somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেখা হবে বন্ধু , কারনে আর অকারনে . . .

১৯ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ঐ শালা কিতারে বইসা আছস ক্যান ? ?" চিত্‍কার করে বললো হাসান ।



"উফ্ হাসাইন্না আস্তে বলতে পারিস না ?" রেগেমেগে বললাম ।



"না । তোর মতো গাধারে আস্তে কইলে শুনতে পাবি না । বয়রা কোনানকার ।" হাসতে হাসতে বলল হাসান ।



"হ্যা হ্যা । আমি যদি গাধা হই তাইলে শালা তাইলে তুইও গাধা । গাধার সাথে গাধাই বন্ধুত্ব পাতায় ।" মুচকি হেসে বললাম ।



হাসান অট্টোহাসি হাসলো । ছেলেটা অদ্ভুত । সবসময় এতো প্রানবন্ত থাকে কিভাবে ? বেশি হাসলে হাসানের চোখের কোণে পানি চিকচিক করে । আজকেও ব্যাতিক্রম হলো না ।



"হইছে । আর হাসিস না । নাকে মুখে উঠবে ।" মুচকি হেসে বললাম ।



অবশেষে হাসি থামলো হাসানের ।

চোখ মুছলো সে শার্টের ডান হাতা দিয়ে ।



তারপর আমাকে বলল "চল্ যাই । আজকে স্পেশাল একটা কাজ আছে ।"



"কি কাজ ?" অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম ।



"আজকে নিশাতের সাথে ডেটিং এ যাবো । আজকে স্পেশাল , কেননা আজকে আমি বাসায় ওর ব্যাপারে জানিয়েছি । কেল্লা ফতে দোস্ত । বাসার সবাই রাজি । এমনকি তার বাসার সবাইও রাজি ।

শুধু লাস্ট সেমিস্টারটা যাইতে দে । বিয়া কইরা ফালামু ।" বলল হাসান ।



হাসানের কথা বলার ভঙ্গিমাটা এতোটাই হাস্যকর ছিলো যে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খেলাম আমি । বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ।



"না রে দোস্ত । তোদের ইস্পেশাল ডেটিং এ গিয়ে কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হইতে চাই না । তাছাড়া একটু পর খেলতে হবে । না হয় ম্যাচ ফি টা মাইর যাবে ।"



হাসান আমাকে অনেক টানাটানি করলো । বেচারা রোগা পাতলা শরীর নিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যার্থ প্রচেষ্টা করলো কতক্ষন । তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে হাটতে লাগলো ।





(২)



ঈদের ছুটিঁ বাড়ি যাব । বাসের টিকেট এখন সোনার হরিণ । বহু কষ্ট করেও একটা টিকেট পেলাম না ।



মেজাজ খারাপ করে মেসে ফিরে এলাম । গত ৪ দিন ধরে বিছানাটা ঝাট দেইনি । চাদরে এক হাটু বালু । ধপ্ করে খাটের উপর বসাতেই বালুর ঝড় উঠলো । কাশঁতে লাগলাম ।



কাশিঁ শেষ হতেই দেখি চোখের সামনে একটা টিকেট । এবং টিকেটটা ধরে আছেন মহান ব্যাক্তি হাসান । মিটিমিটি হাসছে সে ।



"নে ধর্ বেকুব । কি দরকার ছিলো এতো যুদ্ধ করে লাইনে দাড়ানোর ? আমারে কইলেই তো হইতো !" বলল হাসান ।



সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালাম হাসানের দিকে । তার মতো কিপটা আমার জন্য টিকেট কিনে আনছে ! টিকেট টা উল্টে পাল্টে দেখলাম । না , ঠিকই আছে ।



অবাক হয়ে টিকেটটার দিকে তাকিয়ে আছি । হটাত্‍ একটা মিষ্টি মেয়ের কন্ঠ বলে উঠলো "হ্যাপি বার্থডে টু ইউ আহনাফ ভাই ।"



চরম বিস্ময় নিয়ে দেখলাম নিশাত হাতে একটা কেক নিয়ে হাসানের সাথে দাড়িয়ে আছে ।

হটাত্‍ মনে পড়লো আজ আমার জন্মদিন । কখনো কেউ আমাকে এভাবে উইশ করেনি । দরিদ্র পরিবারে জন্ম । তাই জন্মদিন নামক বিলাশিতা অধরাই রয়ে যায় ।



চোখে পানি এসে গেলো । টপ টপ করে পানি পরতে লাগলো আমার চোখ দিয়ে । হাসান এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল "ধূর ব্যাটা । বাচ্চাদের মতো কাদিঁস ক্যান ? ? চুপ থাক । নিশাত কি মনে করবে ?"



চোখ মুছলাম । ঐ দিন চরম মজা করলাম । নিশাত মেয়েটাকে এর আগে কখনো দেখিনি । আজ দেখে বুঝলাম আল্লাহতালা তাকে হাসানের জন্যই বানিয়ে পাঠিয়েছেন ।



বিকালে সায়দাবাদ বাস স্টেশনে গেলাম আমি আর হাসান । বাস ছেড়ে দিচ্ছে । দৌড় দিলাম বাস ধরার জন্য । কোন মতে বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে রইলাম । হাসানকে উদ্দেশ্য করে বললাম "আসি দোস্ত ।"



হাসান সহাস্য চিত্‍কার করে বলল "দেখা হবে বন্ধু কারনে আর অকারনে ।"





(৩)





ডাক্তার আর নার্স গটগট করে হেটে যাচ্ছে আমার পাশ দিয়ে । আশেপাশে ডেটল এর কড়া গন্ধ ।



আমি ২১৯ নাম্বার রুমটা খুজঁছি উদ্ভ্রান্তের মতো । করিডোরের শেষ প্রান্তে একটা দরজার উপর নম্বরটা দেখতে পেলাম ।



দৌড় দিলাম সেখানে । ঈদের ৫ম দিন আজ । বাড়ি থেকে পাগলের মতো ছুটে এসেছি । হাসান নাকি অসুস্থ । এ কথা শোনার পর আর একমূর্হূত দেড়ি করি নি ।



দরজাটার কাছাকাছি পৌছানোর আগেই দরজাটা ঠেলে একজন ডাক্তার বেড়িয়ে এলো ।



ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলাম হাসানের অবস্থা ।

ডাক্তার আমার পরিচয় জানতে চাইলেন । আমি বললাম যে আমি হাসানের বন্ধু ।



ডাক্তার আমাকে তার চেম্বারে নিয়ে গেলেন । তারপর একটা একটা এক্সরে রিপোর্ট পরিক্ষা করতে লাগলেন ।



আমি অস্থির হয়ে জিজ্ঞেসা করলাম "স্যার হাসানের কি হয়েছে ?"



ডাক্তার থমথমে মুখে জবাব দিলেন "দেখো । তোমার বন্ধুর সম্ভবত ব্রেন টিওমার । সিরিয়াস অবস্থা । অপারেশন প্রয়োজন । বলতে কষ্ট হচ্ছে । তবে আমার মনে হয় অনেক দেরি হয়ে গেছে ।"



বলেই তিনি চুপ হয়ে গেলেন । এক নার্স এসে তাকে ডেকে নিয়ে গেল । আমি বজ্রহতের মতো বসে রইলাম । নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না ।



স্বাভাবিক হতে সময় লাগলো । উঠে দাড়িয়ে হাসানের রুমে গেলাম । গিয়ে দেখি নিশাত আর হাসানের মা বসে আছে । হাসান আধশোয়া ।



আমাকে দেখে হাসান আন্টিকে আর নিশাতকে ইশারা করলো । তারা উঠে দাড়ালো । তারপর আস্তে আস্তে রুম থেকে চলে গেলো ।



হাসান আমার দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি হাসলো । এই তিন চারদিনে হাসানের মুখটা অসম্ভব ফ্যাকাশে হয়ে গেছে । চোখ গুলো কোটরে ঢুকে গেছে ।



হাসানের কাছে গিয়ে বসলাম ।



হাসান আমাকে স্বাভাবিক প্রশ্ন করতে লাগলো । আমিও যথাসম্ভব স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে লাগলাম ।



হটাত্‍ হাসান আমার হাত ধরে করুন কন্ঠে বলল "দোস্ত । ডাক্তার কি বলছে ? আমি আর কয় দিন বাচবো ?"



আমি একটা ধাক্কা খেলাম । প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার । তবুও জবাব দিলাম "কি বলতেছিস ছাগল । তোর কিছুই হয় নাই । এই তো দু একদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবি ।"



হাসান মলিন মুখে হাসলো । বলল "জানিস দোস্ত আমার না ভিষন বাচতেঁ ইচ্ছা করে । মা-বাবা , নিশাত আর তোর জন্য ।"



কেউ যেনো একটা ধারালো ছুড়িঁ খচ্ করে বিধিয়ে দিলো আমার বুকের বাম পাশে । ভিষন কষ্ট হচ্ছে আমার । ধরা গলায় বললাম "বোকা ছেলে , তোর কিছু হবে না ।"



দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো হাসানের আত্মীয়স্বজন । আমি উঠে দাড়ালাম । উদ্ভ্রান্তের মতো হাটতে লাগলাম । হাসপাতালে থাকতে আর ভাল লাগছে না । বেড়িয়ে যাওয়ার আগে শুনলাম , ডাক্তার নিচু গলায় বলছে , হাসানের অপারেশনটা আজকে রাতেই হবে ।





(৪)





হাসানের লাসটা কবরে নামিয়ে মাত্রই কবর দেওয়া হয়েছে । আমি বসে আছি কবরের পাশে ।



আশে পাশে আর কেউ নেই ।



হাসানের প্রানবন্ত মুখটা বার বার

চোখের সামনে ফুটে উঠছে । ভিষন কষ্ট হচ্ছে আমার ।



মনে হচ্ছে কেউ চোঁখা কিছু

দিয়ে বুকে খোচা মারছে ।



উঠে দাড়ালাম । কবরের

দিকে ফিরে বললাম "আসি দোস্ত ।"



ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি নামলো । আমি ঘুরলাম

। আমার চোখেও বৃষ্টি নেমেছে ।



প্রকৃতি আর আমার হাহাকার আজ এক

হয়ে গেছে ।



আমার মনে হচ্ছে পিছন

থেকে হাসান চিত্কার

করে বলছে "দেখা হবে বন্ধু , কারনে আর

অকারনে" . . .
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×