somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাখিনামা (সম্পূর্ণ)

২৮ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ যেদিকেই চোথ যায় এলোমেলো হিজল গাছের সারি।বুক সমান পানিতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ।কাকচক্ষুজল।ঝাপসা চোখে তাকালে মনে হবে কালো জমিনের উপর অসংখ্য সবুজ গম্বুজ।
ডানে
বমে
সামনে
পেছনে
ঈষাণে
নৈ্ঋতে।
যতদূর চোখ যায়।পাখিটি বসে আছে একটি হিজল গাছের ডালে।নীল কণ্ঠ।লস্বা লেজ।গাঁয়ের পশম এলোমেলো।ডানার পালক কতগুলো খসে আর কতক ক্ষয়ে গেছে।হিজলের ফুলের রঙিন কেশর পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে আছে।অসংখ্য।
ডালের নিচে, সামনে অনেক মাছ ভেসে উঠে।কোনটা পটকা, কোনটা মলা,কোনটা রানী,কোনটাবা অনেক বড় রাক্ষুসে।একটা রানী মাছের ঝাক পাখিটার সামনেই। পানিতে ।পাখিটি তার লেজটাও নাড়লো না।গোফ উঁচিয়ে কতগুলো বোয়ালমাছ এগিয়ে এলো বলে।কিন্ত্ত নীলকণ্ঠ পাখির কোন বিকার নেই।দূরে অনেক বড় একটা মাছ লাফিয়ে উঠলো।বৃত্তাকার ঢেউটা ছড়িয়ে ছড়িয়ে আবার মিলিয়ে গেলো।
বাতাস নেই কোনদিকে।একটা নিস্তব্ধ নিটোল নিরবতা।নিষ্ছিদ্র নিরবতা।গাছ থেকে মাঝে মাঝে কিছু পাতা নিঃশব্দে ঝরে যায়।নীল কণ্ঠ পাখি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তার চোখ লাল।পশ্চিমাকাশে অনেকদূরে সুর্যটা ক্ষণিক পরে ডুব দেবে।লালিমায় ছেয়ে আছে আকাশ।বিদায়ক্ষণে আকাশেরও চোখ বুঝি লাল হয়?আকাশে অর্ধবৃত্তাকার আলোর ছটা।জলে তার ছায়া মিলে যেন বৃত্তাকার অগ্নিকেন্দ্র পশ্চিম দিকটায়। ঈষাণ কোণের সাদা মেঘে অজস্র আলোকরশ্মির তীর বিদ্ধ হয়ে ঝকঝক করছে।ঝলসে যাচ্ছে অনেক দূরের মেঘালয়ে জমে থাকা মেঘ।
সন্ধ্যারাগিনীর বিণার ঝংকারের টানটান স্তব্ধতা।নীলকণ্ঠ পাখি একবার এ ডালে আরেকবার ও ডালে বসে।ডালের উপর বসে ক্রমাগত চক্রাকারে ঘুরে।একটা চাপা শব্দ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে-
চিই চিই চিই চিইহি
চিই চিই চিই চিইহি।



সাইড ইফেক্ট পোয়েট্রিঃ

কোন সে ব্যথায় কেঁদে তুমি চোখ ফুলালে দূর লালিমা
কার আগুনে পুড়ে পুড়ে লাল হয়েছ আকাশতমা,
আমার ভেতর উঠলো যে ঢেউ বাতাস যখন গুমরে কাঁদে
কার সে ব্যথায় কান্না চোখে আটকে আছি কঠিন ফাঁদে।
সর্বংসহা নইতো আমি নইতো ঈশ্বর বসুন্ধরা
জলের উপর বসত যদিও চোখ যে আমার অগ্নিক্ষরা,
বিদায় বিদায় গাইছে যে গান কষ্টতারের সুর বেহালা
হাত নেড়ে কে দূর চলে যায় পড়ে থাকি এই একেলা।
আজকে আগুন চোখ মেলিলে ভস্ম হব তার দহনে
বৃথা শুধু পথ চেয়ে আর কি হবেগো সে বিহনে,
কোন ক্রন্দসীর জন্য কাতর তুমিও কাঁদো আমিও কাঁদি
অমন মিলের বন্ধু হলে কে কারে যে সান্ত্বনা দিই।

২.
বাতাশে একটা মিষ্টি গন্ধ।একপশলা বৃষ্টির পর বাতাশে যেমন গন্ধ আসে তেমন।গতকাল রাতে
এ মিঠাপানির মাছের অভয়ারণ্যের এ মাঠে অঝরে বৃষ্টি হয়েছে।বজ্রসহ বৃষ্টি।নীলকণ্ঠ পাখি তার ভেজা পালক মেলে ধরেছে সকালের রোদে।কাছেই একটা হিজল গাছে বজ্রপাত পড়ে।সকালের মিঠারোদে,দুপুরেরর প্রখর রোদে,বিকেলের তির্যক রোদে পাতাগুলো শুকিয়ে যাবে।একসময় বাতাসে ঘুরতে ঘরতে জলে পড়ে ভেলার মত ভাসবে ঢেউয়ে ঢেউয়ে।গাছের খয়েরী রঙের ডালগুলো হাত পা মেলে একটানা আকাশের দিকে চিৎ হয়ে থাকবে।নৈঋত কোণের একটা গাছের ডাল থেকে অন্য একটি পাখির শব্দে নীলকণ্ঠ পাখি নড়ে চড়ে বসে।আবার ডাক ভেসে আসার আশায় কান পেতে থাকে।ডাক আবার শোনা যায়-
চিই চিই চিই চিইহি
চিই চিই চিই চিইহি।

নীল কণ্ঠ পাখির চাঞ্চল্য বাড়ে।সতর্ক দৃষ্টিতে তাকায় এদিক এদিক।পাতাল আড়াল থেকে গলা বাড়ায় লম্বা করে।আবার শব্দ আসে-
চিই চিই চিই চিইহি
চিই চিই চিই চিইহি।
পাখিটি স্থির হয়ে ডালে বসে থাকতে পারেনা।এডাল ওডাল করে।পালক খুঁটে।নখ খুঁটে।আনমনে ডেকে ওঠে-
চিই চিই চিই চিইহি
চিই চিই চিই চিইহি।
নৈঋত কোণের গাছ থেকে প্রতিউত্তর আসে।একটা খেলার মতন।পাখিটা ডালে বসে একাধারে ঘুরতে থাকে।
আগন্ত্তক পাখিটা ঐগাছটা ছেড়ে উড়ে এসে লাল চোখ নীলকণ্ঠ পাখির ডালে এসে বসলে সে ভয় কিংবা অস্থিরতায় কিংবা কোন পাখিবীয় কারণে ডাল থেকে উড়াল দেয়।কিছুক্ষণ আকাশে ডানা ঝাপটিয়ে আবার তার গাছের ডালে আগন্ত্তক পাখি থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে।

নবাগত পাখির লেজ পরিপাটি।গোছানো পালক।শান্ত চোখ।তারও কণ্ঠনীল।হয়ত সে একশ কিংবা দুইশো কিংবা হতে পারে সহস্র হিজলবৃক্ষ দূর থেকে আসে ঘর ছেড়ে ঘর বাঁধার আশায়।

আগন্ত্তক পাখি কিছুটা সময় বসে আবার ফিরে যায় নৈঋত কোণের গাছে।আবার আসে।দিনের আলো আস্তে আস্তে নিশ্প্রভ হয়।রাতে অন্ধকার নামে।
চিই চিই চিই চিইহি
চিই চিই চিই চিইহি।
দ্বিমাত্রিক ডাকে বাতাশসরব হয়।দক্ষিণের বাতাশ সেই ডাক বয়ে নিয়ে চলে দূরে,অনেক দূরে যেখানে মেঘালয় মেঘ ঝলমল করে।

৩.
আগন্ত্তক পাখিটি আর পুরাতন পাখিটি একই ডালে বসে প্রায়ই।নীলকণ্ঠ লাল চোখের পুরাতন পাখিটি ডাল থেকে উড়ে পিছে তাকায়।আবার ফিরে আসে।পাখিটি পরপর কয়েকবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে।এক সময় দুটিই পাখিই ডানা মেলে আকাশে।আকাশের উপরে উড়ে একবার একবার নিচে।একবার সমান্তরাল ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে উড়ে যায় অনেক অনেক পথ।আকাশে উড়ন্ত যুদ্ধ বিমানের খেলা যেন।
হঠাৎ আকাশে বিজলী চমকে উঠে।অন্ধকার হতে থাকে চারপাশ।বাতাশের আঘাতে দোলে উঠে বিশাল জলরাশি।সবুজের অরণ্য দুমড়েমুচড়ে উঠে।আতঙ্কিত পাখিগুলো ফেরার পথ ধরে।বাতাশের উজানে পথ চিনে নিতে কষ্ট হয়।অস্পষ্ট আলোতে, বিজলীর আলোতে পাশাপাশি উড়ে উড়ে খুঁজে ফিরে ফেলে আসা নীড়।বৃষ্টি আসে।জোড়ালো বাতাশ আর বজ্রসহ।পাখিদ্বয় ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে ক্লান্ত পরিশান্ত হয়ে ফিরে আসে আশ্রয়ে ।আগন্ত্তক পাখি আর ফিরে যায় না নৈঋত কোণের গাছে।এক পা দুপা করে নীলকণ্ঠ পাখির পেছন পেছন একই বাসায় উঠে। বাতাশ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে আসে ঝড়।অন্ধকার হয় গাড় থেকে গাড়তর।বিজলী চমকায়।চিকচিক করে উঠে আকাশের মেঘ,বৃষ্ধাটির কণা,এলোমেলো বাতাশে এদিক ওদিক নুয়ে পড়া সবজু হিজলের গম্র্বুজ।পরিস্কার দেখা যায় মেঘালয়ের চূড়া,শাদা মেঘের দুরন্ত ঝাপটা। কাছে কোথাও বজ্রপাত হয়।
পাখিদ্বয় এককে অপরের সামনা সামনি বসে। গলাগলি করে।একে অপরের পালকে মুখ গুঁজে।

সাইড ইফেক্ট পোয়েট্রিঃ
নেই কিছু আর নিজে জ্বলিবার
মেনে গেছি হার তোমার কাছে
নোনা জল ঝরে সব ভেঙ্গে পড়ে
দূরে দূরে সরে ছিল যা পাশে।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×