somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্যামের টুনটুনি পাখি

২৫ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিড়ালের ভাগ্যে কখনো ছিঁকে ছিড়ে না। তেমনি শ্যামের কপালেও প্রেম নেই। পাড়া-পড়শি যেমন করে শ্যাম সুন্দরকে অঙ্গুলি তুলে শাসিয়েছে, ‘ব্যাটা শ্যাম তুই কী কখনো আয়নায় নিজের বদনখানি একবার দেখেছিস? আর যদি না দেখে থাকিস তাহলে প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নিজের চেহারাখানা একবার আয়নায় দেখে নিস তো বাপু। তবেই তুই বুঝতে পারবি, প্রেম ছেলের হাতের মোয়া না যে, চাইলেই পাবি। আর কখনো যেন, তোকে আমাদের মেয়েদের আশপাশ দিয়েও ঘুরতে না দেখি।’ পড়শির দীর্ঘ বয়ান শ্যাম সুন্দর আজ পর্যন্ত মনে মনে জপ্ করে এসেছে। সারা জীবন জপ্ করবে বলেও ঠিক করে নিয়েছে।
শ্যাম সুন্দর প্রেম থেকে শত হাত দূরে ছিলো। চাকরীর প্রশ্নপত্রের খাতায় সামাজিক জীব হিসেবে নিজেকে অস্বীকার করেছে। শ্যাম লিখেছিল, ‘আমি কারোর সাথেই এখন আর মিশি নে।’ চাকরী দাতারাও শ্যামের উত্তরে মাইনাস টেন দিয়েছিল বলে শোনা যায়। আসলেই কী শ্যাস সুন্দর প্রেম থেকে দূরে থাকতে পেরেছে? মনের খবর সব সময় কী আর পাওয়া যায়? ভিতরে ভিতরে শ্যাম একটা প্রেম করার জন্য উতলা হয়ে থাকত সব সময়। কোন রকমের একটা প্রেম হলেই তার চলে। এতোদিনে শ্যামের পানে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইন্টারনেট প্রযুক্তি। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমে পড়ে গেল দ্যুতি অরণী বিশ্বাস নামের একটা মেয়ের। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি নাকি দেখতেও সুন্দর মেয়েটা।
প্রেমের দিনগুলোই অন্যরকম। প্রেমে পড়ার সাথে সাথে প্রেমিকের সব কিছুতেই পরিবর্তন আসে। সেই শ্যাম কী আর আছে? শ্যামের মুখটা এখন চওড়া হাসিযুক্ত। কিন্তু একটা ব্যাপার একটুও বদলায়নি। তাহলো, শ্যামের দুই হাতের কচলানি। সমানে হাত কচলিয়ে যাচ্ছে। আর হেঃ হেঃ করে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
মাইনাস টেন নম্বর পেয়েও শ্যাম চাকরীটা পেয়েছিল। নিয়োগদাতা ভেবেছিল যে, ‘একটা ফ্রেস ছেলে পাওয়া গেল। যে কিনা কোন মেয়ের সাথে ঝুট-ঝাশেলায় নাই। অফিসে মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে।’ শেষ পর্যন্ত শ্যাম সুন্দর একটা টুনটুনি পাখি জুটিয়ে নিয়েছে। শ্যাম তার প্রেমিকাকে আর করে টুনটুনি বলে ডাকে। অফিসের বসের কপালে ভাজ পড়ল, ‘শ্যাম সুন্দর তো এখন সারাদিন প্রেমের ঘোরের মধ্যে থাকবে। অফিসের কাজকর্ম আর ঠিক মত হবে না। কয়দিন পরে তো ছেলেটা বিয়ে করার জন্য উতলিয়ে উঠবে। তারপর সংসারের জালে আটকা পড়ে যাবে। এখন কী হবে?’
শ্যামের মোবাইল বিলের লিমিট ক্রস করে। দাঁত বের করে বসের কাছে এসে বলে, ‘ভাই আমার মোবাইল ব্যালেন্স আর একটু বাড়ায়ে দিতি হবে নে।’ শ্যামের কথা শুনে বস জানতে চাইল, ‘তুমি কী সারারাত মোবাইলে কথা বল?’ ‘জ্বি ভাই।’ শ্যামের সরল স্বীকারক্তি। শ্যাম অফিসের চেয়ারে এক নাগাড়ে দশ মিনিটও বসে থাকতে পারে না এখন। কারণ একটু পর পর শ্যামের মোবাইল মিষ্টি সুরে বেজে উঠে। আর শ্যাম মোবাইলটা কানের কাছে নিয়ে মেয়েলি কন্ঠে হ্যালো বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কথা শেষ হলে, বোয়াল মাছের মত ভেটকি মেরে আবার রুমে ঢুকে। শ্যামের মুখ দেখেই বোঝা যায়, প্রেম সাগরে শ্যামের নৌকার পালে হাওয়া বেশ করেই লেগেছে।
শ্যামের হাত এখন আর কম্পিউটারের কি-বোর্ডের উপর থাকে না, থাকে মোবাইলের উপর। কারণ সে একের পর এক মোবাইল মেসেজ চালাচালি করছে তার টুনটুনির সাথে। আপনারা বলতে পারেন, ‘শ্যামের এসএমএসের খবর আমরা পেলাম কি করে?’ ভাইসকল এই প্রশ্নতো আমাদের। শ্যাম যে একটা অফিসে চাকরী করে তা শ্যামের মনে থাকে না। প্রতিদিন সকালে অফিসে ঢুকেই কলিগদের সাথে ওর প্রেম কাহিনি বলা শুরু করে দেয়। কাল রাতে মোবাইলে কী কী কথা হল তা সব বলে যায়। শেষে আর একটা কথা বলতে গিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। আমরা বুঝে নিই, উড়ন্ত কোন কিছু সে পেয়েছে মোবাইলের অপর প্রান্ত থাকা তার টুনটুনির কাছ থেকে। তারপর সবাই জানতে চায়, মেসেজে শ্যাম কী লেখে? শ্যাম জানায়, ‘মিস ইউ বেবস। মিস ইউ টুনটুনি। একটু বিজি আছি জান।’ এই রকম আরো শত শত মেসেজ, যা কিনা শ্যাম লজ্জায় বলতে পারবে না। 
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×