somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিপুমনির সাগর জয় এবং সরেনের সাগর ভাবনা

২২ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এদেশের সরকারি মামলা গুলো যারা পরিচালনা করেন মানে সরকারি উকিলরা আর যারা এসবের দিকে নজর রাখেন ( সাংবাদিক,উকিল,সুসিল সমাজ আর সব পক্ষীয় রাজনীতিবিদ ) তারা তো হর হামেশা এটা দেখে অভ্যস্ত যে, আওয়ামীলীগ আমলে যারা দোষী প্রমানিত হবেন পরবর্তী বিএনপি সরকারের সময়ে তারা বীরের বেশে জেল থেকে মুক্তি লাভ করবেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হবে। বিএনপির পর যখন চাকা ঘুরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসবে তখনও মামলা প্রত্যাহারের এই হলি খেলা চলতে থাকবে। গত পনের বছরে যে ইন্টারেস্টিং বিষয় গুলো লক্ষ্য করলাম তা হচ্ছে, মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে মামলার চরিত্র, গতি প্রকৃতি, সাক্ষ্য প্রমান, কোনটা রাজনৈতিক আর কোনটা অরাজনৈতিক কোনটা নিয়ম তান্ত্রিক আর কোনটা অনিয়মতান্ত্রিক তাঁর কোনকিছুই তোয়াক্কা করা হচ্ছেনা। স্রেফ কোন মামলা কোন আমলে হয়েছে শুধু তাঁর উপর নির্ভর করেই মামলার ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে নাটোরের গামা হত্যাকাণ্ডের ফাঁসি দণ্ড পাওয়া আসামিদের ক্ষমা করে দেওয়া এবং লক্ষিপুরের তাহের পুত্র বিপ্লবের ক্ষমা পেয়ে যাওয়া আমাকে শুধু শংকিত-ই করেনি বরং জীবন দর্শনের ভাবনায় নতুন মাত্রা দিয়েছে। আইন কিংবা রাজনীতি আমার পেশা বা নেশা নয় উল্টা কিছু মাতবরের ভয়ে বিনা কারনেই অনেকটা সিটিয়ে থাকি। উনারা পেপার পড়ে পড়ে এরে তারে টার্গেট করে ডেকে পাঠায়। কখন না আবার কার ডাক পড়ে যায়।

আজ কয়দিন ধরে যে ভাবনাটা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তা হল, সাম্প্রতিক সমুদ্রসীমা বিষয়ক এক মামলায় আমরা জিতে গেছি। আমি সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ। এসব বিষয় গভীরভাবে বুঝিনা। তারপরও মানুষের আনন্দ-উল্লাসে যোগ দিলাম। এরে-তাঁরে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, জলসীমা কি লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ হইছে?
উত্তর এলো ‘না, লিগ্যালই পাইছি’।
তাইলে কি অল্প চাইয়া বেশি পাইছি?
-না। ন্যায্য পাইছি। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে আমাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা হইছে।
-ও আচ্ছা আচ্ছা বুঝছি বুঝতে পারছি বলে ফিরতি পথ ধরলাম। আরও দুএকটা প্রশ্ন মনের ভিতর ঘুরঘুর করতেছিল কিন্তু সাহসে আর কুলাইলনা। তাহলে দিপুমনি এ বিজয়কে ‘ অবিশ্বাস্য’ বলছেন কেন? বাংলাদেশ যদি সঠিক সময়ে সঠিক অবস্থান গুলো না নিত তাহলে এ রায় আমাদের পক্ষে নাও আসতে পারত। তাঁর মানে উনি সঠিক কাজ গুলোই করেছিলেন। উনি যদি বলতেন যে, আমাদের নীতিগত অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাহলে আর পরের প্রশ্ন গুলো আসতো না মনে হয়। বার্মা আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছিল তাই আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত দৌড়াতে হয়েছে।

ঐদিন ই কোন একটি পত্রিকার পাতায় দেখলাম ভারতের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মিঃ পঙ্কজ সরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমনির সাথে দেখা করেছেন। সৌজন্য সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের বললেন তিস্তা সহ সকল বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে। তবে আলাদা করে বললেন, ভারত সমুদ্র সীমা বিষয়ক জটিলতা দ্বিপাক্ষিক ভাবে সমাধান করতে আগ্রহী। ঘটনা কি? এতদিন পড়ে হঠাত; তারা এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলো কেন? মনে হয় হেরে যাবার ভয়ে কিন্তু ভারত তো আমাদের কেয়ার করেনা তবে মনে হয় ওরা আমাদের সাবধান করে দিল যেন এ বিষয়ে আমরা উচ্চবাচ্চ আর না করি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর প্রতিক্রিয়ায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বললেন যে, আলোচনা হতেই পারে কিন্তু আদালত থেকে ফিরে আসার কোন সুযোগ আমাদের নেই। দারুন দারুন মারহাবা। এই পর্যন্ত ঠিক আছে।

তারপরদিন-ই পত্রিকার পাতায় দেখলাম শেখ জয় ( advisor to the prime minister ) আমেরিকা থেকে সরাসরি দিল্লি গেছে। ও আবার তড়িঘড়ি দিল্লি যাবার কি দরকার ছিল। সেখানকার পত্রিকা গুলো নাকি লিখেছে ইনি সেখানে গেছেন দিল্লির মন গলাতে। ওদের মন গলানোর দরকার কি? আমরা তো তাঁদের মনে কষ্ট দিয়ে কিছু করেছি বলে মনে পরছেনা। ও আচ্ছা আচ্ছা ট্রানজিটের বিনিময়ে তো তিস্তা চুক্তি হবার কথা ছিল, ট্রানজিট হল কিন্তু পানির কিছু হলনা। মমতা বেগম নাকি এ নিয়ে ছলনা শুরু করেছেন। তাহলে কি দাঁড়ালো ? দিল্লির মন গলাতেই হবে। মন গলাতে গিয়ে সমুদ্রসীমার বিষয়টা হয় বেমালুম ভুলে যেতে হবে নতুবা তাঁদের সাথেই আলচনায় বসতে হবে তবেই তিস্তা নিয়ে কথা বলবেন ভারতরাজ। বাংলাদেশ তাহলে কি করবে? যদি তারা তিস্তা নিয়েও আলোচনা অচল করে রাখে তাহলে কি কিছু করার আছে?

আছে আছে। মারাত্মক সব সমাধানে ভরা দারুন দারুন সব গাইড বই আছে। একবার একটা বইয়ে পড়েছিলাম একটা ডানপন্থির মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠার ছয়মাস আগে থেকে ২-৩জন বাম বিচারপতির স্বাভাবিক মৃত্যু হয় সন্দেহাতীত ভাবে। এর মানে পরে যারা প্রমোশন পেয়ে বিচারপতি হলেন তাতে করে উচ্চ আদালতে ডানপন্থী বামপন্থি বিচারকের অনুপাত দাঁড়ালো ৪ অনুপাত ৩। কোর্টে মামলা তোলার মোক্ষম সময়। এভাবে অপরাধীরা একটা গ্রাউন্ড তৈরি করে নিয়েছিল।

একটা নৈতিক মামলায় জেতার পর এতো উৎসব দেখেই আমার শঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল। দেশের সব মানুষ দিপুমনির উপর প্লিজড। এখন ভারত যদি আলোচনা চালায় বা না চালায় তাহলেও বঙ্গোপসাগরের ব্লক গুলো ভারত-ই একচেটিয়া ভাবে ব্যাবহার কোর্টে থাকবে। তাঁদের কে পাহারা দেবার মতো দারোয়ান আমাদের নেই। আর যদি আদালতের মাধ্যমে আমরা হেরে যাই তাহলে জনগন বলবে, আর যাই হোক দিপুমনি যুদ্ধ করে হেরেছেন। সাবাস দিপুমনি সাবাস। বিনিময়ে ভারত তিস্তা দিয়ে সামান্য কিছু পানি নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশকে উপহার দেবে। আমার শঙ্কা যায়না, কেনই জানি বারবার মনে হচ্ছে আমরা ভারতের সাথে মামলায় আদালত পর্যন্ত যাব এবং হেরে আসব এবং এইসব হলি তারই রিহারসেল। মানুষ খুশি থাকবে কারন হারি বা জিতি যুদ্ধ তো করেছি। সম্ভবত জয়ের সাথে এসব বিসয়-ই চুরান্ত হতে পারে। কে জানে কি হয়। এইসব তো অসুস্থ মানুষের কল্পনা।

পরবর্তী নিরবাচনি বৈতরণী পার হওয়া, গত নির্বাচনে আনা টাকার হিসাব ( ইকনমিস্ট এর মতে বস্তা বস্তা টাকা ) দেয়া এবং আরও অন্যান্য যেসব মৌলিক বা যৌগিক চুক্তি হয়েছিল সেসব শোধের পূর্বশর্ত কিনা কে জানে।
লেখক...।
হাঁটের কানা।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×