somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো ডাক্তার চিনবেন কিভাবে?

১৮ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন ডাক্তার ভালো কি মন্দ সেটা রোগীরাই ভালো বলতে পারেন। তেমনিভাবে একজন শিক্ষক ভালো কি মন্দ সেটা তার ছাত্ররাই ভালো বলতে পারেন। আমি একবার আমার এক সাবেক ছাত্রীকে, যে এখন হাইকোর্টের প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার- তাকে প্রশ্ন করলাম, ভালো উকিল কে? সে উত্তর দিয়েছিল- সেই ভালো উকিল, দিনশেষে যে মক্কেলের জন্য মামলাটা জিততে পেরেছে। আমি ভাবলাম উত্তরটা তো ভালোই দিয়েছে। তাকে বললাম, তোমার ওকালতির জীবন কেমন যাচ্ছে। সে বলল, মোটামুটি, একজন সিনিয়রের সাথে আছি। যাক, অনেক শিক্ষকের পেটে অনেক বিদ্যা থাকে, তবে মুখে বের হয় না। ছাত্ররা ভাবে, স্যার জানেন অনেক কিন' পড়াতে পারেন না। এমন শিক্ষকদেরও কদর আছে। তবে ক্লাসরুমে নয়, গবেষণায়। তেমনিভাবে ডাক্তারদের মধ্যেও এমন অনেকে থাকতে পারেন, যারা ডাক্তারিবিদ্যা জানেন অনেক কিন' রোগী ভালো করতে পারেন না অথবা রোগীরা তার সামনে গেলে সন'ষ্টচিত্তে ফেরত আসেন না। ভালো ডাক্তারিবিদ্যা রোগী ভালো করার ক্ষেত্রে সব সময় কাজে না দিলেও, ক্লাসরুমে ভালো কাজ দিতে পারে, তিনি যদি চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষক হন।

আমি একবার একটা ছোট্ট বই পড়েছিলাম, লিখেছিলেন খ্যাতিমান চিকিৎসক ও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বইটির নাম হুবহু মনে নেই, তবে হয়তো হবে এমন- ‘রোগ চিনবেন কিভাবে?’ ওই বই পড়লে কোন রোগের কী চিহ্ন, কোন রোগের জন্য কী ল্যাব টেস্ট করাতে হবে ইত্যাদি সম্বন্ধে জানা যায়। তবে ভালো ডাক্তার চিনবেন কিভাবে এ ব্যাপারে বোধ করি কোনো অধ্যাপক ডাক্তার কিছু লেখেননি। লিখলে ভালো হতো। অনেক লোক উপকৃত হতো। একজন ভালো ডাক্তার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। রোগী এক ডাক্তার থেকে আরেক ডাক্তারের কাছে ছুটছে শুধু একজন ভালো ডাক্তার পাওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে লোকমুখে বা পুরনো রোগীদের কাছে শোনা কথা রোগীর সম্বল। জাতীয় অধ্যাপক ডাক্তার নুরুল ইসলাম ভালো ডাক্তার চেনার একটা সহজ পদ্ধতি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই পদ্ধতি হলো- উনিই ভালো ডাক্তার- যে ডাক্তার কম ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছেন। শুনেছি জাতীয় অধ্যাপক ডাক্তার ইব্রাহিমও অনেক বড় ডাক্তার ছিলেন। তিনি জীবিত থাকলে নিজে রোগী হয়ে না গেলেও কোনো আত্মীয়কে নিয়ে তার সামনে অবশ্যই যেতাম। জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ভালো ডাক্তার চেনার যে উপায় বাতলে দিয়েছেন তার সাথে আমিও একমত। আমার যত ভয় বেশি ওষুধকে নিয়ে। একবার এক অসুখে পড়ে আমি তিন ডাক্তার বদল করেছি শুধু কম ওষুধ নেয়ার জন্য। অনেক ডাক্তারকে দেখি পৃষ্ঠাভর্তি প্রেসক্রিপশন লিখছেন, যদিও অন্য ভালো ডাক্তারেরা বলবেন- ওই প্রেসক্রিপশনের তিন-চতুর্থাংশই অপ্রয়োজনীয়। ওষুধ অপ্রয়োজনীয় হলেও আমি অত ভয় করতাম না, না হলে দুটো টাকা বেশিই গেল, কিন' ওষুধের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ওষুধ শুধু রোগ সারায় না, ওষুধ রোগ সৃষ্টিও করে!

আজকে যে আমাদের সমাজে এত লাখ লাখ লোক রোগী হলো, এরা কি সবাই ভেজাল আর দূষিত খাদ্য খেয়ে রোগী হয়েছে? আমার বোধ অনুযায়ী এসব রোগীর এক বিরাট অংশ ওষুধের শিকার। বাকিটা সৃষ্টি করেছে হাসপাতাল! কি বিশ্বাস হয় না? জিজ্ঞেস করুন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এমন সচেতন রোগীদের। ব্যথা হয়েছে, ডাক্তার সাহেব অবলীলায় ব্যথানাশকের ওষুধ দিলেন। কিন' ওই ওষুধ যে রোগীর কিডনির ওপর আঘাত হানতে পারে, এটা কি রোগী জানেন? ভিটামিনেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে এইটা বা কয়জন রোগী জানেন! কিন' অনেকেই তো ওষুধের দোকান থেকে হরদম ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি ট্যাবলেট কিনে খাচ্ছেন। ভাবছেন খাওয়া-দাওয়া যখন দূষিত, তখন ভিটামিন সাপ্লিমেট দিয়ে কাজ চালিয়ে নেবেন। কিন' তা কি হচ্ছে? আসলে অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ভালো খাবারের বিকল্প কোনো ভিটামিন ট্যাবলেট হতে পারে না। দেশে যে কয়েক শ’ ওষুধ কোম্পানি আছে এদের কাজ কী? নিশ্চয়ই ওষুধ তৈরি করে মানুষকে তা খাওয়ানো। ওষুধ না খাওয়াতে পারলে তাদের লাভ হবে কিভাবে? আর ওষুধ খাওয়ানোর জন্য ভালো মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে আমাদের ডাক্তার সাহেবদের। এখন বুঝুন- কেন কোনো কোনো ডাক্তার এত বেশি ওষুধ লেখেন। বিশ্বের কোথাও কি আপনারা এত ওষুধের দোকান দেখেছেন? যে দেশে প্রকাশ্যে এত এত ডাক্তারের সাইনবোর্ড, এত এত ওষুধের দোকান, এত এত ল্যাব টেস্টের সেন্টার, এত এত হাসপাতাল, সে দেশে রোগী তো বেশি থাকবেই। রোগী কম থাকলে যে এদের ব্যবসায় কমে যাবে। এই সব সেন্টার আর হাসপাতালের মান কে নিয়ন্ত্রণ করছে? কেউ না। নিজেরা স্বাধীনভাবে চলে। শুনেছি আরো ২৫টি কলেজকে প্রাইভেট সেক্টরে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ডাক্তার তৈরির জন্য। জানি না ওই সব কলেজের তৈরি ডাক্তারেরা আবার কেমন হয়। ডাক্তারদের গুণাগুণ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনেক রোগী আবার ফরেন ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের পেছনে ছোটেন। কী করবে, ডাক্তার বাছার ক্ষেত্রে তাদের সামনে অন্য ভালো উপায়ই বা কী আছে। প্রফেসর নুরুল ইসলামের সেই ভালো ডাক্তার চেনার কৌশলের সাথে আমার যোগ করতে ইচ্ছা হয় নিম্নের কয়েকটি কথাও: এক. উনিই ভালো ডাক্তার যে রোগীকে কোনো ওষুধই দিলেন না। শুধু বললেন, আপনি ভালো আছেন, এভাবে এভাবে চলবেন। অসুবিধা হলে পরে আবার আসবেন।

দুই : ওষুধ দিলেন তো, কম ওষুধ দিলেন। তিন নম্বরের ওষুধটি সম্বন্ধে বললেন, খেলেও খেতে পারেন, মনে না চাইলে না খাবেন। বয়স হয়ে গেছে, কিছু ল্যাব টেস্ট ছয় মাস পরপর করালে ভালো হবে। এবং ওগুলো দেখিয়ে নেবেন।

তিন : রোগীর সাথে হেসে হেসে কথা বলবেন। আর রোগীকে আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করবেন যে, আপনার রোগ অত বড় কিছু না। এই ওষুধ দিলাম, আশা করি ঠিক হয়ে যাবেন। এত মাস/ দিন পর আবার দেখা করবেন।

চার : রোগী পূর্বাপর কী ওষুধ সেবন করেছে জানবেন। রোগীকে শুইয়ে প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো করবেন। আগের ওষুধ থেকে যেটি অপ্রয়োজনীয় মনে করবেন, সেটি বাদ দেবেন। এভাবে রোগী দেখতে যদি আধা ঘণ্টা যায় যাক, রোগী চাচ্ছে ভালো হতে। সে জন্য রোগী প্রয়োজনীয় ফি
দিতে প্রস'ত।
লেখক : প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, ঢা.বি.
http://www.dailynayadiganta.com/details/35635
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×