একটা নিরীহ নবীন শুদ্ধ টানে যখন জেগে উঠতাম, তখন দেখতাম আমার সকাল বিকালের হামাগুড়ি, ভোরের আলমিরায় রাতের ঘুম। সুন্দরীকে অভিনয় করে যখন বলতাম তুমি হবে গাং আর আমি হব তরী…………! এটা শুনে সুন্দরী তার মুখ যেভাবে ঘুরিয়ে নিত, সেটা দেখে আর সাহস হত না তাকে খুলে বলি একই জ্বলে ভেসে যাওয়ার গোপন ইচ্ছের কথা। তারপর যখন তার পুতুল শরীরের উতলা ঢেউ আমার চোখ কাঁপিয়ে দিত, তখন বুঝতাম আমি তো পুরাই শেষ, পিছনে এক পা ফেললেই অতল সাগরে ডুবে মরব।
সুন্দরীর একটা নাম ছিল। সেটা এই গল্পে উল্লেখ করছি না। ইচ্ছে করেই নামটা উহ্য রাখলাম। তার একান্ত কিছু জমানো মৌনতা ছিল। তার সেই মৌনতার গল্প শুনবো বলে মাঝেমাঝে পাগলপারা হয়ে তার কাছে ছুটে যেতাম। ভুলে যেতাম শরীরে যে ঘুণপোকারা শতশত বাসা বেঁধেছে। ভুলে যেতাম মেরুদণ্ড সোজা করে আকাশ দেখার অপারগতার ইতিহাস! মনে হত সুন্দরীর কাছে ছুটে যাওয়া আর তার জমানো মৌনতার গল্প শুনার চেষ্টা’ই হল জীবন, সেটাই আসল বেঁচে থাকা। আর বাদবাকি সব প্লাস্টিক জীবন অথবা জীবিত থাকার অভিনয় করা!
এক সন্ধ্যায় সুন্দরীর খাস কামরায় আমার ডাক পড়লো। আমি কামরায় ঢুকার সাথেসাথে কোন রকম ভুমিকা ছাড়াই সে তার মৌনতার গল্প বলা শুরু করে। গল্প শেষে যখন আমি নীরব হয়ে তাকিয়েছিলাম হাওয়ার দিকে, হাওয়ায় তখন আগুন উড়ছিল। সে আগুনের নিচে দাঁড়িয়ে সুন্দরী আমার নীরবতার গলা টিপে ধরে বলতে শুরু করল আমি মূমর্ষ। কাছে এসে যতটা পারা যায় আমাকে জীবিত করে তোলও। আমার কাঙ্গালিনী সকাল-দুপুর-রাত জোঁকের মত করে আঁকড়ে ধরে বসে থাকো। প্লিজ!প্লিজ!
তারপর সেই সন্ধ্যায় হাওয়ার আগুনের ধাওয়ায় আমি পুড়ে গিয়েছিলাম, সাথে সুন্দরীও!
এক সময় আমার সেই পুড়ে যাওয়ার ক্ষত শুকিয়ে গেল। আমি সেই সন্ধ্যার উম্মদনা ভুলে গেলাম। কিন্তু সুন্দরী সেই ক্ষত নিয়ে বাঁচতে চাইলে সমাজ তাকে সত্যি সত্যি সত্যি পুড়িয়ে মারল! সাথে পুড়ে গেল সুন্দরীর ভিতরে বেড়ে উঠা মাংপিন্ড। নিজেকে সৎ এবং পুরুষ প্রমাণ করতে গিয়ে আমিও সেদিন সে সমাজের একজন প্রতিনিধি ছিলাম। দিন শেষে সবার কাছে আজ আমি একজন সৎ-পুরুষ হয়ে বেঁচে আছি! আর সমাজ আমাকে সৎ পুরুষ বানিয়ে সুন্দরী'কে সবার আড়ালে পাঠিয়ে দিয়েছে!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৫৯