somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের তুই (To The Child) – দশম পর্ব

১৯ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পয়লা ডিসেম্বর দিনটা আমাদের কাছে বিশেষ কিছু, কারন এই দিন আমি আর তোর মমনি দুজন দুজনের মুখোমুখি বসে প্রথম কথা বলি, যদিও ২৭ নভেম্ভর আমাদের দেখা হয়েছিল, কিন্তু সেদিন আমরা কেউ কোন কথা বলিনি এবং এরপর থেকে মোবাইলেই চলছিল আমাদের যোগাযোগ। হঠাৎ তোর মামনির ইচ্ছা চাপল সে এই দিনটি সেলিব্রেট করবে, বুঝলাম বেতন পাওয়ায় তার পকেট বেশ গরম !!! দুজন মিলে কথা বার্তা ছাড়া প্রথমেই ঢু মারলাম জুতার দোকান বাটায়। তোর মামনি আমাকে দুজোড়া জুতা কিনে দিল, নিজের জন্যেও কিনল। আমি হাসতে হাসতে বললাম প্রথম স্যালারির টাকা দিয়ে তুমি আমাকে জুতা কিনে দিলে !!!

এরপর পরিকল্পনা মত আমরা আড়ং এ গেলাম, তোর জন্য শপিং করা হবে। এই বিষয়ে আমার কোন আইডিয়া না থাকলেও সেখানে গিয়ে পড়ে গেলাম বিপদে। যেটাই দেখি ছোট বাচ্চাদের সেটাই কিনতে ইচ্ছা করে। দেখতে দেখতে তোর জন্য একগাদা কাপড় কিনে ফেলা হল, তখনও আমি দেখে চলেছি দেখে তোর মামনি বলল আর বেশী নেয়া ঠিক হবেনা, কারন বাচ্চারা এক কাপড় বেশী দিন পড়তে পারেনা ।একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখে কি পড়ানো হবে, তোর মামনি দেখি সেসব কাপড় অলরেডী কিনে ফেলেছে । আমার কিনতে খুব ভাল লাগছিল এটা বুঝতে পারছিলাম, হাঁটতে হাঁটতে দেখি বাচ্চাদের হাতে বানানো জুতোর ঝুড়ি। আমার আর তোর মামনির জন্য আজকে জুতা কিনা হয়েছি , সো তুই বা বাদ যাবি কেন। তোর জন্য ও বেশ কয়েকজোড়া কাপড়ের জুতা কিনা হল যার বেশীর ভাগই পছন্দ হওয়ায় কিনা এবং সেটা ছয় মাস বয়স হবার আগে মনে হয়না তুই পড়তে পারবি ।

সেখান থেকে আমরা গেলাম স্পিট ফায়ারে, যেখানে উইকএন্ডে লাইভ মিউজিকের আয়োজন করা হয়। গায়ক সেদিন যে গান গুলো গাইল তার বেশীর ভাগই ছিল পুরোনো দিনের বিখ্যাত গান , আমাদের খুব ই ভাল লাগছিল , আর তোর মামনি জানাল তুই নাকি গানের তালে তালে বেশ ডিগবাজি খাচ্ছিস !!

এদিকে তোর আগমনি সংবাদের শুরু থেকেই তোর দাদীমা তোর জন্য নানা আয়োজন নিয়ে ব্যাস্ত । একের পর এক নকশী কাঁথা তিনি বানিয়ে যাচ্ছেন, কয়েকটা দেখার পর আমি বললাম এইগুলিতে ত টেম্বাকে শোয়ানো যাবেনা, এই জিনিস নস্ট করতেত খুব খারাপ লাগবে। তোর দাদীমার জবাব আমার নাতি ব্যবহার করবে , নস্ট হল না না কি হল তাতে কিছু যায় আসেনা। আমার মামী খালারা, তোর নানী সহ আরো অনেকে , বিশেষ করে যারা এই প্রথম তৃতীয় প্রজন্মের দেখা পেতে যাচ্ছে, তাদেরতো উৎসাহের শেষ নেই, অনেকেই কমপক্ষে একটা হলে কাঁথা বানাচ্ছেন অবসরে, তোর জন্য ।

আল্ট্রাসনোগ্রাম করছিলেন যে ডাক্তার তিনি বললেন এখন আপনাদের বাচ্চার হার্টবিট শুনতে পাবেন । মনিটরে তাকিয়ে আমরা তোকে দেখছি , তোর হাত পা নাড়ছিস , ধুপধুপ করে হার্ট টা অনবরত নড়ে চলেছে, মন্ত্রমুগ্ধের মত আমাদের চোখ কান সবই যেন স্হির হয়ে ছিল কিছুটা সময়। হঠাৎ করে ডাক্তারকে কিছুটা অস্হির মনে হল, তিনি একই জিনিস সম্ভবত বারবার চেক করছিলেন, এরপর জানতে চাইলেন আমরা রুটিন চেক আপের জন্য আবার কখন গাইনী ডাক্তারকে দেখাব। বললাম এই রিপোর্ট নিয়েই তার কাছে যাব। তিনি বললেন আপনারা দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান, এ্যামনিয়োটিক ফ্লুইডটার পরিমান কিছুটা কম মনে হচ্ছে, ওটা মনে হয় কমে যাচ্ছে, যেটা বাচ্চার জন্য মোটেও ভাল কিছু নয় ।

আমরা টেনশনের চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছে গেলাম। অস্হির ভাবে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যেতেই তিনি তোর মামনিকে কমপ্লিট বেড রেস্ট সাজেস্ট করলেন , বাইরে বেড়োনো একদম নিষেধ, সেমিস্টারের ক্লাশ শেষ হয়ে যাওয়ায় তোর মামনির আপাতত ভার্সিটিতে না গেলেও চলবে। ডাক্তারের নির্দেশ মোতাবেক তোর মামনি মোটামোটি বিছানাটাকেই সারাদিনের জন্য আপন করে নিল । তোর ভালর জন্য যে কোন কিছু করার জন্যই সে প্রস্তুত । গর্ভকালীন পূর্ণ সময়টা মাতৃগর্ভে কাটানোটা শিশুর জন্য খুবই জরুরী, শিশুর প্রাথমিক বিকাশের পুরোটা এই মায়ের গর্ভেই হয়ে থাকে, সো তুই যাতে কোন জটিলতার মুখোমুখি না হস তাই এই বাড়তি সতর্কতা ।

আমাদের অবসর কাটে ন্যাশনাল জিওগ্রাফী দেখে সেখানে প্রতিদিন রাত নয়টায় "ইনসাইড দা উম্ব" নামে একটা প্রোগ্রাম দেখায়, যেটার নিয়মিত দর্শক আমরা, মাতৃগর্ভে শিশুর দিনকাল নিয়ে এই আয়োজন। কোন সময় শিশু কি অবস্হায় থাকে তা দেখানো হয় আর আমরা তার সাথে আমাদের তোকে মিলিয়ে নেই, তুই এখন কি অবস্হায় আছিস সেটা ভাবি ।

অবশ্য এই সময়টা তোর মামনির তেমন কোন কস্টের মুখোমুখী হতে হয়নি, তোর আগমনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তোর দাদা- দাদী, ফুফু সবাই তখন ঢাকায় আমাদের সাথে । পরিপূর্ণ একটা পরিবার বলতে যা বোঝায় তখন আমরা তাই । তোর দাদীমা সকালে আমাকে নাস্তা খাইয়ে অফিসের জন্য বিদায় দেন, আমার চাকরি জীবনে এমন চমৎকার সকাল গুলো তোর কারনেই পাওয়া । তোর মামনির দেখাশোনার , কি লাগবে কি খাবে কিভাবে চলবে সবই তখন তোর দাদীমার তত্ত্বাবধানে। সবাই মিলে এক সাথে থাকার এই সময়টা আমাদের বিবাহিত জীবনের সেরা সময় হিসেবে ধরা দিল। বাসায় ফিরে আমি তোর দাদা সহ টিভিতে নিউজ দেখি, নানা বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়, ঐদিকে তোর ফুফু, তোর মামনি আর তোর দাদীমা তাদের মত করে গল্প করে সময় কাটান ।

তোর কাছে এই জন্য আসলেই কৃতজ্ঞতা, প্রায় এক যুগ পরে পুরো পরিবারের সাথে বসবাসের এমন অনুপম সুযোগ করে দেয়ার জন্য । পরমকরুনাময় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এমন সুন্দর সময় আমাদেরকে দান করার জন্য ।

এদিকে তোর মামনি আমাকে বলল তোর জন্য একটা নামতো ঠিক করে রাখা দরকার। আমি বললাম এত তাড়াতাড়ির কি আছে , কয়েকমাস নাম ছাড়া কাটালে এমন কোন ক্ষতি হবেনা । তোর মামনি বলল না এমনটা হবেনা, আমাদের টেম্বা নাম ছাড়া থাকবে এটা কেমন কথা ।

মনের মত একটা নাম কই পাওয়া যায় ? বাজারে অনেক নামের বই পাওয়া যায়, কিন্তু সেখান থেকে নাম খুজে নিতে ইচ্ছা হলনা। আমার এক বন্ধু মনির যে নিজেও বাবা হতে চলেছে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম নাম নিয়ে সে কি চিন্তা ভাবনা করেছে। সে জানাল তার কাছে শতাধিক পৃষ্ঠার নামের কালেকশন আছে কম্পিউটারে সেভ করা। সে সেটা আমাকে দিয়ে দিল ।

অনেকগুলো পৃষ্ঠা দেখে গেলাম কিন্তু কোনটায় পাছন্দ হচ্ছেনা। শেষে গুগলের দ্বারস্হ হলাম। সেখানে মুসলীম বেবী নেম দিয়ে সার্চ দিলাম, প্রথম দিনের ফলাফলে খুশী হতে পারলামনা। এরপর শুধু বেবী নেম দিয়েই সার্চ দিলাম। কয়েকদিনের চেস্টাতে পছন্দসই মাত্র ছয় সাতটা নাম পাওয়া গেল, যার প্রায়ই সবগুলোই তোর মামনি বাতিল করে দিল। এরপর আরেকদিন খুজতে খুজতে একটা নাম পেলাম যেটা বেশ আনকমন কিন্তু এটা শুধু একটা শব্দের । শেষে চিন্তা করলাম এর সাথে আমার ডাক নামটা লাগিয়ে দিলে কিন্তু মোটামুটি একটা ভাল নামই দাঁড়িয়ে যায় । তোর মামনিরও দেখি নামটা বেশ পছন্দ হল । তোকে নিয়ে একটা কাজ মোটামুটি শেষ করার তৃপ্তি পেলাম, যদিও এই নাম আত্মীয় স্বজন সবার কেমন লাগবে কে জানে , নাম রাখা টাখা নিয়ে আবার অনেক সময় নানা মান অভিমানের ঘটনা ঘটে থাকে । যাই হউক এটা আমাদের ঠিক করা নাম, অন্যরা যদি অন্য কোন নামে ডাকতে চায় তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই ।


আমাদের তুই (To The Child) – নবম পর্ব
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×