somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনে পড়ে স্কুলবেলা- ব্লগ টি তাদের জন্য যারা মাঝেমধ্যেই স্কুলবেলার কথা ভেবে তাদের মহামূল্যবান সময়ের অপচয় !!! করেন

১৯ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্টেডিয়ামের বাইরে হাজার হাজার মানুষ । আমিও তাদের মাঝে একজন। হাতে টিকেট নিয়ে লাইনে দাড়িয়ে আছি। সবাই ব্যাস্ত ভেতরে ঢোকার জন্য। খেলা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে । বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল ! পিছন থেকে কে যেন ধাক্কা মারছে বারবার । বিরক্ত হয়ে পিছনে ঘুরলাম । "এতক্ষনে সাধের ঘুম ভাঙল ?" নিজেকে আবিষ্কার করলাম বিছানায় । আর ধাক্কাচ্ছিলেন আমার মা । "তাড়াতাড়ি উঠে খেয়ে-দেয়ে একটু তোর মামার বাসায় যা। "- মা তাড়া দিলেন। বাড়ি থেকে বের হয়ে মনটা খারাপ হয়ে থাকলো 'ম্যাচটা !!!' না দেখতে পারার কষ্টে । রিকশায় যেতে যেতে ভাবছিলাম । হঠাৎ সংবিৎ ফিরে খেয়াল করলাম অনেক স্কুল ছাত্র । স্কুল শেষে বাড়ি ফিরছে। কত আনন্দিত আর হাসিখুশি ওরা।
কিন্তু ওদের দেখে আমি যেন কেমন হয়ে গেলাম মুহূর্তের মধ্যে। এর কারন ওদের সহাস্য মুখ কিংবা আনন্দের উৎসব নয়।
কারন ওদের সবার পরনে সাদা সার্ট আর নীল ফুলপ্যান্ট।কারন আমার বাঁ পাশে সগৌরবে দাড়িয়ে থাকা বিল্ডিঙের গায়ে লেখা ......
খুলনা জিলা স্কুল
স্থাপিতঃ ১৮৮৫
আমাদের স্কুল ।

কালের স্রোত বড়ই নির্মম ।সোনায় মোড়া দিনগুলোকে কত সহজেই ধুলায় ধূসরিত করে দেয়।
সর্বহারার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম স্কুলের দিকে। মনের অজান্তেই একটি হাত উঠে গেল রিকশাওয়ালার কাঁধে থামতে বলার জন্য। স্কুল গেটে যেয়ে নামলাম রিকশা থেকে। মনে হল.... যেন গেইট আমাকে আহ্বান করছে ভেতরে ঢোকার জন্য। ভেতরে ঢুকলাম। প্রথমেই তাকালাম বিশাল মাঠের দিকে।........... সেই মাঠ। চোখ বন্ধ করলাম । একটু আগে দেখা ছেলেদের মত একঝাক হাসিখুশি মুখের ছবি ভেসে উঠলো মনের পর্দায়। কিন্তু কল্পনার মুখগুলো সাদাকালো। অনেক চেষ্টাতেও পারলাম না তাতে রং ঢালতে।
ফুসফুস যেন অনেকদিনের জমিয়ে রাখা বাতাসকে এক দীর্ঘশ্বাসে বের করে দিল। অনেকদিন ধরে শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকা চোখের কোনা সিক্ত হল মনের অজান্তেই। কষ্টের চাপা ব্যাথা শরীরে দিয়ে গেল শিরশিরে অনুভূতি। প্রতিটি ইট, প্রতিটি ধূলিকণায় পর্যন্ত অনুভব করলাম হারিয়ে যাওয়া সুখের স্মৃতি। হাটতে থাকলাম স্মৃতিমাখা পথ দিয়ে। আবারো তাকালাম চারদিকে। ঠিক সেই মুহূর্তে প্রতিটি গাছ, ক্লাসরুম, প্রতিটি স্থান এর শত শত কণ্ঠ যেন বারবার আমাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছিলো। " তুই কি জানিস ,তুই কি হারিয়েছিস ?"
আমি জানতে চাই না । আমি জানাতেও চাই না।
কারন আমি জানি যে, শুধু আমি না, আমার মত আরও অনেকের মনে এ উত্তর জন্ম দেবে আফসোসের ক্যান্সার ; যা থেকে আরোগ্য আমৃত্যু অসম্ভব।
কিন্তু একসময় আমি অধৈর্য হয়ে উঠি। শত জিজ্ঞাসু কণ্ঠকে থামিয়ে দিতে এ হৃদয় চিৎকার করে ওঠে। ' হ্যাঁ, আমি জানি ।'
আমি হারিয়েছি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়কে। হারিয়েছি সবচেয়ে নিষ্পাপ আর নিঃস্বার্থ সময়কে। হারিয়েছি সবচেয়ে নিশ্চিন্ত আর দুরন্ত সময়কে।
হারিয়ে ফেলেছি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়ের পৃষ্ঠাগুলোকে ।
মুখের সাথে সাথে মন ও বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়ে । কিছু শূন্যতা কখনই পূরণ হয় না ।

সেই যে দল বেঁধে স্কুলে যাওয়া। ক্লাসের হাসি ঠাট্টা । পড়া না করায় সবগুলো মিলে স্যারদের কাছে মার খাওয়া । টিফিনের ঘণ্টায় ছুটে যাওয়া স্কুল ক্যান্টিনে । ক্রিকেট আর ফুটবল খেলতে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দলবেঁধে স্কুল পালানো । কি রোদ কি বৃষ্টি , মাঠের ঘাসে খেলার বাহানায় লুটোপুটি আর হট্টগোল ।
আর সেই ভাঙ্গা বাড়ি! যার নাম আমরা দিয়েছিলাম "লর্ডস" । কিংবা গেটের পাশের "পকেট" !! লাল বিল্ডিঙের পিছনের গাছতলা , সেই টাউন মসজিদের আমগাছ ওয়ালা পুকুরপাড় আর মাঠ !
কি করে ভুলে যাবো এসব ?
টেনিস বল, কাগজের দলা অথবা গোল কিছু পেলেই বারান্দার স্বল্পপরিসরে খেলা ফুটবল ।
অনেক শাসনের পর স্যারের করা একটুখানি মজায় ক্লাস শুদ্ধ হেসে ওঠা ।
আর.............শেষ পিরিয়ডে ক্লান্ত শরীর অথচ সতেজ মনে শেষ ঘণ্টার অপেক্ষা ।
ঘণ্টা শেষে বন্ধুরা মিলে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকা আরেকটি নিশ্চিন্ত আর আনন্দময় "কালকের" আশা নিয়ে ।
এতকিছু কি ভোলা যায় ?

ভাবতে ভাবতেই চোখদুটো আবারো ভিজে ওঠে ।

কিছু স্মৃতি মুছে যায় । কিছু স্মৃতি ঘুচে যায় । কিন্তু কিছু স্মৃতি এমন হয় যা হৃদয়ে গেঁথে যায় । রেখে যায় গভীর ক্ষত চিহ্ন ।

বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে অদৃশ্য ক্ষত ঢাকার অভিনয় করি । চোখ মুছে গেইট দিয়ে বের হয়ে রাস্তায় নামি অনেক সাধের স্মৃতি পেছনে ফেলে ।
আজকে অনেক কাজ। কিছুই করা হয়নি ।

একবার খুব ইচ্ছা হল পেছনে তাকিয়ে আরেকবার দেখতে । সাহস হল না ।
মাথা গুঁজে হাটতে সোজা থাকি । গন্তব্য মামাবাড়ি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×