অকার্যকর করে দিচ্ছে।
তিস্তা প্রকল্পের মূল গেটের কাছে বিশাল বালুচর জেগেছে। পানি সংরক্ষণাগার হিসেবে তৈরি করা এই স্থানটি শুরুতে বিশাল জলাশয় ছিল। ১৯৮৯ সালে প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে ওই পানি সংরক্ষণাগারের বালু অপসারণ করা হয়নি। ফলে চরের দৈর্ঘ্য দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে।
একদিকে উজানের সিকিম থেকে পানি আসার পরিমাণ কমে যাওয়ায় বালুর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে, অন্যদিকে তিস্তা ব্যারাজের পলি অপসারণ না করাসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে প্রকল্পটির অবকাঠামোগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
তিস্তা অববাহিকায় ভারত সরকার মোট আটটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। এর মধ্যে পাঁচটি কেন্দ্র স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের শুষ্ক এলাকাগুলোতে সেচের পানি পৌঁছাতে ভারত আরও ৫০টি বাঁধ নির্মাণ করছে ,
আশির দশকে তিস্তা অববাহিকায় পাঁচটি ব্যারাজ নির্মাণ করেছিল ভারত। এ কারণে ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ কমে এসেছে বলে পানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আর নতুন করে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাঁধ নির্মাণ করায় তিস্তার পানি বর্তমান প্রবাহের চেয়েও কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমে আসবে। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে নয় লাখ ৬০ হাজার টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু ভারতের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হয়ে পড়বে।
তিস্তা নদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানে অনেক দুর্লভ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। তিস্তাপারের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করত এই মাছ। কিন্তু নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে। এ জন্য ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এমনভাবে চুক্তি করা উচিত, যাতে ভাটিতে যথেষ্ট পানি আসে ও নদীর জন্য কমপক্ষে ২০ শতাংশ পানি রাখা যায়।
বছরে ৬০ লাখ টন পলি: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তিস্তা নদীবিষয়ক কমিশনের প্রধান কল্যাণ রুদ্র তাঁর বাংলার নদনদী বইতে লিখেছেন, পাহাড়ি বন উজাড়, কৃষিকাজের বিস্তার, বসতি ও রাস্তা নির্মাণের ফলে সিকিম পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমিধস বেড়ে গেছে।
তিস্তার উজান থেকে ভাটির দিকে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ৬০ লাখ টন পলি, কাঁকর ও পাথর ভেসে আসে। এতে ভাটিতে অবস্থিত বাঁধ বা জলাধারের স্থায়িত্বকাল বড়জোর ৫০ বছর হয়ে থাকে।
তিস্তা অববাহিকা এলাকার বেশির ভাগ মাটি বালু দিয়ে গঠিত। উজান থেকে যে পানি আসে তা সরাসরি নদীর মূল অববাহিকা ও শাখা নদীগুলো দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলে যায়। নদীর বুকে পানি জমে থাকে না। দ্রুত তা চুইয়ে মাটির নিচে চলে যায়।
তিস্তা নদীতে একের পর এক অবকাঠামো নির্মাণের ফলে নদীটিকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম উৎস এই নদীতে কী পরিমাণ পানি আছে, তা একটি সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা উচিত। তারপর কতটুকু পানি ব্যবহার করলে নদীটির স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হবে না, সেই লক্ষ্যে দুই দেশকে একত্রে কাজ করতে হবে।
তিস্তাপারের দুঃখ: তিস্তা ব্যারাজের মূল গেটের সামনে বালুরাশির ওপর দিয়ে ক্ষীণ ধারায় পানি বয়ে যেতে দেখা যায়। গেটের পাশে চারটি জেলে নৌকা। জেলেদের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার গোয়ানি গ্রামে। একসময় এখানে বিশাল জেলে নৌকায় করে স্থানীয় লোকজন মাছ ধরত। মণকে মণ মাছ ধরা পড়ত। এখন খেয়া নৌকায় সারা দিন ঘুরে এক থেকে দুই কেজির বেশি মাছ ধরা পড়ে না।
জেলে নৌকা ছাড়িয়ে কিছুদূর এগোতেই তিস্তার বুক থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু অপসারণের দৃশ্য চোখে পড়ে। তিস্তা প্রকল্প নির্মাণের পর এ বছরই প্রথম এখান থেকে বালু অপসারণ করা হচ্ছে। এই ২০ বছরে মূল প্রবাহ থেকে শুরু করে শাখা নদী—কোনো স্থান থেকে বালু অপসারণ করা হয়নি।
তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের হিসাবে প্রতিবছর এক থেকে দুই ফুট উচ্চতায় পলি এসে তিস্তায় জমা হয়। চার বছর ধরে পানিপ্রবাহ কমে আসায় পলি জমার পরিমাণও বেড়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×