somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেফাজতের লংমার্চ

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃহৎ উদ্দেশ্য হাসিলের স্বার্থে "কোদালকে কোদাল না বলা" এর একটা ব্যাপার আছে । হেফাজতে ইসলাম যখন ৬তারিখে লংমার্চের ঘোষণা দিল - তখন থেকেই উচিত ছিল এই পলিসি প্রয়োগ করা । তাহলে সাপও মরত, লাঠিও ভাঙত না ।

তা না করে কি করা হল ? উলটো হেফাজতে ইসলামিকে প্রথমে "শান্তিপুর্ন লংমার্চে বাধা দেয়া হবে না" বলে পরে ৫ই মার্চের হরতালে সমর্থন দিয়ে ঢাকা কে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন করে ফেলা হল ।

কেন ? হেফাজত ইসলামকে কিসের এত ভয় ? তাদের লংমার্চকে এত "যুদ্ধংদেহী" মনোভাবের সাথে নেয়া হচ্ছে কেন ? এই ঢাকা আসতে না দেয়া - এটার মাধ্যমে কি তাদেরকে আরো গুরুত্তপুর্ন করে তোলা হচ্ছে না ? উলটো তারা এখন ভাবতে শুরু করবে - সরকার আমাদের ভয় পায় ! তারা নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ আছে , আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনি আছে - তারা সেটা দেখবে । তাদের প্রস্তুত রাখুন । আজকের দিনে উলটো কাজ করা মানে দেশের বিরাটাকার এক মুসলিম গোষ্ঠীকে খেপিয়ে তোলা । হেফাজতে ইসলামের যে জামায়াতের সাথে আঁতাত রয়েছে সে বিষয়টি স্পষ্ট । জামায়াত মদদপুষ্ট নাহলে ২০১০ সালে গঠিত হওয়া একটি দল কখনো এত অর্গানাইজড হতে পারে না । তাছাড়া সাউন্ডক্লাউড ও ইউটিউবেও অনেক ফোনালাপ ফাস হয়েছে । তাই জামায়াত-হেফাজতের মধ্যে মওদুদিবাদের আদর্শিক মতপার্থক্য থাকলেও আদতে হেফাজত যে তাদের দোসর - সেটি পরিস্কার ।

কিন্তু এই জিনিসটা একজন নেট ইউজ করা,বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞাত , সচেতন মুসলিম যেরকম বোঝেন সেরকমটা কিন্তু সবাই বোঝেনা এই জিনিসটুকু বুঝতে হবে । গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কথা বাদই দেইলাম ( তাদের কাছে ব্লগার=নাস্তিক) , যারা শহুরে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে ক্রমান্বয়ে গরীব (অন্তরজাল ব্যাবহার থেকে বঞ্চিত) , তারা কিন্তু এই ব্যাপারগুলি জানেনা । সাথে মাহমুদুর আমার দেশ গং এর তারা জামায়াতের সমর্থক না হলেও কিন্তু হেফাজতের আন্দোলন তাদের কাছে "ইসলামি আন্দোলন" (যেহেতু হেফাজত তাদের বিভিন্ন বক্তব্যে জামায়াতকে তাদের থেকে পৃথক করতে চেয়েছে) । সাথে যোগ করুন মাদ্রাসার নিরীহ ধর্মপ্রান ছাত্র । এদের তো দোষ নাই । এমনি এমনি তো আর লাখ লাখ মানুষ হয়নাই , তাইনা ? তাই যেকোনও পদক্ষেপ নেয়ার আগে সেটার ব্যাপারে ভাবতে হবে ১০ বার ।

হেফাজতে ইসলামির মহাসমাবেশে কত লোক হয়েছিল ? হলুদ সাংবাদিকতা না করলে অন্তত ৯০ হাজার ? কিংবা তারও বেশি । এদের সবাই ই কি জামায়াত শিবির ছিল ? অবশ্যই না ।

খেয়াল করলে দেখবেন বেশিরভাগের পিঠে ছিল র‍্যাকস্যাক জাতীয় ব্যাগ । এবং তারা বয়সে তরুন । তারা হল আমাদের মাদ্রাসা পড়ুয়া ভাইগন । তাদের কি দোষ বলেন ? তারা একদম ছোটবেলা থেকেই এমনভাবে বড় হচ্ছে , যে তারা বাধ্য এইখানে আসতে । কারন বলছি ।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা একদমই প্রযুক্তিবর্জিত এবং "তুমি আমার বাবাকে পছন্দ করনা তাই তোমার তোমার রাঁধা খাবার আমি খাবনা" টাইপের ।

প্রযুক্তিবর্জিত বলছি এ কারনে - একজন স্কুলে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী প্রযুক্তির অর্থাৎ মোবাইল,কম্পিউটার,ইন্টারনেট এর সম্পর্কে যে রকম দক্ষ - একটি মাদ্রাসার ছাত্র কিন্তু সেরকম দক্ষ নয় ( ব্যাতিক্রম থাকতে পারে ) । সুতরাং তাদেরকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে বিভ্রান্ত করাটা তুলনামুলক ভাবে সহজ । তাই তারা বাইরের দুনিয়া থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ভাবে বেড়ে ওঠে ।

আর কড়া নিয়ম-কানুনের মধ্যে তাদের পাঠ্যসূচী এবং শাস্তিও সময়োপযোগী নয় । হাফেজ হতে হলে যে আদর্শিক দ্বন্দ্বযুক্ত ব্যাক্তি বা জ্ঞান বর্জন করতে হবে - একথা কুরআন শরীফের কোথায় লেখা আছে ? মাদ্রাসার ছাত্রদের আউট বই পড়া নিষেধ । অবসরে তাদের পড়তে হয় কিশোর কন্ঠ , "আর রাহিকুল মাখতুম" , চার খলিফার জীবনি ইত্যাদি বই । হুমায়ুন আহমেদের সাথেই তারা পরিচিত না - আর জাফর ইকবালের কথা বাদই দিলাম । বেশিরভাগ মাদ্রাসায় রাখা হয় "সংগ্রাম" । প্রতিদিন তারা সেই সংগ্রাম পত্রিকা পড়ে দেশের খবরটা তারা ওইভাবেই জানে । ক্রমাগত শারীরিক শাস্তির মধ্য দিয়ে ( অনেকটা বিএমএ ট্রেনিং এর মত) তাদের চিন্তা করার সুযোগটাও দেয়া হয়না । সুতরাং ব্লগারদের বিপক্ষে কিছু ভুল ভাল ভুজুং ভাজুং দিয়েই যে তাদেরকে যেকোনও জায়গায় জমায়েত করা যায় - সেটা আর অবাক কি ! আর তাতে কাজ না হলে বেতের বাড়ি তো আছেই ! সুতরাং তাদেরকে ব্যাবহার করা হচ্ছে , "মরলে শহীদ বাচলে গাজী" এই প্রোপাগান্ডা ব্যাবহার করে । তারা নির্দোষ । সুতরাং যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রদর্শন করে তাদের খেপিয়ে তোলা মানে - নিজ হাতে আরও এক প্রজন্ম শিবিরের জন্ম দেয়া ।

এই ব্যাপারটাও মাথায় রেখে আগামী কর্মসুচি দেয়া উচিত । যাতে কর্মসুচিটি ম্যাস মুসলিম মানুষজনও অপছন্দ না করে এবং আসল কাজ - সাপ ভাঙ্গাও হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:০৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×