somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণজাগরণ বনাম গণজোয়ার অথবা তরুণ প্রজন্ম বনাম হুজুর প্রজন্ম!!!

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। খেয়ালি এবং জেদি টাইপের শিশুরা বায়না ধরে মাঝে-মাঝে বেশ লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে দেয়। তখন এক পক্ষ খেলতে নামলে অন্য পক্ষ নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। আামাদের বাংলাদেশও এমন খেয়ালি শিশুদের খেলার পাত্রে পরিণত হয়েছে বোধহয়। নাস্তিকতার ধুয়া তুলে চট্টগ্রামের জন্য নির্ধারিত শাহবাগের কর্মসূচি আটকে দিয়েছিল হেফাজত। এর পাল্টা হিসাবে এবারে ঢাকায় হেফাজতের লংমার্চ কর্মসূচি আটকে দেওয়ার জন্যও সুবোধ বুড়ো খোকারা নেমে পড়ে। ‘তুই যেহেতু আমাকে খেলতে দেস নি, আমিও তোকে দেব না,’ অবস্থাটা ঠিক এ রকমই দাঁড়িয়েছে। শিলাপোঁতায় ঘষাঘষিতে মরিচ পিষে যায়। তাই মনে প্রশ্ন জাগে, এই খেলা-পাল্টা খেলার প্রতিযোগিতায় মাঠটা ঠিক থাকবে তো?

২। হেফাজত হল ধর্মান্ধদের আখড়া। যে-ধর্মবেষ্টনীতে ওরা বেড়ে ওঠে, কখনোই এরা নাস্তিক-মুরতাদের প্রতি সহনীয় হবে না। শাহবাগের চিন্তাচেতনা ও কৌশল তো সমন্বয়বাদী, সমঝোতা ও সংলাপমূলক। হেফাজতকে তাই শাহবাগ সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু একবারের চেষ্টায় সমঝোতা ও সংলাপের পরিবেশ তৈরি না হলে হাল ছেড়ে দিয়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এমনভাবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি গ্রহণের প্রবণতা শুরু থেকেই থাকলে সমঝোতা ও সংলাপের কোনো বাণী পেশ করার দরকার ছিল না।

৩। ‘হেফাজতে ইসলাম’-কে কেউ ব্যঙ্গ করে, কেউ বা নিজ বিশ্বাস থেকেই ‘হেফাজতে জামায়াত’ নামে অভিহিত করছেন। অর্থাৎ একে তারা জামায়াতের আওতাভুক্ত বা সমর্থক হিসাবে বলে স্বস্তি পাচ্ছেন, আনন্দ পাচ্ছেন। তাই যদি হয়, তাহলে পাল্লা ভারি হচ্ছে কার? অন্যদিকে হেফাজত যেভাবে সুদূর মফস্বল থেকে সাধারণ মানুষ (আলেম/ওলামা/মুসল্লি)-দের ঢাকায় আনতে পেরেছেন, শাহবাগীরা কি তা পারবে? না পারলে কেন পারবে না? এনিয়ে আত্মবিশ্লেষণের দরকার আছে। বিস্মৃত হলে চলবে না যে, শত্র“ বানানো খুব সহজ। কিন্তু বন্ধু বানানো অনেক অনেক কঠিন।

৪। হেফাজতের জন্ম মফস্বলে। মফস্বল থেকে এসে এরা ঢাকায় সমাবেশ-লংমার্চ সফল করে চলে গেল। উল্লেখযোগ্য কোনো অঘটন না ঘটায় ইতোমধ্যে অনেকে নির্ঘাত হতাশায় ভুগছেন। তবে তাদের লজ্জা জাগবে না। লজ্জা জাগতে হলে যে ধরনের বিবেক থাকা দরকার, তা তাদের নেই। কিন্তু হেফাজতের সঙ্গে কৃত আচরণের জবাব হিসাবে তারা ঢাকার বাইরে জাগরণের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা খুইয়েছেন, তা হলফ করে বলা যায়। যেমনই হোক, বাহ্যত হেফজতের কর্মসূচি ছিল নাস্তিক-মুরতাদের বিরুদ্ধে, যা একান্ত ধর্মকেন্দ্রিক। যুদ্ধাপরাধের দাবির ব্যাপারে তাদের স্পষ্টত কোনো বিরোধিতা চোখে পড়ে নি। তাই ধর্মকেন্দ্রিক এ জায়গাটুকু শাহবাগ তাদের জন্য ছেড়ে দিতে পারত। এতে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি ও সমঝোতার পথ উন্মুক্ত রাখার ব্যাপারে শাহবাগের হাতে একটি গুটি থাকত। এখন সে গুটি হাত ছাড়া হল। শাহবাগকে এখন অবধারিতভাবে শাহবাগেই এবং মিডিয়াবেষ্টিত হয়ে থাকতে হবে।

৫। শাহবাগে শুরুর দিকে সত্যি তরুণদের ব্যাপক সমাগম হয়েছিল, যা ছিল গণজাগরণের চমৎকার লক্ষণ। কিন্তু শাহবাগীদের সংকীর্ণ আভিজাত্যিক মানসিকতার জন্য পরবর্তীতে উপস্থিতি হ্রাস পেতে থাকে। এক পর্যায়ে এসে তা বাম ও আওয়ামী ঘরানার লোকদের তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়। আজকের ঢাকায় হুঁট করে হেফাজতের ডাকা লংমার্চে যে জনতার ঢল নেমেছিল, একে কি গণজাগরণ বলা যাবে? নাকি গণজাগরণ হল শহুরে স্বার্থান্ধ তরুণদের খাস তালুক, যেখানে সদকা-খয়রাতে বেড়ে উঠা মোল্লা-মৌলবীর জন্য কোনো জায়গা নেই?

৬। শাহবাগী বন্ধুরা আজকের টিভিতে লাইভ প্রত্যক্ষ করেছেন কি-না, জানি না। তারা যেহেতু অবরোধ নিয়ে নানা পয়েন্টে ব্যস্ত ছিলেন, তাই তা না দেখারই কথা। একদিকে সফল (?) হরতাল, অন্যদিকে নিরাপত্তার (?) অজুহাতে সরকারিভাবেই যানবাহন বন্ধ রাখা, আবার শাহাবগী বন্ধুদের সক্রিয় অবরোধের পরেও ঢাকায় যে সামান্য (?) লোকসমাগম হয়েছিল, সে সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট থেকে সাক্ষ্য নিতে পারেন। এর উদ্দেশ্য, নিজ দাবি ও আন্দোলন থেকে পিছু হটা নয়, বরং নিজের অবস্থান ও দেশের আপামর জনসাধারণের অবস্থার নির্মোহ মূল্যায়ন। শাহবাগে কাশি দিলেও মিডিয়ায় তা শ্লোগান হিসাবে প্রচার পায়, কিন্তু নিম্নবর্গের লোকদের সংবাদকে কৌশলে বা স্বেচ্ছায় প্রায় সকল মিডিয়াতেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই এড়ানো ও গুরুত্বহীনতার ভেতর দিয়েও যে চিত্র ভেসে উঠেছে, তাতে শিক্ষার অনেক কিছুই আছে।

৭। স্বাধীনতা একা কারো বাপের তালুক নয়। ধর্মহীনতা বা ধর্মবিদ্বেষ যেমন স্বাধীনতা নয়, তেমনই ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতাও স্বাধীনতা নয়। এই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার নামে নিম্নস্তরের / নিম্নবর্গের মানুষদের আবেগকে অযথা আহত করে বৌদ্ধিক তগমা অর্জিত হতে পারে। কার্যত সাধারণ মানুষ তখন আপনাআপনিই এ-সব তগমা-ওয়ালাদের থেকে দূরে সরে পড়ে। যে-সব মানুষের মুক্তির জন্য তথাকথিত সেই আন্দোলন, সে-সব মানুষ যদি দূরে সরে পড়ে, নেতা ও চিন্তকের কর্মতৎপরতাকে আত্মস্থ করতে না পারে, তাহলে কে করবে বিশাল এই আত্মত্যাগের মূল্যায়ন? সুতরাং দাঁড়াও পথিকবর। এমন করে ভাবো এবং চলো, যেন কেউ তোমাকে বলতে না পারে: ‘পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?

৮। হরতাল আহ্বান করে ঘাদানিকের শাহরিয়ার কবির এবং মুনতাসির মামুন প্রমুখ যেখানে পথরোধ করে বসেছিলেন, মাদরাসায়-পড়–য়া অ-তরুণ ছাত্রদের দেখে তারা দৌড়ে পালালেন। যে শাহবাগের তরুণের সংখ্যা লাখে লাখ, তারা কেউ কি এই পথরোধে সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারে নি? নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশরাই তখন এতটা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করল কেন? না, আমি হামলা সমর্থন করছি না। সে প্রশ্নই আসে না। যে কোনো রকমের হামলাই হল বর্বরতার নামান্তর। কিন্তু হেফাজতের লংমার্চে বাধাপ্রদানের করতে গিয়ে সাহসী যোদ্ধার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে দৌড়ে পালানোয় প্রাণরক্ষা হয় বটে, কিন্তু যৌক্তিকতা থাকে না। কারণ, যে হরতাল হল সন্তানাদি ও প্রজন্ম-রক্ষার তাগিদে, সেখানে নিজের প্রাণ নিয়ে পালানো একটু বোকামিই তো!
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×