somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের স্বাধীনতা : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

২৫ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চাই হে কে বাঁচিতে চাই”
স্বাধীনতা কোন জাতির জন্য পরম চাওয়া ও পাওয়। পৃথিবীর কোন জাতি পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। পৃথিবীর প্রত্যেক জাতিরই স্বাধীনতা দিবস তাদের ইতিহাসের স্বর্ণক্ষরে লেখা। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ৪০ বছর পূর্বে এই দিনে ৩০ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে রক্তস্নান লাল সবুজ পতাকার আশ্রয়স্থল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই দিনটি বাঙ্গালী জাতির গভীর শ্রদ্ধা, ভালবাসার গর্ব ও আনান্দের তাৎপর্য বহন করে। বাঙ্গালি জাতির অহংকার এই দিনটি গর্বের দিন।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছেন “ শুধু ভিক্ষা করে কখনও স্বাধীনতা লাভ করা যায় না। স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় শক্তি দিয়ে, সংগ্রাম করে। স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয় রক্ত দিয়ে”। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জিত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্থান রাষ্ট্রের উৎপত্তির পর পাকিস্থানীরা বাঙ্গালীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন পঙ্গু করতে চেয়েছিল। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্থানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্‌ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভায় ঘোষনা দেন।এরপর থেকেই মূলত স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয়। রাষ্ট্রভাষা হিসাবে উর্দুতে রোধ করার জন্য গঠিত হয় “সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ”। ১৯৫২ সালে পুনরায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ছাত্রজনতা পুনরায় বিক্ষোপে ফেটে পড়ে। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য পুলিশ ছাত্র-জনতার মিছিল গুলি চালায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সালাম, জব্বার, রফিক,শফিকসহ নাম না জানা আরো অনেকে। মূলত সেখান থেকেই শুরু হয় স্বাধীনতার আন্দোলন। বাঙ্গালীর স্বঅধিকার আদায়ের জন্য ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবী উৎথাপিত হয়। ১৯৮৬ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগারে আটক করা হয়। শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। অতঃপর গনআন্দোলনের মুখে তাকে ১৯৬৯ সালে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরষ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে তটালবাহনা করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে মানুষকে স্বাধীনতা পক্ষে স্বপ্ন দেখান। স্বাধীনতা বিজয়ের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়া আহবান জানান। সারা বাংলায় শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। ২৫ মার্চ কালো রাতের অন্ধকারে পাক-হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে বিপর্যস্ত জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ বোপিত হয়। ২৬ মার্চ চট্টগামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর পড়্গে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র পাঠ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহম্মেদ এর নেতৃত্বে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিক ভাবে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়। পাক বাহিনী তখন আরো মরিয়া হয়ে উঠে। অসহায় বাঙ্গালীরা দলে দলে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নিতে থাকেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। এ দেশের অগনিত ছাত্র-জনতা, পুলিশ-ইুপআর, আনছারসহ সর্ব শ্রেণী পেশার মানুস মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। গঠিত হয় মুক্তি বাহিনী। মুক্তি বাহিনী গেরিলা যুদ্ধের পদ্ধতি াবলম্বর করে শতুদের বিপর্যন্থ করতে থাকে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের কারণে দেশের দেশের ভিতর শত্রু হনন হতে থাকে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাস মুক্তি সংগ্রাম চরম আকার ধারণ করে। সময়ের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন জেলা শত্রুমুক্ত হতে থাকে। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক নতুন দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় হয়। এ দিন বিকাল ৫টা ১ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যৌথ কমান্ডের পক্ষে লে.জে. নিয়জী পাকিস্থানের পক্ষে আত্মসমার্পনের দলিলে স্বাক্ষর করে। অর্জিত হয় লাল সবুজের পতাকার দেশ। আর ১৯৮০ সালে তৎকালীন সরকার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা করে।
আলোক ব্যতীত যেমন পৃথিবী জাগে না, তেমনি স্রোত ব্যতীত যেমন নদী টেকে না, তেমনি স্বাধনিতা ব্যতীত কোন জাতি কখনও বাঁচিতে পারে না।
এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রম হঠাৎ এক দিনে দানা বাধে নি। বস্তুত নিরন্তন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মাধ্যমে অর্জিত হয় বিজয়। শেষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, একটি উদার ও সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, নারি মুক্তি আন্দোলন, নারী শিক্ষার প্রসার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে নিঃশ্বেস করাসহ ন্যায় ভিত্তিক আদর্শে ১৯৭২ সালে বিজয়ী দেশের বহুল প্রত্যাশিত সংবিধান রচিত হয়। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আত্মত্যাগ এবং দু‘লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের বিজয় অর্জিত হলেও জনগণের লালিত স্বপ্ন ও অর্থনৈতিক মুক্তি আজো অর্জিত হয় নি। প্রতিষ্ঠা পায়নি কাঙ্কিত গণতন্ত্র। দেশের দুই বৃহত্তম জোটের কাছে সমগ্র জাতি জিম্মি হয়ে আছে। বর্তমানে দু্‌ই দলের ধ্বংত্মাক রাজনীতি নতুন করে গণতন্ত্রের কথা ভাবতে হচ্ছে। দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফিতির আবার্তে জনজীবন আজ দুর্বিসহ ও বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। সামগ্রিকভাবে জনজীবনে বিরাজ করছে হতাশা ও নৈরাজ্য। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠা পায় নি। আধুনিক বিশ্বের উন্নয়ন ও সুবিধা আজো স্পর্শ করতে পারে নি, পারে নি সামাজিক অধিকার ও মানবধিকার নিশ্চিত করতে। যে অর্থনৈতিক মুক্তি ছিল বিজয়ের অন্যতম প্রত্যাশা-বিগত চার দশকে তার পূরণ হয়েছে সামান্য। শিল্পের বিকাশ ও প্রসার ঘটেছে নগন্য। আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অত্যন্ত শ্লগ হওয়ায় বিশ্বের দরবারে মাথা উচু ক েদাড়াতে পারি নি। এ দেশের ৪৭ দশমিক ৬ ভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। বর্তমান সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস অক্টোপাসের মত জেকে বসেছে। এখনও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের শক্তি বিভিন্ন ভাবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়ায় জাতি আজো কলঙ্ক মুক্ত হতে পারছে না। ফলে আমরা ক্রমশ বিশ্বের কাছে পিছিয়ে পড়ছি।
এত সব পরেও আমদের প্রাপ্তি কোন অংশে কম নয়। বাংলাদেশ পেয়েছে নতুন ভূখন্ড। ক্রিকেটে নতুন করে শক্তিশালী দেশ হিসাবে আবিভূত হয়েছে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনা করছে। রোগ ব্যাধির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে মানুষের গড় আয়ু আরো বেড়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর পদাচারণা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে, কমেছে দরিদ্রতা। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া হিসাবে নির্বাচন ব্যবস্থা আরো স্বচ্ছ ও সু-প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্থায়ী হয়েছে বহু দলীয় ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক রাজনীতি বার বার হোচট খেলেও চলছে ধীর গতিতে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মাধ্যমে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃতকীকরণ করা হয়েছে। বিজয় দিবস সমগ্র জাতিকে জাগিয়ে তুলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁদি দিয়ে জাতিকে কলঙ্ক মোচন করা হয়েছে। বিজয় দিবস জাতিকে নতুন করে বাচতে শেখায়, অত্যাচার ও শেষণের কালো হাত গুড়িয়ে দিতে, অধিকার আদায়ে আত্ম সচেতন করে তোলে। স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের যুব সমাজকে সত্য ও ন্যায়ের পথে, অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যায় যোগায়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×