somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নদী আমায় ডাকে

২০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নদী আমায় ডাকে

নদী আমাকে হাতছানি দেয়, ডাকে
আমি প্রলুব্ধ যৌবনবতীর আহবানে,
ভেসে যাই তার
দুকুল প্লাবিত যৌবনের টানে।
আমি অবগাহন করি-
দুহাতে উম্মেচিত করি তার উদ্দাম বদেশ,
কি, উচ্ছল উচ্ছ¡াসে-
কি সুখের আলিঙ্গনে যাই ভেসে।

সেই কৈশোরকালে নদীতীরে বাস। সকালে নদীর কুয়াশাঢাকা রূপ, দুপুরে রৌদ্রুস্নাত নদীতে নৌকোর আনাগোনা, বিকেলে পড়ন্ত বেলায় কিংবা অলস মধ্যাহ্নে নদী কেমন ঝিমোয়। রাত্রে নদী শুধু টিমটিমে আলোয় দাঁড়ের ছপছপ আর মাঝিমাল্লার টুকরো সংলাপ, যা প্রায়ই অস্পষ্ট কথামালা, মাঝেমধ্যে ভাটিয়ালি সুরের দূরাগত ধ্বনি আমার মর্মে গেঁথে আছে। কোজাগরী পূর্ণিমায় নদীর নয়ন ভোলানো রূপ আমি মোহাবিষ্টের মতো চেয়ে থাকি। আমার নয়ন ভোলানো এলে, কী হেরিলাম হৃদয় মাঝে-রবীন্দ্রনাথের সুর আমাকে কোন ভুবনে নিয়ে যায়। তখনো ছিন্নপত্র পড়িনি, রবীন্দ্রনাথের ভাবনা কখনো মনের মধ্যে আলোড়ন তোলেনি কিন্তু তাঁর অনুভব নদী আমাকে এনে দিয়েছে- ‘কিন্তু কী চমৎকার হয়েছিল, কী আর বলব। কতবার বলেছি, কিন্তু সম্পূর্ণ কিছুতেই বলা যায় না। নদীতে একটি রেখামাত্র ছিল না; ওই সেই চরের পরপারে যেখানে পদ্মার জলের শেষ প্রান্ত দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকে আর এ পর্যন্ত একটি প্রশস্ত জ্যোৎস্নারেখা ঝিকঝিক করছে।’ সেই জ্যোৎস্নার ঝিকিমিকি এখনো আমাকে পাগল করে। এখনো সুযোগ পেলে আমি নদীপথে ভেসে যাই ঢাকা থেকে খুলনা-রকেটে। হয়তো আমার কাজ বরিশালে। খুলনা হয়ে বরিশালে আসি। সেই একই দৃশ্য, একই জ্যোৎস্না, একই নৌকো-প্রতিবারই নতুন মনে হয়। মনের মধ্যে ছবি অাঁকি। ক্যানভাসে, কাগজে ছড়ায় সেই ছবি। বরীন্দ্রনাথ আমার সফরসঙ্গী। গানে, কবিতায় দুর্লভ মুহূর্তগুলো ভেসে যায়। ‘নদী একেবারে কানায় কানায় ভরে এসেছে। ওপারটা পদ্মায় দেখা যায় না। জল এক এক জায়গায় টগবগ করে ফুটছে। আবার এক এক জায়গায় কে যেন অস্থির জলকে দুই হাত দিয়ে চেপে চেপে সমান করে মেলে দিয়ে যাচ্ছে।’ কেমন যেন একটু সুর হৃদয়তন্ত্রীতে টোকা দিয়ে যাচ্ছে- ‘ওগো নদী, আপন বেগে পাগল-পারা। আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু/ গন্ধভরে তন্দ্রাহারা।’ সেই কৌশোরকালে কত বিনিদ্র রজনী কেটেছে চিত্রা নদীতীরে। নড়াইলে। শয়নক থেকে নদী দেখা যেত। গ্রীষ্মের নদী, বর্ষার নদী, শীতের নদী- এক এক ঋতুতে এক এক রূপ। নড়াইলের স্টিমার ঘাটটি যেখানটায় ছিল, তার পরেই এসডিওর বাংলো। নদী এখানটায় বাঁক নিয়ে চলে গেছে মাগুরার দিকে। সেই বাঁকের ওপরই ছিল আমাদের বাসা। একটি বড় শিমুলগাছ ছিল। শিমুলগাছের গোড়া দিয়েই পাড় থেকে নদীর কাছে। নদীতে গোসল করতাম। নৌকা বাঁধা থাকত ঘাটে। টাবুরে নৌকো। ছোট্ট। মাঝিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছিল। নৌকোতেই তাদের রাত্রিযাপন। নৌকোতেই রাঁধাবাড়া। বেশ মজা লাগত। আহারে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের আহবান। সানকিতে খাওয়া ডাল-ভাত-মাছ অমৃতের মতো যেন। ঘরে বসে যখন নৌকো দেখতাম-দেখতাম নৌকোর পাটাতনে রান্না চাপিয়ে তোলা চুলোয়। ধোঁয়া উড়ছে। সে সময় হয়তো নদীর মাঝবরাবর দিয়ে মাগুরাগামী আরএসএন কোম্পানীর স্টিমার ভামো ঢেউ তুরে চলে গেল তোলা চুলো নিয়ে টাবুরে নৌকোকে দুলিয়ে দিয়ে। সেই দুলুনির মধ্যেই সরা তুলে মাঝি ভাত টিপে দেখছে, ভাত হলো কি না। সে সময় চিত্রা নদী বেয়ে এখনকার রকেট স্টিমার তখনকার আরএসএন কোম্পানীর জাহাজ অষ্ট্রিচ, লেপচা, টার্ন কিউই, ভামো চলাচল করত। কমলা রঙের জাহাজ, সেই জাহাজ এখনো ঢাকা-খুলনায় চলে। আমি ভীষণ আলোড়িত হই সেই প্যাডলচালিত জাহাজ দেখে। কৈশরে ফিরে যাই।

চিত্রা নদীতে তখন জোয়ার-ভাটা খেলত। কচুরিপানা ভেসে বেড়াত। টাবুর নৌকো ছাড়া অন্য নৌকো কখনো দেখিনি। আমি ও আমার বড় ভাই নদীতে সাঁতার কাটতাম আরও অনেকের সঙ্গে। খুব আনন্দ হতো, যখন ঢেউয়ের দুলুনির মধ্যে পড়তাম। দুলুনির ধাক্কায় আবার পাড়ে ফিরে আসা। ভরা বর্ষায় আবার নদীর অন্য চেহারা। ঝুপ ঝুপ ঝুপ ঝুপ অঝোর ধারায় বৃষ্টি। টাবুরে নৌকোর মধ্যে বসে নদীতে বৃষ্টির আওয়াজ, একটু শীত শীত, কাঁথা গায়ে কোনো রূপকথার রাজ্যে চলে যেতাম! চরাচর বৃষ্টিধারায় ঝাপসা, এমনকি পারে আমাদের বাসাটিও অদৃশ্য। শুধু মাঝেমধ্যে নৌকোর দুলুনিতে বুঝতে পারতাম স্টিমার গেল ঘাটের দিকে। মাগুরা থেকে স্টিমার একটা বাঁক নিয়ে আমাদের বাসার দিকে যখন মুখ ফেরাত, তখন একটা ভোঁ দিত। সেই বাঁকের ওপরেও একটা ঘাট ছিল, নামটা মনে নেই। সেখানে যাত্রী নামিয়ে বা উঠিয়ে আমাদের দিকে রওনা হওয়ার আগে আরেকটা ভোঁ। আমাদের দিকে রওনা হওয়ার আগে আরেকটা ভোঁ। আমাদের বাসা থেকে যাওয়া যাত্রী তখন সুটকেস, বেডিং নিয়ে রওনা হতেন ঘাটের দিকে। এই স্টিমারে চড়েই নড়াইলে আসা। প্রথম যেদিন সেই স্টিমারে চড়ি, সেই অপার আনন্দ এখনো অনুভব করি। প্রথম শ্রেণীর ডেকে চেয়ারে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম দুই ধারের দৃশ্যরূপ দেখতে দখতে। এখানো যখন গাবখান চ্যানেল দিয়ে যাই, দুই ধারের গ্রামদৃশ্য দেখতে দখতে রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র-এর কথা মনে হয়। খড়ে-ছাওয়া বাড়ির উঠানে বউ-ঝিরা ঢেঁকিতে পাড় দিচেছ। কেউ হয়তো গরুটাকে নদীতে নামিয়ে গোসল করাচ্ছে। ঘরের বেড়ায় হলুদ রঙের শাড়ি শুকোতে দিয়েছে-এসব দেখতে দেখতে অনেকটা পথ পেরিয়ে আসি। স্টিমারে সে সময়ে লোভনীয় খাবার পাওয়া যেত ব্রিটিশ কায়দায়-ব্রেকফাষ্ট, লাঞ্চ, ডিনার। তবে মার্টন কাটলেট আর ক্যারামেল পুড়িংয়ের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। এখনো কিছুটা মেলে সেই খাবার, তবে সেই স্বাদ? সময় অনেক পাল্টেছে।

নড়াইলে থাকতে তার বাণিজ্যিক কায়কারবার ছিল রূপগঞ্জে। নড়াইল থেকে রূপগঞ্জে যেতে রাস্তা দিয়ে অনেকটা সময় লেগে যেত। নদীর পাড় দিয়ে শর্টকার্ট একটা রাস্তা ছিল, সেই রাস্তা ধরে স্কুল থেকে টিফিনের পয়সা হাতে করে বই কিনতে ছুটতাম। নদীর ভাঙনে সেই রাস্তা কখনো কখনো দুর্গম হয়ে পড়ত। লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে পার হতে হতো। সেই চিত্রা নদীর চেহারা পাল্টে যেত দুর্গাপূজার সময়। রূপগঞ্জের জমিদারদের বাঁধানো ঘাট থেকে প্রতিমা বিসর্জনের নৌকো যেত মাঝনদী বরাবর। হাজার হাজার নৌকো। সেকি হুটোপুটি! কথিত আছে, জমিদার বাবুদের প্রতিমার সঙ্গে আসল সেনার গয়নার টানে নৌকোয় নৌকোয় হুলস্থুল বেঁধে যেত। সেই বাঁধানো ঘাটটি এখনো আছে আগের পরিমায়। সংস্কার করা হয়েছে ইদানীং ঐতিহ্য সংরণের তাগিদে। চিত্রা নদীর আগের যৌবন নেই। নেই আগের মতো জৌলুশ তবুও চিত্রা এখনো মোহময়ী। নৌকাবাইচের অনুষ্ঠান দেখে মনে হয়, সেই দুর্গাপূজার জমকালো অনুষ্ঠান যেন অন্যভাবে বজায় রাখছে।

খুলনা থেকে ফিরছি একবার। জাহাজের ডেকে বসে আছি। দিগন্ত-বিস্তৃত নদী। একদিকের পাড় দেখা যায় না। ইলিশের নৌকো ইতস্তত ছড়ানো। ছোট নৌকোও আছে। একজনই জেলে বা মাঝি। জাল টানছে গলুইয়ে বসে। আর পা দিয়ে বৈঠা বাইছে নৌকোর গতি ঠিক রাখার জন্য। অবাক চোখে দেখি। এমনি সময়ে পশ্চিমাকাশ কালো করে মেঘ ছুটে এল। তারপর ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি। চোখের সামনে থেকে ইলিশের নৌকো অদৃশ্য। তারপর নদী। বৃষ্টির ছাট জাহাজের ডেক ধুয়ে দিচ্ছে। উথালপাথাল ঢেউ উঠছে। জাল টানছে মাঝি। ছোট্ট একটি ছেলে বৈঠা নিয়ে নৌকো সামলাচ্ছে। আবার বৃষ্টির তোড়ে নৌকো অদৃশ্য। বিশালকায় নদীতে এ রকম ভরা বর্ষা কী যে এক অনির্বচনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করল, মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে রইলাম। একসময় বৃষ্টির তোড় কমে এল, চারদিক পরিষ্কার হয়ে এল। নদীতীরের খুব কাছ দিয়ে জাহাজ চলেছে। একটানা সুপারিগাছ। তারই নিচে গাছপালাঘেরা বাড়ি। ঘাটে নৌকো বাঁধা। এ রকম দৃশ্য দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়। কান্ত হওয়ার প্রশ্ন জাগে না। শুধু ভাবি, এ নদীটার নাম কী এখানে। নদী নাম পাল্টায়। একই নদী। চলতে চলতে পদ্মা দিয়ে কখন আড়িয়ায় খাঁয় পৌঁছে গেছি, টের পাইনি। সেই কাকভোরে বরিশালে ছিলাম কীর্তনখোলা নদীতে। চোখ মুছতে মুছতে দপদপিয়া ফেরিঘাট ঘুরে সুগন্ধায় পৌঁছে গেছি। খুব মজা পাই। কী মিষ্টি রোদ চতুর্দিকে! সোনার আলোয় ভরে উঠেছে দিগি¦দিক। কিচেনের বেয়ারা হাতে গরম চা ধরিয়ে দিয়ে গেল। ধোঁয়া ওঠা কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবি, এই যে বাংলা নামে দেশ। বিধাতা কী সুন্দরভাবে তাকে সাজিয়ে দিয়েছেন আমাদের জন্য। অপার বিস্তৃত নদীপথ, সোনালী চরে সবুজ ধান, আকাশ নেমে এসেছে ধানখেতে, গরু চরছে ইতন্তত। নদীক‚লে চলাৎ চলাৎ শব্দের মধ্যে মেয়েরা শাড়ির আঁচল পেতে পোনা ধরছে। কিশোর বয়সীরা নদীর পাড় থেকে দিগম্বর হয়ে লাফিয়ে পড়ছে নদীজলে। এই তাদের আনন্দ, নদীজলে কিছুণ খেলা। বরীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘এখানে আমি একলা খুব মুগ্ধ এবং তদগত চিত্তে অর্ধনিমীলিত নেত্রে গেয়ে থাকি এবং জীবন ও পৃথিবীটা একটি সূর্যকরোজ্জ্বল অতি সূ অশ্র“ বাষ্পে আবৃত হয়ে, সাতরঙা ইন্দ্রধনু রেখায় রঞ্জিত হয়ে দেখা দেয়।’ নদী আমায় ডাকে, এখনো ডাকে।






তাকিয়ে দিখে কী বিষ্ময়

জন্মেছিলাম রাঢ় এলাকায়। গাঁয়ের নাম যবগ্রাম, বর্ধমান শহর থেকে ২০ মাইল উত্তর-পূর্বে আমাদের গ্রামটি-সে এক খরখরে ভূমি, শুকনোর দেশ। চারদিকে ধু-ধু করছে মাঠের পর মাঠ, গ্রাগুলো বৃশূন্য। মাঝেমধ্যে বনকুলের ঝোঁপ, তার মধ্যে মাথা খাড়া করে আছে এক বিশাল বৃ। এসবের ভিড়ে নদী কোথায়? প্রকৃত নদীকে চিনেছি বোধবুদ্ধি হওয়ারও বেশ পরে।

যখন বড় হচ্ছি, চোখভরে দেখতার সবুজ ধানের গুচ্ছ। রাঢ় এলাকা ধানের এলাকা।

তো আমাদের গ্রামের পশ্চিম দিকে একটি নালা ছিল। পশ্চিমের ঢালু জমির পানি এবং ফসলি মাঠের পানি এই নালায় এসে জড়ো হতো। এটি আসলে ছিল একটি প্রাকৃতিক খাল। খাল হলেও গ্রামের মানুষ আদর করে এর নাম দিয়েছিল মহানন্দা। রাঢ়ভূমি এমনিতে শুকনো কিন্তু বর্ষা এলেই এর মাঠ-প্রান্তর জলে টইটম্বুর হয়ে যেত। আষাঢ়-শ্রাবণের ঘনবর্ষণে প্রতিবছর মহানালার পানিও পূর্ণ হয়ে যেত কানায় কানায়। তার ওপর মাঠের পানিও যুক্ত হতো নালার সঙ্গে। স্রোত বইতো। এমনিতে নালাটি ছিল ীণাঙ্গি কিন্তু ভরা বর্ষার মৌসুমে এর রূপ হতো অন্য রকম। বর্ষার একটানা দাপটে মাঠঘাট সবই একাকার। পানির তোড়ে তখন মাঠকে মনে হতো সমুদ্রের মতো, গেরুয়া রঙের পানির চাদর দিয়ে ঢাকা। দু-এক দিন পর মাঠের পানি কমে গেলেও মহানালার পানিতে কোনো কমতি নেই, বর্ষায় বরাবরই সে পূর্ণবতী। খুব ছোটবেলায় নদীর সঙ্গে আমার তেমন স্মৃতি নেই। তবে ওই ছেলেবেলায়ই পানির ভেতর মাঠ ভাসানো অভিজ্ঞতার মধ্যে আমরা মহানালাকে নদী বলে ভাবতে ভালোবাসতাম। সেই কালে এভাবে দুধের স্বাধ ঘোলে মেটাতে গিয়ে গাঁয়ের ছোট খালটি আমাদের কাছে পেয়েছিল নদীর সন্মান। সারা দিন নালার পাশে ছাগল চরানো, ওই নালায়ই মাছ ধরা, হইহুল্লোড়-নরেন, শ্রীকুমার, অমরেশ, ভন্ডুল, হবীব, এহসান, মতি, রউফ; এদের সঙ্গে কত আনন্দেই না দিনগুলো কেটে গেছে তখন! আমার সেই ছেলেবেলার বন্ধুরা অনেকেই এখন লোকান্তরিত।

রাঢ়বঙ্গের নদী এপারের পদ্মা-মেঘনা মতো প্রশস্ত নয়-ীণাঙ্গি। আমাদের বাড়ি থেকে চার মাইল দূরের অজয় কিংবা কনুর নদীর রূপ অনেকটা এ রকম। গ্রীষ্মকালে এগুলোর পানি কমে যেত, বর্ষায় আবার থইথই। তাই ছোট নদী যেমন, তেমনি বড় বড় নদীও বয়ে গেছে রাঢ় অঞ্চলের ওপর দিয়ে। আমাদের বসতভিটা যে মহকুমায়, সেই কাটোয়া ধারে বাঁকুড়ার দিকে গেলেই বিখ্যাত দামোদর নদ। কাটোয়ার পাশ ঘেঁষে বইছে অজয়, শোষাবধি মিলেছে ভাগীরথীর সঙ্গে। আজও চোখের অজয়ের যে চেহারা ভাসে, তা বালুময় অঞ্চলের ভেতর এক স্বচ্ছ জলধারা। মুক্তি ও বিস্তারের অনুভব আজও যেন ফিরে আসে অজয়পারের স্মৃতি মনে হলে। আকাশে কত বিস্তৃত, মাটি কত বিশাল-সেটি তো জেনেছি এই অজয়ের পাশে দাঁড়িয়েই।

এভাবে দিনে দিনে নদীর সঙ্গে যখন পরিচয় ঘটল, আামি তখন ১০-১২ বছরের কিশোর। বর্ধমান থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরতাম ট্রেনে চেপে। খড়ি নদীর ওপর দিয়ে ট্রেন চলত। নদীর ওপর ছোট্ট লোহার ব্রিজ। ট্রেন নদীতে, ব্রিজে উঠতেই ‘খড়ি নদীর ব্রিজ, সাবধান’ এই সাবধানবোর্ডে চোখ আটকে যেত আমাদের। ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রেন চলছে। আমার ছোখ জানালা গলিয়ে নদীর পানি দেখার চেষ্টা করছে। মজার বিষয় হলো, নদীর পাড় এত উঁচু যে চলতি পথে ট্রেনের জানালা দিয়ে পাড় টপকে পানি প্রায় দেখাই যেত না। ওদিকে পা-হাত-পা শিরশির করছে উত্তেজনায়। নদীর দুই ধারে দেখা যাচেছ ঘাসের জঙ্গল, কাশবন। আর এই নদীর পাড়টি এত চিকন ও মসৃণ যে প্রথম দেখায় মনে হবে ফিতে ধরে কাটানো হয়েছে। স্বচ্ছতোয়া পানি সেই নদীর, যেন হিরে গলানো পানি। এত স্বচ্ছ যে মাটির তল পর্যন্ত দেখা যায়। আসা-যাওয়ার পথের খড়ি নদী, বাড়ি ফেরার ছোট্ট ট্রেনটি কত না স্মৃতিকে উসকে দিচ্ছে এখন!

ছেলেবেলায় দেখতাম প্রবল বৃষ্টির তোড়ে হরপা বান ডাকত নদীতে। বিভিন্ন নদীর স্রোত এক মোহানায় মিলিত হয়ে বানের সামনে ভেসে যেত সবকিছু। প্রবল পরাক্রমশালী হাতিকে ভাসিয়ে নিতে পারে বলে এই বানের নাম হরপা। হাতি থেকে হরপা। এখন কোথায় সেই বান, কোথায় সেই স্রোত। অজয় ও বনু নদীর পানি ভাগীরথীর মোহনায় মিশে, আগেরকার উন্মত্ততা নিয়ে হরপা বান এখনো কি ফুঁসে ওঠে?

১৯৫৪ সাল। স্কুল ফাইনাল পরীার পাট চুকিয়ে যবগ্রাম ছেড়ে এ দেশে চলে এলাম। তখন আমার বয়স ১৬ কি ১৭। এ দেশে আসার পর যেন জন্মান্তর ঘটে গেল আমার। সবুজ-শ্যামল মায়ায় ঘেরা দেশ। প্রথম যৌবনেই এক নদীবহুল, জমাট বাঁধা সবুজ রঙের হিরের মতো দেশে এলাম খুলনা শহরে। আমরা থাকতাম ভৈরব নদীর পারে। সমগ্র খুলনা শহরকে আষ্টেপৃষ্ঠে আগলে রেখেছে ভৈরব। নওয়াপাড়া থেকে শুরু করে ফুলতলা, শিরমনি, দৌলতপুর, খালিশপুর এবং খুলনা শহরের বুক চিরে রূপসায় গিয়ে মিশেছে এই নদী। চোখের তারায় আজও লেগে আছে ভৈরবের সেই জোয়ার-ভাটার দৃশ্য। বড় বড় ঢেউ আর প্রবল পানির উতরোলে নদীটি যখন পাগলা হয়ে যেত, সবকিছু উজাড় করে দিত সে। মনে আছে নদীতে সারবেধেঁ নৌকা বাঁধা থাকত। কখনো বা সেই নৌকায় গিয়ে বসতাম। এই নদীপথে সেই সময় বিশাল বিশাল স্টিমার চলত। রাতেরবেলায় স্টিমারের ভোঁ ভোঁ, সার্চলাইটের নীলচে আলো-সবকিছু মিলিয়ে ঘুমের মধ্যে মাঝেমধ্যেই মনে হতো কোথায় যেন তলিয়ে যাচ্ছি, এ কি খরখরে রাঢ়ের প্রান্তর নাকি অন্য এক দেশ! স্বপ্ন-জাগরণের কাছাকাছি এ রকম অনুভূতি হতো প্রায় রাতেই।

তখন ঢাকায় যাওয়া-আসা চলত নদীপথে। খুলনা থেকে ঝালকাঠি, বরিশাল হয়ে স্টিমার ভিড়ত সদরঘাটে। প্রমত্তা নদীর বড় বড় ঢেউ আর বিচিত্র ধরনের মানুষের সঙ্গে মাখামাখি করে সেই সব যাত্রার স্মৃতি ভোলা যাবে না কখনো। ভরা নদীতে স্টিমার পানি কেটে চলছে। পানির ওপর রোদ পড়ে চিকচিক করে উঠছে ঢেউ। স্টিমারে খুলনা থেকে ঢাকা পৌঁছাতে তখন একদিন একরাত সময় লাগত।

সম্ভবত ’৬১ সালের দিকে আমি রাজশাহীতে আসি। এখানে আসার পর পদ্মা নদী কাছ থেকে দেখলাম। তবে পদ্মার সঙ্গে আমার কখনো তেমন ঘনিষ্ঠতা হয়নি। পদ্মার পাড় ধরে বন্ধুবান্ধবসহ হাঁটা, বাদাম খাওয়া-ওই পর্যন্তই। আসলে নির্জনে উপভোগ করার মতো বাস্তবতা পদ্মায় আমি সেভাবে পাইনি। মনে আছে পদ্মার পড়ে ঘোরাঘুরি শেষে ঠাকুরের দোকানের সন্দেশ খেতাম আমরা। সে কী অপূর্ব স্বাদ! আবার এমন হয়েছে যে সারা রাত প্রাণের বন্ধু আবু হেনা মোস্তফা কামালের সঙ্গে গল্পগুজব শেষে এক্কেবারে সকালে পদ্মাস্নান সেরে ফিরেছি। সে সময় এমনই বাতিক ছিল আমাদের। এসবই ’৬০ সালের ঘটনা। আমি তখন সবে সিটি কলেজে ঢুকেছি। নিয়মিত আড্ডা-আনন্দে পার হয়ে যাচেছ দিনগুলো। এর মধ্যে নদী, নদীর ভয়ংকর সুন্দর রূপকে আবার নতুন করে চিনলাম দণি বাংলার বলেশ্বর নদের মুখোমুখি হয়ে।

’৬৩ সালে সেবার বরিশালের ওই অঞ্চলে প্রচণ্ড ঝড় হলো। আমরা ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেলাম দুর্গত অঞ্চলে। চকচকে কালো বড় বড় ঢেউ ভেঙে বলেশ্বর নদের ওপর গিয়ে যাচ্ছি। এই নদটি খুবই প্রশস্ত, রাইন্দা, মোরেলগঞ্জ, তাফালবাড়ি, বগি হয়ে একেবারে সমুদ্রে মিশেছে। ছোট্ট একটি ডিঙিনৌকায় পানি চিরে চিরে চলেছি। মনে হয় কলার খোসার মতো ভেসে চলেছি। এক সময় পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যস্থল বগিতে। চারদিকে তাকিয়ে দেখি, কী বিষ্ময়! যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। লম্বা একটা তালগাছের মাথায় আটকে আছে নৌকা ঝড় তাকে উড়িয়ে নিয়েছে নিশ্চয়। কিন্তু ঝড়ের বীভৎসতার মধ্যেও বলেশ্বরের কালো স্রোত আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আর এই নদীপথে চলতে ফিরতে গিয়েই সুন্দরবনকে আরও নিবিড়ভাবে জেনেছিলাম আমি। ওই যে তাফালবাড়ি ও বগি, এরপর সমুদ্রের যেখানে শুরু-এসবের মধ্যেই রয়েছে সুন্দরবনের শাল-গজারি ও গোলপাতা। মূলত ত্রাণ সাহায্যের জন্য বলেশ্বর হয়ে সেই প্রত্যন্ত দুর্গত গ্রাম বগিতে যাওয়ার ফলেই আমি পেয়ে যাই ‘মা-মেয়ের সংসার’ গল্পের পটভূমি। যেন বা নদী এখানে অনেক বেশি আদিম। তাই নদীর গল্প বলতে গেলে স্মৃতি ফুঁড়ে বলেশ্বরের উথাল-পাথাল স্রোত আজও জেগে ওঠে।

যে নদীকে নিজের বলে দাবি করা যায়, এ রকম কোনো নদীর সঙ্গে হয়তো আমার পরিচয় ছিল না। তবে দিনে দিনে বিভিন্ন নদীর সঙ্গে নানা রকম চেনা-জানার কারণে এখন নদী আমার অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে গেছে। শুকনো রাঢ়ের প্রান্তর যেভাবে আমার অস্তিমজ্জায় মিলেমিশে আছে, একইভাবে এ দেশের অসংখ্য নদীর স্রোতও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।








নদীর কান্না আমরা শুনতে পাই না

আপাত গুরুত্বহীন একটি সংবাদ শিরোনাম ‘আবার নদী দখল, বালুর ব্যবসা’। সচিত্র এ প্রতিবেদনে জানা গেছে, ‘কাঁচপুর সেতু এলাকায় শীতল্যা নদী দখল ও ভরাট করে তৈরি ১০ একর জায়গায় আবার বালু ও পাথর ব্যবসা শুরু হয়েছে। বছর দেড়েক আগে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপ জায়গাটি উদ্ধার করেছিল।’ সে নদী এখন আবার বেদখল হয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দী। রাজনৈতিক মতা ও বিত্তের প্রভাব এসব দুর্ঘটনার পেছনে কাজ করে।

শুধু শীতল্যা নয়, বুড়িগঙ্গা ও এর শাখানদীসহ বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে দুর্বল স্রোতের নদীগুলো দুর্বৃত্তদের লোভ-লালসার শিকার। ফলে নদীর ছোটখাটো শাখা বা সংলগ্ন খাল-বিল ভরাট হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্রে, এমনকি বহুতল ভবনরূপে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। নদী তো বটেই, রাজধানীর জলাশয় ও হ্রদ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বছর কয়েক আগে গুলশান লেক ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ নিয়ে জমজমাট বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমস্যার সুরাহা হয়নি। গুলশান হ্রদের একাংশ তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। এ ধরনের অনাচার অব্যাহত ধারায় চলছে। বলা যায়, প্রতিকারহীন অপরাধ।

বিভিন্ন সময় কাগজে এ-জাতীয় খবর পড়তে পড়তে মনে এল একটি গানের পঙক্তি, ‘নদী আপন বেগে পাগলপারা‘। একসময় পাগলপারা নদীর স্বচ্ছন্দ স্রোত ছিল নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রাণ। একদা উচ্চারিত, ‘সবুজ সুফলা শস্যশ্যামলা বাংলাদেশ’ কথাগুলো এখন কিছুটা হলেও উপহাসের মতো শেনাবে। অথচ আজ থেকে ৬-৭০ বছর আগে বড় বড় নদীগুলোয় চরের উপস্থিতি সত্তে¡ও জলস্রোত ছিল যথেষ্ট সচল। দূরন্ত পদ্মা, গভীর স্রোতে মেঘনা-যমুনা তখনো স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত।

মনে পড়ে, ছোটবেলায় মেঘনার ধসনামা পাড়ে দাঁড়ালে ওপারটা আবছা নীলাভ দিগন্তরেখার মত দেখা যেত। বোঝা যেত না ওপারের অস্তিত্ব। ছোট নদী হলেও খরস্রোতা যমুমতী ছিল অকর্ষণীয়। পাড়ভাঙা ধলেশ্বরীই বা কম কিসে? বাঁকফেরা শীর্ণ নাগর নদেও বৈশাখী গ্রীষ্মে ‘হাঁটুজল থেকেছে’। এখন তার বুকে বৈশাখে ফুটিফাটা হেঁটে পার হওয়া যায়। যেমন- কুষ্টিয়া গড়াই নদী। আর চরে চরে দুস্থ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার স্রোত।

শুধু বাণিজ্যিবন্দর নয় নদীর পরিবহন দতা ও নাব্যতা একদিক থেকে দেশের অর্থনীতিকে সাহায্য করেছে। জমিদারি চালে ধীরেসুস্থে চলা মহাজনি নৌকা, দ্রুতবেগে চলা জেলে ডিঙি এবং ছোট বড় স্টিমার ও লঞ্চ নিয়ে নদীর বা জলস্রোত আগেকার গর্বিত চেহারা অনেকটাই নেই। অনেক নদীতীরে জেলেপাড়ার মানুষগুলো আর্থিক কষ্টের দরুন জীবিকা বদল করেছে। অর্থাৎ অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু পিতা-পিতামহদের জীবিকা ছেড়ে সবাই খুব যে ভালো আছে, তা নয়।

ভাটির নদী অনেক সময়ই উজান অত্যাচারের শিকার। সেসবের সমাধান সহজ নয়। প্রাকৃতিক পরিবর্তনের চাপ সাধারণত নদীর নিজস্ব নিয়মে সুসহ হয়ে থাকে। কিন্তু মানুষের স্বার্থপ্রসূত অত্যাচার এমনই যে, তা নদীর অস্তিত্বে আঘাত করে, বিশেষ করে ছোট ও দুর্বল নদীর েেত্র। বেশ কিছুকাল থেকে নদী ও পরিবেশের ওপর মানুষের তৈরি উপদ্রুব জলস্রোতের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। যেমন, পাড়াঘেঁষে নদী দখল, নদী ভরাট, জলস্রোত বয়ে আনা খাল আর বিল ভরাট’।

এতসবই জলদস্যু, ভূমিদস্যুদের স্বার্থপর কারসাজি, তাই দেশের খাল-বিল নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা গ্রাম-নগরের নানান জায়গায়। বাদ ছিল না রাজধানী ঢাকাও। ঢাকার বদ্ধজল টেনে নদীতে নিয়ে যেত যে ধোলাই খাল, এক সামরিক রাষ্ট্রপতির তুঘলকি নির্দেশে সে খাল কংক্রিট চাপা পড়ে শেষ হয়ে গেছে। বিশাল চলনবিল এখন আর জলাধার নয়। অথচ স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে সচল নদী ও খাল-বিলের উপস্থিতি জরুরি। আমাদের সামাজিক প্রবণতা বুঝি নিজ পরিবেশদূষণ, পরিবেশের বিনাশ, সুস্থকে অসুস্থ, দুস্থকে অধিকতর দুস্থ করে তোলা।

ঢাকার বুড়িগঙ্গার ওপর চাপ সম্ভবত সবচেয়ে বেশি এবং তা রাজধানী শহরের সংলগ্ন বলে। এখানে জমির বিনিময়মূল্য সর্বোচ্চ। একবার বুড়িগঙ্গায় ভেসে দেখে আসুন, এপাশ থেকে ওপাশ। দেখবেন কত টং, কত মাচা, কত টিনের চালা, আরও কত কী। দুর্বৃত্তদের থাবায় নদী ক্রমশ শীর্ণ হতে চলেছে। কানে শোনা যাবে, জলস্রোতের চাপাকান্না। এ কান্না অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে।

কিছুদিন আগে বুড়িগঙ্গায় অবৈধ দখল ও স্থাপনা থেকে বুড়িগঙ্গাকে মুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছিল বেশ জোরেশোরে, মূলত সরকারি সদিচ্ছায়। কিন্তু তা পুরোপুরি সফল হয়নি, অনেকটা ওই কাঁচপুরে শীতল্যার মতোই। এ েেত্র সংবাদপত্র ও পরিবেশ রা আন্দোলন তাদের পরো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। যাতে কাজটা কর্তৃপরে জন্য সহজ হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের আশা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে দেখিনি।

কারণ সমাজের মতাবান শ্রেণীর সঙ্গে দ্ব›েদ্ব অনেক সময় রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক শক্তি এটে উঠতে পারে না, সদিচ্ছা তখন পিছু হটে। তাই আমার বিশ্বাস, সমাজের পরিবর্তন এবং তাতে সুস্থ মূল্যবোধের বিকাশ সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু সে কাজ সহজ নয় এবং তা সময়সাপে। সে েেত্র রাজনৈতিক নেতাদের সুবুদ্ধি ও সমাজের সচেতন অংশের সমর্থন ও সহায়তা জলাবদ্ধতার কারণ দূর করার সফল সূচনা ঘটাতে পারে।

ঢাকার প্রবীন বাসিন্দাদের মনে থাকার কথা, একসময় এই ঢাকা শহরে ধুলাই খালই নয়, কথিত নতুন ঢাকায় পুকুরের কথা, প্রতিটি পাড়ায় দু-তিনটি করে পুকুর, যেগুলো বাড়তি পানি ধরে রাখতে সাহায্য করত, সেসব এখন উদাও। এর দায় অবশ্য কোনো সরকারের নয়, ব্যক্তিমালিকদের; তাদের প্রয়োজনের টানে হারিয়ে গেছে সেসব জলাশয়। পরবর্তী সময় ঢাকা নগর প্লাবিত হওয়া, ভেসে যাওয়ার ঘটনা এবং নগরবাসীর দুর্ভোগ আমাদের মনে থাকার কথা। স্বীকার করতে হয়, ঢাকার চারদিকে বেড়িবাঁধ দেওয়া না হলে ঢাকার অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত। তখন হয়তো সচেতন নগরবাসী বুঝতে পারতেন, নদীর নাব্যতা, তার জলটানার মতা এবং খাল-বিল ও জলাধারগুলোর গুরুত্ব কতটা। তার কিছুটা বুঝে নেওয়া এখনকার পরিস্থিতিতেও সম্ভব।

আজকে যে ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে, যখন-তখন বর্ষায় শহরতলি ডুবে যাচ্ছে, ময়লার পচা গন্ধে এবং দূষিত পানির কারণে জীবনযাত্রা যে অসহনীয় হয়ে উঠছে, এর সচিত্র প্রতিবেদন মাঝেমধ্যে আমরা সংবাদপত্রে দেখতে পাই। দেখে উদ্বিগ্ন হই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপে তাতে টনক নড়ে না। আমরা জানি, এর বাস্তব সমাধান মোটেই সহজ নয়। দীর্ঘ সময়ের অবহেলা ও অনাচার এ দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু তাই বলে হাল ছেড়েদিলে চলবে না। পরিবেশগত স্বাস্থ্যরা ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তির কাজ যেখান থেকেই হোক শুরু করতে হবে। নগরের পুকুর ভরাট বন্ধ করার চেষ্টা শুরু করতে তো কোনো বাধা নেই; অসুবিধাজনক হলেও অসম্ভব নয়, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বাড়ানো এবং জলস্রোতের স্বচ্ছন্দ গতি অুণœ রাখার কাজ হাতে নেওয়া। গ্রামের ভরাট খালগুলো সংস্কার করে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত পানি ধারণের জলাধারগুলোকে স্বাভাবিক করা এবং নতুন করে তেমন জলাধার তৈরির কাজ হাতে নেওয়া।

কিন্তু সচচেয়ে বড় দরকার নদীর ওপর অত্যাচার বন্ধ করা এবং অবৈধ দখলদারি ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা। এ কাজটাতে সদিচ্ছা এবং দৃঢ় ও নিরপে মানসিকতার প্রয়োজন। দিন কয়েক আগের একটি সংবাদ প্রতিবেদন পড়ে কিছুটা হলেও স্বস্তির আভাস মিলেছে। খবরে প্রকাশ, ‘সংসদে পরিবেশ সংরণ (সংশোধনী) বিল অনুমোদন এবং সেই সুত্রে জলাধার ভরাট নিষিদ্ধ’ করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা সুখবর, তবে তা কতটা কার্যকর করা যাবে, সেটাই বড় কথা।

কারণ আমাদের আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর তা বাস্তবায়নে অনেক ফারাক। আইন হলেই যদি সমস্যার সমাধান হতো, তাহলে গ্রামাঞ্চলে তথা মফস্বলে (মফস্বল কথাটাতে কারও কারও আপত্তি, চিঠিতে তা প্রকাশ পেয়েছিল) ফতোয়াবাজি বন্ধ হয়ে যেতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পরিপ্রেেিত। কিন্তু তা হয়নি এবং নির্বাহী তথা প্রশাসনিক কর্তৃপ এ বিষয়ে কোনো প্রকার সদিচ্ছা দেখায়নি। তাই এখনো ফতোয়াবাজি, দোররা এবং একতরফাভাবে নারীর ওপর অন্যায় ও অনধিকারমূলক প্রাম্য শাস্তির খবর আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পাই।

ওই প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, ওই আইনে জলাধার সংরণ অর্থাৎ জলাধার ভরাট নিষিদ্ধ করা ছাড়াও পরিবেশ রার জন্য পাহাড় কাটার ওপরও বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। এ বিষয়ওটা গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি, পাহাড় কাটার ধুম, সমাজবিরোধীদের অন্যায় লোভ-লালসার প্রকাশ এবং পাহাড় ও টিলা কাটার কারণে ধস, দুর্ঘটনা ও মুত্যুর খবর। ঢালের অসহায় বাসিন্দাদের প্রতিবাদ কোনো কাজে আসেনি। তাই আমরা আশা করব, এ আইন দ্রুত কাজে লাগানো হবে।

আর এ উপলে আমরা বলব বুড়িগঙ্গাসহ শীতল্যা এবং অন্যান্য নদীর ওপর দখলদারি ও অবৈধ স্থাপনা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রধানমন্ত্রী এই কয়দিন হলো বাংলাদেশের পে ‘এমডিজি’ পুরস্কার নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরেছেন। নদীর অপমৃত্যু রোধ, নদীর সুস্বাস্থ্য রার জাতীয় পরিসরে একই রকম জরুরি। নদীর অপমৃত্যু জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। ব্যক্তির লোভ ও স্বার্থে নদীর এ বলিদান কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শুধু সমাজমনস্ক ব্যক্তিই নন, গোটা জাতিকে এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত।

সবশেষে তাই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, বুড়িগঙ্গা-শীতল্যাসহ সব নদীর বুকের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নদীকে তার অধিকার ফিরিয়ে নেওয়ার ল্েয যাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা জানি, এর আগেকার শাসনামলে এক প্রতিমন্ত্রীর বুড়িগঙ্গার এক শীর্ণ শাখা দখলে নেওয়ার দুর্বুদ্ধির কথা, যে ঘটনার বিরুদ্ধে সংবাদপত্রসহ সর্বত্র প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সুস্থ মানবিক হস্তেেপ ওই দুর্দান্ত মতাবান ব্যক্তিটির লালসা ঠেকানো সম্ভব হয়। তাই ঘটনা ও জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক স্বার্থ রার বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী যেন জরুরিভিত্তিতে উল্লিখিত বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেন। আমরা অপোয় আছি, নদীর কান্না বন্ধ করার উদ্যোগের পরিণাম দেখার জন্য।




অববাহিকাভিত্তিক নদী ব্যবস্থা জরুরি
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৫০টির বেশি নদী ভারত হয়ে এদেশে এসেছে। বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে সারা বছর বিপুল পরিমাণ জলরাশি প্রবাহিত হয়। নদীর পানির প্রবাহের সঙ্গে পলির পরিমাণের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকে। নদী ব্যবস্থপানার েেত্র এই সামঞ্জস্যটির কথা মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনার কথা ভাবতে গেলে নদীর পানি ব্যবস্থাপনা এবং নদী ব্যবস্থাপনা দুটোকে একসঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে। বিষয়টি আরও জটিল হয়, নদীগুলোর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সব নদ-নদীর মাধ্যমে যে পরিমাণ প্রবাহিত হয়, তা মোট প্রবাহের প্রায় ৯২ শতাংশ। কাজেই বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনায় আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন। অধুনা অববাহিকাভিত্তিক পরিকল্পনার কথা জোরের সঙ্গে বলা হচ্ছে। পাহাড়-পর্বতের ভেতর থেকে উৎপত্তি হওয়া নদীটির সাগরে মিশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটি অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার অধীনে আনার কথা বলা হচ্ছে। অববাহিকা ব্যবস্থপনার ওপর নির্ভর করবে নদীর মাধ্যমে পলি প্রবাহের পরিমাণ। একই সঙ্গে অববাহিকা তিগ্রস্ত হলে শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যেতে পারে। বাংলাদেশ যেহেতু নদীগুলোর ভাটিতে অবস্থিত এবং মূল প্রবাহ আসে ওপর থেকে, সেহেতু অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

ভারত থেকে বাংলাদেশের প্রবেশ করা নদীগুলোতে বর্ষাকালে প্রচুর পানি থাকে, আর শীতকালে বলা যেতে পারে প্রায় শুকিয়ে যায়। অর্থাৎ একসময় পানির আধিক্য অন্য সময় স্বল্পতা। সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনতে পারলে এই প্রবাহের মধ্যে কিছুটা সামঞ্জস্য আনা সম্ভব। এটি অর্জন করতে গেলে, প্রথমেই প্রয়োজন হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নদী ব্যবস্থাপনায় যে দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে তা বদলানো। ছোট্ট এই লেখাটিতে এ বিষয়টিই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।

কয়েকটি বিষয়ে আমি আমার আলোচনা কেন্দ্রীভূত রাখতে চাই। আলোচনায় থাকবে সুরমা-কুশিয়ারা-বরাক নদী প্রসঙ্গ। এছাড়াও থাকবে তিস্তার ব্যবস্থাপনা এবং গঙ্গার েেত্র ১৯৯৬ সালে চুক্তি থাকার পর আর কী করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা। কিছু কথা বলতে চাইব, সীমান্ত এলাকার নদী ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ নদী ভাঙনরোধ ও নাব্যতা বজায় রাখার জন্য ড্রেজিংয়ের বিষয়ে।

প্রথমেই ধরা যাক, গঙ্গার বিষয়টি ১৯৭৭ সালের চুক্তি, ১৯৯২ এবং ১৯৯৪-এর স্বারিত দুটি পৃথক সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে স্বারিত হলো একটি ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি। আইনের মাপকাঠিতে ১৯৭৭, ১৯৮২, ১৯৮৪ এবং ১৯৮৬-এর চুক্তিগুলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বলেই এগুলোকে যথাক্রমে চুক্তি, সমঝোতা স্মারক (দুটি) এবং ট্রিটি বলছি। ১৯৯৬-এর চুক্তির তিনটি অংশ যথা- পানিবন্টন, পানি প্রবৃদ্ধির প্রস্তাব আনা এবং অন্যান্য নদীর পানি ব্যবস্থাপনা এই চুক্তিতে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত যে পরিমাণ পানি আসে সেটাকেই ভাগ করা হয়েছে। অর্থাৎ উজানে ব্যবহারের পর, যতটুকু তলানি থাকে সেটাই ভাগ করা হয়েছে। অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার কথা ভাবা হয়নি। অবশ্য শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করতে গেলে অববাহিকাভিত্তিক চিন্তাভাবনার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়নি। একই সঙ্গে এসব চুক্তিতে ধরে নেওয়া হয়েছে পানি ব্যবস্থাপনা করতে হবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে সময়ের জন্য। অর্থাৎ বছরের প্রথম পাঁচ মাস পেরিয়ে পরবর্তী সাত মাস প্রবাহের ব্যাপারে কোনো কিছু ভাবা হয়নি। এই চিন্তাভাবনারই প্রভাব পড়েছে তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদ-নদীর েেত্রও। বিস্তার েেত্র আমরা পানি বন্টনের কথা বলছি, ব্যবস্থাপনার কথা নয়। অবশ্যই শুকনো মৌসুমে পানিবন্টন একটি বিষয় হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন হচেছ, শুকনো মৌসম কোনটি? কোথাকার পানি বন্টন হবে? কীভাবে হবে? কোন ভিত্তিতে হবে? গঙ্গা চুক্তির ধারা ধরে আমরা কি জানুয়ারি থেকে শুকনো মৌসুম হিসাব করব? উত্তর হলো, এটা করা হলে মারাত্মক ভুল হবে। তিস্তার পানি বন্টন করতে হবে। সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে তিস্তা অববাহিকায় পানির চাহিদা সচচেয়ে বের্শি। সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে তিস্তার প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে দুই দেশের চাহিদা মেটাতে খুব একটা ঘাটতি থাকার কথা নয়। কিন্তু অক্টোবর মাসে আমন ধানের জন্য সেচ দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি এবং কিছুটা ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর ফেব্র“য়ারি, মার্চ, এপ্রিল মাসে বোরো চাষের জন্য দুই দেশের চাহিদার তুলনায় স্বাভাবিক প্রবাহ অত্যন্ত অপ্রতুল। যে জন্য অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার অধীনে বর্ষাকালের কিছুটা পানি ধরে রাখা যায় কি না, তা ভাবতে হবে। আর পানি বন
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×