somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাদের কথা কেউ বলে না. যাদের কথা কেউ পড়ে না.

১৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এসব পোষ্টে হিট পরে কম. ২-১ জন ভালো লাগলো বলে, ৩-৪ জন প্রিয় তে নেয়. এইটুকুই. তারপর সব ভুলে যায় সবাই......






খুব ভোরে কলেজে যাওয়া আমার অভ্যাস। এর পেছনে অবশ্য একটা কারন রয়েছে, জ্যাম এড়ানো। দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ প্রায় নিয়মিত এক রাস্তা দিয়ে যাওয়ার ফলে অনেক ঘটনা আমার সামনে বারংবার ঘটতে থাকে। পরিচিত ঝাড়ুদাড়ের ঝাড়ু দেয়া, পরিচিত্র রিকশাওয়ালার রিকশা বের করে বসা, চায়ের দোকানে পানি বসানো, বয়স্ক কয়েকজন ভদ্রলোকের সুগার লেভেল কমানোর জন্য ২ মাইল করে হাটা এমনকি রাস্তার কুকুর গুলোর আড়মোড়া দিয়ে ঘুম ভাঙাও।


তবে সব থেকে বেশী মনে গেথে আছে, একটি হুইলচেয়ারে একটি প্রতিবন্ধী ছেলেকে তার মায়ের রাস্তার পাশে বসিয়ে দেয়া । ছেলেটি চলন প্রতিবন্ধী তো বটেই, একজন মানসিক প্রতিবন্ধীও ।


এভাবে প্রায় ১ বছর আমি ওকে দেখতাম। অনেক সময় হালকা হলে রিকশার গতি, দেখতাম ও চেয়ে আছে ওর মায়ের দিকে। পরে বুঝলাম, মা অন্য কাজে যাচ্ছে ছেলেটিকে ভিক্ষে করতে বসিয়ে দিয়ে।


ছেলেটা ভিক্ষা করতে খুব পারদর্শী তা কিন্তু নয়। কারন বাকপটু হতে হয়, সিমপ্যাথি আদায় করতে হয় যা এই মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী ছেলেটি পারে না। তবুও সে চেয়ে থাকে পথচারী দের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে।


চোখাচোখি হতো আমার সাথেও। ১ দিন, ২ দিন, ৩ দিন...... এভাবে.... আস্ত আস্তে প্রায় নিয়মিতই.... হঠাৎ একদিন রিকশা থেকে ওর দিকে তাকালাম, ও হাসছে আমাকে দেখে....


আমি কি ভুল দেখলাম ? রিকশা থামাবো ? না থামানোর কি দরকার, পেছনে থাকালেই তো হয়.... পেছনে তাকিয়ে দেখি.... সে আমার দিকে তাকিয়ে..... রিকশার গতি বেড়ে গেল. হাসি টা স্পষ্ট হলো না. ও আমাকে নিয়মিত দেখে, তাই হেসেছে ? আমাকে ওর বন্ধু ভাবছে ? একটা অপরিচিত পথচারী যে কিনা প্রতিদিন তাকে শুধু দেখে, তাকে সে মনে রেখেছে?


পরের দিন একটু তাড়াতাড়ি বেরোলাম। রিকশা নিয়ে গেলাম.... হ্যা... সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। রিকশা টি তখন থামালাম।ওর কাছে গেলাম, কিন্তু কি বলবো বুঝতে পারলাম না। বুঝবে আমার কথা ? ওর কথা আমি বুঝবো ? কয়টা টাকা ওর কাছে দিতে হাসি যেন একটু বাড়লো.....


সারাটা পথ ওর কথা ভাবলাম.... সারাটা দিন.... আসার সময় পেলাম না...


প্রশ্ন জাগলো, ও দুপুরে কি খায়... অত সকালে ও কি নাস্তা করতে পারে ? ওর কে কে আছে? ও র মা কি করে ?


সমস্ত প্রশ্নের উত্তরের জন্য গেলাম ওর জায়গাটি তে। ওর মার জন্য অপেক্ষা করলাম। তিনি আসলেন, তার মেজাজ প্রচন্ড খিটখিটে. কিছু বললে , রাগ হয়ে উত্তর দেয়। এটাই স্বাভাবিক। জীবনের মানে তার কাছে অন্যরকম। জীবন মানে রাতের খাবার জোগাড় তার কাছে।জীবন মানে কাল কোথায় থাকবো এই প্রশ্নের উত্তর তার কাছে।



প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুলের কথা বলে আমি বিশাল বিপদে পরে গেলাম। তার রাগ দেখে কে, আমি কোনমতে তাকে ঠান্ডা করলাম।ওই পতে আর বাড়লাম না। বুঝতে পারলাম, ছেলেটির দৈনিক রোজগার টা তিনি হারাতে চান না। আমি বা আপনি তার জায়গায় হলে কি হারাতে চাইতাম ? বোধহয় না।



ছেলেটি আজও ওখানেই বসে থাকে, আমার সাথে চোখাচোখি হয়। কিছু কিনে দেই. কিন্তু, মনে হয় " আমার দায়িত্ব কি এখানেই শেষ ?" আর কি কিছু করার নেই আমার ?



আচ্ছা, আপনারা এরকম অনেককেই তো দেখেন, আপনারা কি তাদের এড়িয়ে যান ? নাকি আমার মত প্রশ্ন আপনাদের মনেও জাগে ? " আমার দায়িত্ব কি এখানেই শেষ ?" আর কি কিছু করার নেই আমার ? ওরা মানুষ হিসেবে জন্মেছে, মানুষের অধিকার গুলো কি ওরা পেয়েছে ?








আমি কোন দানবীর না, আমার টাকা পয়সা ও নেই..... কিন্তু আমার অনেক কিছু করার ইচ্ছা, অনেক কিছু করার স্বপ্ন. কারন আমি ওদের অনুভব করতে পারি. আপনি কি কখনও তাকিয়ে দেখেছেন ওদের দিকে ? একটু অনুভব করার চেষ্টা কি করা যায় ......একটু ?


ভেবে দেখবেন.....



বি:দ্র: হ্যা, আমি তাদের স্পেশাল চাইল্ড বলি. কিন্তু এখনো সবাই এই শব্দ গুলোয় অভ্যস্ত নয়. আর হ্যা, আমি তাদের জন্য কাজ করি. আমি একটি ভলেন্টিয়ার অরগানাইজেশনের সাথে জড়িত. যদি একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তাদের পাশে দাড়াতে চান, আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন. আমরা আপনাকে কিছু দিতে পারবো না শুধু একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর সেই ভালো লাগার অনুভূতি ছাড়া. দেয়া নেয়ার এই যুগে, এবার নাহয় একটু ভালবাসাই দিলেন, ক্ষতি কি তেমন ? যোগাযোগের লিংক : Bangladeshi Systems Change Advocacy Network (B-SCAN)
১৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×