অনিকেত ভালোবাসা : ছোট্টগল্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ক্লাস শেষ। দোতলা থেকে সিড়ি বেয়ে নামার পথে হঠাৎ করেই মুখোমুখি মেঘলা সঙ্গে। সামান্য পার্থক্যের কারনে অনাকাঙ্খিত সন্ধি ঘটেনি। মুখের মানচিত্র দেখেই মনে হচ্ছে বেশ দ্বিধায় ভুগছে মেঘলা। ও দেখতে কালো, তবুও ওকে আমার অন্য রকম লাগতো। ছোট ছোট শব্দ দিয়ে ধীরভাষায় কথা বলে মেঘলা। অনাকাঙ্খিত সন্ধি! এ সন্ধি কি বিধাতাপ্রদত্ত? নাকি নিজের ভুল। হিসেব কষার এক পযায়ে ফলাফলহীন স্যরি বলে পাশ কাটিয়ে এলাম। আজও দেরি। মা জিজ্ঞেস করলে কি বলব তাই ভেবে ভেবে কলিং বেল চাপলাম। মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝা গেল প্রকৃতি এখন স্বাভাবিকই আছে। সন্ধ্যায় বাবা বাসায় ফিরে মাকে জানায় আমরা গাজিপুর বদলি হয়ে যাবার খবরটা। হয়তো এ খবরটি জানাবে বলে আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেছে মা। অফিসিয়াল নিয়মের মতো বাবা মাকে জানানোর পর মায়ের কাছ থেকে সংবাদটা পেলাম।
মাস খানেকের মধ্যে কলেজ ট্রান্সফারলেটার নিয়ে পুরো ফ্যামিলিসহ চলে যাই গাজিপুরে। পুরোনো বন্ধুদের অনেক মনে পড়ছে। এর মধ্যে খুব বেশি মেঘলাকে। পুরোনো রঙিন অনেকগুলো মুখের ভিড়ে সাদা-কালো একটি মুখ। নিজেকে খুব বেশি জোর করলে বুঝতে পারি ধোঁয়া ধোঁয়া অমসৃণ ভালোলাগা কাজ করছিল ভালবাসা হয়ে। ওর নাম নাফি। অপ্রকাশিত অনুভূতিগুলো এলোমেলো হওয়াতে ওকে আমি মেঘলা ডাকতাম। বছরখানেক একই ক্লাসে ছিলাম, কিন্তু কখনো কথা হয়নি। চোখে চোখ পড়ত। এতোটুকুই। কেমন আছে মেঘলা? জানতাম না। নিজের কল্পনার রঙে আঁকতাম শুধু। পেন্সিল হাতে ভুল করে দেখা হতো প্রায়ই। পেন্সিলের সুরে মাফযোগ্য ভুলগুলো নামহীন খাতার কোন পৃষ্ঠায় মেঘলা হয়ে যেত। ছন্নছাড়া সাদা পাতাগুলোয় অনেকগুলো মেঘলা জমেছে। কখনো কখনো অজ্ঞাত কারনেই জন্ম হতো মেঘলাগুলোর। সম্বলস্বরূপ অধিকারহীন এক তরফা ভেবে যাওয়া আর ভালোলাগাই ছিল আমার ভালোবাসা।
ব্যস্ততার কান্ডজ্ঞানহীনতার কারনে না জানিয়ে চলে যায় অনেকগুলো প্রহর। বার বার জিজ্ঞেস করেও কোন কৈফিয়ত পাওয়া গেল না। তাই শ্বাসহীন ও যান্ত্রিক আহ্বানগুলোর আর দ্বারস্থ হলাম না। থার্ড ইয়ারের রুটিনের অপেক্ষায়। এরই মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর তুষারের একটি এসএমএস রাতটিকে নির্ঘুম করে দেয়। ওই দিন বেশ মেঘলা ছিল আকাশ। বৃষ্টি ঝড়বে বলে অপেক্ষা। গত ২৬ সেপ্টেম্বর মেঘলা ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেছে মেঘলা। ফেইসবুকে তিন দিন আগে দেয়া স্ট্যাটাসে মেঘলার বিদায় আর শেষ কথাগুলো দেখছিলাম। অজানাই রেখে দিল এ নিমর্ম পুরোনো হয়ে যাওয়া সত্যটাকে। আধার রাত, ছোট ছোট তারাগুলো জ্বলছে আর নিভছে। এ সময় তারাপ্রধান নয়নার হাতে রশি বেঁধে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আকাশের দিকে। এমন একটি ছবি নয়নার টাইমলাইনে। সারাংশের কিছু শব্দাশেষ স্মৃতি হয়ে তিমির রাতির নির্জন পুরোনো বাড়িতে আধো আলোয় ছায়ারূপে কেউ কান্নার শব্দ হয়ে আছে হৃদয়ে। অনিকেত ভালোবাসা হয়ে রয়ে গেল মেঘলা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা
এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম
জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন
পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?
বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন