somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এস এম মোমিন
কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে কৃষি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। পেশায় সরকারী কর্মকর্তা হলেও তিনি কৃষি সাংবাদিকতাকে তিনি অন্তরে লালন করেন। কৃষি সাংবাদিকতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ কওে যাচ্ছেন তিনি। ২০০৩ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ব

ঘুরে আসুন খাগড়াছড়ি হেরিটেজ পার্ক

২৮ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক সময়ের অবহেলিত জীর্ণশির্ন পরিত্যাক্ত পাহাড়ে এখন পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলা। প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে গড়ে তোলা নৈসর্গিক হেরিটেজ পার্ক কপোত-কপোতিদের নতুন ঠিকানা। এখানে এখন অনেকের জন্য একখন্ড সময় কাটে প্রকৃতির খুব কাছে। তাদের হৃদয়, মন ছুঁয়ে যায় এখানকার নৈসর্গিক রূপ-লাবন্যে।
হেরিটেজ পার্কে নতুনভাবে স্থাপিত হবে ছোট্ট একটি জাদুঘর। যেখানে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন-ধারা স্ব-যত্নে সাজানো হবে। এখানে মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমা উপজাতিদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও বসত ঘর তৈরি করে প্রকৃতির সাথে আধুনিকতার প্রলেপ দিয়ে সাজানোর মহা পরিকল্পনা দ্রুত এগুচ্ছে। তখন শুধু দেশী নয় বিদেশী পর্যটকদের জন্যও নতুন মাত্রা এনে দেবে। তার ওপর তাঁবু বাসের মধ্যে রাত্রী যাপনের বিশেষ সুযোগ পেতে এখানে আসলে নিজেকে যুদ্ধের মাঠে অগ্র সৈনিক মনে হবে। যা এ পার্কের নতুন সংযোজন।
দূর পাহাড়ের কোল ঘেষে সর্পিল প্রবাহ নিয়ে বয়ে যাওয়া চেঙ্গী নদীর পারে জেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিণ কেন্দ্রের উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত হেরিটেজ পার্ক এখন অনেকের নতুন ঠিকানা, নতুন পর্যটন কেন্দ্র।
এখানকার প্রকৃতি খনে খনে রঙ বদলায়। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা ও রাতে বসে রঙের মেলা। পাহাড় ঘেরা এ প্রকতিতে বসে চাঁদনী রাতের দৃশ্যপট ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। এখানে বসে জেলার সর্বোচ্চ পাহাড় চূঁড়া আলুটিলা একপলকে দেখে সেখানে পাখির মত ডানা মেলে উড়ে যেতে ইচ্ছে হবে। এই পাহাড় চূঁড়ায় বসে দূর পাহাড়ের বুক চিরে সকালের মিষ্টি সূর্যোদয়, সন্ধ্যায় সব আলোকে ম্লান করে সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যি অপরূপ। নীল আকাশে সাদা মেঘ, সবুজ পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে মেঘের ভেলা, চেঙ্গী নদীর লাল মাটির ঘোলা পানির টানে নিজেকে হারিয়ে যেতে নেই মানা। এখানকার প্রকৃতিতে গাঢ় সবুজ পাহাড়, কলকলে বয়ে যাওয়া নদী, দূরে ঝিরঝির শব্দের ঝর্ণা, ওপরে নীল আকাশ, মাঝে মাঝে সাদা মেঘ, বর্ষায় বৃষ্টির রিমিঝিমি শব্দ, রাতের আকাশে চন্দ্র-তারা ও দিনের আলোয় লাল সূর্য্য মিলেমিশে একাকার। হেরিজ পার্কের পেভিলিয়নে বসে চেঙ্গী নদী ও আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য্য মন ছুঁয়ে যায়।
এসকল কারণে কপোত-কপোতিদের ভীড় এখানে দিন দিন বাড়ছে। এখানে গার্ডেন ভেলি রেস্টুরেন্টে ৬০ প্রকারের সুস্বাদু খাবার, গিরীনন্দন সপিং, সংগীতের মুর্ছনায় হৃদয়ের সুকুমার বৃত্তগুলো পরিস্ফুটিত হয়। এখানকার পরিত্যাক্ত লাল মাটির জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়কে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে হেরিটেজ পার্ক গড়ে তুলতে বাহারি রঙের ফুলের বাগান সৃজন করা হয়েছে। হেরিটেজ পার্কের ভেতর প্রবেশের সময়ে আঁকা-বাঁকা নিঁচু থেকে উঁচুতে ওঠার সময়ে ইট বিছানো পথের দু’ধারে সবুজ ঘাসের মাঝে রঙিন ফুলের দোল খেলার দৃশ্যপট যে কারও মনকে প্রফুল্ল করে। তার ওপর পাহাড়টির নিচে সমতল ভূমিতে ফলজ-বনজ বাগান সৃজন করা হয়েছে। সেখানে বাউকূল, আপেলকূল, লিচু, আম, আনারস ইত্যাদি ফলের বাগান অনেকের জন্য উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। এখানে উন্নত মানের চারা উৎপাদন ও বিপনন করা হচ্ছে।
আনসার-ভিডিপির প্রশিণার্থীরা ফল চাষের প্রশিণ নিয়ে বাস্তবে তা দেখে তারা নতুন উদ্যোমে বাগান সৃজনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। প্রশিণ শেষে শুধু নিজেরাই নয়, অন্যদেরকেউ তারা ফলজ-বনজ বাগান সৃজনে উদ্বুদ্ধ করছেন। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও হেরিটেজ পার্ক ভূমিকা রাখছে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরা বাহিনীর বহুবিধ কার্যক্রমের একটি হচ্ছে পল্লী অর্থনীতির গতি সঞ্চার করা।
খাগড়াছড়িতে স্থাপিত হেরিটেজ পার্ক প্রকল্প তার একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। যেখানে পাহাড়ি-বাঙালি সকলের মিলন মেলায় স¤প্রীতির সেতূবন্ধন রচিত হয়েছে। এ পার্কটি স্থাপনে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহায়তা ও উৎসাহে এর কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সহায়তা প্রদান করেছে।
১০ একর ভূমিতে হেরিটেজ পার্কটি গড়ে ওঠেছে। আনসার ও ভিডিপির জেলা খাগড়াছড়ি কমান্ডেন্ট ডক্টর মো. দিদারুল আলমের উদ্যোগে এ পার্কটি গড়ে ওঠেছে। তিনি দেশে এই প্রথম কৃষি পর্যটন ধারণায় এই হেরিটেজ পার্ক গড়ে তুলেছেন। যা একেবারেই নতুন ধারণায়, নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যান তত্ত্বের ওপর এমএস পাশ করে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অলংকারিক উদ্যান তত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করে বাস্তব জীবনে শিক্ষালব্ধ জ্ঞান বিকাশের অভিপ্রায়ে এ হেরিটেজ পার্ক গড়ে তুলেছেন। যা ছিল তার জীবনের স্বপ্ন। আজ সে স্বপ্ন পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। তার দেখা স্বপ্ন পূরণে আনসার ও ভিডিপির তৎকালীন ডিজি বর্তমান বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল মো. রফিকুল ইসলাম এনডিসি, পিএসসি স্বপ্ন পুরুষ হিসেবে খাগড়াছড়িতে আসেন। তিনি গত ১৩ জুলাই’২০১০ হেরিটেজ পার্ক উদ্বোধন করে এর পূর্ণতা ও স্বীকৃতি প্রদান করেন।
খাগড়াছড়িতে এমন অনেক আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাই এসেছিলেন, নিজ নিজ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে আবার ফিরেও গিয়েছেন অন্য কর্মস্থলে। তখনও আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এই পাহাড়টি ছিল। ছিল সম্ভাবনা, ছিল বদলে দেয়ার সুযোগ। কিন্তু পরিত্যাক্ত অবহেলিত পাহাড়টিকে তিলোত্তমা করে সাজিয়ে এই পাহাড়ের সম্ভাবনাকে কেউ কাজে লাগানোর কথা ভাবতে পারেননি। তিনিই প্রথম পরিত্যাক্ত সবুজ পাহাড়ের লাল মাটির গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে বদলে দিলেন এর দৃশ্যপট। ধিরে ধিরে বদলে গেল আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জীর্ণশির্ণ পাহাড়টি। যে পাহাড়ের নাম এখন হেরিটেজ পার্ক। যেখানে এখন প্রতিদিনিই বসে পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলা
সূত্রঃ সিএইচটিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×