[অবশেষ পোস্টাইতে পারলাম। কিছু সমস্যা হচ্ছিল আগে।]
দুইবন্ধু- রহমান আর চৌধুরী। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে। কম্পিউটার কেনা আর নেট কানেকশন নেয়াও একইদিনে। ফেসবুকেও একইদিনে এক্যাউন্ট খোলে দুইজন।
রহমান সৎ। নিজের লেখা দুই-তিন লাইনের কবিতা স্ট্যাটাস দেয়। মাঝে মাঝে কিছু দার্শনিক বানী দেয়। কেউ ফিরেও পড়ে না। দুইএকজন চক্ষুলজ্জার চক্করে পড়ে লাইক-টাইক দেয়। দিনশেষে দেখা যায় মনের দুঃখে সে নিজেই নিজের স্ট্যাটাসে লাইক দিয়ে বসে আছে। অন্যদিকে চৌধুরী দুইনাম্বারী ব্যবসায় নামে। বিভিন্ন পেইজ থেকে মজার মজার স্ট্যাটাস কপি মারে। মাঝে-সাঝে দুই একটা অ্যাডাল্ট জোকস। কপি-পেস্টের জোরে তার স্ট্যাটাসে পড়া লাইক সে নিজেও গুনে শেষ করতে পারে না।
আস্তে আস্তে দুজনেরই বিয়ে-থা হয়। দুই পরিবারের মাঝে দূরত্ব বাড়তে থাকে। দিনে দিনে চৌধুরীর কপি-পেস্টের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠে। সাথে মিসেস চৌধুরীরও। আর রহমানের লাইক আরো কমতে থাকে। তার স্ত্রীরও একই দশা। তাদের দুজনের স্ট্যাটাসে সবসময় তাদের দু'জনের লাইকই জ্বলজ্বল করে।
কাহিনী এগিয়ে চলে। রহমানের ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক পুত্র। এই ছবির নায়ক। অন্যদিকে চৌধুরীও বসে নেই!! তার স্ত্রী এক মেয়ের মা হন। আই মিন- আমাদের নায়িকার। নায়ক-নায়িকা বড় হয়। একটু দ্রুতই। নায়কের বাপের কপাল খারাপ- পরিচালক (এইখানে আমি) তাকে কিছুতেই বাঁচতে দেয় না। আমিও দিলাম না। লাইকের অভাবে রহমান সাহেব নিজের একাউন্টটা ডিঅ্যাকটিভেট করে দেন।
একদিন ভুল করেই হোক আর যাই হোক- নায়কের স্ট্যাটাসে পাঁচটা লাইক পড়ে। দুইটা লাইক বাদ দিলেও তিনটা। নায়ক মায়ের ওয়ালে গিয়ে পোস্ট দিয়ে আসেঃ
- মা মা, আমি পাঁচটা লাইক পেয়েছি, মা তুমি দেখো আমি আরো লাইক পাব, আমাদের আর কোন দুঃখ কষ্ট থাকবে না মা।
নিচে মায়ের কমেন্টঃ ইয়া আল্লাহ তোমার দরবারে লাখ লাখ শোকর। তোর বাবা থাকলে অনেক খুশি হতেন। :'(
কাকতালীয়ভাবে নায়ক-নায়িকা দুজনেই ফেসবুকে একই গ্রুপের মেম্বার। তাদের মধ্যে গ্রুপে কখনো সখনো কমেন্ট আদান-প্রদান হয়। কিন্তু নায়িকা অনেক লাইকওয়ালা বাপের একমাত্র মেয়ে। একটু মুডি। হরেক রকমের প্রোফাইল পিকচার তার। তার আবার ফেসবুকে টাইমলাইন অ্যাক্টিভেট করা। তাই নায়ক শাকিব খানকে পাত্তা দেয় না বিশেষ।
একদিন নায়িকা গ্রুপে পোস্ট দেয়। নায়িকার সুন্দর প্রো-পিক দেখে গুন্ডারা তার পিছু নেয়। নায়িকাকে কমেন্টে পঁচানোর চেষ্টা করে।
নায়িকার হাহাকারঃ 'ছেড়ে দে শয়তান, তোদের কি মা বোনের ফেসবুক একাউন্ট নেই!!'
ঠিক সেসময় নায়ক অনলাইনে বসে মাছি মারছিল। ডানপাশের উপরে টিকারে সে দেখে এই অবস্থা। নিয়মমতো কীবোর্ড নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ইয়া-ঢিসুম-ওয়া ঢুসুম। কমেন্টে নায়কের ভুল বানানে দেয়া গালি দেখে গুন্ডারা পগারপার।
শেষে নায়িকা নায়ককে মেসেজ দেয়ঃ 'কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেব! আজ আপনি না থাকলে কি যে হত।'
নায়কের গম্ভীর রিপ্লাইঃ 'আমিতো আমার কর্তব্য করেছি মাত্র।'
নায়কের নায়িকাকে পোক দেয়া। নায়িকাও ফিরতি পোক দেয়। অতঃপর নায়িকাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো। নায়িকা-নায়কের ফেসবুক ফ্রেন্ড হওয়া। বৃষ্টির দিনে ডুয়েট গানের লিঙ্ক আদান-প্রদান। চ্যাট করা। লাভ চিহ্ন চালাচালি। ওরে সুখরে।
এরপর আর কি। সুখের ঘরে দুখের আগুন। নায়িকার বাবা চৌধুরী সাহেবের কানে যায় এই প্রেম-কাহিনী। তিনি নায়ককে অপমানের জন্য কূটচাল চালেন। মেয়েকে বলেন যেন নায়ক চৌধুরী সাহেবের ওয়ালে পোস্ট দেয়। নায়িকাকে রিলেশনশিপ রিকোয়েস্ট পাঠানোর অনুমতির জন্য।
নায়িকা অনেক জোরাজুরি করে নায়ককে রাজী করে। নায়ক ভাল একটা প্রো-পিক লাগিয়ে চৌধুরী সাহেবের ওয়ালে পোস্ট দেয়। সাথে মাকে ট্যাগ দেয়।
নায়কে- 'আমি আপনার মেয়েকে রিলেশনশিপ রিকোয়েস্ট পাঠাতে চাই। যদি আপনি রাজী থাকেন...'
চৌধুরী- 'তুই বামন হয়ে আকাশের চাঁদকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাস, তোর এতো বড়ো সাহস।'
নায়ক- 'ভালুবাসা মহান। ভালবাসা ধনী-গরীব মেনে হয় না সাহেব। এর জন্য মন লাগে যা আপনার মত লাইকওয়াদের নেই।
চৌধুরী- 'তুই জানিস!! আমার বাসার ড্রাইভারের স্ট্যাটাসের লাইকসংখ্যা তোর পুরা পরিবারের পাওয়া লাইকের চে বেশী!!
নায়ক- 'চৌধুরী সাহেব, মনে রাখবেন লাইক দিয়ে ভালবাসা কেনা যায় না।'
নায়িকা- 'বাবা থাক তুমি তোমার লাইকের পাহাড় নিয়ে, আমি চললাম শাকিবের সাথে। চল শাকিব।'
কিছুসময় আর কোন কমেন্ট নেই।
চৌধুরী- 'তোমরা আমার চোখ খুলে দিয়েছ। আমি এতদিন লাইকের মোহে অন্ধ হয়ে থেকেছিলাম।'
নায়কের মা কম্পিউটারের সামনে বসে শাড়ীর কোনা দিয়ে চোখ মুছেন। কমেন্ট করেন- :')
তারপর শুভদিন দেখে নায়িকার বাবা একটা ছবি আপলোড করেন- আকাশে আতশবাজির মেলা। নায়কের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে দেখা যায়- 'ম্যারিড টু নায়িকা'। নিচে চৌধুরী সাহেবের কমেন্ট- 'আমার মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম বাবা। ওকে দেখে রেখ।'
তারপর??
নায়ক একটা ফুল ব্ল্যাক অন্ধকার ছবি আপলোড করে। নিচে নায়িকার কমেন্টঃ 'এই ছাড়ো কি করছো। কেউ দেখে ফেলবে তো!'
স্ক্রীন অন্ধকারঃ ----সমাপ্ত----
___________________________________________________
। চিত্রনাট্যঃ চিরাচরিত বাংলা ছবিগুলো ।
। পরিচালনাঃ ইমরান নিলয় ।
। লোকেশনঃ ফেসবুক ।
। বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ মার্ক জুকারবার্গ ।
।__________________________________________________।
// ইহা একটি নির্দোষ ফানপোস্ট। কারো সাথে মিল পাওয়া গেলে সেটা একান্তই ইচ্ছাকৃত। //
আলোচিত ব্লগ
রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!
রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।
আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!
এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিউ ইয়র্কের পথে.... ২
Almost at half distance, on flight CX830.
পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন